অনুষ্ঠানে একটাই বিতর্কের ছোঁয়া!আইএসএলকে টেক্কা, জমকালো উদ্বোধনে শুরু কলকাতা লিগ


বিনোদনের সঙ্গে মিশে গেল ফুটবল। কলকাতা ময়দানে যা বেনজির। গত বছর কলকাতা লিগ শেষ করা নিয়ে কম হয়রানি হয়নি। আইএফএর দিকে আঙুল তোলেন অনেকেই। গত বছর থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আসরে নেমেছে বাংলার ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা। যার সূচনা হল কলকাতা লিগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দিয়ে। আইপিএলের আদলে শুরু হয়েছিল আইএসএল। শুরুর কয়েকবছর জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। সবই এখন অতীত। ফাইনালও ছিল ম্যাড়ম্যাড়ে। দেশের একনম্বর লিগকে টেক্কা দিল আইএফএ আয়োজিত কলকাতা লিগ। অন্তত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। প্রথমে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে সংবর্ধনার পালা চলে। শুরু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছোটদের নাচ। পারফর্ম করে বিট ব্রেকার্স। একের পর এক হিট বলিউড গানের সঙ্গে নাচ। তবে আসল আকর্ষণ ছিলেন জিৎ গাঙ্গুলি। টলিউড এবং বলিউডের সুরকার এবং সঙ্গীতশিল্পী মঙ্গল সন্ধের শো স্টপার।
মিনিট দশেক মঞ্চ মাতান। যার শুরুতেই ছিল ‘গোলে মালে গোল।’ এই গান গাইতে গাইতেই মঞ্চে ওঠেন জিৎ গাঙ্গুলী। তারপর একের পর এক চলল সুন্দরী কমলা নাচে, ভজো গৌরাঙ্গ, ১০০ % লাভ। তারপর লেজার শো। তাতে উঠে এল উদ্বোধনী ম্যাচের দুই দলের নাম। এককথায় অনবদ্য। শেষে আতশবাজি প্রদর্শনী। সব মিলিয়ে ঘণ্টা খানেকের জাঁকজমক অনুষ্ঠান। উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, আইএফএ সভাপতি অজিত ব্যানার্জি, চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত, সচিব অনির্বাণ দত্ত সহ আইএফএর বাকি কর্তারা।
আইএফএর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তবে বাংলার ফুটবলের উন্নতিতে একটি আর্জিও পেশ করেন। বর্তমান নিয়ম অনুয়ায়ী চারজন ভূমিপুত্র এবং সাতজন ভিন রাজ্যের ফুটবলার খেলানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে দলে এগারোজন ভূমিপুত্রকে দেখতে চান ক্রীড়ামন্ত্রী। অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘কলকাতা লিগের উদ্বোধনে এত উন্মাদনা দেখে ভাল লাগছে। আমি প্রথমে ঢুকে আইএসএল ভেবেছিলাম। বাংলার ফুটবলকে বাঁচিয়ে রাখার সবরকম উদ্যোগ নিয়েছে আইএফএ। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বয়সভিত্তিক লিগ চালু করেছে। তবে বাংলার ফুটবলের উন্নতি করতে এগারোজন বাংলার ফুটবলারকে খেলাতে হবে। একসময় বাংলা ভারতীয় দলের আতুর ঘর ছিল।

কিন্তু বর্তমানে শুভাশিস ছাড়া দলে কোনও বাঙালি নেই। কলকাতা লিগে ১১ জনের মধ্যে ৭ জন অন্য রাজ্যের। এইভাবে চললে বাংলার ফুটবলের উন্নতি হবে না। আমরা ১৩ বছরে মাত্র একবার সন্তোষ ট্রফি জিতেছি। তাই আমি চাইব, নিয়ম পরিবর্তন করে কলকাতা লিগে এগারো জন বাঙালি ফুটবলার খেলানো হোক।’ সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন এবং ইগর স্টিমাচের সমালোচনা করেন ক্রীড়ামন্ত্রী। কলকাতা লিগের জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একটাই বিতর্কের ছোঁয়া। মাঠের ধারে বাকি দলের পতাকা থাকলেও, ছিল না মোহনবাগানের পতাকা। এই প্রসঙ্গে সচিব অনির্বাণ দত্ত জানান, তাঁরা প্রত্যেক ক্লাবকে চিঠির মাধ্যমে পতাকা পাঠানোর কথা বলেন। যারা পাঠিয়েছে, তাঁদের পতাকা টাঙানো হয়েছে। কিন্তু মোহনবাগানের পতাকা তাঁরা হাতে পায়নি। মোহনবাগান সচিব হয়তো এই বিষয়ে অবগত নয়। কারণ চিঠি পাঠানো হয়েছিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে। পতাকা প্রসঙ্গে দেবাশিস দত্ত বলেন, ‘এটাই আইএফএ। মোহনবাগানের মতো ঐতিহাসিক এবং ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের পতাকা রাখার প্রয়োজন মনে করেনি। মোহনবাগান সমর্থকরা এর জবাব দিয়ে দেবে।’ মঙ্গলবার কলকাতা লিগের প্রথম ম্যাচে উয়াড়ী এফসিকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিল মহমেডান স্পোর্টিং।

কলকাতা লিগের প্রথম ম্যাচই জমিয়ে দিল মহমেডান স্পোর্টিং। গত তিন বার কলকাতা লিগ জিতেছে তারা। এ বারও শুরু করল ভাল ভাবেই। মঙ্গলবার কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামে উয়াড়িকে ৬-০ গোলে হারাল সাদা-কালো ব্রিগেড। জোড়া গোল সজল বাগ এবং লালথানকিমার। একটি করে গোল অ্যাশলে আলবানকোলি এবং থোকচম জেমস সিংহের। উয়াড়ির লিগে খেলা নিয়ে দীর্ঘ দিন অনিশ্চয়তা ছিল। শেষ মুহূর্তে খেলার সুযোগ পাওয়ায় ভাল করে প্রস্তুতি নিতে পারেনি। মাত্র চার দিনের প্রস্তুতিতে কলকাতা লিগের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছিল তারা। তুলনায় প্রথমার্ধে বেশ ভালই খেলে। মাত্র একটি গোল হজম করে তারা। সেটি একক দক্ষতায় করেন সজল বাগ। ডান দিক থেকে বল পেয়ে উঠে গিয়েছিলেন সামনের দিকে। প্রথমে উয়াড়ির দু’জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে নেন। এর পর গোলকিপারকে পরাস্ত করে বল জালে জড়ান। দ্বিতীয়ার্ধে দলের এবং নিজের দ্বিতীয় গোল করেন সজল। সতীর্থের থেকে বল পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে নিচু শটে বিপক্ষ গোলকিপার নবকুমার ঘোষকে পরাস্ত করান। দ্বিতীয় গোলটি খাওয়ার পরেই উয়াড়ির খেলার মধ্যে শ্লথতা লক্ষ করা যায়। তার পূর্ণ ফায়দা নেয় মহমেডান। একের পর এক আক্রমণ করতে শুরু করে তারা। সেই সুযোগ নিয়ে একের পর এক গোল করে যান লালথানকিমা, অ্যালেক্সরা। উয়াড়ি শেষ দিকে প্রায় সবক’টি গোলই খেয়েছে রক্ষণের ভুলে। মহমেডানের খেলোয়াড়েরা দীর্ঘ দিন অনুশীলন করায় তাদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়ে গিয়েছে।