ফুটবলার পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে খুন। দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার এক। ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে খুন। শনি সকালে খবর পেয়েই হাসপাতালে এবং বাড়িতে পুলিশ। জাতীয় দলের প্রাক্তন প্রয়াত কিংবদন্তি ফুটবলার এবং কোচের বাড়ির ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য। সল্টলেকের জিডি ব্লক সম্ভ্রান্ত এলাকায় পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি। ভারতীয় জাতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে খুনের ঘটনা। পিকে এবং তাঁর স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে ওই বাড়িতে থাকতেন তাঁর মেয়েরা। বাড়ির এক কেয়ারটেকারের দেহ উদ্ধার। দু’জনের মধ্যে মারামারির জেরে একজন আর একজনকে খুন করেছে বলে অভিযোগ। পুলিশের ধারণা, একজন গাড়িচালক, অপরজন কেয়ারটেকারকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে খুন করে। আতঙ্কের বাতাবরণ।
গাড়িচালকের সঙ্গে বচসার জেরে খুন বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। অভিযুক্ত গাড়ি চালককে গ্রেফতার করে পুলিশের দফায় দফায় জেরা। পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২০ সালে প্রয়াত হন। বাড়িতে মদ্যপান করা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিবাদের পর মারধর এবং খুনের ঘটনা,পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত বলছে। দোলের দিন মদ খাওয়া নিয়ে বিবাদ বাধে বাড়ির গাড়িচালক বরুণ ঘোষের সঙ্গে পরিচারক ভগীরথ মুহুরির। বিবাদ থেকে বচসা এবং তা থেকে ধারাল অস্ত্রের আঘাতের জেরে মৃত্যু হয় পরিচারক ভগীরথ মুহুরির অভিযোগ। মাঝরাতে অস্ত্র নিয়ে ভগীরথের উপর আক্রমণ করে বরুণ ঘোষ। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকায় ওই আঘাত আটকাতে ব্যর্থ হয় ভগীরথ। এলোপাথাড়ি কোপানো হয় ভগীরথকে। রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া ভগীরথের চিৎকারে ছুটে আসেন লোকজন। পিকের বাড়িতেই শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বাড়ির পরিচারককে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার। ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার কারণেই রক্তাক্ত পরিচারক। বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
শনি সকালে হাসপাতালে এবং বাড়িতে পুলিশ যায় জাতীয় দলের প্রয়াত ফুটবলার এবং কোচের বাড়িতে। তদন্তে নেমে বরুণ ঘোষকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিছকই মদ খাওয়া নিয়ে গোলমাল নাকি নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ রয়েছে সেটা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। সল্টলেকে প্রাক্তন ফুটবলার পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। বিধাননগর দক্ষিণ থানার আধিকারিকেরা নিহতের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠান। সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। শনিবারই আদালতে হাজির করানো হবে। গোলমালের সময়ে পিকে-র বাড়ির সদস্যেরা কোথায় ছিলেন, তাঁরা গোলমালের শব্দ পেয়েছিলেন কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। বাড়ির বাইরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে।
সম্প্রতি, থাইল্যান্ড থেকে ফেরা প্রয়াত ফুটবলারের এক মেয়ের অভিযোগ, তাঁর পার্স থেকে কয়েক হাজার টাকা চুরি হয়ে গিয়েছে। এ কথা জানার পর ওইদিনই বাড়ির চালক সহ পাঁচ পরিচারককে ঘরে ডেকে তিনি জিজ্ঞাসা করেন। এই নিয়েই বচসার সূত্রপাত। পুলিশ সূত্রে খবর, বরুণ ঘোষ নামে ওই চালক গোপীনাথ নামে ওই পরিচারকের দিকে বারবার আঙুল তুলতে থাকেন। তাঁকে বলতে থাকেন, ‘তুমিই নিয়েছ টাকা।’ তাতে আপত্তি জানান গোপীনাথ। সল্টলেকে জিডি ব্লকের ২৭৩ নম্বর বাড়িতে মদের আসর বসে। রাতে মদের আসর বসলে সেই বচসা চরমে পৌঁছয়। অভিযোগ, সেই বচসার জেরেই রাগের মাথায় বরুণ হেঁশেল থেকে ধারাল অস্ত্র নিয়ে আসেন ও গোপীনাথকে এলোপাথাড়ি কোপ মারতে থাকেন।
ভারতের জাতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে ওই দলের কোচ হিসাবেও নিযুক্ত হয়েছিলেন। জাতীয় দলের জার্সিতে ৫২টি ম্যাচ খেলে ১৬টি গোল রয়েছে তাঁর নামে। অর্জুন পুরস্কার, পদ্মশ্রী-সহ একাধিক সম্মান লাভ করেছিলেন পিকে। ২০২০ সালের ২০ মার্চ কলকাতার হাসপাতালে তিনি পরলোকে গমন করেন।