October 3, 2024

‘একনায়ক’ শেখ হাসিনা বিদায়, কী করবেন, কোথায় যাবেন?‌ একগুঁয়েমি, অহঙ্কার এবং অতি আত্মবিশ্বাস, শাসনের পতনের কারণ

0

প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পর তড়িঘড়ি আকাশপথে পলায়ন। বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছাড়া। সেনাবাহিনী কেন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না, উষ্মাপ্রকাশ বাংলাদেশের সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর। সেনাবাহিনীর তিন কর্তাদের বিশ্বাস করে শীর্ষপদে বসেছিলেন, তাঁরাও?‌ প্রশ্ন থাকেই যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বিমানে ভারতে পৌঁছেছিলেন, তা পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশে উড়ে গিয়েছে। গাজ়িয়াবাদের হিন্ডন এয়ারবেস থেকে রওনা দেয়। হাসিনার পুত্র সাজিব ওয়াজেদ জয় আমেরিকায় থাকেন। কন্যা সাইমা ওয়াজেদ থাকেন দিল্লিতে। হাসিনার বোন রেহানার ব্রিটেনের নাগরিকত্ব রয়েছে। হাসিনা কী করবেন, কোথায় যাবেন?‌

‘একনায়ক’ শেখ হাসিনার বিদায়। সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশ শাসন। ছাত্র ও গণআন্দোলনের মুখে শাসনের পতন। একগুঁয়েমি, অহঙ্কার এবং অতি আত্মবিশ্বাসই অন্যতম কারণ। একক কর্তৃত্বের শাসনে সম্পূর্ণ ভাবে জনবিচ্ছিন্ন শেখ হাসিনার সরকার। পশ্চিমের দেশগুলিকে শত্রু বানিয়ে শেষ পর্যায়ে ভূ-রাজনীতিতেও প্রায় একা হয়ে পড়েছিলেন। অবশেষে দেশও ছাড়তে হল। পদত্যাগের জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে চাইলেও সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ৩৬ দিন আগে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা সরকার পতনের দাবি-আন্দোলনে রূপান্তরিত হওয়ার পরও শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থানের কথা বলা হচ্ছিল। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ-সহ সহযোগী সংগঠনগুলোকে মাঠে নামিয়ে আন্দোলন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়। সংঘর্ষে প্রায় ১০০ জনের প্রাণহানি। শক্ত হাতে দমনের চেষ্টায় গণভবনে শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠ কয়েক জন মন্ত্রী ও কর্মকর্তার সঙ্গে একাধিক বৈঠক। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতার ধারনা ছিল চাপ বাড়লেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আবশেষে বুঝতে পারেন, সময় শেষ হয়ে গিয়েছে।

শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দিক থেকে একা হয়ে পড়েন। শিক্ষার্থীরা যখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলেন, সাংবাদিক বৈঠকে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন শেখ হাসিনা। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ‘রাজাকার’ শব্দও ব্যবহার করেছিলেন। এরপরই আন্দোলন আরও জোরাল হয়। আন্দোলন দমনে শক্তিপ্রয়োগই করেছিলেন। দেশের ভিতরে আওয়ামী লীগ একা হয়ে পড়েছিল। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও অর্থনীতির মন্দা পরিস্থিতিতে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল সাধারণ মানুষের। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বাইরে অন্য সব দল কট্টর সরকার-বিরোধী অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ দেশের মানুষ এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে একেবারে একা হয়ে যায়।

ভূ-রাজনীতিতে হাসিনা সরকার ভারতের উপর নির্ভরশীল হয়ে পর পর তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন করেও টিকে। সরকার চিনের সঙ্গেও একটা সম্পর্ক ছিল। ৭ জুলাই শেখ হাসিনার চিন সফরের ফল ভাল হয়নি। আমেরিকার সঙ্গেও টানাপড়েন অনেক দিনের। ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ওই টানাপড়েনে শেখ হাসিনা এবং তাঁর নেতারা আমেরিকার কড়া সমালোচনাও করেন। দেশ ছেড়ে শেখ হাসিনা নিজের এত দিনের রাজনৈতিক অস্তিত্ব অর্জনকে ধ্বংস করলেন। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগের অস্তিত্বকেও দাঁড় করালেন প্রশ্নের মুখে?‌

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed