Thursday, March 13, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

‘এই বিশ্বাসের দাম ডবল ইঞ্জিনের সরকার দেবে।’ দিল্লির ‘দিল’ জিতে আপকে ‘বেইমান’ বললেন মোদি, “শর্টকাটের রাজনীতি শর্ট সার্কিটের কবলে”

দুর্নীতিকারিদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেললেন নরেন্দ্র মোদি। দিল্লিতে বিরাট জয়ের পর আম আদমি পার্টিকে ‘বেইমান’ বলে তুলোধোনা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। ২৭ বছর পর রাজধানীতে গেরুয়া পতাকা প্রথিত করে মোদির বার্তা, “শর্টকাটের রাজনীতি শর্ট সার্কিটের কবলে।” ঐতিহাসিক জয়ের জন্য দিল্লিবাসীকে ধন্যবাদ দেওয়ার পর জানিয়েছিলেন, সবকা সাথ, সবকা বিকাশের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাবে বিজেপি সরকার। রাজধানীতে গেরুয়া সুনামিতে খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছে ঝাঁটা। ৭০ আসনের দিল্লিতে ৪৮টি আসনে জয়ী বিজেপি। ২২ আসন পেয়েছে আপ। ধরাশায়ী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মণীশ সিসোদিয়ার মতো ভিভিআইপি মুখ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘দিল্লিবাসীর অত্যন্ত উৎসাহিত ও স্বস্তিতে। দিল্লির মানুষ আমাদের হৃদয় খুলে আশীর্বাদ করেছেন। এই বিশ্বাসের দাম ডবল ইঞ্জিনের সরকার দেবে। দিল্লিতে আড়ম্বর, অরাজকতা ও আপদার রাজনীতির হার হয়েছে। জনাদেশে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে রাজনীতিতে শর্টকার্ট ও মিথ্যার কোনও জায়গা নেই। শর্টকাটের রাজনীতিকে শর্টসার্কিট করে দিয়েছে জনতা। হরিয়ানার পর মহারাষ্ট্রে নয়া রেকর্ড গড়েছি এবার দিল্লিতেও ইতিহাস গড়েছি আমরা। ওড়িশা, হরিয়ানা বা মহারাষ্ট্র সর্বত্র নারীশক্তি আমাদের আশীর্বাদ করেছে। আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা পালন করেছি। দিল্লিতেও প্রতিশ্রুতি পূরণ করব। এটা মোদির গ্যারান্টি। দিল্লির প্রথম অধিবেশনে সিএজি রিপোর্ট পেশ করা হবে। যারা দুর্নীতি করেছে তাদের সব ফেরত দিতে হবে। আপদা এসেছিল এরা রাজনীতি বদলে দেবে কিন্তু দেখা গেল এরা কট্টর বেইমান। যারা দুর্নীতি দূর করার বার্তা দিয়ে রাজনীতিতে এসেছিল তাঁরা নিজেরাই দুর্নীতিতে পাকে ডুবেছে। ভাঙা রাস্তা, নোংরার গাদা, বিষাক্ত বাতাসের মতো নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল দিল্লি। কথা দিচ্ছি, আমরা দিল্লিকে আধুনিক শহর হিসেবে তৈরি করব। আমাদের শাস্ত্রে রয়েছে যমুনার কথা। সেই যমুনাকে এতদিন ‘আপদা’ অপমান করেছে। আমি কথা দিচ্ছি দিল্লি শহরের নয়া পরিচয় হয়ে উঠবে যমুনা।’‌

বিজেপির কাছে পরাস্ত তিনবারের মুখ্যমন্ত্রীর হার নিজের আসনেও। দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবারে কী করবেন! রাজ্যসভায় বর্তমানে দিল্লি ও পাঞ্জাব মিলিয়ে আপ-এর দশজন সাংসদ রয়েছেন। তার মধ্যে পাঞ্জাবের সাত জন সাংসদের মধ্যে কোনও একজন সাংসদকে পদত্যাগ করিয়ে কেজরি রাজ্যসভায় আসার সম্ভবনা। রাজনীতির ময়দানে টিকে থেকে নিজের গুরুত্ব বজায় রাখার জন্য কেজরির রাজ্যসভাই সবচেয়ে সহজ রাস্তা। আপের হাতে পাঞ্জাব থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান-কে সরিয়ে দিয়ে কেজরি সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী হলে দিল্লিতে আপের অস্তিত্ব সংকটের সম্ভাবনা। দিল্লির কোনও বিধায়ককে পদত্যাগ করিয়ে সেখান থেকে তিনি উপ-নির্বাচনে জিতে বিধায়ক হবেন এবং বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার ভূমিকা পালন করবেন সেই সম্ভাবনা নেই। কোনও পদ ছাড়াই আপ সুপ্রিমো হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। রাজনীতিতে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কেজরিওয়ালের কাছে একমাত্র বিকল্প পথ রাজ্যসভা। কোনওরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়িয়ে সহজে জাতীয় রাজনীতিতে নিজের মুখ রাখার সহজতম পন্থা।

লোকসভা ভোটের পর দেশের চারটি বিধানসভা ভোটে মোদীর ‘স্কোরকার্ড’ উন্নত। ঝাড়খণ্ডকে ব্যতিক্রম। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা এবং দিল্লিতে মোদী তথা বিজেপি ৩-১ ফলাফলে এগিয়ে। সদ্য-পরাজিত অরবিন্দ কেজরীওয়াল বলেছিলেন, ‘‘আমাদের হারাতে হলে মোদীজিকে পুনর্জন্ম নিতে হবে!’’ পুনর্জন্মই হল বিজেপির। হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র এবং রাজধানী দিল্লিতে দীর্ঘ ২৭ বছর পরে। লোকসভায় ধাক্কার পরে পদ্মশিবিরের কাছে প্রথম ‘অক্সিজেন’ ছিল হরিয়ানা বিধানসভা ভোটের ফল। কৃষক আন্দোলনের আঁচ, বিনেশ ফোগাটের বঞ্চনা, বিজেপি নেতা তথা সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে হরিয়ানার মহিলা কুস্তিগিরদের তোলা যৌন হেনস্থার অভিযোগ, চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প ঘিরে ক্ষোভের ছায়ার ‘প্রতিফলন’ হরিয়ানার বিধানসভা ভোটে দেখা যায়নি। ‘প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া’-র মোকাবিলা করে হরিয়ানায় নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়েছিল বিজেপি। ৯০টি আসনের মধ্যে তারা পেয়েছিল ৪৮টি আসন। মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে। দেশের ‘ধনীতম’ রাজ্য মহারাষ্ট্রের ভোটপ্রচারে ‘এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়’ স্লোগান তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ‘ছন্নছাড়া’ বিরোধী জোটকে পরাস্ত করেছিল বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ। ২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জাদুসংখ্যা ছিল ১৪৫। বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘মহাজুটি’র প্রাপ্তি ছিল ২৩৫টি আসন। বিজেপি পেয়েছিল ১৩২টি আসন। ‘বড় জয়’ পেয়েছিল বিজেপি তথা এনডিএ। ঝাড়খণ্ডে থমকাতে হয়েছিল বিজেপিকে। লোকসভা ভোটে আদিবাসী প্রভাবিত যে রাজ্যে ১৪টি আসনের মধ্যে ৯টি আসনে জিতেছিল তারা, সেখানে হেমন্ত সোরেনের জেএমএমে ভাঙন ধরিয়ে চম্পই সোরেনকে দলে টেনে, বিদ্রোহী বাবুলাল মরান্ডিকে ফিরিয়ে এবং সুদেশ মাহাতোর আজসুর অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সঙ্গে জোট গড়েও সুবিধা করতে পারেনি বিজেপি। আদিবাসীরা রয়েছেন হেমন্তের সঙ্গেই। ঝাড়খন্ড বিধানসভার মোট আসন ৮১টি। সরকারে দরকার ৪১টি আসন। হেমন্তের জোট পেয়েছিল ৫৬টি আসন। বিজেপি জোট পেয়েছিল ২৪টি আসন। তার মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ২১টি। দিল্লিতে ৭০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে শনিবার সন্ধ্যার মধ্যেই ৪৪টিতে জয়ী ঘোষিত বিজেপি। ২১টি আসন পেয়েছে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টি। প্রায় তিন দশক পর দিল্লিজয় নতুন করে চাঙ্গা করেছে বিজেপিকে ও নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীকেও। ঠিকই বলেছিলেন কেজরীওয়াল। পুনর্জন্মই বটে।

অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টিকে হারিয়ে দেশের ‘হৃদয়ে’ এবার বিজেপিরাজ। উচ্ছ্বসিত বঙ্গ বিজেপিও। ২০২৬-এ বাংলায়ও বদল হবে, তৃণমূলকে সরিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে গেরুয়া শিবির, আত্মবিশ্বাসী শুভেন্দু অধিকারী-সুকান্ত মজুমদার। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে বাংলায় রাজ করা শুরু করে বিজেপি। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েতেও ভোট টেনেছিল গেরুয়া শিবির। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বাংলার ১৮ জন সাংসদ লাভ। দিল্লিতে বিজেপির প্রত্যাবর্তন বাংলার গেরুয়া শিবিরের ‘মরা গাঙে জোয়ার’ আনবে বলে আত্মবিশ্বাসী সুকান্ত-শুভেন্দুরা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “ঐক্যবদ্ধ হোন, বাংলাতেও পরিবর্তন হবে।” পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “মানুষ মোদিজির উপর আস্থা রেখেছেন। বাংলাতেও বদল আসবে।” বিজেপি ওয়েস্টবেঙ্গল পেজেও ফুটে উঠেছে, ‘দিল্লিতে বিদায় হল আপ। এবার যাবে পশ্চিমবঙ্গের পাপ।’

২৭ বছর পর ফের একবার দিল্লিতে ক্ষমতা দখল করতে চলেছে বিজেপি। পদ্ম শিবির ৭০টি আসনের মধ্যে ৪৮টি জিতেছে বিজেপি। এরই মাঝে শুরু পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর নাম নিয়ে জল্পনা। ১৫ ফেব্রুয়ারির পরে দিল্লিতে সরকার গঠন ও শপথ গঠন করা হতে পারে। আগামী সপ্তাহে আমেরিকার পথে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোদী দেশে ফিরে আসার পরই সরকার গঠন করা হতে পারে বলে দাবি। দিল্লি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করবেন মুখ্যমন্ত্রীকে। মুখ্যমন্ত্রীর নাম চূড়ান্ত করে ফেললে তখন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের পরামর্শে রাষ্ট্রপতি তাঁকে নিয়োগ করবেন। মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিজেপি চমক দিতে পারে। জাতিগত সমীকরণ, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার মতো সব অঙ্ক কষে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বাছাই। ভোটব্যাঙ্কের বিষয় দিল্লিতে পাঞ্জাবি, ব্যবসায়ি এবং দলিত গরিবরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। দিল্লির পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে?‌ বেশ কয়েকজনের নাম ঘোরাফেরা করছে।

পরবেশ বর্মা নয়াদিল্লি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে হারিয়ে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে জায়ান্ট কিলার। ২০১৩ সাল থেকে নয়াদিল্লি বিধানসভা আসনে টানা তিনবার জয়ী কেজরিওয়াল। চতুর্থবারে দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে হারিয়ে ৪৮ বছর পর দিল্লি বিধানসভা কেন্দ্রে পদ্মফুল ফোটালেন পরবেশ।

বিজেন্দ্র গুপ্তা রোহিণী দিল্লি বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপির বিধায়ক। জয়ী হয়েছেন আপের প্রদীপ মিত্তলকে হারিয়ে। ২০১৫ এবং ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও এই আসনে জয়ী। এর আগে দিল্লি বিজেপির প্রধান হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন।

বীরেন্দ্র সচদেব দিল্লিতে ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপির রাজ্য সভাপতি। ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ থেকেই দায়িত্বে। বিজেপি ২০২৫ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন।

দিল্লির মোতি নগর থেকে বিজেপি প্রার্থী হরিষ খুরানা জেতেন আপের শিবচরণ গোয়েলের বিরুদ্ধে। দিল্লির ১৯৯৩-১৯৯৬ পর্যন্ত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মদন লাল খুরানার পুত্র হরিষ। বিজেপির দিল্লি ইউনিটের সম্পাদক দলের জনসংযোগ সেলের আহ্বায়ক এবং দলীয় মুখপাত্র পদের দায়িত্বে।

সুষমা স্বরাজের মেয়ে বাঁশুরি স্বরাজ প্রথমবারের সাংসদ। বাঁসুরি স্বরাজ লোকসভা নির্বাচনে নয়াদিল্লি আসনে জয়ী। এই আসনে অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং এলকে আডবাণীরা জিতেছিলেন আগে। ১৯৯৮ সালে যখন বিজেপির হয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন সুষমা স্বরাজই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles