October 11, 2024

অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশে নিহত ৩২! ঢাকায় সংঘর্ষ, সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন

0

বাংলাদেশে সংরক্ষণ বিরোধী বিক্ষোভ। সংঘর্ষে ৩২ জনের মৃত্যু। গুলির আঘাতে, কারও ধারালো অস্ত্রের কোপে মৃত্যু। রাজধানী ঢাকাতেই মৃত্যু ১১ জনের। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই পড়ুয়ার বয়স ৩০-এর নীচে। একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রেরও মৃত্যু হয়েছে। সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ এবং আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ ছাত্রছাত্রীদের। পুলিশের বিরুদ্ধে পরিস্থিতি সামাল দিতে গুলি চালানোর অভিযোগ। সংঘর্ষে কয়েক জন পুলিশকর্মীও জখম হয়েছেন। ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা। বাংলাদেশের হিংসায় আহতের সংখ্যা শতাধিক। শেখ হাসিনা সরকার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নীতিগত ভাবে সহমত। আলোচনায় বসতেও চেয়েছেন দেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছে বাংলাদেশের চেম্বার আদালত অর্থাৎ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগের মধ্যবর্তী আদলত।

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অশান্ত বাংলাদেশ। বাংলাদেশে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত। দেশের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ। বন্ধ মেট্রো দেশ জুড়ে ইন্টারনেট ব্যবস্থাতেও অশান্তির প্রভাব। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, সমাজমাধ্যম ব্যবহার করে কিছু মানুষের গুজব এবং অপপ্রচার রুখতে এবং জাতীয় সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে ইন্টারনেটে রাশ টানা হয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতরও। সরকারের নীতির বিরোধিতা করে এবং পুলিশের আচরণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরোধী নেতৃত্ব। শাসকদল আওয়ামী লিগ বনাম বিএনপি-জামাত। শাসকদলের নেতা-কর্মীদের রাস্তায় নেমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরামর্শ দেশের সড়ক পরিবহণ এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সে দেশে মোট ৫৬ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল এবং ৪৪ শতাংশ আসন সাধারণের জন্য নির্ধারিত ছিল। ৫৬ শতাংশের মধ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত পদ ছিল। ২০১৮ সালে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা নির্দেশ জারি করে মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং জেলা খাতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বাতিল করে দেন। জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ সংরক্ষণ। সাত জন মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ২০১৮-র সংরক্ষণ বাতিলের নির্দেশনামার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১-এ হাই কোর্টে যান। ৫ জুন হাই কোর্ট রায় দেয়, হাসিনা সরকারের নির্দেশ অবৈধ। নির্দেশনামা বাতিলের অর্থ ফের আগের মতো সংরক্ষণ ফিরে আসা। তার প্রতিবাদেই ফের আন্দোলনে নামেন ছাত্ররা। হাসিনা সরকার হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদনে রবিবার মামলার শুনানির দিন ধার্য।

ঢাকা, চট্টগ্রাম-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলন এবং সংঘর্ষে নিহত ৩২।ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চার জনের দেহর মধ্যে কারও ছররা গুলির আঘাতে, কারও ধারালো অস্ত্রের কোপে মৃত্যু হয়েছে। মাথায় রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন হাসান মেহেদী, তিনি পেশায় সাংবাদিক। ছররা গুলির আঘাতে মৃত্যু হয়েছে। ৩০ বছরের ওয়াসিম (মাথায় আঘাত), আনুমানিক ২০ থেকে ২২ বছর বয়সি ব্যবসায়ী নাজমুল (ধারালো অস্ত্রের কোপ) এবং ২০ বছরের মহম্মদের (ছররা গুলি) মৃত্যু হয়েছে। নরসিংদীতে ১৫ বছরের তাহমিদ তামিম, ২২ বছরের ইমন মিঞার মৃত্যু হয়েছে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে।

চট্টগ্রামের হিংসায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত ১৮ বছর বয়সি মহম্মদ ইমাদ উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। মৃত্যু হয়েছে ২২ বছরের আরও এক যুবকের, যাঁর পরিচয় জানা যায়নি। রণক্ষেত্রের আকার নিয়েছে রাজধানী ঢাকা। পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষ। যাত্রাবাড়ি এলাকা থেকে একের পর এক লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে পুলিশ এবং শাসকদলের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে মৃত্যু হয় একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রেরও। উত্তপ্ত মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ এলাকা। রামপুরায় বিটিবি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। বাড্ডা এলাকায় এক পথচারী পেশায় মিনিবাসের চালককে পিটিয়ে খুন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আন্দোলনকারীদের আলোচনায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনকারীদের আলোচনায় ডেকে বলেন, ‘‘আমরাও বর্তমান কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে নীতিগত ভাবে সহমত। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাকে এবং শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। (শিক্ষার্থীরা) যখনই বসতে চাইবেন, তা যদি আজ হয়, তা হলে আজই বসতে রাজি আছি আমরা।’’ বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিক এবং পড়ুয়াদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা অর্থাৎ অ্যাডভাইসরি পাঠাল নরেন্দ্র মোদী সরকার। বাংলাদেশের ভারতীয়দের ‘ভ্রমণ বর্জন করা’ এমনকি, ‘বাড়ির বাইরে বেরোনো নিয়ন্ত্রণ করা’র বার্তা দেওয়া হয়েছে বিদেশ মন্ত্রকের নির্দেশিকায়। প্রয়োজনে ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশন এবং চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট এবং খুলনার উপ-হাই কমিশনের ফোন ও হোয়াট্‌সঅ্যাপে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed