মোহনবাগানে অজি বিশ্বকাপার, ডার্বি খেলতে মুখিয়ে পাঁচ সোনার বুট পায়ে মহাতারকা!
বিশ্বকাপার জেমি ম্যাকলারেন। মোহনবাগানের সবচেয়ে বড় চমক। অস্ট্রেলীয় ফুটবলার মোহনবাগানে সই করেলেন। পাঁচ সোনার বুট পায়ে মোহনবাগানে মহাতারকা! ডার্বি খেলতে মুখিয়ে অজি বিশ্বকাপার চলে এলেন। ভারতীয় ফুটবলে অন্যতম পাওয়ারহাউস মোহনবাগান সুপার। ধারাবাহিক ট্রফির বিচারে গঙ্গাপারের শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবের ধারেকাছে কোনও ক্লাব নেই। আসন্ন আইএসএলের জন্য সবুজ-মেরুন তৈরি করছে আগুনে স্কোয়াড। বাগানের জার্সিতে জেসন কামিন্স, দিমিত্রি পেত্রাতোসের পাশে এবার অস্ট্রেলীয় বিশ্বকাপার জেমি ম্যাকলারেন।
৫ বারের সোনার বুট জয়ী ফুটবলার ৪ বছরের চুক্তিতে সই কলেন মোহনবাগানে। ২৯ জুলাই দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ধুমধাম করে পালিত হবে সবুজ-মেরুনের প্রতিষ্ঠা দিবস ওরফে মোহনবাগান দিবস। আর ওই দিনই জোসে মোলিনার কোচিংয়ে দিমি-কামিন্সদের সঙ্গে অনুশীলন শুরু করবেন ম্যাকলারেন। ভারতে খেলতে আসার প্রসঙ্গে ম্যাকলারেন বলেন, ‘ইয়ান হিউম যখন আইএসএলে খেলতেন, তখন থেকেই আমি অস্ট্রেলীয়ার একটি স্পোর্টস চ্যানেলে ভারতের ফুটবল ম্যাচগুলি দেখতাম। বেশ কিছু বিশ্ববন্দিত তারকা ফুটবলারকে খেলতেও দেখেছি। কিন্তু মোহনবাগানে আমার খেলতে আসার পিছনে কাজ করেছে এই ক্লাবের ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং ট্রফি জেতার উদগ্র ইচ্ছাশক্তি। যা আমার মানসিকতার সঙ্গে সবসময় মেলে। অস্ট্রেলিয়াতে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। বহু সম্মান অর্জন করেছি। তাই দেশের বাইরে আমি এমন একটা দলের সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়েছিলাম, যে দলের ফুটবলার ও স্টাফেরা ইতিমধ্যেই নিজেদের প্রমাণ করেছেন। মোহনবাগানের সদস্য সমর্থকদের ক্লাবের প্রতি আবেগ, উচ্ছ্বাস ও ভালবাসাও আমাকে এই ক্লাবে টেনে এনেছে। মেরিনার্সদের সামনে মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে আছি। মাঠের বাইরেও আমার আর একটা আগ্রহ আছে। সেটা আমার সঙ্গে আমার স্ত্রীরও আছে। তা হল ভারতীয় খাবার। ভারতীয় খাবার আমার খুব প্রিয়। ভারতে পৌঁছে কিছু ভাল খাবার খাওয়ার জন্যও মুখিয়ে রয়েছি।’
১৮ অগস্ট যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে রয়েছে ডুরান্ড ডার্বি, ভরা সল্টলেক স্টেডিয়ামে খেলতেও মরিয়া বিশ্বকাপার বলেন, ‘দেখুন, কলকাতা ডার্বির সঙ্গে আমি পরিচিত। অনেক ডার্বি দেখেছি। স্টেডিয়ামের ৬০ হাজার দর্শক ডার্বির দিন যে পরিবেশ সৃষ্টি করে তা এককথায় অসাধারণ। আমি জানি, ক্লাবের সমর্থকদের কাছে এই ডার্বির আবেগ ও মাহাত্ম্য আলাদা।’ পাশে পাবেন স্বদেশীয় দিমি-কামিন্সকেও। খেলেছেন গ্রেগ স্টুয়ার্টের সঙ্গেও। ম্যাকলারেন বলেন, ‘দিমি এবং জেসন কামিন্স। এই দু’জনের সঙ্গে একই দলে এবং বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা আমার আছে। দিমি আক্রমণ তৈরি করতে সিদ্ধহস্ত। সাহসী ফুটবলার। স্ট্রাইকারদের জন্য ঠিকানা লেখা গোলের পাস বাড়ায়। আমি জানি মোহনবাগানেও ও আমাকে দারুণ দারুণ সব গোল করার বল দেবে এবং নিজেও গোল করবে। আর কামিন্স! ওর বাঁ-পা আমার ডান পায়ের রেপ্লিকা। দুর্দান্ত। এডিনবার্গের হিবারনিয়ান ক্লাবে আমি আর জেসন একসঙ্গে খেলতাম। দু’জনেরই তখন বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে বল নিয়ে ঢুকে পড়াটা ছিল অভ্যাস ও পছন্দের। স্বাভাবিকভাবেই কোনও একজন গোলও করে ফেলতাম। যা ৯ নম্বর জার্সিধারীরা করে থাকে। আর আক্রমণে আমাদের আর এক সতীর্থ গ্রেগ স্টুয়ার্টকেও আমি এসপি এলে খেলার সময় থেকেই জানি। ও যে বিপক্ষে দলের ত্রাস হয়ে উঠতে পারে, সেটা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে। গ্রেগ ভারতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে আগেই। আমি ক্লাবের সদস্য-সমর্থকদের আস্বস্ত করছি যে আমাদের মানিয়ে নিতে কোনও সমস্যা হবে না এবং সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণ করতেও আমরা বদ্ধ পরিকর।’
এ লিগের ইতিহাসে সর্বাধিক গোলশিকারি ম্যাকলারেন চ্যাম্পিয়ন দল মেলবোর্ন সিটি এফসি থেকে শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবে আসছেন। গোলমেশিন ম্যাকলারেন অস্ট্রেলীয় লিগের পাঁচবারের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসাবে পাঁচটি সোনার বুটই নয়, তিরিশ বছর বয়সের এই মহাতারকা সে দেশের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বাধিক গোলদাতাও। এ লিগে সবমিলিয়ে ১৫৪ টি গোল আছে তাঁর ঝুলিতে। যে ক্লাবকে জেমি চ্যাম্পিয়ন করে মোহনবাগানে ফেলতে আসছেন, সেই মেলবোর্ন সিটির হয়ে গত মরসুমে (২০২২-২৩) মোট ২৪ টি গোল করেছেন। মেলবোর্ন সিটির মতো চ্যাম্পিয়ন ক্লাবের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনিই। মেলবোর্ন সিটিতে টানা পাঁচ বছর খেলেছেন জেমি। করেছেন ১৪২ ম্যাচে ১০৩ গোল। কাতারে অনুষ্ঠিত শেষ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলীয়ার জার্সিতে নামার আগে জেমি ক্লাব ফুটবলে খেলেছেন পার্থ গ্লোরি, ব্রিসবেন রোয়ার্সের মতো দলে। মোলিনার দলে জেমি যোগ দেওয়ায় আইএসএলের ইতিহাসে সম্ভবত একটি নজিরবিহীন ঘটনা। একসঙ্গে তিন বিশ্বকাপার খেলবেন একই ক্লাবের জার্সিতে।