Thursday, May 29, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

হৃদয় ভেঙে টুকরো!‌ মারণ রোগকে নিমন্ত্রণ?‌ অবসাদ থেকে দূরে থাকতে রাতে লম্বা ঘুমের প্রয়োজন

বয়সের সঙ্গে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে আসে। চিন্তাশক্তি, বা স্মৃতি সংরক্ষণের ক্ষমতাও কমে। অ্যালঝাইমার্স বা ডিমেনশিয়ার মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অবসাদ থেকেও মস্তিষ্কের সুস্থতার উপরে প্রভাব পড়তে পারে। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি ‘সাইকোলজিক্যাল মেডিসিন’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় প্রকাশ, অবসাদ থেকে মস্তিষ্কের বয়স দ্রুত হয়। প্রকৃত বয়সের তুলনায় মস্তিষ্কের বয়স বাড়িয়ে দিতে পারে অবসাদ। অবসাদ থেকে মস্তিষ্কের গঠনগত পরিবর্তনও ঘটতে পারে বলে দাবি গবেষণায়। ৬৭০ জনের ব্রেন স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে গবেষণায় দেখা গেছে ২৩৯ জন অবসাদের শিকার। বাকিদের ক্ষেত্রে অবসাদের কোনও লক্ষণ ছিল না। অবসাদ যুক্ত মানুষদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে স্থূলত্ব অর্থাৎ, সেই অংশগুলি আকারে মোটা হয়ে যাওয়ার ফলে তাঁদের ক্ষেত্রে গাণিতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, স্মৃতিরক্ষা, সংযমের মতো একাধিক কাজ প্রভাবিত। অবসাদ থেকে মস্তিষ্কের গঠনে পরিবর্তন। গবেষণায় জানা গেছে, ডোপামিন, সেরোটোনিন বা গ্লুটামেটের মতো মস্তিষ্কে অজস্র নিউরোট্রান্সমিটার অবসাদের সঙ্গে নিউরোট্রান্সমিটারগুলির কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। সমতা বজায় না থাকার কারণে মস্তিষ্কের গঠনগত পরিবর্তন হতে শুরু করে।
অবসাদের ফলে সংক্রমিত অংশে কিছু জিন অবশ্য কর্মক্ষম থাকে বলেই দাবি করা হয়েছে গবেষণায়। জিনগুলি প্রোটিন বাইন্ডিংয়ে সাহায্য করে। আবার অনেক সময়েই অবসাদ জিনগত কারণে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কিছু কিছু নির্দিষ্ট জিনও মানুষের অবসাদ বৃদ্ধি করতে পারে।

শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও প্রয়োজন। মনের মধ্যে অবসাদ দানা বাঁধলে অবশ্যই কোনও মনোবিদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। অবসাদ শনাক্তকরণে সমস্যা শুরু হলে পরিবার এবং নিকট বন্ধুদের সঙ্গে খোলা মনে কথা বলা উচিত। অবসাদেই হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো হচ্ছে ছেলেদের বা মেয়েদেরও। মানসিক চাপ আর উদ্বেগ এমন জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। চাপে পড়ে হৃদয়ের আকারই বদলে যাচ্ছে। হৃদয় ভাঙার রোগে মেয়েরাই বেশি ভোগেন। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ভাঙা হৃদয়ের রোগ এখন ছেলেদেরই বেশি হচ্ছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, হৃদয়ের এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মত্যু অবধি হয়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে গবেষণাপত্রে গবেষকেরা জানান, ‘ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম’ পুরুষদেরই বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রথমত অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের রেশ পড়ছে হার্টের উপর। চাকরি, সংসার জীবনের নানা উদ্বেগে মনমেজাজ যেন আর বশে থাকছে না। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার কয়েক মন ভারী পাথর চেপে বসছে মনে। মানসিক চাপ কখন যে প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে, তা বোঝাই দুষ্কর। গবেষণা বলছে, প্রেমের সাগরে ডুব দিয়েছেন এমন মানুষের মস্তিষ্কে ডোপামাইন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ভালবাসায় আঘাত পাওয়া বা জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে মন ভাঙার পোশাকি নাম ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম বা তাকাৎসুবো কার্ডিয়োমায়োপ্যাথি। অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ, মানসিক চাপ আর উৎকণ্ঠায় বিধ্বস্তদের এই অসুখ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। মানসিক আঘাতই সজোরে ধাক্কা দেয় হার্টকে। ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোমে আক্রান্ত দু’লক্ষাধিক পুরুষকে নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে আমেরিকার গবেষকেরা জানান, মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ব্রোকেন হার্টে পুরুষদের মৃত্যুর হারও প্রায় ১১.২ শতাংশ। ব্রোকেন হার্টে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকই।

অসুখ হার্টের। কাজেই মানসিক চাপ বাড়লে স্ট্রেস হরমোন বা কর্টিসলের ক্ষরণ বেড়ে যায়। তীব্র মাথাযন্ত্রণা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করার মতো লক্ষণও। বুকে চাপা ব্যথা হয় অনেকের।অবসাদ দেখা দিতে থাকে। উৎকণ্ঠা বহুগুণে বেড়ে যায়। প্যানিক অ্যাটাক’হতেও দেখা যায় অনেকের। হার্ট অ্যাটাকের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। ব্রোকেন হার্ট মানেই হার্ট অ্যাটাক হবে তেমনটা নয়। মানসিক উত্তেজনায় রক্তের চাপ লাগামছাড়া হলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এক দিনে হয় না এই রোগ। দীর্ঘ সময় ধরে উদ্বেগের পাথর জমলে, প্রেম ভাঙলে, কাছের মানুষের মৃত্যু হলে বা বিবাহবিচ্ছেদ ইত্যাদি কারণেও ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েছেন রোগী। প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, টানা তিন দিন যদি কেউ চার ঘণ্টা বা তার কম ঘুমোন, রক্তে এমন কিছু পরিবর্তন হয় যা শরীরে জটিল রোগের পথ প্রশস্ত করে! যে রোগ শুধু বয়স্ক নয়, হানা দিতে পারে কমবয়সিদের শরীরেও।

রাতের ঘুম কম হওয়ার সমস্যায় ভোগেন এ যুগের অধিকাংশ পেশাদারেরাই। অফিসের কাজ বাড়িতেও নিয়ে আসার অভ্যাস যাঁদের বা যাঁরা রাত করে বাড়ি ফিরে আবার সকাল হতেই অফিস যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন কিংবা যাঁরা রাত জেগে সিনেমা দেখে বা সমাজমাধ্যমের পাতায় নজর রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেন, তাঁদের রাতে অনেক সময়েই পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। কিন্তু বিষয়টি যখন অভ্যাসে পরিণত হয়, তখনই ঘনায় সমস্যা। বিজ্ঞানীরা আগেই বলেছেন, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সম্প্রতি গবেষণায় জানা গেছে, রোগ কী ভাবে শরীরে বাসা বাঁধে আর কারাই বা আক্রান্ত হন তাতে! সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, টানা তিন দিন রাতে ৪ ঘণ্টা বা তার কম ঘুমোলে রক্তে এক ধরনের প্রদাহ ঘটানো প্রোটিনের জন্ম হয়। ওই প্রোটিন শরীরে তখন তৈরি হয়, যখন কেউ মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন বা যখন শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ওই প্রোটিন দীর্ঘ দিন ধরে রক্তে থাকলে তা ধমনীর ক্ষতি করে এবং হার্টফেল, হার্টের অসুখ এবং অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনের মতো সমস্যা তৈরি করে, যা পরিস্থিতিবিশেষে মৃত্যুরও কারণ হতে পারে।

উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ১৬ জন সুস্থ কমবয়সি পুরুষকে গবেষণাগারে রেখে এ ব্যাপারে সমীক্ষা চালান। অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেকের সারা দিনের খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে শরীরচর্চা, কাজকর্ম, এমনকি, তাঁদের গায়ে সূর্যের আলো লাগানোর সময়ও ঠিক করা হয় স্বাস্থ্যকর নিয়ম মেনে। শুধু ঘুমের সময় মাঝেমধ্যে বদলে দেওয়া হয় নিয়ম। কখনও টানা তিন দিন অংশগ্রহণকারীদের সাড়ে ৮ ঘণ্টা করে ঘুমোতে দেওয়া হয়। আবার কখনও টানা তিন দিন সওয়া ৪ ঘণ্টা ঘুমোনোর পরেই ডেকে দেওয়া হয়। এর পরে করানো হয় রক্ত পরীক্ষা। তাতেই ধরা পড়ে ওই বিশেষ প্রোটিনের উপস্থিতি। গবেষকেরা বলছেন, ‘‘সচরাচর শরীরচর্চা করলে শরীরে স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের মাত্রা বাড়ে। যা মস্তিষ্ক এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু পরীক্ষায় দেখা যায়, যাঁরা কম ঘুমিয়েছেন, তাঁরা শরীরচর্চা করলেও সেই প্রোটিনের মাত্রা বাড়ছে না।’’ সমস্যা তথাকথিত কমবয়সি সুস্থ-সবলদের শরীরেও একই ভাবে ক্ষতি করছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাকিদের থেকে ভাল হলেও বিপদ বাড়ছে বলে আশঙ্কা। মনের মধ্যে অবসাদ দানা বাঁধলে অবশ্যই কোনও মনোবিদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

অফিস ও সংসারের হাজারও দায়িত্ব। সব সামলাতে সমানে কমছে ঘুমের সময়। ভোরবেলা যেন ঘুম ভাঙতে ইচ্ছাই করে না। সকালে ঘন ঘন অ্যালার্ম স্নুজ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভ্যাসের ফলে শরীরের নানা ক্ষতি হচ্ছে। অবিলম্বে এই অভ্যাস ত্যাগ করার পরামর্শ। এক সমীক্ষার রিপোর্টে, গোটা বিশ্বের কমপক্ষে ৫৬ শতাংশ মানুষের অ্যালার্ম স্নুজ করে ফের ঘুমনোর অভ্যাস রয়েছে। গড়ে তারা কমপক্ষে ১১ মিনিট ধরে এই কাজ করেন। তবে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট করে অ্যালার্ম স্নুজ করার অভ্যাসও রয়েছে অনেকের। গড় হিসাব ধরলে নাকি এরকম মানুষের সংখ্যাই বেশি। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, সাধারণত সপ্তাহের কর্মব্যস্ত দিনগুলিতে স্নুজ করার মাত্রাই বেশি। আবার যাঁদের অ্যালার্ম স্নুজের অভ্যাস তাঁরা ছুটির দিনে স্বাভাবিকভাবেই জেগে যান। সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে, যাঁরা ৫ ঘণ্টারও কম সময় ঘুমোন তাঁদের অ্যালার্ম স্নুজ করার প্রবণতা বেশি। অ্যালার্ম স্নুজের নিরিখে এগিয়ে আমেরিকা, সুইডেন ও জার্মানি। বেশ অনেকটাই পিছিয়ে জাপান ও অস্ট্রেলিয়া। চিকিৎসা পরিভাষায়, ভোরের দিকে ঘুমকে ব়্যাপিড আই মুভমেন্ট স্লিপ বা আরএমপি বলে। শারীরিকের তুলনায় ওই সময়ের ঘুমের ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় অনেক বেশি। তাই সেই সময় একবার ঘুম ভেঙে গেলে আর না ঘুমনোই ভালো। বারবার অ্যালার্ম স্নুজ করে ঘুমোলেও তা স্বাস্থ্যের পক্ষে তেমন উপকারী নয়। কারণ, হালকা ঘুম ক্লান্তি বাড়াতে সাহায্য করে। খিটখিটে ভাবও বাড়ে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে কফি বা অ্যালকোহল না। ঘুম আসতে দেরি হতে পারে। শোওয়ার ঘর থেকে স্মার্টফোন দূরে। নইলে সিরিজ, সিনেমা দেখার ফলে কিংবা স্রেফ স্মার্টফোন স্ক্রল করতে গিয়ে ঘুমোতে দেরি যায় অনেকের। অযথা তাড়াতাড়ি অ্যালার্ম না। ঠিক যখন ঘুম থেকে ওঠা প্রয়োজন তখনই অ্যালার্ম। অ্যালার্ম স্নুজ করে ঘুম না। ক্লান্তি ছেড়ে ঘুম থেকে উঠে পড়াই শ্রেয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles