লোকসভার স্পিকার কোড়িকুন্নিল সুরেশকংগ্রেসের প্রার্থীকেই সমর্থন তৃণমূলের, একতরফা সিদ্ধান্ত মানা হবে না
অষ্টাদশ লোকসভার স্পিকার পদের ভোটাভুটি। কংগ্রেস সাংসদ কোড়িকুন্নিল সুরেশকে সমর্থন তৃণমূলের। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বাড়িতে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে সর্বসম্মত ভাবে সুরেশকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত। তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভা নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন হাজির ছিলেন বৈঠকে। স্পিকার পদে কংগ্রেসের মনোনয়ন মেনে নিলেও নতুন লোকসভার অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, বিরোধী জোটের বৃহত্তম দল কংগ্রেস হলেও তাদের কোনও একতরফা সিদ্ধান্ত মানা হবে না। স্পিকার পদে সুরেশকে প্রার্থী ঘোষণা করার আগে তাঁদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি বলে সংসদ ভবন চত্বরে দাঁড়িয়ে সরাসরি অভিযোগ সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
খড়্গের বাড়িতে ‘ইন্ডিয়া’র ওই বৈঠকেই লোকসভার বিরোধী দলনেতা পদে রাহুল গান্ধীর নাম সর্বসম্মত ভাবে অনুমোদন পেয়েছে। কংগ্রেসের সংসদীয় দলের নেত্রী সনিয়া গান্ধী মঙ্গলবারই লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা পদে রাহুলকে মনোনীত করার সিদ্ধান্তের কথা লোকসভার প্রোটেম স্পিকার ভর্তৃহরি মহতাবকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন বলে এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপালের দাবি। স্পিকার পদে ভোটাভুটিতে শাসক জোটের প্রার্থী তথা বিগত লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার জয় নিশ্চিত। অষ্টাদশ লোকসভায় বিরোধী দলনেতা হচ্ছেন রাহুল গান্ধী। মঙ্গলবার রাতে দিল্লিতে বিজেপি-বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে এ বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপাল বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস সংসদীয় দলের নেত্রী সনিয়া গান্ধীজি লোকসভার প্রোটেম স্পিকারকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, রাহুল গান্ধীকে বিরোধী দলনেতা পদে মনোনীত করা হয়েছে।’’৮ জুন দিল্লিতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিত বৈঠকে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাহুলকে লোকসভার দলনেতা করার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। ২০১৪ সালে ৪৪ এবং ২০১৯-এ ৫২টি আসনে জেতা কংগ্রেস এ বার লোকসভা নির্বাচনে ৯৯টি আসন জিতে ‘প্রধান বিরোধী দল’-এর মর্যাদা পুনরুদ্ধার করেছে। এক দশক পরে লোকসভায় ফিরতে চলেছে ‘বিরোধী দলনেতা’ পদ। ফলে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা হলে রাহুল ‘বিরোধী দলনেতা’ হবেন।
লোকসভা স্পিকার মনোনয়ন নিয়ে যখন রাজধানী দিল্লি সরগরম, সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘কংগ্রেসের তরফে সাংসদ কে সুরেশকে স্পিকার পদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, বিরোধী জোটের সমস্ত শরিকদের সঙ্গে কথা না বলেই। এ ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি। দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি এই সিদ্ধান্ত একতরফা ভাবে নেওয়া হয়েছে।’’পরে অভিষেক সংসদের ভিতরে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। সাধারণ ভাবে লোকসভার স্পিকার সর্বসম্মতিতেই নির্বাচিত হয়। এ বার তা ভোটাভুটিতে।
শর্ত সম্পর্কে রাহুল জানান, লোকসভার রেওয়াজ হল, ডেপুটি স্পিকার বিরোধী শিবির থেকে বাছতে হবে। সেই রেওয়াজ মানতে হবে এনডিএ সরকারকেও। যদি তা না হয়, তবে এনডিএ-র মনোনীত স্পিকারকে বিরোধীরা সমর্থন করবে না। অতীতে ভিপি সিংহ, পিভি নরসিংহ রাও, অটলবিহারী বাজপেয়ী, মনমোহন সিংহের প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় স্বীকৃত বিরোধীরাই ডেপুটি স্পিকারের পদ পেয়েছে। মোদীর জমানার প্রথম দু’বার স্বীকৃত বিরোধী দলের মর্যাদা অর্জন করতে পারেনি কোনও বিরোধী দল। শপথ নিয়েছেন লোকসভায় তৃণমূলের ২৯ জন জয়ী প্রার্থীর মধ্যে ২৬ জন। শপথ নেননি তৃণমূলের তিন জন। সেই তালিকায় রয়েছেন বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের হাজি নুরুল ইসলাম, ঘাটালের দীপক অধিকারী (দেব) এবং আসানসোল লোকসভার শত্রুঘ্ন সিন্হা। বুধবার স্পিকার নির্বাচনের আগেই নিয়ম মেনে শপথ নিতে হবে তাঁদের। তা না হলে ভোটাভুটিতে তাঁরা অংশ নিতে পারবেন না। ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, এনসিপি, আরজেডি-সহ বিরোধী জোটের বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন।