October 3, 2024

একদিনের নয়,তিন-চার বছরের পরিশ্রমের ফসল:‌রোহিত, মাঠেই ভাংড়া, বিশ্বকাপ জয়ের পর টি-২০ থেকে অবসর ঘোষণা কোহলির

0

১৭ বছর পর টি-২০ বিশ্বকাপ জয় ভারতের। ১৩ বছর পর বিশ্বকাপ। ম্যাচের পর রোহিত শর্মার আবেগ দেখেই বোঝা গিয়েছে এই দিনটি তাঁর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। চোখের জল চেপে রাখতে পারেননি। আবেগে ভাসেন। পরে ট্রফি হাতে তোলার আগে জানান, এর ব্যাখ্যা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ এটা একদিনের নয়, তিন-চার বছরের পরিশ্রমের ফল। রোহিত বলেন, ‘গত তিন-চার বছর ধরে আমরা যার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি সেটা বলে বোঝানো যাবে না। নেপথ্যে অনেক কাহিনী আছে। আজকের এই জয় শুধু একদিনের সাফল্য নয়। গত তিন-চার বছরের ফসল। অনেক চাপের ম্যাচ খেলেছি আমরা, এবং আমরা জয়ী দল হিসেবে শেষ করতে পারিনি। ছেলেরা বোঝে চাপের মধ্যে কী করা উচিত। আজ তারই আদর্শ উদাহরণ। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া সত্ত্বেও আমরা একসঙ্গে লড়াই করেছি। আমরা বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া ছিলাম। ছেলেদের এবং ম্যানেজমেন্টের জন্য গর্বিত। আমাদের ওপর ভরসা রাখার জন্য ধন্যবাদ।’ এর আগে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে হতাশা সঙ্গী হয়েছে। কিন্তু তার থেকে শিক্ষা নিয়েই এদিন সাফল্য পেয়েছে দল। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর বলেছিলেন, হয়তো ফাইনালের জন্য নিজেকে বাঁচিয়ে রাখছেন বিরাট। তাঁর কথা সত্যি হল। এই প্রসঙ্গে রোহিত বলেন, ‘বিরাটের ফর্ম নিয়ে কারোর সন্দেহ ছিল না। গত ১৫ বছর ধরে নিজের সেরা খেলাটা খেলেছে। বড় মঞ্চে তারকা প্লেয়াররা নিজেদের মেলে ধরে। ও আজকে একটা দিক ধরে রেখেছে। যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওকে কেন্দ্র করে বাকিরা ব্যাট করেছে। এই উইকেটে ব্যাট করা সহজ ছিল না। ও সেটা সঠিকভাবে করেছে। এত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছে। অক্ষরের ব্যাটিংও পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।’

টুর্নামেন্টের সেরা যশপ্রীত বুমরা। ভারতীয় পেসারের ভূয়সী প্রশংসা করেন রোহিত। বলেন, ‘আমি জানি না যশপ্রীত কী করে এগুলো করে। এককথায়, মাস্টারক্লাস। নিজের দক্ষতা অনুযায়ী বল করে। যা ওর জন্য যথেষ্ট। তেমনই আত্মবিশ্বাসী।’ রোহিতের কথার ফাঁকেই তাঁকে ইন্টারভিউ বন্ধ করে সেলিব্রেশনে যোগ দেওয়ার জন্য ডাকেন হার্দিক। তর সইছিল না তাঁদের। ট্রফি হাতে তোলার অপেক্ষায় ছিলেন বিরাট, হার্দিকরা।‌ অগত্যা ছোট করে ইন্টারভিউ দিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে সেলিব্রেশনে যোগ দেন ভারতের নেতা। তার আগে অবশ্য হার্দিকের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেন। ধন্যবাদ জানান ফ্যানদেরও। রোহিত বলেন, ‘হার্দিক অসাধারণ বল করেছে। এই পরিস্থিতিতে শেষ ওভার বল করা সহজ নয়। ছেলেদের জন্য গর্বিত। ফ্যানদেরও ধন্যবাদ জানাতে চাই। নিউইয়র্ক থেকে বার্বাডোজ, এবং ভারতের ফ্যানদের কাছে কৃতজ্ঞ। ওরাও অনেকগুলো বছর অপেক্ষা করেছে। এই প্রাপ্তির জন্য গর্বিত।’ রোহিতদের জয়ের পর বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভাল যেন একটুকরো ওয়াংখেড়ে। চক দে, লেহরা দোর গানে গমগম করে স্টেডিয়ামের উদ্দীপনা উপভোগ করেন রোহিতরা‌। ‌

ম্যাচের শেষ বল হওয়া মাত্রই আবেগে ভাসল বার্বাডোজের কেনিংস্টান ওভালে। দু’হাত শূন্যে তুলে প্রথমে হাঁটু মুড়ে মাঠে বসে পড়লেন রোহিত শর্মা। তারপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়েন। চুম্বন করেন মাঠকে। অন্যদিকে ততক্ষণে কান্নায় ভাসিয়ে দেন হার্দিক পাণ্ডিয়া।‌ ম্যাচের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত উপহার দেন তিনি। তাই আবেগ চেপে রাখতে পারেননি। মাস খানেক আগে‌ও তাঁর সঙ্গে রোহিতের সমীকরণ, সম্পর্ক নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। কিন্তু এদিন সব ধুয়ে মুছে একাকার। কে বলবে কয়েকদিন আগে আইপিএলে দুই তারকার মধ্যে মুখ দেখাদেখি প্রায় বন্ধ ছিল! শনিবার বার্বাডোজে হার্দিককে জড়িয়ে ধরেন রোহিত। তারপর ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় সপাটে হার্দিকের গালে চুম্বন রোহিতের। ভারতের পতাকা নিয়ে মাঠ পরিদর্শন করলেন ভারতের সহ অধিনায়ক। জুটিতে দুই মহাতারকার বিশ্বকাপ জয় এই প্রথম।

বিশ্বজয়ের পর একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন রোহিত-বিরাট। মাঠে দাঁড়িয়েই ভিডিও কলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় বিরাটকে। তখনও আবেগ চেপে রাখতে পারেননি। কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রায় প্রত্যেক ক্রিকেটার আবেগে ভাসলেন। জয়ের পর ছুটে গিয়ে সঞ্চালনার ভূমিকায় থাকা স্ত্রী সঞ্জনা গনেশনকে জড়িয়ে ধরেন যশপ্রীত বুমরা। আবেগের বিভিন্ন খণ্ডচিত্র দেখা যায়। লিওনেল মেসির স্টাইলে জয় শাহের হাত থেকে বিশ্বকাপ হাতে তুলে নেন রোহিত শর্মা। ট্রফি রাহুল দ্রাবিড়ের হাতে তুলে দেন কোহলি। তারপর অবিশ্বাস্য দৃশ্যর সাক্ষী থাকল দেশ। ট্রফি হাতে নিয়ে চিৎকার শান্তশিষ্ট দ্রাবিড়ের। খেলোয়াড় জীবনে অধরা ছিল বিশ্বকাপ। এটাই শেষ সুযোগ ছিল দ্রাবিড়ের সামনে। তাই এদিন উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেননি। ট্রফি নিয়ে মাঠ পরিদর্শন করে ভারতীয় দল। গায়ে দেশের পতাকা, হাতে বিশ্বকাপ নিয়ে পোজ দেন রোহিত-বিরাট। শেষে মাঠেই ভাঙরা নাচ কোহলি, অর্শদীপ, অক্ষর, সিরাজের।

দেশের জার্সিতে শেষ টি-২০ ম্যাচ খেলে ফেললাম, বিশ্বকাপ জয়ের পরই ঘোষণা করে দিলেন বিরাট কোহলি। ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিতে এসে নিজেই এই ঘোষণা করলেন। টি-২০ বিশ্বকাপ জিতে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট থেকে অবসর ঘোষণা করলেন কোহলি। জানালেন, বিশ্বকাপ ফাইনালই ভারতের জার্সিতে তাঁর শেষ টি-২০ ম্যাচ হয়ে থাকবে। পরের প্রজন্মের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে চান। কোহলি বলেন, ‘এটাই আমার শেষ টি-২০ বিশ্বকাপ ছিল। বিশ্বকাপ জিততে চেয়েছিলাম, সেটা পেরেছি। মাঝে মাঝে মনে হয় যে আমি রান পাচ্ছি না। তারপরই আবার বড় রান হয়ে যায়। যেদিন সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল, সেদিন আমি দলের জন্য অবদান রাখতে পেরেছি। আমি স্থির করে নিয়েছিলাম, হলে এখনই, নয়তো আর নয়।’

বিরাটের কথা শুনে প্রথমে মনে হয়েছিল হয়তো দু’বছর পর আর টি-২০ বিশ্বকাপে খেলবেন না, কিন্তু বর্তমানে দেশের জার্সিতে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে খেলবেন। কিন্তু পরক্ষণেই ইঙ্গিত স্পষ্ট করে দেন কোহলি। বলেন, ‘ভারতের জার্সিতে এটাই আমার শেষ টি-২০ ম্যাচ ছিল। তাই নিজের সেরাটা দিতে চেয়েছিলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল বিশ্বকাপ জেতা।‌ জোর করে পরিস্থিতি তৈরি করার থেকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া উচিত। নতুন প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার এটাই সেরা সময়। দলে ভাল ক্রিকেটাররা রয়েছে। ওরাই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

টি-২০ তে মোট ১২৫ ম্যাচ খেলেছেন কোহলি। রান ৪১৮৮। গড় ৪৮.৬৯। বিশ্বকাপ জয় প্রসঙ্গে বিরাট বলেন, ‘আমরা একটা বিশ্বকাপ জেতার জন্য এত বছর অপেক্ষা করছি। রোহিত নটা টি-২০ বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছে। আমি ছটা। এই ট্রফির যোগ্য রোহিত। শেষ কয়েকটা ম্যাচে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম না। তবে এইমুহুর্তে সবকিছু উপভোগ করছি। মাথা পেতে নিচ্ছি। এই আবেগ আটকে রাখা কঠিন।’ বিশ্বজয়ের পর নিজেকে আটকে রাখেননি বিরাট কোহলি। সতীর্থদের সঙ্গে অফুরান আনন্দে, উৎসবে মাতেন। মাঠের মধ্যেই ভাংড়া নাচতে দেখা যায় কোহলিকে। তাঁর সঙ্গী ছিলেন অর্শদীপ, অক্ষর, সিরাজরা‌।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed