আইসিসি চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফি চ্যাম্পিয়ান ভারত। নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে ট্রফির জিতল রোহিত ব্রিগেড। দীর্ঘ ৮ বছর পর ফের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসর বসেছে এই বছর দুবাইয়ের মাটিতে। ৮ দলের মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের পর ফাইনালে ভারত উড়িয়ে দিল নিউজিল্যান্ডকে। বদলার ম্যাচ। ২০১৯ বিশ্বকাপ, ২০২১ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে কিউয়ি কাঁটায় আটকে গিয়েছিল ভারতের ট্রফি জয়। ২০২৩ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারতের কাছে হার কেন উইলিয়ামসনদের। এবার নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে মধুল বদলা নিল রোহিতদের ভারত। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতল ভারত। রবিবাসরীয় রাতে দুবাইয়ের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে হারাল টিম ইন্ডিয়া। অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন রোহিত শর্মার দল। ২৫ বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারতে হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারতকে। সেই হারের মধুর প্রতিশোধ নিলেন রোহিতেরা। ২০২৪ এর জুন মাসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। ৯ মাসের মধ্যে অধিনায়ক হিসাবে আরও একটি আইসিসি ট্রফি জিতলেন রোহিত। কোচ হিসাবে সফল গৌতম গম্ভীর। নিজের প্রথম আইসিসি ট্রফিতেই দলকে চ্যাম্পিয়ন করলেন গুরু গম্ভীর।

টানা এক ডজন টস হার। ১২ বার টস হার রোহিত শর্মার। ব্রায়ান লারার লজ্জার রেকর্ড স্পর্শ ভারত অধিনায়কের। অধিনায়ক হিসেবে লারাও টানা ১২ বার টসে হেরেছিলেন। ১৯৯৮ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৯৯-এর মে মাসের মধ্যে পরপর ১২টি টসে হারেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ক্যাপ্টেন। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১৫ বার টসে হার রোহিতের। ২০২৩ সালের নভেম্বরে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষবার ওয়ানডে ম্যাচে টস জিতেছিল টিম ইন্ডিয়া। এর পর একের পর এক ক্যাচ মিস ভারতীয় ফিল্ডারদের। তাতেও ২৫১-৭। ভারতের বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতের চার স্পিনার বেঁধে রেখেছিলেন কিউয়ি ব্যাটারদের। স্পিন বোলিং করিয়ে এদিন রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন রোহিত শর্মা। পেসাররা দেদার রান দিলেন। কুলদীপ যাদব ৪০ রান দিয়ে দুই উইকেট পেলেন। বরুণ চক্রবর্তী ২ উইকেট নেন ৪৫ রান দিয়ে। জাদেজা ১০ ওভারে ১ উইকেট নেন ৩০ রান খরচ করে। অক্ষর ৮ ওভারে ২৯ রান, সামি ১০ ওভারে ৭৪ রান, হার্দিক ৩ ওভারে ৩০ রান খরচ করেন। নিউজিল্যান্ডের মিচেল সর্বোচ্চ ৬৩ রান ও স্যান্টনারের ৪০ বলে ৫৩ রান করেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে নিম্নমানের ফিল্ডিং। চারটি ক্যাচ মিস করলেন ভারতীয় ফিল্ডাররা। শুভমন গিল থেকে শ্রেয়স আইয়ার। বিরাট হতাশ কোহলির স্ত্রী অনুষ্কা শর্মা। রাচিনের জোড়া ক্যাচ ফস্কালেন ফিল্ডাররা! ৬.৩ ওভারে নিজের বলেই ফলো থ্রু’তে রাচিন রবীন্দ্রের ২৯ রানের মাথায় ক্যাচ মিস করেন মহম্মদ সামি। ফের চার বল পরেই রাচিনের ক্যাচ ফেলেন শ্রেয়স। বরুণ চক্রবর্তীর বলে সুইপ করেন রাচিন। ডিপ মিড-উইকেট থেকে ২১ মিটার থেকে দৌড়ে এসে ক্যাচটা ধরার চেষ্টা করেও শ্রেয়স বলের পথ নির্ধারণ করতে না পেরে ডাইভ দিয়ে ক্যাচ ধরতে গেলেও মিস। ডারিল মিচেলের ৩৪.৫ ওভারে তাঁর ক্যাচ ফেলেন রোহিত শর্মা। বেশ কঠিন ক্যাচ। অক্ষর প্যাটেলের বলে বড় শট মারতে গিয়ে ৩০ গজের বৃত্তের মধ্যে ক্যাচটা আঙুলে লেগে মিস হয়। গ্লেন ফিলিপসের ক্যাচ ৩৬ তম ওভারের শেষ বলে ডিপ স্কোয়ার লেগ থেকে অনেকটা দৌড়ে এসে ক্যাচ নেওয়ার চেষ্টা করেও মিস করেন শুভমন গিল। নিউজিল্যান্ড ব্যাটাররা করেন ২৫১-৭।

২৫২ রানের টার্গেট। রান তাড়া করতে নেমে শুভমন গিলের উইকেট হারায় ভারত। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ফিলিপ্সেরই শিকার শুভমন গিল। শর্ট এক্সট্রা কভারে ফিল্ডিং করছিলেন ফিলিপ্স। মিচেল স্যান্টনারের বলে মারা শটটা যে ক্যাচ হতে পারে, ধারনার বাইরে। নিখুঁত সময়ে ঝাঁপ ফিলিপ্সের তালুবন্দি ক্যাচ। ৫০ বল খেলে একটি বাউন্ডারির সাহায্যে ৩১ রান করেন গিল। চার বলের মধ্যে মিচেল ব্রিসওয়েলের বলে এলবিডব্লিউ বিরাট কোহলি। রাচিন রবীন্দ্রকে স্টেপ আউট করে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড ভারতের অধিনায়ক ৭৬ রান করে। অক্ষর পটেল তুলে খেলতে গিয়ে ৪০ বলে ২৯ রানে ব্রেসওয়েলের বলে ক্যাচ দিলেন ও’রোর্কের হাতে। মারেন একটি চার ও একটি ছয়। শ্রেয়স আইয়ার দুটি করে চার ও ছয়ের মাধ্যমে স্যান্টনারের বলে রাচিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে দু রানের জন্য অর্ধশতরান মিস করলেন। লোকেশ রাহুল ও হার্দিক পাণ্ডিয়া নিজেদের অভিজ্ঞতা প্রদর্শণ করে ব্রেসওয়েল ও স্যান্টনারকে ধীরে খেললেন। দুই স্পিনারের ওভার ঠান্ডা মাথায় খেললেন। পেসারদের বিরুদ্ধে বড় শট। হার্দিক আউট হলেও জিততে সমস্যা হল না ভারতের। হার্দিক পাণ্ডিয়া ১৮ বলে ১৮ রান করে জেমিসনের কট এন্ড বোল্ড হন একটি চার ও ছয় মেরে। স্লগ ওভারে অনবদ্য কে এল রাহুল করেন ৩৩ বলে ৩৪ রান। ম্যাচ জিতিয়ে ফিরলেন উইকেটক্ষক রাহুল ও রবীন্দ্র জাদেজা। জাডেজার শট বাউন্ডারি পার হতেই ভারতীয় সমর্থকদের মুখে তৃপ্তির হাসি। চার উইকেটে জিতে চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফি চ্যান্পিয়ান ভারত।
এক্স হ্যান্ডেলে শুভেচ্ছা জানান মোদি। তিনি লেখেন, ‘আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ঘরে নিয়ে আসছে ভারতীয় দল। তোমাদের জন্য গর্বিত। গোটা টুর্নামেন্টে দারুণ খেলেছে দল। অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।’ শুভেচ্ছা জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে আমাদের ছেলেরা নিজেদের শক্তি দেখাল। দুর্দান্ত ভাবে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। আর তাতেই আমরা ট্রফি জিতলাম। ভারতীয়দের জন্য ভীষণ গর্বের একটা সন্ধে।’ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু লিখেছেন ‘একমাত্র দল হিসেবে তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতল ভারত। ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফ, টিম ম্যানেজমেন্টের সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়া উচিত।’ রোহিতদের অভিনন্দন জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী-সহ রাজনীতির জগতের হেভিওয়েটরাও।