সন্ধ্যা তখন নামার মুখে। আধো আধো আলো। অস্পষ্ট কিছুও স্পষ্টতই দৃশ্যমান। আর চিরাচরিত চলতে থাকা বিষয় নজরে আনতে, খেয়াল বা মনোসংযোগ না রাখলেও চলে। আপনা আপনিই দৃশ্যমান। কলকাতার বুকে আইপিএলের ভরা মরশুম। ওনাদের রমরমা। প্রশাসন আগেভাগেই ঠুলি বেঁধে নেয় চোখে। আর ময়দানের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত জুড়ে বিন্দি মাসি, আফরোজ, প্যাটকা দিলীপ, সুরজ, ধালি ভাইদের রমরমা। ধীর গতিতে হাঁটলেই কে যেন কানের কাছে এসে বলতে থাকে,‘দাদা, লাগবে নাকি?’ বেশ অস্বস্তিকর বাক্য। তবুও শুনে মাথা নেড়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই হয়। কারণ এদেরও গ্যাং আছে। স্বভাবতই গ্যাঙস্টারও থাকাটাই স্বাভাবিক। চুপচাপ কেটে পড়াই ভালো। নয়তো হিতে বিপরীতের গন্ধ?
এরকমই এক সন্ধ্যা। আধো আলো আর আধো স্বরের সহাবস্থান। শহিদ মিনার থেকে কয়েক পা হেঁটে গেলেই নিকষ কালো পাথরের মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তি। পাদদেশে বসে প্রাপ্তিহীনের দল। পানসে মুখগুলো দেখে মনে হয় তখন অব্দি ওদের জীবনে কিছুই চাওয়া পাওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে ওই মুখগুলোর দিকে কড়া নজর থাকে ‘দাদা, লাগবে নাকি’ দলের। এতো ভনিতা না করে আসল কথাটা বললেই তো হয়?
হ্যাঁ! এরকমই এক সন্ধ্যা। গাছগাছালির সরু গলি থেকে বেরিয়ে এলেন জনৈক। মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তি লাগোয়া ফুটপাতে দাঁড়িয়ে দুহাত উপরে তুলে তারস্বরে আড় ভাঙছেন। মুখ ভর্তি খোঁচা দাড়ি, লম্বোদরের শরীর বস্ত্রহীন ভদ্রলোক দুহাত তখনও নামাননি। ব্যাপারটা কী? একটু ভালো করেই নজর রাখতেই দেখা গেল, উপরের দিকে আঙুলগুলো কী যেন ইশাড়া করছে। কাছে আসার আবেদন। বীরঙ্গনার পাদদেশে বসে থাকা জনা তিনেক ছেলে ধপ করে নেমে ওনার আবেদনে সাড়া দিলেন প্রায় দৌড়েই। ওই যে লম্বোদরের আধোস্বর। এক হাজারের টা পাঁচ হাজার! অতো পারবো না দাদা। চট করে তিন আর এক মিলিয়ে গেলো আবার সেই গাছগাছালির সরু গলিতেই। ও বাব্বা। আরও এক লম্বোদর। আকার আকৃতি অবয়ব অনেকটা একই। পাঁচ জনের জোর দর কষাকষি। শোনা গেল আবার ‘আরে ভাই, হাই ভোল্টেজ ম্যাচ, এই দামে কোথাও পাবিনা। দিচ্ছি নিয়ে জারীনে।’
এ এক নেশাগ্রস্থ খেলাপাগল ছেলের দল। তিন হাজারের জিনিশ নয় হাজারে কেন, ত্রিশ হাজারেও খরিদ করতে পিছুপা হন না। মাঠে বসে খুব কাছ থেকে দেখতে মরিয়া বিরাট ধোনিদের। তাতে যা কিছু যায় যাক। কুছ পরোয়া নেই। আর ওই যে লম্বেদর নৃসিংহপ্রসাদের দল। বড়ই নিষ্ঠুর। এভাবেই চালিয়ে এসেছেন সতেরোটা আইপিএল। অগনিত ডার্বি। কলকাতার বুকে ম্যাচ হলেই টিকিট কালোবাজারীদের রমরমা। প্রতি বছর আসে আর যায়। একই প্রশ্ন সকলের মনেই জাগে। আচ্ছা! টিকিট কালোবাজারী লম্বেদর নৃসিংহপ্রসাদদের দল প্রতি বছরই এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান। এদের মাথার উপর কাদের হাত আছে? এতো টিকিটই বা ওদের হাতে আসে কিভাবে? প্রশাসন কী সত্যিই জানে না? বহু প্রশ্নের সমাহার। উত্তর মেলে না আজও।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় টিকিটের দাম বেড়েছে ইডেনে। আইপিএলের উন্মাদনার পারদ চড়তে শুরু করেছে। কলকাতার ভক্তেরা জানতে চাইছেন কবে থেকে ইডেনে টিকিট বিক্রি শুরু হবে? অপেক্ষা করা শুরু।
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ এর মধ্যেই আইপিএল ২০২৫ নিয়ে উন্মাদনা চরমে। ২২ মার্চ থেকে শুরু ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। উদ্বোধনী ম্যাচ ইডেন গার্ডেন্সে। প্রথম দিনেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখবে ক্রিকেট বিশ্ব। গতবারের চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্সের মুখোমুখি বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। ইডেনে আইপিএল ম্যাচের টিকিট কবে থেকে বিক্রি শুরু হবে? মুম্বই ও গুয়াহাটির মতো কিছু শহরে ইতিমধ্যেই আইপিএল ম্যাচের টিকিট অনলাইনে বিক্রি শুরু হয়ে গেছে।ইডেনের টিকিট বিক্রি এখনও শুরু হয়নি। টিকিটের দামও প্রায় চূড়ান্ত এবং আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে এক-দুই দিনের মধ্যেই।
আইপিএলের টিকিটের মূল্য নির্ধারণ ও বিক্রির সম্পূর্ণ দায়িত্ব দশটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের ওপর। ইডেনের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত নেবে কলকাতা নাইট রাইডার্স। সিএবি-এর প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘টিকিটের ব্যাপারটা পুরোপুরি ফ্র্যাঞ্চাইজি দেখে।।’ ন্যূনতম টিকিটের মূল্য ৯০০ টাকা। এরপর অন্য ক্যাটাগরির ২০০০। কেকেআর সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে টিকিট বিক্রির জন্য ‘বুক মাই শো’ -র সঙ্গে চুক্তি। তাই টিকিট পেতে হলে ক্রিকেটপ্রেমীদের BookMyShow ওয়েবসাইট বা অ্যাপে নজর রাখতে হবে।
ডাইনামিক প্রাইসিং বিষয়ে সিএবি সচিব নরেশ ওঝা জানিয়েছেন, ‘পুরোটাই কেকেআরের সিদ্ধান্ত। ডাইনামিক প্রাইসিং।’ আইপিএলে প্রতারণা। আইপিএল ম্যাচের টিকিট কেনার আগে ঠিক কী করতে হবে? টিকিট কাটার আগে সব সময় সঠিক ওয়েবসাইট থেকে কিনতে হবে। অফিশিয়াল চ্যানেল থেকে সুরক্ষিত ভাবে টিকিট ক্রয়। সমাজমাধ্যমে অনেক ভুয়ো মাধ্যম থেকে টিকিট বিক্রির চেষ্টা করা হয়। সেগুলি সম্পর্কে সতর্ক থাকা জরুরী। একমাত্র আইপিএলের অফিশিয়াল টিকিট বিক্রয়কারী সংস্থাই বিশ্বাসযোগ্য। নজর রাখতে হবে হলোগ্রামের দিকে। হলোগ্রাম না মিললেই বুঝে নিতে হবে জাল টিকিট। বিক্রেতার লাইসেন্স আছে কিনা জানা প্রয়োজন। যদি তিনি লাইসেন্স দেখাতে দ্বিধা করেন, তবে সাধু সাবধান! বিভিন্ন বিক্রেতার থেকে টিকিটের তুলনামূলক মূল্য যাচাই করে নেওয়া অত্যাবশ্যক। সস্তার দিকে ছুটলেই বিপদ। দেখে নিতে হবে টিকিট বাতিল কিংবা টাকা ফেরতের সুযোগ থাকার বিষয়টা। আইপিএলের উন্মাদনা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। প্রতিটি ম্যাচেই অগনিত দর্শক ভিড় জমাচ্ছেন স্টেডিয়ামে। আলোর নিচেই জমাট বেঁধে থাকছে অন্ধকার! অনলাইনে টিকিট বিক্রি নিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকেই। আইপিএলের টিকিট বিক্রির প্রতারণা বন্ধ করতে হায়দরাবাদ পুলিশ সক্রিয়। সম্প্রতি দুটি জাল ওয়েবসাইট বন্ধ করেছে তারা। এই ওয়েবসাইট দুটি হল, book.myshow-premium.net এবং bookmyshow.cloud। আইপিএলের মূল টিকিট বিক্রয়কারী ওয়েবসাইটের সঙ্গে এই দুটি ওয়েবসাইটের মিল থাকায় অনেকেই বিভ্রান্তির শিকার। ‘বিশেষ ছাড়’-এর কথা বলা হয় QR code-সহ সোশাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই UPI-এর মাধ্যমে টাকা আদানপ্রদান। ফাঁদে পা দিলেই সর্বনাশ!
ইডেন গার্ডেন্সে আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচ আরসিবির বিরুদ্ধে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কেকেআর ম্যাচের টিকিটের দাম অনেক বেশি। জেড্ডায় হওয়া আইপিএলের মেগা নিলামে ২৩.৭৫ কোটি টাকায় ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে কেনে কেকেআর। কলকাতা নাইট রাইডার্স অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে ও সহ-অধিনায়ক ভেঙ্কটেশ আইয়ারের। আইপিএল চ্যাম্পিয়নরা আকাশছোঁয়া দাম রেখেছে টিকিটের। ২২ মার্চ ইডেনে কেকেআর বনাম আরসিবি ম্যাচের সর্বনিম্ন টিকিটের দাম ৯০০ টাকা। এরপর ২০০০, ৩৫০০, ৫০০০, ৬০০০, ১০ এবং ১৫ হাজার টাকার টিকিট। ৩ এপ্রিল ক্রিকেটের নন্দনকাননে যে কেকেআর-হায়দরাবাদ ম্যাচের ৯০০ এবং ২০০০ টাকার টিকিট প্রথম দিনই দেদার সেল।