আড়িয়াদহের পুলিশ আর আদালত সবই জয়ন্ত! ‘জায়ান্ট’কে ছাড়িয়ে আনা না হলে গুলি করে খুন করা হবে, টের পেলেন সৌগত
রাত তখন তিনটে। বেজে ওঠে সাংসদ সৌগত রায়ের মোবাইল।
ঘুম চোখে এপার থেকে , হ্যালো
মঙ্গলবার রাত ৩টের মধ্যে ‘জায়ান্ট’কে ছাড়িয়ে আনা না হলে গুলি করে খুন করা হবে আপনাকে।
প্রথমে কিছুটা থতমত খেয়ে যান সৌগত রায়। তিনি জানান, অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে বাংলা-হিন্দি মিলিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় জয়ন্তকে ছাড়িয়ে আনার জন্য বলা হয়। তা না করলে আড়িয়াদহে ঢুকলে ‘বিপদ’-এর হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। সৌগত বলেন, ‘‘ঠিক সাত মিনিট পরে আর একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে একই হুমকি দেয় কেউ। নগরপালকে নম্বর দু’টি পাঠিয়েছি। আমি এতে বিচলিত নই। আজও কামারহাটি গিয়েছিলাম।’’ নাগরিক মহল বলেন, এটাই হয়তো রাজনৈতিক বুমেরাং। একথা এখন মানুষ বলতে শুরু করেছে, গত কয়েক বছর শাসক দলের আশ্রয়ে থেকে ‘জয়ন্ত’ এলাকায় ‘জায়ান্ট’ হয়ে ওঠেন। আড়িয়াদহ যেন দ্বিতীয় চম্বল। এ দিন নগরপাল জানান, সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে, ক্লাব সংলগ্ন বন্ধ বাজারে রাতে জয়ন্তের শাগরেদ তন্ময় ধর ওরফে বাপ্পার রিভলভার প্রশিক্ষণ দেওয়ার ভিডিয়োও মঙ্গলবার প্রকাশ্যে এসেছে। বাপ্পাও এখন পুলিশের জালে। আর একটি ভিডিয়োও ওই দিন প্রকাশ্যে আসে। তাতে চোর সন্দেহে এক নাবালকের যৌনাঙ্গে সাঁড়াশি চেপে ধরতে দেখা গিয়েছিল জয়ন্তের শাগরেদ প্রসেনজিৎ দাস ওরফে লাল্টুকে। ওই ঘটনাতেও স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১, ৩২৫ (মারাত্মক ভাবে জখম), ৩০৮ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। এই মুহূর্তে পুলিশ কিছু ধারা দিয়েছে ঠিকই কিন্তু পুলিশ রীতিমত ভয় পেতেন এই জয়ন্তকে – যার সঙ্গে সৌগত রায় ও মদন মিত্রের দহরম-মহরম সর্বজন বিদিত। জয়ন্তর বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ থাকলেও রাজনৈতিক ছত্র-ছায়ায় থাকায় এতদিন পুলিশ ছিল নীরব। খবরে প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রী প্রবল ক্ষুব্ধ এই জয়ন্তের উত্থানে।
‘জয়ন্ত’ ওরফে ‘জায়ান্ট’- এখন খবরের শিরোনামে। তার বাবার খাটালের ব্যবসায় সাহায্য করতো জয়ন্ত। করতো দুধ বিক্রি। সৎভাবে পরিশ্রম করে চলতো সুখের জীবন। তারপরেই ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠলেন এলাকার ‘ডন’। এলাকায় অভিযোগ, শাসক দলের ‘ছত্রচ্ছায়ায়’ এসে কামারহাটির ‘ডন’ হয়ে উঠেছিল জয়ন্ত। নেপথ্যে অপরাধের দীর্ঘ অভিযোগ। তাতেই সংযোজন, পরিত্যক্ত জমি দখল করে মাত্র এক বছরের মধ্যে ‘প্রাসাদ’ তৈরি। যদিও এমন শাজাহান আর জয়ন্ত এখন সারা বাংলায় বহু ছড়িয়ে আছে। আড়িয়াদহ মৌসুমী মোড় থেকে কিছুটা এগোলেই প্রতাপ রুদ্র লেন। সেই গলির ভিতরেই মাত্র এক বছরের মধ্যে অট্টালিকা বানাল কী করে জয়ন্ত? প্রশ্ন ছিল সকলেরই। কিন্তু কার ঘাড়ে কটা মাথা আছে যে সেই প্রশ্ন তুলবে!!
জানা যাচ্ছে, ওখানেই একটা ছোট জলাশয় সহ অনেকটা জমি ছিল। বাচ্চার খেলা করতো ওই মাঠে। তারপর? বাকিটা ইতিহাস। নতুন করে নিজেদের নামে জমির কাগজ তৈরী, পৌরসভার অনুমোদন সব ফুৎকারে হয়ে গেলো তার, আর জয়ন্ত হয়ে উঠলো ‘জায়ান্ট’! তার মাথায় ছিল কার আশীর্বাদের হাত? এলাকার সাংসদ ও বিধায়ক একে অপরের দিকে আঙ্গুল তুলছে। জয়ন্ত প্রকাশ্যে বলে বেড়াতো আড়িয়াদহে সেই আদালত আর সেই পুলিশ। প্রথমে বিভিন্ন প্রকল্পে ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ, তার পরে শাসক দলের ‘মদতে’ বাহুবলী হয়ে সেই দ্রব্য ও কর্মী সরবরাহের সিন্ডিকেট তৈরি করে বলেও অভিযোগ। তারপরেই আসলো নতুন শব্দ ‘তোলাবাজি ব্যবসায়।’ আর এখন বাধ্য হয়ে পুলিশ তাকে পাঠিয়েছে জেলে। এলাকার মানুষ জানাচ্ছে, জামিনে মুক্তি পেয়ে হয়তো ওর তোলাবাজির রেট আরো অনেক বেড়ে যাবে।