Friday, May 23, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

‘মা, আমি চুরি করিনি’, মাকে চিঠি লিখে আত্মঘাতী স্কুলছাত্র!‌ সিভিক দৌরাত্ম কিছুতেই কমছে না!‌ পুলিশগিরির শিকার খুদেও?‌

‘মা, আমি চুরি করিনি!’ আত্মঘাতি খুদের লেখা শেষ চিঠি। কারণ, একটা চিপসের প্যাকেট? দাম ৫ বা ১০ টাকা খুব বেশি হলে ২০ টাকা। চিপসের প্যাকেটের জন্য এক নাবালককে মারধোর আর উঠবোস করালো সিভিক ভলেন্টিয়ার। শুভঙ্কর নামে সিভিক ভলান্টিয়ারের ‘পুলিশ’গিরি প্রাণ কেড়ে নিল খুদের। অভিযোগ, সিভিক শুভঙ্কর বাইকে তাড়া করে নাবালককে ধরেন রাস্তার মধ্যে। বাজারের মধ্যে তাকে উঠবোস করতে বাধ্য করা মারধোর করে। পরে মায়ের কাছেও বকা খায় সে। বাড়ি ফিরে বিষ খায় অপমানে লজ্জায়। উদ্ধার তার লেখা একটি ছোট নোট — ‘মা, আমি চুরি করিনি!’ পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার গোঁসাইবেড় এলাকার বাসিন্দা নিহত স্কুল পড়ুয়া কৃষ্ণেন্দু দাস। চিপস কিনতে বাজারে গিয়েছিল। সেদিন ওই দোকানে কোনও চিপস ছিল না। দোকানদার দোকানের ভিতরে ছিলেন। অনেক ডাকাডাকি করেও দোকানদারের সাড়া না পেয়ে নিচে পড়ে থাকা একটি চিপসের প্যাকেট দেখতে পেয়ে কুড়িয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরতে থাকে। ওই দোকানদার তথা সিভিক ভলান্টিয়ার‌‌‌ বাইক নিয়ে বেরিয়ে ধাওয়া করে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র কৃষ্ণেন্দুকে। এরপর বাজারের মধ্যে তাকে মারধোর আর উঠবোস করতে বাধ্য করে। ছোট্ট কৃষ্ণেন্দু সে সময় টাকা দিয়ে দেয় দোকানদার সিভিককে। তারপরেও চলে মারধোর ও নীতিপুলিশি। অবশেষে সেখানে উপস্থিত কৃষ্ণেন্দুর মা পুরো ঘটনা শুনে ছেলেকে বকাঝকা করে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন। অপমানে লজ্জায় নাবালক নিজের ঘরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর তার অচেতন দেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের দাবি, ঘরে থাকা কীটনাশক খেয়েছে কৃষ্ণেন্দু। তমলুক হাসপাতালে নিয়ে গেলেও কৃষ্ণেন্দুকে আর বাঁচানো যায়নি‌। কৃষ্ণেন্দু তার নোটে লিখে গিয়েছিল ‘মা আমি বলে যাচ্ছি যে আমি কুড়কুড়াটি রাস্তার ধারে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম, চুরি করিনি।’ এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হয় সিভিক পুলিশ শুভঙ্করের কাছে। সেসব দেখাতে রাজি হননি। এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আইনের লোক হয়েও কীভাবে আইন হাতে তুলে নিলেন শুভঙ্কর? সিভিকের শাস্তির দাবি এলাকাবাসীদের।

সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে দাদাগিরি’ কিংবা তোলাবাজির অভিযোগ এ রাজ‍্যে নতুন কিছু নয়। আগেও বিভিন্ন সময়ে তাঁদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ সামনে এসেছে। তারপরেও সিভিক ভলান্টিয়ারের দৌরাত্ম্য এতটুকু কমেনি। জাতীয় সড়কে ওভারলোডেড লরি দাঁড় করিয়ে ‘‌তোলাবাজি’‌ করে সিভিক ভলান্টিয়ার। অভিযোগ উঠছে বারংবার। সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট নানান ছবিও৷ সোস্যল মিডিয়য় এক পোস্টে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছিলেন, “মমতার পুলিশ এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নয় তোলাবাজিতে ব্যস্ত থাকে। শুক্রবার রাতের এই ঘটনা নতুন কিছু নয়। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় সড়কের উপর এভাবেই প্রতিদিন টাকা তোলে মমতার পুলিশ। বিভিন্ন থানার চুক্তিভিত্তিক চাকরিরত সিভিকদের দিয়ে এই তোলাবাজি করানো হয়। কোনও চালক এই তোলা দিতে অস্বীকার করলে তার কপালে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ, তাদেরকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা হয়।” বারাসতে জাতীয় সড়কে লরি দাঁড় করিয়ে তোলাবাজি-র ঘটনার ছবি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর শোরগোলও পড়ে গিয়েছিল পুলিশ মহলে। মালদাতেও সিভিক ভলান্টিয়ারের দাদাগিরির অভিযোগ উঠেছিল! দাবি মতো তোলা না-পেয়ে গাড়ির চালককে বেধড়ক মার। অনৈতিক এবং বেআইনি কাজে অভিযুক্ত সিভিক ভলেন্টিয়ারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও উঠেছিল। বারাসতের ১৩ নম্বর জাতীয় সড়কের কলোনি মোড় হোক অথবা হেলাবটতলা মোড়। রাত হলেই প্রতিদিন এখান থেকে যাতায়াত করে হাজারও হাজারও মালবাহী ট্রাক কিংবা লরি। রাত 8টা’র পরেই জাতীয় সড়কে শুরু হয়ে যায় মালবাহী গাড়ির লম্বা লাইন। যার জেরে তীব্র যানজটে নাকাল হতে হয় সাধারণ মানুষের। অভিযোগ, জাতীয় সড়কে কৃত্রিম ভাবে যানজট তৈরি করে তার ফায়দা নেন সিভিক ভলান্টিয়ারদের একাংশ। ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও তাঁরা কিছুই করেন না বলে অভিযোগ উঠেছে । যার ফলে রাত বাড়লেই জাতীয় সড়কে দাপট বাড়তে থাকে সিভিক ভলান্টিয়ারদের একাংশের। ওভারলোডেড গাড়ি থামিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ৷ সেই সঙ্গে কখনও কখনও বেআইনি ওভারলোডেড গাড়িকে বাঁকা পথে ছাড়পত্র দেওয়ারও অভিযোগ কর্তব্যরত সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী লরি চালকদের একাংশের দাবি, টাকা না দিলে রাতের বেলায় গাড়ি নিয়ে একচুলও এগোনো যায় না। প্রতিটি এলাকার নির্দিষ্ট মোড়ে আগে থেকেই টাকা নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। টাকা না দিলে নিস্তার নেই। এটা প্রতিদিনের রুটিন। আর এতেই মহা ফ‍্যাসাদে পড়েন চালকদের একাংশ৷

৯নভেম্বর,২০২১ এর ঘটনা। ‘‘পুলিশে দিয়ে কী হবে? থানায় নিয়ে গেলেও তো ছাড়া পেয়ে যাবে! যা করার আমাদেরই করতে হবে।’’ অভিযোগ, চোর সন্দেহে বাতিস্তম্ভে বেঁধে রাখা যুবককে দেখিয়ে সঙ্গীদের এ কথাই বলেছিল মানিকতলার বাসিন্দা, পেশায় এন্টালি থানার সিভিক ভলান্টিয়ার জগন্নাথ ভৌমিক। পুলিশের সঙ্গেই যার ওঠাবসা, বকলমে নিজেকে ‘পুলিশ’ বলেই দাবি করে যে, তার থেকে এমন কথা শুনলে যা হওয়ার, তা-ই হয়েছিল। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত বাতিস্তম্ভে বাঁধা ওই যুবককে দফায় দফায় পিটিয়েছিল জগন্নাথ এবং তার সঙ্গীরা। মারের চোটে আধমরা যুবককে ভোরের দিকে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো অটোয় বসিয়ে দেয় তারা। পরে সেখান থেকেই উদ্ধার হয় অমরনাথ প্রসাদ ওরফে পাপ্পু নামে বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবকের মৃতদেহ। অমরনাথের দাদা মহেশ প্রসাদের কথায়, ‘‘একের পর এক এমন ঘটনা ঘটে, কয়েক দিন আলোচনা হয়। কিন্তু আদতে কিছুই বদলায় না। ভাইয়ের মৃত্যুর পরেও কিছু বদলায়নি। চোর সন্দেহে ধরা এক যুবকের বুকে সিভিক ভলান্টিয়ারের বুট পরা পা দেখে তো চমকে উঠলাম! দোষ থাকলে শাস্তি দিক, কিন্তু কারও সঙ্গে এমন করা যায় কি? এই মনোভাব থেকেই তো আমার ভাইকে পিটিয়ে মারা হয়েছিল।’’
অমরনাথের মেজো ভাই, পেশায় অটোচালক উত্তম প্রসাদের আয়েই চলত মানিকতলার বসাকবাগানে তিন ভাইয়ের ছোট্ট সংসার। উত্তম বললেন, ‘‘পুলিশের পরিচয়েই পাড়ায় দাপিয়ে বেড়াত জগন্নাথ। ১৪-১৫ জনকে নিয়ে ও বেঁধে পিটিয়েছিল আমার ভাইকে। এর পরে মামলা তুলে নিতে অনেক বার চাপ দেওয়া হয়েছে। আমরা ঝামেলায় না গিয়ে চুপচাপ থেকেছি। সিভিক ভলান্টিয়ার হলেও পুলিশের সঙ্গেই তো ওঠাবসা। ওদের চটালে পুলিশকেই চটানো হয়।’’ পুলিশের সঙ্গে ওঠাবসার জোরেই গত কয়েক বছরে একাধিক বার সামনে এসেছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ‘দাদাগিরি’। কোথাও গাড়ি থামিয়ে কাগজ দেখার নামে টাকা দাবি, কোথাও অতি সক্রিয় সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে মারধরেরও অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের একাংশের প্রশ্ন, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া স্রেফ পুলিশের সঙ্গে কাজ করার জন্যই কি নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে বলে ভাবছেন সিভিক ভলান্টিয়ারেরা? নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতাও কি সেই কারণেই? নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবার এই মনোভাব সম্প্রতি দেখা গিয়েছিল বাঁশদ্রোণী থানার সামনের রাস্তায়। সেখানে পুলিশের স্টিকার লাগানো, বেপরোয়া গতির একটি গাড়ি সাইকেল ভ্যান এবং গাড়িকে ধাক্কা মেরে রেলিং ভেঙে ঢুকে যায় মন্দিরে। দেবাশিস ভট্টাচার্য নামে ওই গাড়ির মালিক কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার। গাড়িতে শুধু পুলিশের স্টিকার লাগানোই নয়, ‘পুলিশের’ প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগত নম্বর প্লেটের সেই গাড়ি তিনি ভাড়াও দিতেন।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মধ্যমগ্রামের ঘটনা ছাপিয়ে গিয়েছিল সিভিক ভলান্টিয়ারের দৌরাত্ম্যের সব ঘটনাকে। হেলমেট ছাড়া মোটরবাইকে সওয়ার, সৌমেন দেবনাথ নামে বছর পঞ্চাশের এক প্রৌঢ়কে সপাটে চড় মারে দুই সিভিক ভলান্টিয়ার। রাস্তায় পড়ে গিয়ে মারা যান সৌমেনবাবু। তার পরেই মধ্যমগ্রাম চৌমাথায় ট্র্যাফিক পুলিশের বুথে চড়াও হয় ক্ষুব্ধ জনতা। ভয়ে একটি গণশৌচাগারে আশ্রয় নেয় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারেরা। দরজা ভেঙে তাদের বার করার চেষ্টা হলে শৌচাগারের পাশের একটি পাকা নর্দমার মধ্যে লুকিয়ে পড়ে তারা। পরে কোনও মতে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ। পুরনো ঘটনা নিয়ে কথা তুলতেই গলা বুজে আসে সৌমেনবাবুর দুই মেয়ে এবং স্ত্রীর। স্ত্রী কাকলিদেবী মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁদের এক আত্মীয় এ দিন বলেন, ‘‘শুধুমাত্র হেলমেট না পরায় ওঁকে ওরা মেরে ফেলে। আইন হাতে তোলার সাহস বার বার হয় কী করে?’’

৯ নভেম্বর ২০২৪ এর ঘটনা। শ্লীলতাহানির ঘটনায় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার৷ রাতে মদ্যপান করে নিজের বাড়িতে না-গিয়ে পাশের বাড়িতে ঢুকে এক মহিলার শ্লীলতাহানিও করেন বলে অভিযোগ এন্টালি থানায় কর্মরত কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে। ঘটনায় এলাকাজুড়ে উত্তেজনায় অবশেষে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। লালবাজার সূত্রের খবর, ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম সন্তোষলাল প্রসাদ শম্ভুবাগান লেনের বাসিন্দা। রাতে অন্য এক যুবকের সঙ্গে কলকাতা পুলিশের এই সিভিক ভলান্টিয়ার মদ্যপান করেন। এলাকার বাসিন্দারা পুলিশে অভিযোগ জানান, ওই সিভিক ভলান্টিয়ার এতটাই মদ্যপান করেছিলেন যে কোনও হুঁশ ছিল না৷ প্রায় বেহুঁশ অবস্থাতেই নিজের বাড়িতে না ঢুকে পাশের বাড়িতে ঢুকে নারকীয় কাজ করে। এলাকার একাংশের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই সিভিক ভলান্টিয়ার এর আগেও এই ধরনের নানা ঘটনায় যুক্ত ছিলেন। উদ্দেশ্যহীনভাবে শুধুমাত্র নেশার ঘোরে পাশের বাড়ির এক মহিলার সামনে চলে এসে অপকর্ম করে তা নয়, সবটাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মহিলার পরিবারের তরফ থেকে থানায় শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করার ভিত্তিতে সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করে এন্টালি থানার পুলিশ। আরজি করের পর এই ঘটনায় ফের সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ।

২২ মার্চ ২০২৫ এর ঘটনা। সিভিক ভলান্টিয়ারের দাদাগিরির অভিযোগ পানিহাটিতে। ধারের টাকা চাইতে গেলে কর্তব্যরত অবস্থায় মহিলাদের মারধরের অভিযোগ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা এলাকায়। অভিযোগ, একাধিক মহিলার থেকে থেকে লক্ষাধিক টাকা ধার নিয়েছিলেন সিভিক ভলান্টিয়ার সন্তু দেবনাথ। দীর্ঘদিন থেকেই সেই টাকা শোধ না করায় সন্তুর বাড়িতে টাকা চাইতে গেলে প্রথমে সিভিক ভলান্টিয়ারের স্ত্রী, পরে ওই সিভিক ভলান্টিয়ার মত্ত অবস্থায় ওই মহিলাদের উপর চড়াও হন বলে অভিযোগ। আক্রান্ত এক মহিলার কথায়, “টাকা চাইতে গেলে আমাকে হুমকি দিয়েছে। বাচ্চাকে তুলে নেওয়ার কথা বলেছে। বাজে বাজে কথা বলেছে। দরজার পিছন থেকে ওর শাশুড়ি আমাকে বটি নিয়ে রীতিমতো কোপাতে আসে। ওই সিভিক ভলান্টিয়ার আমাকে শেষে এমনভাবে মারে যে আমি স্পটেই অজ্ঞান হয়ে যাই।” মহিলারা বলছেন, সন্তুর দাপটে এলাকায় রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, কারও কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা, কারও কাছ থেকে দু লক্ষ টাকা, কারও কাছ থেকে আবার দেড় লক্ষ টাকা ধার করেছিলেন। মহিলাদের দাবি, তাঁদের কাছ থেকে মোট ৩০ লক্ষ টাকা তোলা হয়েছিল। তা চাইতে গেলে তাঁদের উপর পুলিশের লাঠি নিয়ে চড়াও হয়। আর এক অভিযোগকারিনী বলছেন, “আমরা শুধু টাকা চাইতে গিয়েছিলাম। আমাদের সবার থেকে মোট ৩০ লক্ষ টাকা নিয়েছিল। কিন্তু, টাকা চাইতে গিয়ে মার খেতে হয়। মোট ৬ জনকে মেরেছে। লাঠিচার্জ করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে।” অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খড়দহ থানা ও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেই শুক্রবার রাতে সন্তু দেবনাথকে গ্রেফতার করে খড়দহ থানার পুলিশ।

৬মার্চ ২০২৫ এর ঘটনা। বারবার বিতর্কেও বেপরোয়া সিভিক ভলান্টিয়ার। মালদাকাণ্ডে নানা অপরাধে জড়িয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের একাংশের নাম। মালদায় সিভিক ভলান্টিয়ারের মারধরের ছবি নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। ২০২১ সালে ছিনতাইকারী সন্দেহে এক্সাইড মোড়ে রাস্তায় ফেলে যুবককে মারতে দেখা যায় এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, ওই যুবকের বুকে বুট পরা পা তুলে দেন সিভিক ভলান্টিয়ার। ছাত্রনেতা আনিস খানের রহস্যমৃত্যুতেও গ্রেফতার হয়েছিল এক সিভিক ভলান্টিয়ার। সেই সংক্রান্ত মামলায় হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে তৎকালীন অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় নিজের ব্যক্তিগত মত হিসাবে বলেছিলেন, রাজ্য জুড়ে সিভিক নিয়োগ বন্ধ রাখা উচিত। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বে মুর্শিদাবাদের ডোমকল, রানিনগর থেকে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামে অশান্তি থামাতে পুলিশের সঙ্গেই দেখা যায় সিভিক ভলান্টিয়ারদের। লাঠি হাতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতেও দেখা যায় তাদের প্রায় একই সময়ে ভাঙড় যখন অশান্ত, সেখানে সেখানে পুলিশের উর্দিতে দেখা যায় সিভিক ভলান্টিয়ারদের। ক্যামেরা দেখেই এদিক-ওদিক পালাতে শুরু করেন উর্দির আড়ালে থাকা সিভিকরা। কেউ আবার দোকানের ভিতর ঢুকে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে গন্ডগোল বাধলে সেখানে লাঠিচার্জ করতেও দেখা যায় সিভিক ভলান্টিয়ারকে।

সিভিক পুলিশদের একাংশের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন, সমালোচনা, বিতর্ক হয়েছে বিস্তর। এই প্রেক্ষিতে, ২০২৩ সালে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা নিয়ে সার্কুলার জারি করে রাজ্য পুলিশ। যেখানে স্পষ্ট বলা ছিল, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পুলিশকে সহযোগিতা করবেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। বিভিন্ন উৎসবে ভিড় সামলাতে, বেআইনি পার্কিং রুখতে, মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সিভিক ভলান্টিয়াররা পুলিশের সাহায্যকারীর ভূমিকায় থাকবেন। তবে আইন শৃঙ্খলাজনিত কোনও দায়িত্বপূর্ণ কাজ সিভিক ভলান্টিয়ারকে দেওয়া যাবে না। পুলিশ সূত্রে খবর, রাজ্য পুলিশে মোট পুলিশকর্মীর সংখ্যা, ৭৯ হাজার, ৩২ জন। সেখানে সিভিক ভলান্টিয়ারের সংখ্যা ১ লক্ষ ২৪ হাজার। ২০২৩ সালে একটি মামলায় বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা বলেছিলেন, পুলিশে স্থায়ী নিয়োগ না হওয়াতে নির্ভর করতে হচ্ছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ওপর। রাজ্য পুলিশের তরফে নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছিল, আইন শৃঙ্খলাজনিত কোনও দায়িত্বপূর্ণ কাজ সিভিক ভলান্টিয়ারকে দেওয়া যাবে না। তারপরও সেই কাজে দেখা গেছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের। সিভিক নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কড়া পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট। তারপরও সিভিক আছে সিভিকেই। বারবার নানা অপরাধে জড়িয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের একাংশের নাম। সাম্প্রতিককালের সবথেকে বড় ঘটনা আর জি কর-কাণ্ড। ২০২৪-এর ৯ আগাস্ট, আর জি কর হাসপাতালে কর্মরত তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে সঞ্জয় রায়ের। যিনি সেই সময় কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার ছিলেন। এই আর জি কর মামলার শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় মন্তব্য করেন, এটা একটা সুন্দর ব্যবস্থা সিভিক ভলান্টিয়ার যেখানে, রাজনৈতিক মদতপুষ্টদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিযুক্ত করা হচ্ছে।

পুলিশের উর্দি চুরি করে তোলাবাজি! কসবায় আটক সিভিক ভলান্টিয়ার। ধৃতের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। পুলিশের উর্দি চুরি। তার উপর আবার ওই পোশাকে তোলাবাজির অভিযোগ। তার জেরে আটক সিভিক ভলান্টিয়ার নীরজ সিং। কসবা থানার পুলিশ আটক করেছে তাকে।
পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাতে কসবার স্থানীয় বাসিন্দারা ১০০ নম্বরে ফোন করে জানান, ওই এলাকায় কনস্টেবলের উর্দি পরে এক সিভিক ভলান্টিয়ার তোলাবাজি করছেন। সেই অনুযায়ী পুলিশ ওই এলাকায় হানা দেয়। নীরজ সিং নামে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে আটক করা হয়। ধৃত প্রগতি ময়দান থানায় কর্মরত। আটক করার সময় মদ্যপ ছিলেন ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। ধৃতের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেই পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। সম্প্রতি তোলাবাজির অভিযোগ ওঠে আরও এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের উপর পণ্যবাহী গাড়ি দাঁড় করিয়ে তোলাবাজির অভিযোগ ওঠে। সিভিক ভলান্টিয়ার যখন বেআইনিভাবে টাকা তুলছিলেন, সেই সময় আবার পুলিশের গাড়িতে বসেছিলেন বরানগর থানার আধিকারিকরা। গোটা ঘটনায় পিঙ্কু মিত্র নামে এক সমাজকর্মী ক্যামেরাবন্দি করেন। তাঁর সঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ারের বচসা বেঁধে যায়। একসময়ে কান্নাকাটি জুড়ে দেন ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁকে কান ধরে ওঠবস করতেও দেখা যায়। সবশেষে সিভিক ভলান্টিয়ার ক্ষমাও চেয়ে নেন। সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় গোটা ঘটনাটি। নড়েচড়ে বসে বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট। ওই সিভিক ভলান্টিয়ার এবং বরানগর থানার এক এএসআইকে ক্লোজ করা হয়েছে।বিভাগীয় তদন্ত শুরু, দোষ প্রমাণিত হলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles