January 13, 2025

বৃহস্পতিতে ওয়েনাড় যাচ্ছেন রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কাও! নিখোঁজ প্রায় ২০০, মৃত ১৫০-এর বেশি, ওয়েনাড়ের ধ্বংসস্তূপে প্রাণের খোঁজে উদ্ধারকারীরা

0
Kerala

বৃহস্পতিবার ওয়েনাড় যাচ্ছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। সঙ্গে বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও যাবেন। বুধবার এই দুজনে কেরালার খারাপ আবহাওয়া থাকার জন্য যেতে পারেননি। ত্রাণ শিবিরে যাবেন। বিপজ্জনক অবস্থায় থাকা এলাকায় প্রশাসন তাঁদের যেতে অনুমতি দেবে না। ফলে ত্রাণ শিবির ঘুরে দেখবেন ও কথা বলবেন অসহায় মানুষের সঙ্গে। বিজেপি সরকার এই বিষয়ে কেরালা সরকারকে দায়ী করেছে। কিন্ত আসল সত্যি জানতে হলে সেখানে গিয়ে দেখতে হবে। বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সেখানে গিয়ে দেখবেন। এরপর সংসদে এই বিষয়ে কথা বলবেন। ধসের ফলে কেরালার ওয়েনাডে প্রবল বিপর্যয় নেমে আসে। ১৩২ জন মানুষ প্রাণ হারায়। আহত হয়েছেন ২০০ জন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে উদ্ধারকারী দল। এখনও ধসের নিচে আরও মানুষ চাপা পড়ে রয়েছে। তাঁদের সেখান থেকে বের করার চেষ্টা চলছে। খোলা হয়েছে ৪৫ টি ক্যাম্প, সেখানে তিন হাজার মানুষ রয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী দিন রাত এক করে কাজ করছেন।

প্রবল স্রোতে বইছে নদী। তার উপরে দু’দিকের স্থলভাগে দড়ি টাঙিয়ে কোনও রকমে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মানুষকে। মাঝে সেনা জওয়ানেরা দু’হাত বিছিয়ে দড়ি ধরে সংযোগ রক্ষার চেষ্টা করছেন। শিশুদের কোলে তুলে নিচ্ছেন জওয়ানেরা। নিরাপদ স্থানে তাঁদের কোলে করেই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, ওয়েনাড়ের চূড়ামালা গ্রামে মানবসেতু তৈরি করেছিলেন জওয়ানেরা। ওই গ্রামে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন ১২২ ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটেলিয়ন মাদ্রাসের জওয়ানেরা। ১২ জন জওয়ান মিলে মানবসেতু তৈরি করেন। আর বালির স্তূপ ঘেঁটে ঘেঁটে প্রাণের খোঁজ চালাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। চার ঘণ্টায় চারটি ধসে চার চারটি গ্রাম নিশ্চিহ্ন। পাহাড়ের ঢালে থাকা সুদৃশ্য চুরালমালা, মুন্ডাক্কাই, অট্টামালা এবং নুলপুঝা গ্রাম। দৃশ্য একেবারে বদল। নেই সবুজ বনানী, নেই কফি বাগান, নেই পাহাড়ের কোলে সুদৃশ্য বাড়িগুলি! একেবারে ধুয়েমুছে সাফ। ওয়েনাড়ের ধসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মুন্ডাক্কাই এবং চুরালমালা। ছোট একটা সাজানো গোছানো গ্রাম। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু চুরালমালা। দৃষ্টিনন্দন সূচিপাড়া জলপ্রপাত ছাড়াও রয়েছে ভেলোলিপাড়া এবং সীতা হ্রদ। হ্রদ এবং পাহাড়ের কোলেই অবস্থিত গ্রামটি।

ওয়েনাড় জেলার উপরিভাগে কালপেট্টায় প্রথমে ২০০ মিলমিটার বৃষ্টিতে ধস নামে চুরালমালা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের গ্রাম মুন্ডাক্কাইয়ে। ধসের উৎস এখান থেকেই। গভীর রাতে হড়পা বানের সঙ্গে ‘গোটা পাহাড়টাই’ যেন নেমে আসে নীচের দিকে। মুষলধারে বৃষ্টি কালপেট্টা, চুরালমালা, মুন্ডাক্কাই-সহ ওড়েনাড়ের বেশ কিছু জায়গায়। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন পাহাড়ি গ্রামগুলোতে নিবিড় নিস্তব্ধতা ভেঙে মধ্যরাত থেকে ভোরের মধ্যে আছড়ে পড়ল প্রকৃতির রোষ। বালি-কাদার স্তূপের সঙ্গে বয়ে নিয়ে চালিয়ার নদীর মধ্যে দিয়ে নীচের দিকে দুরন্ত গতিতে নামছিল ধস। পুরো মুন্ডাক্কাইকে নিশ্চিহ্ন করে চুরালমালাকে লন্ডভন্ড করে সেই ধস এগিয়ে চলেছিল দু’টি গ্রাম গ্রাস করতে। অট্টামালা এবং নুলপুঝাতে গিয়ে আছড়ে পড়ে সেই ধস। চারটি গ্রাম মিলিয়ে ২২ হাজার লোকের বাস। ওয়েনাড়ের মানচিত্র থেকে প্রায় মুছে গিয়েছে মুন্ডাক্কাই। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া এই চার গ্রামে মূলত চা এবং কফি শ্রমিকদেরই বাস। গভীর রাতে ধস নামায় কেউ পালানোর বা নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার সুযোগটুকুও না পেয়ে কাদা, বালি আর পাথরের নীচেই চাপা পড়ে গিয়েছেন। গ্রাম থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত এই ধসের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৫১ জনের। দুশোরও বেশি মানুষ নিখোঁজ।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed