‘বাবার মৃত্যুর সময়ের কষ্ট ফের পেলাম ওয়েনাড়ে গিয়ে’! বোন প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে ওয়েনাড় পরিদর্শনে গিয়ে রাহুল জানান, পুরো ঘটনা ‘বেদনাদায়ক’

‘‘বাবা (রাজীব গান্ধী) যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন যে কষ্ট পেয়েছিলাম, আজ সে রকম লাগছে। এখানকার বহু মানুষজন শুধু বাবাকে নয়, গোটা পরিবারকে হারিয়েছেন। তাঁদের শ্রদ্ধা জানাই।’’ বললেন রাহুল গান্ধী।১৯৯১ সালে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর। ওয়েনাড়ের পরিস্থিতি সে দিনের কথাই মনে করাচ্ছে রাহুলকে। বোন প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে বিপর্যস্ত ওয়েনাড়ে পরিদর্শনে রাহুল। সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও কেরলের আলাপুঝার সাংসদ কেসি বেণুগোপাল। বিপর্যস্ত এলাকা, মেপ্পাড়ির একটি চিকিৎসাকেন্দ্র এবং হাসপাতাল ঘুরে দেখেন রাহুলেরা। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর রাহুল বলেন, ‘‘ওয়েনাড়, কেরল এবং গোটা দেশের জন্য এটা একটা ট্র্যাজেডি। বহু মানুষ নিজের পরিজন এবং ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমরা সাহায্যের চেষ্টা করছি। যাঁরা জীবিত, তাঁরা যাতে বঞ্চিত না হন, সে দিকে নজর রাখছি।’’ ওয়েনাড় পরিদর্শন করে রাহুল জানান, গোটা ঘটনা ‘বেদনাদায়ক’।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উচ্চতায় এই ধস। ধস বসতি এলাকার দিকে এগোতেই হড়পা বানের স্রোত আরও শক্তিশালী হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টায় ৫৭০ মিলিমিটার বৃষ্টির জেরে ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানি বেশি। গভীর রাতে ওয়েনাড়ে ধস নামার চার ঘণ্টার মধ্যে পর পর চারটি ধসে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ৮৬ হাজার বর্গমিটার এলাকা জুড়ে পাহাড় থেকে ধস নেমে আসে ওয়েনাড়ে। যা ১৩টি আন্তর্জাতিক ফুটবল মাঠের সমান। ওয়েনাড়ের ধসের উপগ্রহচিত্র প্রকাশ ইসরোর। উপগ্রহচিত্রেই ধরা পড়েছে, কতটা এলাকা জুড়ে পাহাড় ধসে রাতারাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে ওয়েনাড়ের চারটি পাহাড়ি গ্রাম চুরালমালা, মুন্ডাক্কাই, অট্টামালা এবং নুলপুঝা। ৩১ জুলাই রিস্যাট-২বি উপগ্রহের মাধ্যমে ওয়েনাড়ের ধসের একটি ছবির বিশ্লেষণে প্রকাশ, ধসের সঙ্গে কাদামাটি, বড় বড় পাথর, গাছ পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসে। সেই ধস আট কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে চালিয়ার নদীর একটি শাখানদীতে গিয়ে পড়ে। ধস এত দ্রুত গতিতে নেমে আসে যে, ওই আট কিলোমিটার পথের মধ্যে যা যা পড়েছে, সব কিছু নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। ধসের গতিপথেই ওয়ানাড়ের চার গ্রাম নিশ্চিহ্ন বিপুল পরিমাণ কাদামাটি ধসের সঙ্গে নেমে আসায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়েছে। ধসে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ২৭৬ জনের। এখনও নিখোঁজ দুই শতাধিক।

এদিকে, দেরাদূনেও বহু এলাকা প্লাবিত। ১৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। হরিদ্বারের রোশনাবাদে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি পরিমাণ ২১০ মিলমিটার। তার পরই রায়বালায় ১৬৩ মিমি, হলদওয়ানিতে ১৪০, হরিদ্বারে ১৪০, রুড়কিতে ১১২ এবং নৈনিতালে ৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সোনপ্রয়াগে মন্দাকিনী নদীর জলস্তর বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। হরিদ্বারের রুড়কিতে ভারপুর গ্রামে ভারী বৃষ্টিতে একটি বাড়ি ভেঙে পড়ে তার নীচে চাপা পড়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও ১০ জন আহত হয়েছেন। তার মধ্যে আট জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মেঘভাঙা বৃষ্টি আর ধসে উত্তরাখণ্ডে মৃতের সংখ্যা ১২। নিখোঁজ ৫০ জন। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চারটি জেলা হরিদ্বার, টিহরী, দেহরাদূন এবং চামোলিতে বহু ঘরবাড়ি ভেসে গিয়েছে। রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। নিখোঁজ প্রচুর।