Friday, April 11, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

ওষুধে কাজ হচ্ছে না?‌ সরাসরি ডায়াল ড্রাগ কন্ট্রোলে! ভেজাল ওষুধে ছেয়ে গেছে বাজার!‌ নিয়ন্ত্রণে দরকার কঠিন শাস্তি

ওয়েস্ট বেঙ্গল ড্রাগ কন্ট্রোল বোর্ডের তরফে কড়া নির্দেশিকা, ওষুধের শিশি/স্ট্রিপ সন্দেহজনক মনে হলেই ফোন করুন ডাইরেক্টরেট অফ ড্রাগ কন্ট্রোলে। নম্বর ২২২৫-২২১৩, ২২২৫-২২১৪। কোনও দোকান থেকে কেনা ওষুধ সন্দেহজনক মনে হলে, অথবা দীর্ঘদিন খাওয়ার পরেও তা কাজ না করলে ইমেল করেও জানানো যাবে অভিযোগ। মেইল করা যাবে tellddcwb@rediffmail.com।

দেওয়া হল একাধিক নির্দেশিকা। খোদ স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে। রিটেইল সপেও ঝোলাতে হবে নন-স্ট‌্যান্ডার্ড কোয়ালিটি ওষুধের তালিকা। ওষুধ মানুষের জীবন রক্ষার রসদ। আজকির দিনে ওষুধই ভেজালে পূর্ণ! কলকাতা থেকে শহরতলি। এমনকি গ্রামাঞ্চলের মানুষকে বোকা বানিয়ে জাল ওষুধের রমরমা। মন রাখতে হবে, কোনও ওষুধের দোকানদার নিজেকে যেন ডাক্তার না মনে করেন?‌ অসহায় মানুষ রিটেইল সপের দোকানদারকে এসে বলেন, ‘‌ডাক্তারবাবু, আমার এই হয়েছে, ওষুধ দিন।’‌ দোকানদার যেন বলেন, সোজা ডাক্তারের কাছে যান। কড়া নির্দেশিকা। ওষুধের দোকানে যথযথ ফার্মাসিস্ট লাইসেন্সধারী ফার্মাসিস্টকেই রাখার উপর কড়াকড়ি নির্দেশ। কলকাতা জুড়ে নাকি ছেয়ে গেছে ভেজাল ওষুধ। কলকাতা থেকে উদ্ধার বিপুল পরিমাণ জাল ওষুধ। কয়েকদিন আগেই সেন্ট্রাল ড্রাগ কন্ট্রোলের অভিযানে ধরা পড়েছিল ৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার জাল ওষুধ। এই সব ওষুধের ওপর বিভিন্ন দেশের স্টাম্প। জাল ওষুধের একটা অংশের উপর রয়েছে বাংলাদেশের স্ট্যাম্পও। এমনকি স্ট্যাম্প দেওয়া আয়ারল্যান্ড, তুরস্ক, আমেরিকার জাল ওষুধও। ওষুধ আমদানির কোনও বৈধ নথি দেখাতে পারেনি সংস্থা। এমএস কেয়ার অ্যান্ড কিওর ফর ইউ নামে সংস্থাই নজরে। এই ঘটনায় এক মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত মহিলাকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হয় বলে খবর। উদ্ধার হওয়া ওষুধের গুণমান যাচাই হচ্ছে কোয়ালিটি কন্ট্রোলে।

বহুদিন ধরেই জাল ওষুধে বাজার ছেয়ে যাওয়ার অভিযোগ। সেপ্টেম্বরেই বাজারে রমরমিয়ে বিক্রি হওয়া বেশ কিছু ওষুধ গুণমান পরীক্ষায় ডাঁহা ফেল। বহুল ব্যবহৃত ওষুধ ‘প্যান ডি’, ক্যালসিয়াম সাপলিমেন্ট ‘শেলক্যাল’ ইত্যাদিএ। ডায়াবেটিসের ওষুধ এমনকি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধও গুণমান পরীক্ষায় ফেল। বুকের ব‌্যথা কমানোর র‌্যানোজেক্স কিংবা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ টেলমা এইচ। বিগত কয়েক মাসে গুণমান পরীক্ষায় ব‌্যর্থ একাধিক জীবনদায়ী ওষুধ। চিন্তায় সাধারণ মানুষ। আমজনতাকে সুরক্ষা দিতে নম্বর প্রকাশ করল ডাইরেক্টরেট অফ ড্রাগ কন্ট্রোল ওয়েস্ট বেঙ্গল। ওয়েস্ট বেঙ্গল ড্রাগ কন্ট্রোল বোর্ডের তরফে নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, ওষুধের শিশি/স্ট্রিপ সন্দেহজনক মনে হলেই ফোন করুন ডাইরেক্টরেট অফ ড্রাগ কন্ট্রোলে। নম্বর ২২২৫-২২১৩, ২২২৫-২২১৪। কোনও দোকান থেকে কেনা ওষুধ সন্দেহজনক মনে হলে, অথবা দীর্ঘদিন খাওয়ার পরেও তা কাজ না করলে ইমেল করেও জানানো যাবে অভিযোগ। মেল করাও যাবে tellddcwb@rediffmail.com। ‘সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন’ সূত্রে খবর, গত তিন মাসে ৩০০টির উপর ওষুধ ল‌্যাবরেটরিতে গুণমান পরীক্ষায় ব‌্যর্থ। পশ্চিমবঙ্গের একাধিক সংস্থার তৈরি ওষুধ। উদ্বিগ্ন রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরও। গুণগত মানের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহার বন্ধ করতে সম্প্রতি নির্দেশিকা জারি করেছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম। পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ব্যাচের ওষুধের তালিকা ও তথ্য সব সরকারি হাসপাতাল, সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর,পাইকারি বিক্রেতা এবং ডিস্ট্রিবিউটরদের নির্দেশিকা দিয়ে জানাতে হবে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলকে। এই সব ওষুধ ব্যবহার না করা হয় কোনওভাবেই।

স্বাস্থ‌্য দপ্তরের নির্দেশ, যে সমস্ত ওষুধ ল‌্যাবরেটরিতে গুণমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি, ‘এনএসকিউ’ অর্থাৎ নট স্ট‌্যান্ডার্ড কোয়ালিটি ওষুধ যেন কোনওভাবেই পাইকারি এবং খুচরো বিক্রেতাদের কাছ থেকে বিক্রি না হয়। নিশ্চিত করতে হবে ‘স্ট্রেট ড্রাগ কন্ট্রোল অথোরিটি’-কে। রাজ্যের প্রতিটি ওষুধের দোকানে অবিলম্বে সেই এনএসকিউ বা নট স্ট‌্যান্ডার্ড কোয়ালিটি ড্রাগের তালিকা ঝোলানোর নির্দেশ স্বাস্থ‌্য দপ্তরের। প্রতিটি ওষুধের দোকান এই তালিকা ঝুলিয়েছে কি না, তা দেখতে ওষুধের দোকানে অতর্কিতে হানা দেবে ওয়েস্ট বেঙ্গল ড্রাগ কন্ট্রোল বোর্ড। ওষুধ ব‌্যবসায়ীদের সংগঠন, বেঙ্গল কেমিস্ট অ‌্যান্ড ড্রাগিস্ট অ‌্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়েছে, কিছু সংস্থা এমনভাবে ওষুধ জাল করছে যে সাধারণ চোখে জাল ওষুধ আর আসল ওষুধ আলাদা করা বেশ কষ্টসাধ্য। বেঙ্গল কেমিস্ট অ‌্যান্ড ড্রাগিস্ট অ‌্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক পৃথ্বী বোসের সাফাই, জাল ওষুধ গড়ার কারিগররা এতটাই নিখুঁতভাবে বানাচ্ছে, ব‌্যবসায়ীরাও ধরতে পারছেন না অনেক ক্ষেত্রে।‌ এমনকি তাদের এই ওষুধ বিক্রির জন্য চোরাগোপ্তা দোকানদারও রয়েছেন। যাদের কাছে লুকিয়ে জাল ওষুধ সাপ্লাই দেওয়া হয়।

কাশির ওষুধে বিষাক্ত রাসায়নিক নিয়ে সতর্ক করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু। নির্দেশিকা জারি ভুয়ো লিভারের ওষুধেও। ভারত ও তুরস্কের বাজার ওষুধের নাম ডেফিটেলিও। দেশের ওষুধের দোকানগুলিতে রমরম করে বিক্রি হচ্ছে এই ব্র্যান্ডের জাল ওষুধ। ডেফিটেলিও ওষুধ হেপাটিক ভেনো-অকালসিভ রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগে। লিভারের অসুখের থেরাপিতে, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন থেরাপিতেও প্রয়োগ করা ওষুধ ভুয়ো। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া সেইসব ওষুধ সাধারণের হাতে এলে এবং তা ব্যবহার করলে চরম ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকিও বাড়বে। ডেফিটেলিও ড্রাগ জার্মানি বা অস্ট্রিয়া থেকে আমদানি করা হয়। ব্রিটেন থেকেও আসে এই ওষুধ। ভুয়ো ওষুধে ছেয়ে গেছে দেশের বাজার। কাশির ওষুধ নিয়েও সাবধান করেছে হু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, যেসব কাফ সিরাপ ওষুধের দোকান থেকে মুখে বলে নিয়ে আসা হয় বা ঘন ঘন খাওয়া হয় তার মধ্যেও নানারকম উপাদান থাকে যা মাত্রাতিরিক্ত শরীরে ঢুকলে বিপদ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু কাফ সিরাপে কোডেইন এবং ফোলকোডিন নামে উপাদান পাওয়া গেছে যা শরীরে ঢুকলে নেশার মতো বোধ হয়। স্নায়ুগুলো ঝিমিয়ে পড়তে থাকে। চিন্তাভাবনা গুলিয়ে যায়। ব্রেন সেলগুলোকে কব্জা করে ফেলে এই ধরনের রাসায়নিক উপাদান। চার বছরের কম বয়সের কোনও শিশুকে কাফ সিরাপ খাওয়ানো বিপজ্জনক। প্রাপ্তবয়স্ক যাদের কোমর্বিডিটি আছে বা সম্প্রতি কোনও অপারেশন হয়েছে তাদের শরীরে এইসব রাসায়নিক উপাদান ঢুকলে তা বিপদ আরও বাড়াবে। সবদিক থেকেই সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র জাল ও নকল এবং ভেজাল ওষুধে ছেয়ে গেছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার ওষুধের গুণমানে তদন্ত ও সমীক্ষা চালিয়ে প্রায় ৩৫০ রকমের জাল ও ভেজাল ওষুধ দিনের পর দিন ব্যবহার করেছেন রাজ্যের কোটি কোটি মানুষ! পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকেও অসংখ্য মানুষ কলকাতায় আসেন চিকিৎসার জন্য। ভেজাল ওষুধের প্রভাব বৃদ্ধিতে রীতিমতো আতঙ্ক ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে এখানকার চিকিৎসক মহল। হাওড়ার আমতা থেকে সম্প্রতি উদ্ধার প্রেসারের ওষুধের জমা করা ডিরেক্টরেট অব ড্রাগ কন্ট্রোলের রিপোর্টে চাঞ্চল্য। রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই প্রেসারের ওষুধ সম্পূর্ণ জাল। উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় চিকিৎসকদের প্রেসক্রাইব করা ওষুধের অন্যতম ‘‌টেলমা এএম ৪০’‌ নামক ওষুধ নিয়েই কালোবাজারি। ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার তরফ থেকে ডিরেক্টরেট অব ড্রাগ কন্ট্রোলকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ জাল, ব্যাচ নম্বর ০৫২৪০৩৬৭। এই ব্যাচ নম্বরের সঙ্গে আসল ওষুধের ব্যাচ নম্বরের সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। অর্থাৎ ব্যাচ নম্বর জাল করা হয়েছিল। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়ে ওষুধের ওপর ছাড় দিচ্ছেন বহু ব্যবসায়ী। সেই সুযোগে দেশ তথা রাজ্যে জাল ওষুধের রমরমা ব্যবসা ক্রমশ বাড়ছে। জাল ওষুধ চেনার উপায় জানা নেই সাধারণ মানুষ এমনকি ওষুধ ব্যবসায়ীদেরও। এ কথা স্বীকার করেছে বেঙ্গল কেমিষ্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশন বিসিডিএ। কড়া নজরদারি চালাতে দোকানে আচমকা পরিদর্শন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলকে। গাফিলতি ধরা পড়লে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও নির্দেশিকায় প্রকাশ।

ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে দরকার কঠিন শাস্তি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফার্মেসিগুলোতে নকল বা ভেজাল ওষুধ বিক্রি দেদার। ওষুধ খেয়ে রোগী সুস্থ্য হওয়ার পরিবর্তে আরও রোগাক্রান্ত হচ্ছেন। রোগিকে মৃত্যুর মুখোমুখিও হতে হচ্ছে। ভেজাল ওষুধ বিক্রি বন্ধে আইন প্রয়োগ, কঠিন শাস্তির ব্যবস্থাসহ কার্যকর পদক্ষেপে মত বিশেষজ্ঞদের। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও গবেষকরা বলছেন, ভেজাল বা নকল ওষুধের কারণে শরীরে ভয়াবহ রোগ দানা বাঁধে। লিভার, কিডনি, হার্ট, ব্রেন থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নকল ওষুধ কেনাবেচার কারণে মানুষের জীবন প্রশ্নের মুখে। নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন নিয়ন্ত্রণে নেই। অ্যালোপ্যাথিক থেকে শুরু করে আয়ুর্বেদিক ও হার্বাল সব ধরনের ওষুধ নকল হচ্ছে। ওষুধ খেয়ে লিভার, কিডনি বিকল, বিকলাঙ্গ, মস্তিষ্কের জটিলতাসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগে মৃত্যু বাড়ছে। খুচরা ওষুধ বিক্রেতারা অধিক লাভের আশায় নকল ওষুধ বিক্রি করেন। নকল ওষুধ সাধারনত নিন্ম শ্রেণীর মানুষদের দেওয়া হয়, যাদের এ বিষয়ে ধারণা নেই। ওষুধ-ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত ও সংঘবদ্ধ চক্র খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় মনিটরিং, কার্যকর শাস্তি ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্র‌্য়োজন। বেঙ্গল কেমিস্টস্ অ্যান্ড ড্রাগিষ্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নির্দেশিকা, পরিচিত দোকান থেকে বারকোড দেখে এবং বিল করে ওষুধ নিতে হবে। তাহলে ভেজাল ওষুধ অনেকটাই রোধ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি ভিনরাজ্য থেকে যে ওষুধগুলি আসছে সেদিকেও নজর দিতে হবে। ফলে এই সচেতনতা আগামীদিনে মানুষকে সুস্থ থাকতে অনেকটাই সাহায্য করবে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles