গঙ্গার জলবন্টন চুক্তিতে বাংলা বাদ!মোদী-হাসিনার বৈঠকে অন্ধকারে রাজ্য
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক। তৃণমূলের অভিযোগ, রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখেই মোদী-হাসিনার বৈঠকে নতুন করে ফারাক্কা গঙ্গা চুক্তি সম্পন্ন করার পদক্ষেপ করা হয়েছে।পুরোনো চুক্তির প্রাপ্য টাকা এখনও পশ্চিমবঙ্গ পায়নি। গঙ্গায় ড্রেজিং সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে, যার ফলে বন্যা এবং ভাঙ্গনের সমস্যা তীব্র হয়েছে। দুদিনের সফরে ভারতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জল বণ্টন, নিরাপত্তা ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে বৈঠক। ১০টি মউ স্বাক্ষর হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। পাশাপাশি ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তি সম্পন্ন করার দিকে এগিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করেই মোদী-হাসিনা বৈঠকে নতুন করে ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তি সম্পন্ন করার দিকে এগিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর নিয়ম অনুযায়ী যেকোনও আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রে যে রাজ্যের ভূখণ্ড বা নদীর জলবন্টন নিয়ে চুক্তি হবে, সেই রাজ্যের মতামত অবশ্যই বিবেচ্য। এর আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তির কারণে দিল্লি এবং ঢাকা সহমত থাকা সত্ত্বেও তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৯৬ সালের গঙ্গা জল চুক্তি নিয়ে বরাবর একাধিক প্রশ্ন তুলেছে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার। অভিযোগ, ফারাক্কা ব্যারেজ তৈরি হওয়ার পর থেকেই গঙ্গা তীরবর্তী এলাকায় বন্যা এবং ভাঙ্গনের সংকট তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের বাড়ি, কৃষিজমি গঙ্গার গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদীয়ায় নদী ভাঙনের ইস্যু নিয়ে ২০২২ এর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একাধিকবার এই ইস্যু সংসদে তুলেছেন তৃণমূল-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাংসদরাও। ২০১৭ সালে ফারাক্কা ব্যারেজের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও। ফি বছর বন্যা রুখতে তিনি ফারাক্কা ব্যারেজ ডকমিশন করার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। কোনও ফলপ্রসু হয়নি বলে অভিমত রাজ্য সরকারের।
গঙ্গার জলবন্টন চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ। ১৯৯৬ সালে গঙ্গা ওয়াটার ট্রিটি বা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। আগামী ২০২৬ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ১৯৯৬ সালের চুক্তির শর্তাবলীতে উল্লেখ ছিল, এই চুক্তি পুনর্নবীকরণ করতে হলে দুই পক্ষের সহমতের ভিত্তিতেই করতে হবে। তার আগেই এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা হল দুই দেশের মধ্যে। এদিকে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দাবি, এই চুক্তি ফের বাস্তবায়িত হলে মালদহ, মুর্শিদাবাদ এবং নদীয়ায় বন্যা এবং ভাঙ্গন আরও তীব্র হবে। আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যের মতামত অস্বীকার করার এহেন একতরফা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সংসদে তীব্র প্রতিবাদ করতে চলেছে তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখেই মোদী-হাসিনার বৈঠকে নতুন করে ফারাক্কা গঙ্গা চুক্তি সম্পন্ন করার পদক্ষেপ করা হয়েছে।পুরোনো চুক্তির প্রাপ্য টাকা এখনও পশ্চিমবঙ্গ পায়নি। গঙ্গায় ড্রেজিং সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে, যার ফলে বন্যা এবং ভাঙ্গনের সমস্যা তীব্র হয়েছে।