Wednesday, March 12, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

ওষুধের দোকানের ভিতরে দাঁড়িয়েই বিড়ি-‌সিগারেটে সুখটান! নেই ব্র‌্যান্ডের ওষুধ, বিকল্প ওষুধেই সারছে রোগ?‌ প্রাণহানির পথে মানুষ

সারাদিনে জনা ১৫ কাস্টোমার। অধিকাংশই অসহায়। মুখে বলে ওষুধ নেন। ডাক্তার দেখানোর সামর্থ নেই। অগত্য ডিগ্রিহীন ‘‌ডাক্তারবাবুর’‌ দ্বারস্থ। ঝোপ বুঝে কোপ। একের পর এক ব্র‌্যান্ডহীন ওষুধে ভারী বিল হল বটে। অসহায়ের ডাক্তার দেখানোর খরচ তো বাঁচল? এদিকে নিজের শরীরের ঠিক কতটা ক্ষতি হল, তা বুঝতেই পারলেন না অসহায় ব্যাক্তি। ‌সারা দিন লুডো খেলেই কাটে মাণ্যবর দোকানদারের। পুষের রেখেছেন ভুয়ো ডিগ্রিধারী ফার্মাসিস্ট। উক্ত ফার্মাসিস্টের লাইসেন্স কোনও বড় দোকানে গ্রাহ্য হয় না। অথচ, ‘‌লুডো’‌ খেলা ওষুধের দোকানে দিব্যি রমরমিয়ে ঝুলছে। ওষুধের গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারংবার। মুখ খুলতে চাইলেও পারেন না অনেকেই। স্ব ভারিত্ব জারী রাখতে সমিতির পদ আঁকড়ে বসে রয়েছেন। ওষুধের পাতা থেকে স্পিরিট দিয়ে অনায়াসে এক্সপ্যায়ারি ওষুধ বেচে দিচ্ছেন অবলীলাক্রমে। কোনোটা মোছা না গেলে স্ট্রিপ থেকে খান দুয়েক ওষুধ কেটে বাকিগুলো বেচে দেন। সারাদিনে জনা পনেরো এরকম ‘‌লক্ষ্মী’‌ এলেই রাত দশটার আগে সাটার নামিয়ে উধাও। দোকানের অন্দরমহলে চলে দেদার স্মোকিং। ডিগ্রিহীন ডাক্তারবাবুর কাছে ইনজেকশন নিতে আসা বা প্রেসার মাপতে আসা রোগীর বসার সিটেই ঠ্যাং তুলে চরম সুখটান দেন পুলিশ বাবাজি। বাইরে থেকে পথচলতি মানুষ ভুল করে বসেন, আদৌ হুক্কা বার নাকি ওষুধের দোকান?‌

অথচ ওষুধই বিষ! গুণগত পরীক্ষায় ডাহা ফেল প্যারাসিটামল থেকে সাধারণ অ্যান্টি বায়োটিক। এসবের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালসের রিঙ্গার্স ল্যাকটেটের ১৬টি ব্যাচের নামও। জীবনদায়ী ওষুধেই লুকিয়ে বিষ! কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিডিএসসিও ১৪৫টি মেডিসিন ব্যাচকে প্রত্যাশিত গুণমানহীন চিহ্নিত করে। ১৪৫টি ওষুধের মধ্যে ৯৩টি প্রত্যাশিত গুণমানের নয় চিহ্নিত বিভিন্ন রাজ্যের ল্যাবে। বাকি ৫২টি ওষুধ পরীক্ষা করা হয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারে। জানুয়ারি মাসের রিপোর্টে থাকা ওষুধ বিভিন্ন রোগের মোকাবিলায় বাজারে যে সব ওষুধ বিক্রি করা হয় নিয়মিত তার পরীক্ষা চালায় কেন্দ্রীয় সংস্থা সিডিএসসিও-এর। তাতেই দেখা গিয়েছে জ্বর-গ্যাস-ব্যথার একাধিক ওষুধ পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি। এর মধ্যে যেমন রয়েছে প্যারাসিটামল ৬৫০, অ্যামোক্সিলিন, সেট্রিজিন, নরফ্লোক্সোসিনের মতো বহুল ব্যবহৃত ওষুধ। অন্ডেম, প্যান্টোপ্রাজল গ্রুপের একাধিক ওষুধের ব্যাচ। পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালসের রিঙ্গার্স ল্যাকটেটের ১৬টি ব্যাচ জীবাণুমুক্ত নয়।কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিডিএসসি-র পরীক্ষায় ডাহা ফেল ১৪৫টি ওষুধের ব্যাচ। বহুল ব্যবহৃত প্যারাসিটামল,অ্যামোক্সিলিন-নরফ্লকসোসিনের মতো একাধিক অ্যান্টোবায়োটিক। পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালসের রিঙ্গার্স ল্যাকটেটের ১৬টি ব্যাচ জীবাণুমুক্ত নয় বলে সূত্রের খবর কর্নাটক স্টেট ল্যাবের পরীক্ষায়।

২০২৫ এর সেপ্টেম্বর মাসে সিডিএসসিও-র গুণগত মানের পরীক্ষায় ব্যর্থ ৫৩টি ওষুধের মধ্যে প‌্যারাসিটামল ছাড়াও ছিল ক্ল‌্যাভাম ৬২৫-এর মতো বহু পরিচিত অ‌্যান্টিবায়োটিক এবং প‌্যান-ডির মতো বহুল ব‌্যবহৃত হজমের ওষুধও। ক‌্যালশিয়াম এবং ভিটামিন ডি থ্রি সাপ্লিমেন্ট, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার ওষুধ থেকে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার ওষুধও ছিল বিপজ্জনক তালিকায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন, ড্রাগ কন্ট্রোল কী করছে?‌ ওষুধের দোকানগুলো যথাযথ ভিজিট করা হয় না কেন?‌ তাহলে কি নির্ধারিত সময়ে ড্রাগ লাইসেন্সের জন্য নির্ধারিত অর্থের বেশী টাকা জমা করলেই দোকানদার যা খুশি তাই করতে পারেন?‌ ওষুধের দোকানগুলোতে ধুলো ময়লার আখড়া, নজর রাখবে কে?‌ পরীক্ষায় ফেল করা ওষুধ বিক্রি করে দোকানদার বছরে দু-তিন ‌বার ভারতবর্ষ ট্যুর করেন ড্রাগ কন্ট্রোলের নজর এড়িয়ে?‌ জনপ্রিয় সব ওষুধ যদি গুণগত মানের পরীক্ষায় ব্যর্থ?‌ ‌সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক কতখানি নিরাপদ?‌ মুখে বলে যথেচ্ছ লাভজনক ওষুধের বিক্রি বন্ধ হওয়ার আদৌ প্রয়োজন আছে?‌ নিদৃষ্ট ওষুধের দোকান চালাতে ঠিক কী নিয়মাবলী মেনে চলতে হয়?‌ স্বাস্থ্যকর ওষুধের দোকান চালাতে দোকানদারের জন্য ঠিক কী রকম বাধানিষেধ মেনে চলতে হয়?‌ অসহায় মানুষ অধিক মুনাফালোভী ওষুধের দোকানদারের কবলে পড়ে ধীরে ধীরে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার পথে। অলি গলিতে লুকিয়ে থাকা ওষুধের দেকানগুলোতে রমরমিয়ে চলে অসাধু ব্যবসা?‌ নিয়ন্ত্রণ করবে?‌ উঠে আসছে একের পর এক প্রশ্ন, জবাব দেবে কে?‌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles