চারবার ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত সুদেষ্ণা, ডান দিকটা অসাড় এখনও ছবি আঁকেন বাঁহাতে
এভাবেও ঘুরে দাঁড়ানো যায়! চার চার বার ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ডান দিকটা অসাড় হয়ে যায় সুদেষ্ণার। ফিজিওথেরাপি করে পা’টা সচল হলেও, ডান হাত এখনও অসাড়। এতেও দমে যাননি। বাঁ হাতেই ছবি আঁকা অভ্যাস করে ছবির প্রদর্শনীয় করলেন মধ্যবয়সি সুদেষ্ণা। একক প্রদর্শনী নয়, সঙ্গে ছিল ওঁর কিশোরী মেয়ে সম্পূর্ণারও কিছু ছবি। দক্ষিণ কলকাতার আনোয়ার শা রোডে বোহো ট্রাঙ্ক ক্যাফে নামে একটি ক্যাফেতে গত ১০ জুন থেকে ৯ জুলাই হয়ে গেল সুদেষ্ণা ও ওঁর মেয়ে সম্পূর্ণার ছবির প্রদর্শনী। টাঙানো ছবির প্রায় ৮০ ভাগই বিক্রি হয়ে গেছে।
ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকাই ছিল সুদেষ্ণার ধ্যানজ্ঞান। সময় পেলেই তুলি-পেনসিল নিয়ে বসে পড়তেন। কত জায়গায় কত পুরস্কার জিতে এসেছেন ছবি এঁকে। ছোটবেলা থেকে নানা জনের কাছে আঁকা শিখেছেন বটে, তবে আঁকা নিয়ে নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালবাসেন সুদেষ্ণা। ওঁর মেয়ে সম্পূর্ণার ও আঁকায় হাতেখড়ি মার কাছেই। কিন্তু ২০১০ থেকে ২০২৩–এর মধ্যে মোট চারবার সুদেষ্ণার ব্রেন স্ট্রোক হয়ে যায়। গত বছর আগস্টে স্ট্রোকের পর ধরা পড়ে যে, সুদেষ্ণার কানের পাশে ক্যারোটিড আর্টারিতে ব্লকেজ রয়েছে, জানালেন ওঁর মেয়ে সম্পূর্ণা। খুবই খরচসাপেক্ষ এই চিকিৎসা। খরচের টাকা তোলার তাগিদেই প্রদর্শনীর আয়োজন।
চতুর্থ স্ট্রোকের পর সুদেষ্ণা মুষড়ে পড়েছিলেন। ডাক্তার ও পরিবারের সবার সহযোগিতায় আস্তে আস্তে মনোবল ফিরে পেয়েছেন। স্বামী লোকেশ্বরানন্দের বিশেষ স্নেহের পাত্রী ছিলেন সুদেষ্ণা। ছবি আঁকায় খুব উৎসাহ দিতেন স্বামীজি। আঁকা ছাড়তে বারণ করেছিলেন। আবার নতুন করে বাঁ হাতে আঁকা অভ্যাস করেন সুদেষ্ণা। প্রথম প্রথম মোম রং নিয়ে কাগজের ওপর আঁচড় কেটেই আঁকতেন। কখনও বা গাছের পাতায় রঙ নিয়ে ছাপ দিয়েও আঁকতে চেষ্টা করতেন। ট্যারাব্যাঁকা হতে হতে বাঁ হাতের আঁকাও যথেষ্ট আয়ত্তে চলে আসে সুদেষ্ণার কয়েক মাসের মধ্যেই। মনের কষ্ট, যন্ত্রণা সব যেন বেরিয়ে আসে ওঁর আঁকার মধ্য দিয়ে। অ্যাক্রিলিকের আঁকায় ফুটে উঠে কখনও ঝরা ফুলের অব্যক্ত ব্যথা, কখনও বা বিমূর্ত আঁকায় ধরা পড়ে ক্ষতবিক্ষত মনের কষ্ট।