Friday, March 14, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

কানে হেডফোন রাখার নেশা!‌ শোনার সমস্যা কম বয়স থেকেই?‌ খুব সাবধান!‌

সারাদিন কালে হেডফোন। মারাত্মক বিপদ। শ্রবণশক্তি হারাচ্ছে অল্পবয়সিরা। সারাক্ষণ কানে হেডফোন। তার উপর আবার সস্তার নিম্নমানের হেডফোন ব্যবহার। ক্ষতির ঝুঁকি অনেক বেশি। অতিরিক্ত হেডফোন ব্যবহার। ক্ষতিকর প্রভাব। অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শ্রবণশক্তি হ্রাস, টিনিটাস এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার মতো অসুখের সম্ভাবনা। টিনিটাস হল কানে অস্বাভাবিক শব্দ শোনার অসুখ। কানে গুনগুন, ঝিঁঝিঁ বা ঢাকের আওয়াজের মতো শব্দ শুনতে পান রোগীরা। শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যার বেশী ক্ষতিকারক। তরুণ প্রজন্ম হেডফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশি আগ্রহী। শ্রবণশক্তি হারানোর সমস্যা মূলত বয়স্কদের মধ্যেই দেখা যেত আগে। বর্তমান তরুণ বয়সেই অনেকে শুনতে না পাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন। উদ্বেগজনক। বয়সজনিত কারণে হওয়া বধিরতাকে বলা হয় সেনসরিনিউরাল হেয়ারিং লস। গবেষণা বলছে, অল্প বয়সিদের মধ্যে এই সমস্যার দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ দীর্ঘসময় ধরে হেডফোন ব্যবহার।

‘বিশ্ব শ্রবণ দিবস’ উপলক্ষে একদল ইএনটি বিশেষজ্ঞের শ্রবণশক্তি রক্ষার গুরুত্ব ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বা ‘‌হু’‌ সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০০ কোটি মানুষ শ্রবণ সমস্যায় ভুগছেন, যার অন্যতম প্রধান কারণ হেডফোন ও ব্লুটুথ ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহার। কনফারেন্সে উপস্থিত অটোল‌্যারিংগোলজিস্টস অব ইন্ডিয়ার জাতীয় সভাপতি ডা. দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, দিনে দুই ঘণ্টার বেশি হেডফোন ব্যবহারের ফলে শ্রবণশক্তির উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে উচ্চ ভলিউমে দীর্ঘ সময় হেডফোন ব্যবহারের ফলে অডিটরি নার্ভ ড্যামেজ হয়ে শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে হারিয়ে যেতে পারে।

সস্তার নিম্নমানের হেডফোন ব্যবহারের কারণে ক্ষতির ঝুঁকি আরও বেশি। রোগীরা কান বন্ধ হয়ে যাওয়া, কানে চাপ অনুভব করা, ক্রমাগত শোঁ শোঁ শব্দ অর্থাৎ টিনিটাস শোনার মতো সমস্যায় সেনসরিনিউরাল হেয়ারিং লস। শ্রবণশক্তির মতো অমূল্য সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুনরুদ্ধার প্রায় অসম্ভব। অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যেও স্বাভাবিক শ্রবণশক্তি পুরোপুরি ফিরে পাওয়া যায় না। কানের যত্ন নেওয়া এবং হেডফোনের যথেচ্ছ ব্যবহার কমানোই সুস্থ থাকার একমাত্র উপায়। হেডফোন ব্যবহার করার বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা জারি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের।

প্রতিদিন ২ ঘণ্টার বেশি হেডফোন ব্যবহার করা উচিত নয়। একটানা হেডফোন ব্যবহার না করে প্রয়োজনে কিছু সময় অন্তর ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়। বিশেষ করে একটানা ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে কোনও মোটেই হেডফোন ব্যবহার করা উচিত নয়। একটানা হেডফোন ব্যবহার করলে কানের উপর বেশি চাপ পড়ে এবং শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা। হেডফোন ব্যবহার করার সময় শব্দের মাত্রা বা ভলিউম অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। ৬০ ডেসিবেলের বেশি মাত্রায় শব্দ শোনা কানের পক্ষে ক্ষতিকর। অনেকেই হেডফোনে প্রায় ১০৫ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ শোনেন, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। ‘‌নয়েজ ক্যান্সেলিং হেডফোন’‌ হেডফোন বাইরের আওয়াজ কমাতে সাহায্য করে, ফলে ব্যবহারকারী কম ভলিউমেও শব্দ শুনতে পান।

বিশ্বে প্রায় ১০ লক্ষ যুবার শ্রবণশক্তিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের তরফে সব দেশের সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার। প্রায় ৩৩ টি ভাষায় সমীক্ষা প্রকাশিত। ১২-৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি। ১৯ হাজার যুবাদের উপর করা হয়েছিল সমীক্ষা। ২৪ শতাংশ তরুণ তরুণী স্মার্ট ফোনের সঙ্গে সর্বদা হেডফোন ব্যবহার করে। ৪৮ শতাংশ নাইটক্লাবের লাউড মিউজিকে আসক্ত। অনিয়ন্ত্রিত শব্দমাত্রা যে শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকারক তা তৈরা নিজেরাও বুঝতে পারছে না। ২০৫০ সালের মধ্যে সেই সংখ্যা পৌঁছবে ৭০ কোটিতে, আশঙ্কা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।

কলসেন্টারে কর্মরতদের সারাদিন কানে হেডফোন লাগিয়ে রাখা প্রফেশনাল হ্যাজার্ড। হোডফোন ব্যবহারের কারণেও কারণে কানে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা। হেডফোন ব্যবহার করার সময় কান পুরোপুরি বন্ধ হয়ে থাকে। নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে হেডফোনে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সেই যন্ত্র সরাসরি কানে দিলে সেখানে সংক্রমণ হওয়া স্বাভাবিক। কানে ব্যথা, পুঁজ, রক্ত বের হওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে সমস্যা নিয়ন্ত্রণে চলে আসকে পারে। কানের নিজস্ব ডিফেন্স মেকানিজম রয়েছে। কানে জমে থাকা সমস্ত ময়লা নিজের থেকেই একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাইরে চলে আসে। সারাদিন কানে হেডফোন গুঁজে রাখলে কানের ময়লা বাইরে বেরতে পারে না। ফলে কানের ভিতরেই জমতে থাকে ওয়াক্সের কারণে কানে ইনফেকশনের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এমনকী অতিরিক্ত খোল জমলে তা শ্রবণ ক্ষমতার উপরও আঘাত হানতে পারে। দীর্ঘক্ষণ হেডফোন ব্যবহার করলে কানের পাশাপাশি মস্তিষ্কের উপরও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ব্রেনের সুক্ষ্ম নার্ভের ক্ষতি হতে পারে। ডিজেনারেটিভ ডিজিজ হওয়ার আশঙ্কায় স্মৃতির পাতা ধীরে ধীরে আলগা হয়ে প্রকারেণ হেডফোন ব্যবহার কমাতে হবে।

শ্রবণশক্তির ক্ষতি করছে কানে হেডফোন গুঁজে জোরে গান শোনা, কনসার্টে, নাইট ক্লাবে তীব্র স্বরে মিউজিক, ক্রমাগত হর্নের শব্দ, কানে সব সময়ে ইয়ারপ্লাগ গুঁজে রাখার মতো বদ অভ্যাস কম বয়স থেকেই কানের ক্ষতি করছে। প্রতিকারের উপায়? দীর্ঘ দিন ধরে ৮৫ ডেসিবেলের উপরে আওয়াজ শুনে শোনার ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস। রাস্তায় যানবাহন, হর্নের শব্দ, কোলাহলের শব্দমাত্রা ৯০-৯৫ ডেসিবেল। হেডফোনে উচ্চগ্রামে গান শোনায় শব্দমাত্রা ১০৫-১২০ ডেসিবেলে উঠে যায়। রান্নাঘরের মিক্সির শব্দ ১১০-১২০ ডেসিবেল। নাইট ক্লাব বা তারস্বরে বক্স বাজার শব্দমাত্রা ১০০ ডেসিবেলের উপরে। এই আওয়াজে শ্রবণশক্তির উপর তীব্র প্রভাব। কটন বাড, চুলের ক্লিপ, সেফটিপিন, কাঠি দিয়ে কান পরিষ্কার কানে বেশি খোঁচাখুঁচিতে কানের অন্দরমহল ক্ষতিগ্রস্ত। কারখানায় শব্দের মধ্যে কাজ করার সময় ফোম ইয়ারপ্লাগ পরিধান করা দরকার। নোংরা জলে স্নানে কানে সংক্রমণ।

অধিকাংশ মানুষই কাজ করার সময় দু’কানে গুঁজে রাখেন ইয়ারফোন। কাজের প্রয়োজনে প্রচুর মানুষকে দীর্ঘক্ষণ হেডফোন-ইয়ারফোন ব্যবহার করতে হয়। অফলাইনে ক্লাস হলেও অনলাইন ক্লাসের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। অনলাইনে কোচিং, টিউশনের এখন দেদার ঝোঁক কানে হেডফোন গুঁজে। শরীরের জন্য ভীষণভাবে ক্ষতিকারক টানা হেডফোন বা ইয়ারফোনের ব্যবহার। পেশার প্রয়োজনে কাজের ক্ষেত্রে ৩০ মিনিট অন্তর হেডফোন খুলে কানকে ৫ মিনিটের জন্য বিশ্রাম। সারা দিনে ৪-৫ ঘন্টার বেশি হেডফোনের ব্যবহার চলবে না। শ্রবণশক্তি হারানোর সম্ভাবনা থাকে। কানে ফাঙ্গাসও হতে পারে। বর্ষাকালে সম্ভাবনা বেশি। কোভিডের সময়ে সকলেই গৃহবন্দি, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, ভিডিয়ো কল, হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার পরবর্তীতে কানে ব্যথা, পুঁজ, সংক্রমণও হয়েছে। সাময়িক শ্রবণশক্তি হারিয়ে যাওয়া তো রয়েছেই। ট্র্যাফিক পুলিশে কর্মরত বা শব্দযুক্ত কারখানায় কাজ করা মানুষদের ৪০ পেরোতে না-পেরোতেই কানে কম শোনার সমস্যা।

ভিটামিন ডি ও ভিটামিন বি-১২ সমৃদ্ধ খাবার ও দুধ, পনির, ডিম, বিভিন্ন রকম মাছ সবুজ শাকসব্জি ও ফল খেতে হবে বেশি করে। মাম্পস, হাম, টাইফয়েডের মতো রোগের পর কানের সমস্যা হয়। কানে সংক্রমণ হলে, জল জমে থাকলে অথবা ভিতরে পুঁজ জমলেও কম শোনার সমস্যা। অভ্যাস করতে হবে মার্জারাসন। প্রথমে মাটিতে দুই পা এবং হাতের উপর ভর দিয়ে বিড়ালের মতো ভঙ্গিতে এক বার পেট ফুলিয়ে মাথা নিচু করে শ্বাস নেওয়ার পরইর পেট ঢুকিয়ে শ্বাস ছাড়া অভ্যাস অন্তত ৫ বার। বালাসন, পশ্চিমোত্তনাসনও কার্যকরী। অতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান বন্ধ। নেশার অভ্যাস কানের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles