নরেন্দ্র মোদির চিন্তার কারণ দুই সাসদ! রাহুল গান্ধী ও অভিষেক ব্যানার্জ্জীকে আটকানোর ছক প্রধানমন্ত্রীর?
সংসদে ‘চক্রব্যূহ’ মন্তব্যের ‘প্রতিশোধ’, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ছক কষছে ইডি! দাবি করেছেন স্বয়ং রাহুল গান্ধী। সংসদে ‘চক্রব্যূহ’ মন্তব্যে বিচলিত কেন্দ্রীয় সরকার। রাহুলের বিরুদ্ধে ইডি অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে দাবি করলেন রাহুল গান্ধী। লোকসভার বিরোধী দলনেতার আরও দাবি, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির ‘ভিতরের লোকেরাই’ তাঁকে এই খবর দিয়েছেন। ইডির ডিরেক্টরের উদ্দেশে রাহুল জানান, তিনি এই অভিযানের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। তাঁর জন্য চা-বিস্কুট প্রস্তুত রাখার কথা বলেও কটাক্ষ করেন প্রতিবাদী সাংসদ। লোকসভায় বাজেট সংক্রান্ত বিতর্কে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে গিয়ে রাহুল মহাভারত এবং কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। সেই সূত্রেই উঠে এসেছিল চক্রব্যূহের প্রসঙ্গ। চক্রব্যূহের সামরিক গঠন অনেকটা পদ্ম ফুলের মতো, যে কারণে চক্রব্যূহকে ‘পদ্মব্যূহ’-ও বলা হয়ে থাকে। সেই কথা উল্লেখ করেই কেন্দ্রের বিজেপি-শাসিত সরকারকে আক্রমণ করেন রাহুল। তিনি বলেছিলেন, “হাজার হাজার বছর আগে কুরুক্ষেত্রে ছ’জন মিলে অভিমন্যুকে চক্রব্যূহে ফাঁসিয়ে হত্যা করেছিলেন। আমিও একটু পড়াশোনা করে দেখেছি, চক্রব্যূহকে পদ্মব্যূহও বলা হয়। পদ্মের মতো সামরিক গঠনের জন্য।”
কেন্দ্রকে বিঁধে লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল বলেন, “একবিংশ শতাব্দীতে এক নতুন চক্রব্যূহ তৈরি হয়েছে। তা-ও আবার পদ্ম ফুলের আকারে। যার প্রতীক প্রধানমন্ত্রী বুকে পরে থাকেন। অভিমন্যুর সঙ্গে যা করা হয়েছিল, যে ভাবে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছিল চক্রব্যূহে, সেটাই দেশের সঙ্গে, দেশের যুব সমাজ, কৃষক, মহিলা এবং ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে করা হচ্ছে।” রাহুলের যুক্তি, মহাভারতের চক্রব্যূহের রাশ ছিল ছ’জনের হাতে- দ্রোণাচার্য, কর্ণ, কৃপাচার্য, কৃতবর্মা, অশ্বত্থামা ও শকুনি। বর্তমান সময়ের যে চক্রব্যূহের কথা রাহুল বলছেন, সেখানেও ছ’জনের হাতে রাশ রয়েছে বলে দাবি বিরোধী দলনেতার। রাহুলের মতে সেই ছ’জন হলেন-প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত, দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং দুই শিল্পপতি মুকেশ অম্বানী ও গৌতম আদানি। লোকসভায় রাহুল এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই আপত্তি জানান স্পিকার ওম বিড়লা। বিজেপি শিবির থেকেও হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। স্পিকার রাহুলকে জানান, যাঁরা লোকসভার সদস্য নন, তাঁদের নাম ব্যবহার নয় একদম।
সংসদের অধিবেশন শুরুতেই অভিষেক নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। কখনও স্পিকার নির্বাচন নিয়ে কংগ্রেসের প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়াকে সোজাসুজি ‘একতরফা’ সিদ্ধান্ত বলে দিয়েছেন, আবার কখনও বলেছেন, বিজেপি তথা এনডিএ-র খাতায়কলমে যে সংখ্যা রয়েছে, তা আরও কমে যাবে এই ভয়ে স্পিকার নির্বাচনে কেবল ধ্বনিভোট নেওয়া হয়েছে। ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রে বোতাম টেপার দিকে হাঁটেনি বিজেপি। বাজেটের উপর বক্তৃতায় তৃণমূলের তরফে অভিষেকই ছিলেন প্রথম বক্তা। বক্তৃতার আগের দিন নিজেই তা ঘোষণা করেছিলেন। সেই বক্তৃতার ‘ঝাঁজ’ নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। শুধু বক্তৃতা নয়। সংসদের বাইরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময়েও মোদী তথা বিজেপি-বিরোধিতায় যে ‘আগ্রাসী’ রূপ অভিষেক দেখাচ্ছেন, তাতে আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে গত ১০ বছরের সঙ্গে এ বারের সাংসদ অভিষেকের ফারাক।
২০১৪ সাল থেকে পর পর তিনি ডায়মন্ড হারবার লোকসভা থেকে জিতেছেন। এ বার জিতেছেন রেকর্ড ৭ লক্ষ ১০ হাজার ভোটে। তৃতীয় নরেন্দ্র মোদী সরকারের শুরু থেকে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ তথা দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংসদে যে ভূমিকা নিচ্ছেন, তা চিন্তায় ফেলেছে মোদি সরকারকে।