নতুন কোনও ছবি নয়। বর্ষার সময় হাওড়ার জলে জলমগ্ন। দিনের পর দিল জমে থাকে জল। জল জমলে বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে ফোনের মাধ্যমে সমস্যা জেনে তার সমাধান করতে লেগে যায় অনেক সময়। সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভির ব্যবস্থা করছে হাওড়া পুরনিগম। বেশি জল জমে থাকা এলাকায় এবং রাস্তার ওপর গাছ ভেঙে পড়ার সম্ভাবনানয় স্থানে সিসিটিভি লাগানোর ব্যবস্থা। সিসিটিভি মনিটরিংয়ের জন্য চালু করা হচ্ছে অত্যাধুনিক কন্ট্রোল রুম। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দুর্গতদের অভিযোগ আসার আগেই উদ্ধারের ব্যবস্থা। প্রাথমিকভাবে ২০টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হবে। পাশাপাশি হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কন্ট্রোলরুম ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে।
পুরনিগমের মুখ্য প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তীর কথায়, “বর্ষার সময় সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে যে ফুটেজ পাওয়া যাবে তা দেখে মানুষ অভিযোগ জানানোর আগেই হাওড়া পুরনিগমের কর্মীরা সেখানে পৌঁছে যাবেন। সিসিটিভি ক্যামেরার মনিটরিং এই কন্ট্রোল রুম থেকেই হবে। হাওড়া পুরনিগমের পক্ষ থেকে শহরের যেখানে বিপর্যয় বেশি হয় জায়গায় সিসিটিভি লাগাবে। ইতিমধ্যেই সিসিটিভি লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনারের সঙ্গে কথা হয়েছে যাতে তাদের সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়।” তিনি আরও বলেন, “আমরা জানি যেসব জায়গায় বেশি জল জমে সেইসব জায়গায় তথ্য জানার জন্য হাওড়া পুরনিগম সেইসব জায়গায় সিসিটিভি লাগাবে। সেই সিসিটিভির মাধ্যমে মনিটরিং করা হবে এই কন্ট্রোল রুমে। আপাতত এই মুহূর্তে ২০টি সিসিটিভি ক্যামেরা হাওড়ার চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রধান জায়গায় লাগানো হচ্ছে। আগামী দিনে সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো হবে। মূলত যেসব জায়গায় বেশি জল জমে এবং কোনও বিপর্যয় হলে গাছ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেইসব জায়গায় সিসিটিভি বসানো হবে। সেই সিসিটিভি মনিটরিংয়ের জন্য হাওড়া পুরনিগমের তৈরি করেছে আধুনিক মানের সেন্ট্রালাইজড কন্ট্রোল রুম। যেখান থেকে মনিটর করে মানুষের ফোন আসার আগেই তাদের সাহায্যের জন্য পৌঁছে যাওয়া যায়। এটি হাওড়া পুরনিগমের প্রথম কন্ট্রোল রুম। এখনও পর্যন্ত কন্ট্রোল রুমে চারটে বড় স্ক্রিন লাগানো হয়েছে। এর পাশাপাশি মনিটর রাখা হবে। আগামী দিনে মনিটরের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। এর পাশাপাশি এই কন্ট্রোল রুম থেকে দপ্তরের মনিটরিং করা যাবে। হাওড়া পুরনিগমের ভিতরে যে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে তার ফুটেজও পাওয়া যাবে এই কন্ট্রোল রুমে।”
চরম দুর্যোগের আশঙ্কা বাংলায়। টানা ছ’দিন দুর্যোগের ঘনঘটা উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গে। এর মাঝেও এক, দু’জায়গায় তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি এবং কয়েকটি জেলায় তীব্র গরম অনুভূত হবে। টানা ঝড়বৃষ্টির জেরে কমবে দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রার পারদ। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, আজ, বুধবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী তিনদিনে দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রায় বিশেষ কোনও হেরফের হবে না। পরের দু’দিন তাপমাত্রা দু’-তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। পশ্চিম মেদিনীপুরে শুধুমাত্র তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি থাকবে। বাকি সব জেলাতেই আর্দ্রতাজনিত চরম অস্বস্তি অনুভূত হবে। তীব্র গরমের অনুভূতি থাকবে গোটা দক্ষিণবঙ্গে। এর মাঝেও স্বস্তির বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। আজ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদে হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। কয়েকটি এলাকায় ঘণ্টায় ৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। হস্পতিবার থেকে টানা ছ’দিন কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বেশিরভাগ জেলায় হলুদ সর্তকতা এবং কয়েকটি জেলায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সব জেলাতেই ঘণ্টায় ৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে একটানা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া জারি। বুধবার থেকে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ জুড়ে বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। জারি রয়েছে হলুদ সর্তকতা।
তাপপ্রবাহ চলবে পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূমে। গরম এবং অস্বস্তিকর আবহাওয়া থাকবে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া জেলায়। বৃহস্পতিবারও তাপপ্রবাহ চলবে পশ্চিমের জেলাগুলোতে। দক্ষিণবঙ্গের কলকাতা-সহ সব জেলাতেই গরম এবং অস্বস্তি চরমে উঠবে। তবে বুধ-বৃহস্পতি দুইদিনই বিক্ষিপ্ত ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে বাড়বে বৃষ্টি। শুক্রবার কালবৈশাখীর সম্ভাবনা। পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতিবেগে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া। শনিবারও ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা কলকাতা-সহ বেশ কয়েকটি জেলায়। উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দার্জিলিং থেকে মালদহ, সব জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সঙ্গে ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত দমকা ঝোড়ো বাতাস বইবে। ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও জলপাইগুড়িতে। প্রসঙ্গত, এবার আগাম বর্ষা প্রবেশ করেছে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। গতকাল ১৩ মে নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণ আন্দামানসাগর এবং উত্তর আন্দামান সাগরের কিছু অংশে ঢুকে পড়েছে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু। হিসেনব মতো ৫ দিন আগে প্রবেশ করল বর্ষা।