নতুন আতঙ্কের নাম ভূমিকম্প। বারংবার বিভিন্ন স্থানে কম্পন অনুভূত হচ্ছে। একের পর এক প্লেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। তবে, তা খুবই মৃদু। আগাম সতর্কতারর প্রয়োজন। রক্ষা পাওয়ার একমাত্র পন্থা স্মার্টফোন। অ্যান্ড্রয়েডের ভূমিকম্প সতর্কতা ফিচার স্মার্টফোনে ভূমিকম্পের কম্পন সনাক্ত করে এবং ব্যবহারকারীদের আগাম সতর্কতা দেওয়ার বার্তা। অজান্তেই আসা ভূমিকম্পের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচতে সাবধানতা অবলম্বন জরুরি। সম্প্রতি দিল্লি এনসিআর-এ খুব শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি অর্থাৎ এনসিএস অনুসারে ৪.০ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। কলকাতাতেও মৃদু ভুমিকম্পন। ভূমিকম্প হওয়ার আগেই সতর্কতা বা অ্যালার্ট অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনেই।
ফোনে ভূমিকম্পের সতর্কতা বা অ্যালার্ট পেতে, ফোনে ইন্টারনেটে ভূমিকম্প অ্যালার্ট করার জন্য লোকেশন ও ফিচার সক্রিয় রাখা জরুরী। ফোনে সেটিংস খোলার পর ‘সেফটি অ্যান্ড ইমার্জেন্সি’ অপশনে ‘আর্থকোয়েক অ্যালার্ট’-এ ট্যাপ করতে হবে। অ্যান্ড্রয়েডের ভূমিকম্প সতর্কতা বা আর্থকোয়েক অ্যালার্ট ফিচার অনেকটাই সতর্ক করবে আর্থ কোয়েকের বিবরণ। কারণ, অ্যান্ড্রয়েড ফোনে অ্যাক্সিলোমিটার এবং জাইরোস্কোপের মতো সেন্সর ভূমির কম্পন পরিমাপ করতে সাহায্য করে। সেন্সরগুলি হালকা ভূমিকম্পের কম্পন শনাক্ত করে স্মার্টফোনই সেই তথ্য গুগলের সিস্টেমে পাঠায়। ক্লাউড ভিত্তিক ডেটা প্রসেস গুগলের সিস্টেম তাৎক্ষণিকভাবে ডেটা প্রক্রিয়া করে এবং ভূমিকম্পের আকার এবং অবস্থান অনুমান করেই ব্যবহারকারীদের কাছে সতর্কতা পাঠায়। ভূমিকম্প শনাক্তকরণের পরই গুগলের পরিষেবা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যবহারকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে অ্যালার্ট করে। গুগলের মতে, আর্থকোয়েক অ্যালার্ট সিস্টেম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্ভুল, কারণ ছোট ছোট ভূমিকম্পও শনাক্ত করে যেগুলো সাধারণত অনুভূত হয় না।
কলকাতাতেও ভুমিকম্প হবে এবার ঘন ঘন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিংধ্যেই ২০২৫ এ দু’টো ভূমিকম্পের সাক্ষী কলকাতা। প্রথম ভুমিকম্প হয়েছিল এই বছর ৭ জানুয়ারি, দ্বিতীয় ভূমিকম্প হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি। এবার পর পর হোয়ার সম্ভাবনা থাকছে জোরদার। জিগ শ পাজেল সম বেশ কয়েকটি প্লেটের উপর বিদ্যমান শহর কলকাতা। প্রতিনিয়ত নড়াচড়ার জেরে ঘনঘন ভূমিকম্পের কারণ বলে জানায় জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া অর্থাৎ জিএসআই। শহর কলকাতা রয়েছে ‘সিসমিক জোন’ এ। নিয়মিত ভূমিকম্পের কবলে পড়বে এবার শহর কলকাতা বলে ধারনা করা হচ্ছে। ইন্ডিয়ান প্লেটের উপরেই অবস্থান কলকাতার। প্রতি বছর সেটা ৫ সেন্টিমিটার করে সরে যাচ্ছে উত্তর পূর্বের ‘টিবেটান’ প্লেটের দিকে। দুই প্লেটে বারংবার ধাক্কা অল্প অল্প করে। শহর জুড়ে অসংখ্য বহুতলের সমারোহ। প্রতিনিয়ত ভূমিকম্পের অভিঘাত সহ্য আদৌ সুরক্ষিত থাকা বেশ সন্দেহজনক বলে মনে করা হচ্ছে। শহরজুড়ে বেআইনি নির্মাণ ক্রমবর্ধমান। বেআইনি অর্থাৎ যথাযথ লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রোমেটারের সংখ্যাও বেড়েছে। অধিকাংশ বিল্ডিং স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের ছাড়পত্র থাড়াই দাঁড় করিয়ে দিতে তৎপর অসাধু প্রমোটারের দল। তার উপর সঠিক পরিমানে কাঁচামাল ব্যাবহার না করে তড়িঘড়ি খাড়া করে দেওয়া হচ্ছে বাড়িগুলো। ঘন ঘন ভূমিকম্পে সেগুলো ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। প্লেটের নড়াচড়া ব্যাতিত ভূর্গভের নিম্নভাগে থাকা সুবিশাল জল স্তরের ওঠা-নামার কারণেও ভূকম্পন অনুভূত হয়ে থাকে। বর্ষায় বৃষ্টির জল মাটি-পাথরের মধ্য দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেই মাটির ভিতরে আটকে থাকা বায়ু বেরিয়ে আসার ফলেই থেকেই ধস্ নামার সম্ভাবনা প্রবল থেকে প্রবলতর হয় মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলোতে, বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল অসিত সাহার কথায়, ‘‘ভিন্ন ভিন্ন ব্লক বা পাতের উপর বিদ্যমান শহর কলকাতা। পাতগুলো মুখোমুখি ধাক্কা হলেই কনভারজেন্স, আবার পাতগুলোএকে অপরের থেকে দূরে সরে গেলেই হচ্ছে ডাইভারজেন্স। সুতরাং এইভাবে প্লেটগুলোর নড়াচড়া প্রতিনিয়ত ক্রমবর্ধমান। এইরকম মুভমেন্টে ত্রুটিবিচ্যূতি প্রত্যক্ষ হলেই কেঁপে ওঠে ঘর বাড়ি আবাসন ভূমিও।’’ কলকাতায় এবার ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সতর্ক থাকতেই হবে শবরবাসীকে।