আন্দোলনের বলি একরত্তি, জারি কার্ফু, ধৃত ১৭৫৮! বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়াল! স্কুল-কলেজ আপাতত বন্ধ
হাসপাতালে একরত্তি রিয়ার মৃত্যুর কারণ হিসাবে লেখা হয়েছে ‘গানশট ইনজুরি’। কন্যার মৃত্যুর খবরে দিগ্বিদিকশূন্য হয়ে পড়েন গোপ দম্পতি। “আমার ছোট মা-রে, তুই আমাদের ছেড়ে চলে গেলি। তোরে ছাড়া আমরা কেমনে বাঁচব। কোথা থেকে কী হয়ে গেল, কিছুই বুঝি নাই। আমার কোলেই মেয়ের মাথা থেকে রক্ত বেয়ে পড়ছিল।” দীপক এবং বিউটির একমাত্র সন্তান ছিল রিয়া। স্থানীয় একটি ইমারতি সামগ্রীর দোকানে কাজ করেন দীপক। বিয়ের পাঁচ বছর পর তাঁদের কন্যাসন্তান হয়েছিল। এ বছরই স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রিয়াকে ভর্তি করিয়েছিলেন গোপ দম্পতি। সংঘর্ষই কেড়ে নিল ছোট্ট এক শিশুর প্রাণও। রিয়া গোপ। বছর সাড়ে ছয়। বাবা-মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ সদরের নয়ামাটি এলাকায় থাকত।দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর ছাদে খেলতে গিয়েছিল ছোট্ট রিয়া। এলাকা অশান্ত। রিয়াদের বাড়ির সামনে সংঘর্ষ শুরু হয়।
আতঙ্কিত দীপক কুমার গোপ এবং তাঁর স্ত্রী বিউটি। কন্যাকে ছাদ থেকে নিয়ে আসার জন্য ছোটেন দীপক। কন্যাকে কোলে নিতেই রাস্তা থেকে ছোড়া একটি গুলি এসে লাগে রিয়ার মাথায়। জামা রক্তে ভিজে যাচ্ছে। কন্যার মাথা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। দীপকের কাঁধে মাথা রেখে নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল ছোট্ট রিয়া। কন্যাকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটেন দীপত। বাড়ির কাছেই একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয় রিয়াকে। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। দ্রুত অস্ত্রোপচারও করা হয় রিয়ার। ৭২ ঘণ্টা পার করে তিন দিন কেটে যায়। রিয়ার আঙুলের নড়াচড়া দেখে আশার আলো দেখেছিলেন গোপ দম্পতি। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালেই মৃত্যু হয় রিয়ার।
বাংলাদেশে এখনও জারি কার্ফু। ঢাকা-সহ চার জেলায় সাত ঘণ্টার জন্য কার্ফু শিথিল। চার ঘণ্টার জন্য খুলেছে অফিস-কাছারি। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিও সীমিত পরিসরে খোলা রাখার অনুমতি পেয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি খুলছে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার জন্য অপেক্ষায় হাসিনার সরকার। পর্যায়ক্রমে খোলা হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অশান্তিতে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই দুশো ছাড়িয়েছে। বিক্ষোভ ও বিক্ষোভ পরবর্তী সংঘাতে অন্তত ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকার রাজপথে পুলিশি টহল জারি। মোতায়েন সেনাবাহিনী এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের জওয়ান। দেশ জুড়ে ১৭৫৮ জনকে গ্রেফতার। অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে ধৃতদের তালিকায় বিএনপি ও জামাতের বেশ কয়েক জন নেতাও।