রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরকে কড়া নির্দেশ হাইকোর্টের। ফেডারেশনের বিরুদ্ধে আবারও বিরোধ। ফেডারেশনের জোরজুলুম দাদাগিরি কেউই মেনে নিতে পারছেন না। একের পর এক পরিচালক, প্রোডাকশন ডিজাইনার অভিযোগ তুলছিলেন। এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট পাশে দাঁড়াল পরিচালকদের। ফেডারেশনের দাদাগিরি বন্ধ করতে হবে বলে, স্পষ্ট করল হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টে ১৯ মে টলিউডের পরিচালক বনাম ফেডারেশনের মামলার শুনানিতে বিচারপতি অমৃতা সিং সুস্পষ্ট করে জানিয়ে দেন টলিউডে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে বাধা দেওয়া যাবে না। কোনও সংগঠন কখনই কারও জীবিকা না ব্যবসা বন্ধ করতে পারে না, সেই অধিকার তাদের নেই। কলকাতা হাইকোর্টের তরফে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে কোনও সংগঠন যাতে কারও কাজ বন্ধ না করে সেটা নিশ্চিত করবে। সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে পরিচালকরা পুলিশের সাহায্য নিতে পারবেন বলেও জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিচালক সুদেষ্ণা রায়। ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সম্পাদক জানান, পূর্ণ আস্থা আছে দেশের আইন ব্যবস্থায়। ‘এবার রাজ্য সরকার সমস্ত বিষয়টার সঙ্গে যুক্ত থাকবে কারণ তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সচিবকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা আমাদের কাছে খুবই আশাব্যঞ্জক। শুরু থেকেই হাইকোর্ট আমাদের পক্ষে আছে। তবে বিকেলে অর্ডার বেরোলে বোঝা যাবে কী কী নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট পরিচালকদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য।’ ১৬ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি। ১৫ জন মামলাকারী পরিচালকদের একসঙ্গে মামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
একইভাবে, স্বরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দায়ের করা ২৩ কোটির মানহানি মামলা থেকে সরলেন মানসী সিনহা, শ্রীজিত রায়, সোমেন হালদাররা। ২০২৪ এর অক্টোবর মাসে সম্মানহানির অভিযোগে ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া সংগঠনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ২৩ কোটির মানহানি মামলা দায়ের করেছিলেন দুশোরও বেশি টলিউড পরিচালক। ‘টলিউডে ৬০ শতাংশ যৌন হেনস্তার অভিযোগ পরিচালক-প্রযোজকের বিরুদ্ধে’, ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপের এমন মন্তব্যের জেরেই মানহানি মামলা থেকে আগেই নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন রাহুল মুখোপাধ্যায়। টলিউডে যৌন হেনস্তা এবং অশালীন-অনৈতিক আচরণের ঘটনা রুখতে, অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীদের রক্ষাকবচ হিসেবে ‘সুরক্ষা বন্ধু’ কমিটি তৈরি করেছিলেন স্বরূপ বিশ্বাস। ফেডারেশন সভাপতি অভিযোগ করেন, “৪০ শতাংশ যৌন হেনস্তার অভিযোগ এসেছে প্রযোজকদের বিরুদ্ধে। ৬০ শতাংশ অভিযোগ রয়েছে পরিচালক এবং পরিচালক থেকে প্রযোজক হয়েছে এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধে।” ফে়ডারেশন সভাপতির এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতির বিরুদ্ধে ২৩৩ জন পরিচালক ২৩ কোটির মানহানি মামলাকারীদের তালিকায় ছিলেন মানসী সিনহা, শ্রীজিত রায়, সোমেন হালদাররাও। এবার মামলা দায়েরকারীর তালিকা থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করলেন এই তিন পরিচালক। ফেডারেশন বনাম ডিরেক্টর্স গিল্ডের সংঘাতে টলিপাড়ার বেশ কজন পরিচালকের শুট বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার মিলেছিল। সম্প্রতি ফেডারেশনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থও হন কয়েকজন পরিচালক। বিদুলা ভট্টাচার্যের দায়ের করা মামলাতে সায় দিয়ে একযোগে আদালতের দ্বারস্থ হন, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সুদেষ্ণা রায়, সুব্রত সেনরা। মামলার রায়ে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা জানান, পরিচালক, প্রযোজকদের কাজে যেন বাধা দেওয়া না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে তথ্যসংস্কৃতি দপ্তরের সচিবকে। টলিউডে কেউ স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাইলে বাধা দেওয়া যাবে না। জীবন ও জীবিকার মৌলিক অধিকার যাতে ক্ষুন্ন না হয়, সেটা নিশ্চিত করাই আদালতের মূল উদ্দেশ্য।
প্রযোজকরা কেউই টলিউডের টেকনিশিয়ানদের বিরোধী নন, বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল ফেডারেশন। টালিগঞ্জের জনা চার-পাঁচ পরিচালক ব্যক্তিস্বার্থে সাড়ে ছয় হাজার টেকনিশিয়ানের ‘পেটে লাথি মেরে’ নিজেদের প্রযোজক হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ ছিল কলাকুশলীদের। ফেডারেশন বনাম ডিরেক্টর্স গিল্ডের সংঘাতে টলিপাড়ার বেশ কজন পরিচালকের শুট বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার মিলেছিল। পরিচালকদের একাংশ আদালতের দ্বারস্থ হন। বিচারপতি অমৃতা সিনহা জানান, পরিচালক, প্রযোজকদের কাজে যেন বাধা দেওয়া না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে তথ্যসংস্কৃতি দপ্তরের সচিবকে। মামলার আগামী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে, ১৬ জুন। ফেডারেশনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন কয়েকজন পরিচালক। বিদুলা ভট্টাচার্যের দায়ের করা মামলাতে সায় দিয়ে একযোগে আদালতের দ্বারস্থ হন, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সুদেষ্ণা রায়, সুব্রত সেনরা। উচ্চ আদালতের রায়ে আগামী জুনে ইন্ডাস্ট্রির সমস্যা সমাধানের জন্য চূড়ান্ত শুনানির দিকে নজর।