Friday, May 23, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

ঝাঁটা হাতে বিকাশভবনের সামনে রাস্তা পরিস্কার করছেন শিক্ষকরা?‌আন্দোলনে পড়ুয়াদের পাশাপাশি দৃষ্টিহীনরাও!‌ সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, পুলিশকে মারধরের মিথ্যা অভিযোগ এনে চাকরিহারাদের পুলিশি হেনস্থা?‌

চাকরিহারা শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের অবস্থান বিক্ষোভ। বিকাশ ভবনের সামনে জমায়েতের ফলে আন্দোলনস্থল অপরিস্কার। ঝাঁটা হাতে নিলেন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা। ঝাঁটা দিয়ে বিকাশ ভবনের সামনের রাস্তা সাফাই। শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের অবস্থানে যোগ দেন দৃষ্টিহীন চাকরিহারা শিক্ষকরা। বিক্ষোভস্থলে যোগ্য দৃষ্টিহীন শিক্ষকেরা শোনান নিজেদের জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার অভিজ্ঞতা। আন্দোলনস্থলে বসে আশপাশের পথশিশুদের পড়াশোনা করান। খোলা আকাশের নীচেই বসে ‘প্রতীকী শ্রেণিকক্ষ’। সেই চাকরিহারা শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদেরই আবার পুলিশি তলব। ২১ মে সকাল ১১টায় বিধাননগর উত্তর থানায় হাজিরার নির্দেশ। সূত্রের খবর,চাকরিহারাদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা, পুলিশকে মারধর-সহ একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রজু করা হয়েছে। মিথ্যা মামলার অজুহাত দেখিয়ে পুলিশি হেনস্থার চেষ্টা করা হচ্ছে প্রশাসনের তরফে বলে অভিযোগ। আন্দোলনকে থামাতে মিথ্যাই আশ্রয় নিয়ে ভয় দেখাচ্ছে পুলিশ বলেও বিস্তর অভিযোগ।

অবস্থান বিক্ষোভে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বিকাশ ভবন বন্ধ। বড় কোনও কর্মসূচির ডাক না দিয়ে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, আন্দোলন চলবে। ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর সদস্যদের কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন দৃষ্টিহীন, বিশেষ ভাবে দক্ষ শিক্ষকেরাও। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারিয়েছেন ২৫,৭৩৫ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। সকলেই ২০১৬ সালের এসএসসি-র নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়েছিলেন। ওই প্যানেলে থাকা দৃষ্টিহীন শিক্ষকেরাও এ বার পথে। হারানো চাকরি সসম্মানের ফেরানোর দাবিতে সল্টলেকের বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ চাকরিহারা ‘‌যোগ্য’‌ শিক্ষক শিক্ষিকাদের। একাধিকবার বিক্ষোভস্থলে প্রবল অশান্তি। পুলিশের লাঠির ঘায়ে আন্দোলনরত শিক্ষকরা আহত বলে অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের একাংশের বিরুদ্ধেও পুলিশকে লক্ষ করে ইট, পাথর, এমনকী ফুলগাছের টব পর্যন্ত ছুড়ে মারার অভিযোগ! আন্দোলনস্থলে সরকারি, বেসরকারি, কেন্দ্রীয় মিলিয়ে মোট ১০টি স্কুলের কয়েকজন খুদে পড়ুয়া রীতিমতো প্ল্যাকার্ড হাতে তাদের আন্দোলনের পক্ষে, শিক্ষকদের পক্ষে সওয়াল করতে এবং এমনকী পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে দেখা যায়। আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিশুরা একেবারেই প্রাথমীক স্তরের পড়ুয়া!

প্রশ্ন, এইটুকু বাচ্চাদের কেন এই আন্দোলনে এভাবে যুক্ত করা হল। আন্দোলনকারীদের দাবি, তারা শিশুদের মোটেও ঢাল করার পক্ষপাতী নন। শিশুরা নিজে থেকেই আন্দোলনস্থলে এসেছে। যদিও শিশুদের হাতে যে প্ল্যাকার্ডগুলি ছিল, সেগুলি মোটেও শিশুদের কাঁচা হাতে লেখা কোনও পোস্টার নয়। ছাপানো পোস্টার, প্ল্যাকার্ড নিয়েই শিক্ষকদের কর্মসূচিতে সামিল। আন্দোলনস্থলে শিশুদের অভিভাবকরাও ছিলেন। বিকাশ ভবনের সামনে রীতিমতো উত্তপ্ত পরিস্থিতি। অফিস চত্বর ঘেরাও করে বিক্ষোভ চাকরিহারাদের। বিকাশ ভবনের কর্মীদের আটকে রাখা, হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ। ‘ন্যূনতম বলপ্রয়োগ’ করে পুলিশও। চাকরিহারাদের ‘তাণ্ডবে’র ঘটনায় থানায় তলব। বিকাশ ভবন ঘেরাও আন্দোলনকারী। আটকে পড়েন প্রচুর সরকারি কর্মচারী। পুলিশ তাঁদের বার করার সময় বাধা দেন শিক্ষকরা। পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। পুলিশকে বলপ্রয়োগ করতে দেখা যায়। রাজ্য পুলিশের এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার বলেন, “৭ ঘণ্টা ধরে পুলিশ বুঝিয়েছে। বিকাশ ভবনে ৫৫টি দপ্তর, ৫০০-৬০০ কর্মী রয়েছেন। একজন সন্তানসম্ভবা অসুস্থ বোধ করেছিলেন। কারও মা অসুস্থ। সন্ধের পর তাঁরা বেরতে চান। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাঁদের বেরতে বাধা দেন। তাঁদের বের করতে গেলে বাঁধার মুখে পড়ে নূন্যতম বলপ্রয়োগ করা হয়েছে। যা করা হয়েছে সমস্তটাই প্রোটেকল মেনে।” বিক্ষোভ চলাকালীন আন্দোলনকারীরা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করে, পুলিশকে মারধর করে বলে অভিযোগের সূত্রেই পুলিশি তলব।

বিধাননগর পুলিশের কাছে জবাব তলব করল রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশন। অভিযোগ, ১৭ মে শিক্ষকদের প্রতিবাদের সময় প্ল্যাকার্ড হাতে ছোট পড়ুয়ারা শামিল, যা জুভেনাইল জাস্টিস আইন বহির্ভূত। শিশুদের অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও ছোটরা কীভাবে আন্দোলনে অংশ নিল? পুলিশের কাছে এই জবাব চাইল শিশু সুরক্ষা কমিশন। স্বতঃপ্রণোদিত মামলাও দায়ের। বিক্ষোভে শামিল হয়ে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা যায় বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়াদের। তা নজরে পড়ে শিশু সুরক্ষা কমিশনের। পুলিশকেই নোটিস পাঠিয়ে রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন তুলিকা দাসের বক্তব্য, ”কোনও জমায়েতে যদি শিশুদের দেখা যায়, সেখানে বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে নিরাপত্তার প্রশ্ন ওঠে। আমাদের কমিশন জানতে চেয়েছে, বিকাশ ভবনের সামনে কতটা সুরক্ষিত ছিল? কেন তাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হল? বড়দের আন্দোলনে ছোটরা কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর চেয়েছি আমরা। কোনও জমায়েতে যদি শিশুদের দেখা যায়, সেখানে বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে নিরাপত্তার প্রশ্ন ওঠে। আমাদের কমিশন জানতে চেয়েছে, বিকাশ ভবনের সামনে কতটা সুরক্ষা ছিল? কেন তাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হল? বড়দের আন্দোলনে ছোটরা কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর চেয়েছি আমরা।”

আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিতে অবস্থান মঞ্চে স্কুল পড়ুয়াদের সঙ্গে অভিভাবকেরাও। পদযাত্রাতেও পা মেলাল পড়ুয়ারা। চাকরিহারাদের বিক্ষোভে লাঠিচার্জ করেছিল পুলিশ। অনেকেই মার খেয়েছেন, রক্তাক্ত হয়েছেন। সেই ঘটনার প্রতিবাদেই বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়ারা চাকরিহারা শিক্ষকদের অবস্থান মঞ্চে। পড়ুয়ারা পুলিশের হাতে গোলাপ ও পেন তুলে দেয়। অবস্থান মঞ্চেই প্রতীকী ক্লাসরুমেরও আয়োজন। সরকারি, বেসরকারি এবং কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় মিলিয়ে ১০টি স্কুলের কয়েক জন পড়ুয়া শিক্ষকদের অবস্থান মঞ্চে। অভিভাবকেরাও সঙ্গে ছিলেন। পড়ুয়াদের মুখে পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদের কথা, ‘‘আমাদের শিক্ষকদের চাকরি অন্যায় ভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তার প্রতিবাদেই এসেছি।’’ রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারাদের অবস্থানকে ‘নাটক’ বলে মন্তব্য করে বলেন, ‘‘নেতাজি ইন্ডোরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, যা ব্যবস্থা করার করবেন। সেই বিশ্বাসটা রাখলেই হয়ে যেত। এত গোলমালের দরকার ছিল না। বেশির ভাগ মানুষই বাড়ি চলে গিয়েছেন। যাঁরা টিভিতে মুখ দেখাতে চান, তাঁরাই এখনও বসে আছেন। এটা নাটক হচ্ছে।’’ চাকরিহারা শিক্ষকদের কড়া জবাব, ‘‘আমরা কখনওই আমাদের ঢাল হিসাবে শিশুদের ব্যবহার করতে চাইনি। কিন্তু তারা আমাদের এখানে এসেছে। তাদের শিক্ষকদের অবস্থা দেখতেই ছুটে এসেছে তারা। আমরা মনে করি উনি ঠিকই বলেছেন। কারণ প্রকাশ্যে এক জনপ্রতিনিধি ক্যামেরার সামনে টাকা কাগজে মুড়ে নিচ্ছেন, ওই ঘটনা যদি নাটক না হয়ে বাস্তব হয়, তবে এটা অবশ্যই নাটক।’’

চাকরিহারাদের পাশে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নির্যাতিতার বাবা-মা আন্দোলন মঞ্চ ঘুরে দেখেন। চাকরিহারাদের সঙ্গে কথা বলেন। চাকরিহারাদের আন্দোলনে পাশে থাকার বার্তা দিয়ে নির্যাতিতার বাবা-মা বলেন, “আমরা চাকরিহারা শিক্ষকদের পাশে রয়েছি। তাঁদের এই আন্দোলন যাতে সাফল্য পায়ে সেই আশা রাখছি। আমার মেয়ের উপর যে অন্যায় হয়েছিল তার বিরুদ্ধে যেমন ন’মাস ধরে আমরা লড়াই করছি। ওঁদেরও বলব সেরকমই ধৈর্য ধরে লড়াইটা চালিয়ে যেতে। জয় অবশ্যই হবে। শিক্ষামন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশ প্রসাশন এবং মন্ত্রী সকলেই ব্যর্থ। চালে কাকর আছে না কি কাকোরের চাল সেটা অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। কারণ যারা মানুষ গড়ার কারিগর তাঁদের উপর পুলিশ লাঠি চালাচ্ছে, লাথি মারছে। যে রকম পুলিশের ভূমিকা দেখা গিয়েছিল আমার মেয়ের বিষয়। সেই একই ভূমিকা পুলিশের দেখা গেল শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।যাঁরা শিক্ষক গড়ার কারিগর তাঁরা আজকে রাস্তায়। এটা আমাদের লজ্জা। চাকরিহারাদের চাকরি যাওয়ার জন্য দুর্নীতি দায়। আমার মেয়ের বিষয়ে যেমন স্বাস্থ্য দফতর দায়ী, ওঁদের চাকরি যাওয়ার জন্য শিক্ষাদফতর দায়ী। আগামী দিনে ওঁদের যদি নবান্ন অভিযান বা কালীঘাট ঘেরাও অভিযান থাকে তা হলে সেই অভিযানেও আমরা ওঁদের পাশেই থাকব। প্রশ্ন, ওঁদের ‘মিরর ইমেজ’ বা ওএমআর শিট কেন দিচ্ছে না? ওটা দিলেই তো কে ‘যোগ্য’ আর কে ‘অযোগ্য’ সেটা প্রমাণিত হয়ে যাবে। সব কিছু শেষে ওঁদের বলব আপনারা ধৈর্য ধরুন অবশ্যই সাফল্য আসবে।”

স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে এসে বিকাশ ভবনের সামনে ক্লাসের বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছে পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা কমিশন। শিশু সুরক্ষা, জুভেনাইল জাস্টিস আইন লঙ্ঘিত হয়েছে বলে জানিয়ে তিন দিনের মধ্যে বিধাননগর কমিশনারেটের থেকে রিপোর্ট তলব করেছে কমিশন। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ ১৭ জন শিক্ষককে নোটিস পাঠিয়েছে। ২১ মে,বুধবার সকাল ১১টায় থানায় হাজির হতে হবে ওই শিক্ষকদের। উপস্থিত না হলে বিএনএসের ৩৫(৬) ধারায় তাঁদের গ্রেফতার করা হতে পারে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। অথচ সাধারন মানুষের প্রশ্ন, শিক্ষামন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশ প্রসাশন এবং মন্ত্রী সকলেই ব্যর্থ। মানুষ গড়ার কারিগরদের উপর পুলিশ লাঠি চালাচ্ছে, লাথি মারছে। যে রকম পুলিশের ভূমিকা দেখা গিয়েছিল আমার মেয়ের বিষয়। সেই একই ভূমিকা পুলিশের দেখা গেল শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। যাঁরা শিক্ষক গড়ার কারিগর তাঁরা আজকে রাস্তায়। এটা আমাদের লজ্জা, রাজ্যের লজ্জা সারা দেশের লজ্জা, বিশ্ববাসীর সামনেও চরম লজ্জার বিষয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles