বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভাঙচুর, ইস্তফা দিয়ে বোনের সঙ্গে বাংলাদেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা
আন্দোলনের মাঝে পদত্যাগ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইস্তফা দিয়েছেন। কপ্টারে ‘নিরাপদ’ আশ্রয়ের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন। লাখ লাখ মানুষ হাসিনার বাসভবনে ঢুকে পড়েছেন। বোন রেহানাকে নিয়ে তিনি ঢাকার বাসভবন তথা ‘গণভবন’ ছেড়েছেন বলে খবর। কপ্টারে করে ‘নিরাপদ’ আশ্রয়ের উদ্দেশে পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশ বায়ুসেনার কপ্টারটি ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার উদ্দেশ্যে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন এয়ার কমোডর আব্বাস ১০১ স্কোয়াড্রনের সদস্য। লং মার্চ টু ঢাকা’ ঘিরে উত্তাল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভাঙচুর করছে বিক্ষোভকারীরা।
শেখ হাসিনার বাসভবনে ঢুকে পড়েছেন লক্ষাধিক ক্ষিপ্ত জনতা। ধানমণ্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাড়িতেও হামলার অভিযোগ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। বিক্ষোভে উত্তাল ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর মূর্তির উপরে উঠে যান কয়েকজন বিক্ষোভকারী। বঙ্গবন্ধুর মূর্তি গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ চালানো হবে। দেশ ছাড়ার আগেই পদত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা। আগরতলা হয়ে দিল্লিতে যাবেন। বিষয়টিই সেনাবাহিনী এবং দিল্লির সঙ্গে আলোচনার সাপেক্ষে হাসিনা ইস্তফা দিয়েছেন।
‘অন্তর্বর্তিকালীন গণতান্ত্রিক সরকার চাই’ ছাত্র-জনতার স্লোগানে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার ডাক। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে শতাধিক মানুষের মৃত্যু। ইস্তফা দিয়েই দেশ ছাড়তেই হল শেখ হাসিনাকে। দেশ ছাড়ার আগে হাসিনা জাতির উদ্দেশে বিদায়ী ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই সুযোগও পাননি। তাঁকে সেই সুযোগ নাকি দেয়নি সেনাবাহিনী। হাসিনা বাংলাদেশের আকাশসীমা অতিক্রম করতেই জাতির উদ্দেশে ভাষণে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানান বাংলাদেশ সংসদের স্পিকারকে আপাতত ক্ষমতা হস্তান্তর ও পরে তদারকি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে বাংলাদেশে তদারকি সরকার গঠিত হবে। বছর খানেক পরে সাধারণ নির্বাচন হতে পারে।
কপ্টারে বাংলাদেশ ছেড়ে হাসিনা ভারতে পৌঁছেছেন দূপুর ৩টে ১১ মিনিটে। হাসিনা নয়াদিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করায় তাঁকে উদ্ধারের জন্য ভারত থেকে বাংলাদেশে বিমান পাঠানো হবে না বলে জানিয়ে দেয় নয়াদিল্লি। ভারতের তরফে জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশের আকাশসীমায় ভারত কোনও বিমান পাঠাতে পারে না। কারণ, তাতে আইন লঙ্ঘিত হতে পারে। ভারত থেকে জানানো হয়, হাসিনাকে আগে ভারতে পৌঁছতে হবে। তার পর সেখান থেকে তাঁকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। নিকটবর্তী অবতরণ স্থান হতে পারে আগরতলা বিমানবন্দর হয়ে বিশেষ বিমানে করে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসিনার পুত্র সাজিব ওয়াজেদ জয় আমেরিকায় থাকেন। কন্যা সাইমা ওয়াজেদ থাকেন দিল্লিতে। সেই কারণেই মনে করা হচ্ছে, প্রাথমিক ভাবে হাসিনার গন্তব্য দিল্লি।
এদিকে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হাই-অ্যালার্ট জারি করল বিএসএফ। প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে এই হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশে চলতে থাকা গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছিল। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইস্তফা এবং দেশ ছাড়ার খবর প্রকাশিত হতেই সীমান্তে অতিরিক্ত নজরদারি বাড়ায় বিএসএফ। কোনওভাবে যাতে প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক প্রভাব এদেশের সীমান্তে না পড়ে বা কেউ যেন সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে ঢুকতে না পারেন সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই এই হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সীমান্তের প্রতিটি চৌকিতে বাড়ানো হয়েছে অতিরিক্ত নজরদারি। টহল দিচ্ছেন বিএসএফ জওয়ানরা। যে কোনও পরিস্থিতিতে যাতে দ্রুত অ্যাকশন নেওয়া যায় সেবিষয়ে সতর্ক আছে বিএসএফ।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, ‘‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। আপনারা শান্তি-শৃঙ্খলার পথে ফিরে আসুন। কারণ তা না হলে আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। মানুষ মারা যাচ্ছেন। আমি সমস্ত দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনারা আমাকে সাহায্য করুন। সংঘাতের মাধ্যমে আর নতুন কিছু আমরা পাব না। প্রতিটা হত্যার বিচার করা হবে। প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে। ভাঙচুর, মারামারি, সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকুন। ধৈর্য হারাবেন না। আমি নিশ্চিত, আপনারা যদি আমাদের কথামতো চলেন, আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তা হলে আমরা একটা সুন্দর পরিণতির দিকে এগোতে পারব। আপনাদের আমি কথা দিচ্ছি। আপনারা এখনই আশাহত হবেন না। আপনাদের যত দাবি আছে, তা আমরা পূরণ করব এবং দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনব। আমরা এর আগে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বিশিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করব। আপনারা সেনাবাহিনীর উপর আস্থা রাখুন। সশস্ত্র বাহিনীর উপর আস্থা রাখুন আমরা সমস্ত দায় দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনারা শান্তি বজায় রাখুন। ভাঙচুর করবেন না। আমি নির্দেশ দিয়েছি পুলিশ বা সেনাবাহিনী গুলি চালাবে না। প্রতিটি হত্যার বিচার হবে। হিংসা পরিহার করে সংযত হওয়ার এবং শান্তি বজায় রাখুন।’’