দিলীপ ঘোষ ফের বঙ্গ বিজেপির সভাপতি? নাড়ুর জন্মদিনে শুভেন্দুর ‘মিষ্টি-গোলাপ’ মাখামাখির রহস্য উদঘাটিত!
দিলীপ ঘোষ ফের বঙ্গ বিজেপির সভাপতি। এমনটাই চাইছে আরএসএস। ‘ঘরের ছেলে’ দিলীপের নামই দিল্লির নেতাদের কাছে প্রথম পছন্দ হিসাবে সুপারিশ করেছে সংঘ। বিজেপি সূত্রে এমনই খবর। বঙ্গের গেরুয়া শিবিরে হঠাৎ করেই দিলীপকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপি পরিষদীয় দল। বিধানসভায় মাসকয়েক আগে গিয়েও কাউকে পাননি দিলীপ। ছিলেন না বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দেখা যায়নি বিজেপি বিধায়কদেরও। সেই ছবিই আমূল বদলে গেল। জন্মদিনে বিধানসভায় পা রাখতেই উৎসবের সংবর্ধনা দিলীপ ঘোষকে। দিলীপ বিধানসভার বাইরে পৌঁছেছেন খবর পেয়েই বিরোধী দলনেতা নিজে সাদর অভ্যর্থনা জানান সব বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে।
ঘরে নিয়ে গিয়ে মিষ্টিমুখ করান, গায়ে চড়িয়ে দেন উত্তরীয়। প্রায় গলাগলি ছবি তোলা থেকে হাসিমুখে গল্প, শেষে দীর্ঘক্ষণ একান্তে দুজনে বসে নানা আলোচনা। শুধু প্রদীপ-পায়েসের অভাব ছিল। এবিজেপির প্রবীণ নেতাদের বক্তব্য, এর আগে দিলীপ ঘোষ তো নয়ই, অন্য কোনও বিজেপি নেতার জন্মদিন পালন হয়েছে বলে জানা নেই। শুধু বিধানসভাতেই নয়, দলের দফতরেও কোনও রাজ্যনেতার জন্মদিন ঘিরে এমন আচমকা আয়োজনের নজির নেই। ৪৪ বছরের পুরনো দলে এ এক নতুন উদ্যোগ। পরবর্তী রাজ্য সভাপতি পদ অলংকৃত করতে চলেছেন? আরএসএসের তরফে দিলীপ ঘোষের নামই প্রথম পছন্দ দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতাদের। পরবর্তী সভাপতির তালিকায় ১ নম্বরে রয়েছেন মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। দুনম্বর নাম রাজ্যসভার সাংসদ তথা দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য।
দিলীপের ৬০ বছরের জন্মদিন পালন। হঠাৎ করে শ্রদ্ধা-ভালবাসা জানানোর রাজনীতি নতুন নয়। আগামী দিনে দিলীপকে ‘মধ্যমণি’ করে সুকান্ত-শুভেন্দুদের নতুন কর্মসূচি দেখারও সম্ভাবনা জাগছে নতুন করেই। রাজ্য বিজেপিতে গোষ্ঠীবিবাদ থাকলেও একটা বিষয়ে প্রায় সকলেই একমত যে, লোকসভা ভোটের পরবর্ত্তী সঙ্কটসময়ে দিলীপকে নিয়ে বাকি দুই নেতা পথে নামলে জমবে আন্দোলন। মজবুত হবে সংগঠনও। ফুল এবং মিষ্টির পরে সেটিই হল আসল ‘মোর’। আরও কিছু। নিজের জন্মদিন পালন নিয়ে কখনও খুব আগ্রহ ছিল না দিলীপের। তাঁর নিজের পরিবারেও সেই রেওয়াজ ছিল না। দিলীপের মা পুষ্পলতা ঘোষ অবশ্য মেজ পুত্র নাড়ুর (দিলীপের ডাকনাম) জন্মদিন পালন করেন বাংলা মতে ৫ বৈশাখ। দিলীপ ‘নেতা’ হওয়ার পরে ১৮ বা ১৯ এপ্রিল (যে বছর যেমন হয়) কুলিয়ান গ্রামে গেলে পরমান্ন রেঁধেছেন মা। সরকারি নথি অনুযায়ী ১ আগস্টের জন্মদিনে নিয়মিত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের শুভেচ্ছাবার্তা পেতেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ। সাংসদ থাকার সময়ে ওই দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শুভেচ্ছাচিঠিও পেয়েছেন। তবে মোদীর চিঠি সম্ভবত এ বার আসেনি।
এসেছিল একটি আপাতদৃষ্টিতে ‘অনভিপ্রেত’ ফোন। বিধানসভায় দিলীপের জন্মদিন পালনের ইচ্ছা জানিয়ে তাঁকে ফোন করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্য বিজেপিতে দিলীপের সঙ্গে যাঁর সব চেয়ে বেশি ‘দূরত্ব’। দিলীপ। সেই ডাকেসাড়া দেওয়ায় মিষ্টিমুখ থেকে লাল গোলাপে পালিত হয়েছে ৬০ বছরের জন্মদিন। বিধানসভা থেকে বের হতেই এক রাজ্য নেতার ফোনে কোনও বৈঠক ছাড়াই হাজির হন সল্টলেকে বিজেপির নতুন পার্টি অফিসে। সেখানে কেকের মতো দেখতে সন্দেশ এনে কেটে হইহই করে জন্মদিন পালনে হাজির ছিলেন বাংলার দুই সাধারণ সম্পাদক, দুই প্রবীণ নেতা ছাড়াও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সংগঠন সতীশ ঢন্ড। জন্মদিন পালনের উদ্যোগের পিছনে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরও বার্তা কাজ করছে? প্রশ্নও পদ্মশিবিরে।