February 18, 2025

হৃদয় জিতলেন মোহনবাগানের রত্ন-সৌরভ, আর্থিক পুরস্কার ক্লাবকে ফিরিয়ে দিলেন মহারাজ

0
Mohunbagan

মোহনবাগানের আর্থিক পুরস্কার ক্লাবকে ফিরিয়ে হৃদয় জিতলেন রত্ন-সৌরভ। ‘কলকাতা ময়দানই হৃৎপিন্ড।’ মোহনবাগান রত্ন সম্মান হাতে মঞ্চ থেকে বললেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। করতালিতে ফেটে পড়ল মোহনবাগান ক্লাব। মোহনবাগান ক্লাবের সঙ্গে সৌরভের ইতিহাস নিবিড় ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। শুধু মোহনবাগান কেন, অপর প্রধান ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গেও সৌরভের নিবিড় যোগ। কাকতলীয়ভাবে একই বছরে ময়দানের দুই প্রধান সৌরভকে সর্বোচ্চ সম্মানে সম্মানিত করল।

১ তারিখ ইস্টবেঙ্গল দিবসেও ভারতগৌরব সম্মান নিতে যাবেন সৌরভ। মোহনবাগান রত্ন ক্লাব ছেড়ে বেরনোর সময় জানাতে ভুললেন না। স্পোর্টিং ইউনিয়ন থেকে কীভাবে মোহনবাগানে সৌরভকে ছিনিয়ে এনেছিলেন সবুজ-মেরুন কর্তারা সেই স্মৃতি উস্কে দিলেন বাগান সভাপতি টুটু বসু। অরুণ লালের বাড়িতে মহারাজকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। সৌরভের মা-কে বুঝিয়ে মোহনবাগানে নিয়ে এসেছিলেন টুটু বসুরা। পাশে বসে নস্টালজিক হয়ে পড়ছিলেন বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর।

মহানুভব সৌরভ আর্থিক পুরস্কার ক্লাবকে ফিরিয়ে দিলেন। মোহনবাগান রত্ন হিসেবে সাম্মানিক ২ লাখ টাকা ক্লাবে ইয়ুথ ডেভলপমেন্টের কাজে ব্যবহার হোক। চান সৌরভ। মহারাজের এই সিদ্ধান্ত ময়দানপ্রেমী মানুষের হৃদয় আবার জিতে নিল। মোহনবাগান রত্ন পেয়ে গর্বিত ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক। দিল্লি ক্যাপিটালসের কোচ হওয়ার দৌড়ে সৌরভের নাম ভাসছে। দিল্লির ক্রিকেট ডিরেক্টরকে দেখা যেতে পারে নতুন ভূমিকায়। ১ তারিখই বৈঠক দিল্লিতে। সেদিনই ছবি পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে। ১ তারিখ বিকেলের বিমানেই কলকাতা ফিরে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে যাবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

জেমি ম্যাকলারেনের আনুষ্ঠানিক আগমনের পর মোহনবাগান দিবসের সন্ধেও জাঁকজমক। এক ছাদের নীচে তারকার মেলা। মন্ত্রী থেকে শুরু করে ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া সংগঠক। কে নেই! তবে যাবতীয় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে সৌরভ গাঙ্গুলি। মোহনবাগান রত্ন পেলেন বাংলার মহারাজ। উত্তরীয়, স্মারক দিয়ে বরণ করা হয় তাঁকে। মোহনবাগান রত্ন সম্মান সৌরভ গাঙ্গুলির হাতে তুলে দেন ক্লাবের সচিব দেবাশিস দত্ত। সঙ্গে পুরস্কার মূল্য। তবে চেক ফিরিয়ে দেন সৌরভ। এই অর্থ মোহনবাগানের ইউথ ডেভেলপমেন্টে ব্যয় করার পরামর্শ দেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক।

দু’দিন পরই ‘ভারত গৌরব’ সম্মানে তাঁকে ভূষিত করবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। এদিন মোহনবাগান রত্ন পেয়ে সৌরভ জানালেন, তাঁর বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। ময়দানের দুই ক্লাবেই খেলেছেন। তবে যাত্রা শুরু হয় মোহনবাগান দিয়ে। স্পোর্টিং ইউনিয়ন থেকে মোহনবাগানে খেলতে এসেছিলেন। অরুণলালের বাড়িতে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল তাঁকে। ঐতিহাসিক দিনে উঠে এল সেই গল্প।

সৌরভ বলেন, ‘ময়দানে আমার বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। আমি দুটো ক্লাবেই খেলেছি। তাই সম্মানিত হয়ে ভাল লাগছে। মোহনবাগান ক্লাব নিয়ে বেশি বোলার দরকার পড়ে না। এই ক্লাব সারা পৃথিবীর মানুষ চেনে। ১৯১১ সালের ২৯ জুলাই একটি স্মরণীয় দিল। মোহনবাগান স্পোর্টিং ক্লাব ছিল। এক সাহেব নাম পাল্টায়। খেলার মাঠ ইতিহাসের জায়গা। মানুষ ইতিহাস মাথায় রেখে যেকোনও ক্রীড়াকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আমি শুধু ১৯১১ দিয়ে মোহনবাগানকে যাচাই করি না। আমার বড় হওয়া ফুটবলের মাঠে। রোজ বিকেলে চারটেয় বাবার মেম্বারশিপ নিয়ে আমি ব়্যাম্পার্টে বসে খেলা দেখতাম। সবার খেলা দেখেছি। মোহনবাগান ক্লাব প্রচুর রত্ন দিয়েছে বাংলার তথা ভারতীয় ফুটবলকে। ৯০ মিনিট লড়াইয়ের। তার বাইরে বাকি সমস্ত ক্লাবকে একজোট হতে হবে। আমার কাছে খেলার মান এগিয়ে নিয়ে যাওয়া জরুরি। বাংলা সন্তোষ জেতেনি। বাইরের প্লেয়াররা খেলে। তিনটে বড় ক্লাব এবং ময়দানের বাকি সব ক্লাবকে ফুটবলের মান বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। ময়দান পশ্চিমবঙ্গের খেলাধুলোর হার্টবিট। খেলার প্রতি সততা বজায় রাখতে হবে। আমার সময় মোহনবাগান মাঠে একটা মাত্র প্র্যাকটিস পিচ ছিল। দুপুরে স্কুল কলেজের পর মাঠে এসে সেই পিচে ঘণ্টার পর ঘন্টা কাটিয়েছি।’ শুরুর দিনগুলোর স্মৃতি তুলে ধরেন সৌরভ।

মোহনবাগান দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, খাদ্যমন্ত্রী অরূপ রায়, বিধায়ক মদন মিত্র, নারী কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা, ডেপুটি মেয়র অতীন‌ ঘোষ প্রমুখ। বাংলার ফুটবলকে আবার স্বমহিমায় দেখতে চান ক্রীড়ামন্ত্রী। একই সঙ্গে ১৯১১ শিল্ড জয় নিয়ে হিন্দি সিনেমা করার আবেদন‌ জানান। অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা পিছিয়ে পড়ছি। ১২ বছরে সন্তোষ ট্রফি পাইনি। সম্বরণ ব্যানার্জি ছাড়া কেউ রঞ্জি দিতে পারেনি। কবে বাংলার ছেলেরা খেলবে? কবে আরেকটা শিবদাস ভাদুড়ী আসবে? কলকাতা ফুটবলের আতুরঘর।‌ তিন ক্লাবকে বলব বাংলার ছেলেদের তুলে আনতে। ১৯১১ ভারতীয় ফুটবলার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আমি চাই একটা হিন্দি সিনেমা তৈরি হোক ১৯১১ শিল্ড জয় নিয়ে।’

মোহনবাগান দিবসে ১৯১১ সালের শিল্ডজয়ী দলের পরিবারকে সংবর্ধিত করা হয়। ১৯৩৯ সালের প্রথম লিগ জয়ের অধিনায়ক বিমল মুখার্জিকে জীবনকৃতি সম্মানে ভূষিত করা হয়। তাঁর পরিবারের সদস্যদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। সেরা ফুটবলার মনোনীত হন দিমিত্রি পেত্রাতোস। ভিসা সমস্যায় কলকাতায় এসে পৌঁছতে পারেননি অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার। তাঁর পুরস্কার গ্রহণ করেন মনবীর। সেরা ফরোয়ার্ড মনবীর সিং। অরুণ লাল নামাঙ্কিত সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পান অভিলিন ঘোষ। বর্ষসেরা উদীয়মান ফুটবলার হন সুহেল আহমেদ ভাট। হকিতে পুরস্কার পান সৌরভ পাস্সি। সেরা অ্যাথলিটের পুরস্কার পান করুনাময় মাহাতো।

অঞ্জন মিত্র নামাঙ্কিত সেরা আয়োজক পুরস্কার পেলেন সৌরভ পাল। প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক অবসরপ্রাপ্ত রেফারি দীলিপ সেনকে সম্মানিত করা হয়। বিশিষ্ট সাংবাদিক দেবাশিস দত্ত পান সেরা সাংবাদিকের পুরস্কার। সেরা সমর্থক বাপি মাঝি এবং অজয় পাসওয়ান।

জমকালো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মোহনবাগানের সভাপতি টুটু বসু, সচিব দেবাশিস দত্ত সহ বাগানের বাকি কর্তারা। এছাড়াও ছিলেন ভিক্টর অমলরাজ, বিদেশ বসু, সুব্রত দত্ত, সোমা বিশ্বাস, বাবলু কোলে, সৈয়দ নৈমুদ্দিন, স্নেহাশিস গাঙ্গুলিরা। অনুষ্ঠান শেষ হয় অন্বেষার গান দিয়ে।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed