‘ফলস ন্যারেটিভ তৈরি করবেন না,মাইক বন্ধ হয়নি’, মমতাকে ‘সত্য’ বলার পরামর্শ নির্মলা সীতারামনের
রাষ্ট্রপতি ভবনে নীতি আয়োগের বৈঠক হয়। বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার সাত জন মুখ্যমন্ত্রী এদিনের বৈঠক বয়কট করেছিলেন। বিরোধী জোটের একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু, মাঝপথে বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তিনি বিরোধীদের কথা বলতে চেয়েছিলেন। বাজেটে বৈষম্যের কথা তুলেছিলেন। কিন্ত, বলতে দেওয়া হয়নি। মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই কারণে তিনি বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর মাইক অফ করা হয়নি। ঘড়ি দেখিয়ে জানানো হয়েছিল নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি আয়োগের বৈঠক থেকে ওয়াক আউট এবং মাইক বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে শোরগোল পড়তেই, কেন্দ্রের তরফে সাফাই দিয়ে জানানো হয়, “মধ্যাহ্নভোজের পর বক্তব্য রাখার কথা ছিল। কিন্তু দিল্লি থেকে ফেরার তাড়া থাকায়, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুরোধে বৈঠকের সপ্তম স্পিকার করা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।” কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, কোনও বেল বাজানো হয়নি। ঘড়ি দেখিয়ে জানানো হয়েছিল সময় শেষ। মধ্যাহ্নভোজ শেষ হওয়ার পর ফের বলার সুযোগ পেতেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তার আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওয়াক আউট করেন।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। আমরা সবাই ওঁর কথা শুনেছি। প্রত্যেক মুখ্যমন্ত্রীকে একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছিল বক্তব্য রাখার জন্য এবং নির্ধারিত সময় প্রতিটি টেবিলের সামনে রাখা স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছিল। উনি মিডিয়ায় বলেছেন যে ওঁর মাইক অফ করে দেওয়া হয়েছিল। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন যে তাঁর মাইক অফ করে দেওয়া হয়েছিল। মিথ্যার উপরে কাহিনি তৈরি না করে, ওঁর উচিত সত্য বলা।”
মমতার বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসার পরই দিল্লির রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে। তাঁর মাইক বন্ধের অভিযোগ ওড়ায় কেন্দ্র। তড়িঘড়ি ভিডিয়ো বার্তায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, “উনি মিডিয়ায় বলেছেন যে ওঁর মাইক অফ করে দেওয়া হয়েছিল। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন যে তাঁর মাইক অফ করে দেওয়া হয়েছিল। মিথ্যার উপরে কাহিনি তৈরি না করে, ওঁর উচিত সত্য বলা।” কেন্দ্র যুক্তি দিলেও ততক্ষণে দিল্লির রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রে মমতা। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিয়ে তিনি বোঝালেন, কেন্দ্র বিরোধী রাজ্যগুলির সঙ্গে বঞ্চনা করছে। তিনি যে ইন্ডিয়া জোটের অংশ সেই বার্তা দিলেন।
“আমার বক্তব্য যেই ৫ মিনিটে পড়তে যাবে বেল টিপে টিপে স্টপ স্টপ। আমিও বললাম, ওকে। শুনতে না চাইলে আমি চললাম। আমি বয়কট করে চলে এসেছি। আমি বিরোধীদের মধ্যে একা গিয়েছি, আমাকে আধঘণ্টা সময় দেওয়া। আমি এতটাও অনুপযুক্ত নয় যে সময় মেনটেন করব না।” দিল্লি থেকে ফিরেই কেন্দ্রকে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার কলকাতায় পা রেখে মমতা বলেন, এরপর থেকে সম্মান না পেলে আর তিনি দিল্লির বৈঠকে যাবেন না। মমতা বলেন, নীতি আয়োগের বৈঠকে বঞ্চনা নিয়ে সরব হতেই বারবার বেল বাজানো হতে থাকে। এই ধরনের ঘটনা অসম্মানজনক বলে মনে করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেনেবুঝে তাঁকে অপদস্থ করা হয়েছে বলে দাবি করেন মমতা।
মমতা বলেন, বিরোধীরা কেউ যায়নি বৈঠকে। সকলে বয়কট করেছিল। সকলের কথা বলতেই নীতি-বৈঠকে যেতে রাজি হন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, “বাংলার বঞ্চনা ও সারা দেশে যেখানে বিরোধীরা ক্ষমতায়, সেই রাজ্যগুলির বঞ্চনা নিয়ে ৩-৪ মিনিট যা পেরেছি বলেছি। শুরুতেই রাজনাথজি বলেছিলেন, ৫-৭ মিনিট। আমাকে তো সাত মিনিটও দিল না। তাহলেও বাদবাকিটা বলে দিতাম। তোমার বেলায় বিশ মিনিট, তোমাদের বেলায় স্পেশাল প্যাকেজ, অন্যদের বেলায় শূন্য? আমি বয়কট করে ঠিক করেছি, বাংলার মানুষের সম্মান মাথানত করতে দিইনি। বাংলার বঞ্চনা মানছি না মানব না।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, অসমের মুখ্যমন্ত্রী, অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী কেউ ১৫ মিনিট কেউ ২০ মিনিট বলেছেন। অথচ তিনি পাঁচ মিনিট বলতে না বলতেই বারবারবেল বাজানো হয়।
মমতা বলেন, “আমি বাংলার বঞ্চনার কথা বলেছি। আমাদের ১ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকা বকেয়া। এই বছর টাকাটা আরও বাড়বে। ১০০ দিনের টাকা বন্ধ, ফুড সাবসিডি বন্ধ, গ্রামীণ আবাস যোজনার কাজ বন্ধ। উনি নাকি ৪ কোটি বাড়ি করে দিয়েছেন। আসলে বোধহয় স্বাধীনতার সময় থেকে ধরছেন। তখন যে ওনারা ছিলেন না অন্য দল ছিল ভুলে গিয়েছেন। এসব বলছিলাম, দেখলাম বারবার বেল বাজাচ্ছে। রাজনাথ সিং, একপাশে প্রধানমন্ত্রী, অন্য পাশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। নিশ্চয়ই বলে দিয়েছেন ওনারা। আমার আগে চন্দ্রবাবু নাইডু বলেছেন ২০ মিনিট। অসমের মুখ্যমন্ত্রী, অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী কেউ ১৫ মিনিট কেউ ২০ মিনিট বলেছেন।”