সৃঞ্জয় দাশগুপ্তের রহস্যমৃত্যু! পেশায় আইটি কর্মী সৃঞ্জয়। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারের একমাত্র পুত্র সৃঞ্জরের রহস্যমৃত্যু। বিধাননগর সেবা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পেশায় আইটি কর্মী সৃঞ্জয়কে। ময়নাতদন্তের জন্য আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। রিঙ্কু মজুমদার-সহ বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের কারও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। দিলীপ ঘোষ ও রিঙ্কু মজুমদারের ছেলে সৃঞ্জয় মজুমদারের মৃত্যু সত্যই রহস্যজনক! মঙ্গলবার সকালে নিউটাউনের সাপুরজি আবাসন থেকে অবচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত্যুর কারণ ঘিরে ধোঁয়াশা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিউটাউনের সাপুরজি আবাসন থেকেই সৃঞ্জয় ওরফে প্রীতমকে অবেচতন অবস্থায় উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে ২৭ বছর বয়সি সৃঞ্জয়কে টাটা মেডিক্যালের পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। সূত্রের খবর, তাঁকে মৃত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দেহ আর জি কর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সাড়ে এগারোটা নাগাদ খবর পায় পুলিশ। কী কারণে মৃত্যু তা নিয়ে ধোঁয়াশা। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, প্রীতমের নিয়মিত একটি ওষুধ চলত। তারেই ওভারডোজেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর প্রশ্ন উঠছে সত্যি কি ওষুধের পরিমাণ বুঝতে না পেরে দুর্ঘটনার জেরে মৃত্যু? নাকি সৃঞ্জয় আত্মঘাতী হয়েছেন? অসমর্থিত সূত্রের খবর, গলার কাছে একটি দাগ লক্ষ্য করা গিয়েছে। পুলিশ এখনই কিছু বলতে নারাজ। মুখ খোলেনি সৃঞ্জয়ের পরিবারও।
এপ্রিল মাসে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ ও রিঙ্কু মজুমদারের বিয়ে হয়। রিঙ্কুর প্রথম পক্ষের সন্তান সৃঞ্জয়। মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিয়েছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যমে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, মায়ের বিয়েতে খুশি তিনি। কিছু দিন পরই দেহ উদ্ধারে ঘনিয়েছে রহস্য। দিলীপের বাড়িতে মায়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলেন না পাত্রী রিঙ্কুর পুত্র সৃঞ্জয়! পেশায় আইটি কর্মী। সল্টলেকের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। শহরের বাইরে ছিলেন রিঙ্কু মজুমদারের পুত্র সৃঞ্জয়। সেই কারণেই মায়ের বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন না বলেই জানিয়েছিলেন। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের সঙ্গে মা যে নতুন জুটি বেঁধেছেন, তাতে ভীষণ খুশি ছিলেন বলেই জানিয়েছিলন। বছর ২৫-এর যুবক বলেছিলেন, ‘‘আমি বিয়েতে থাকতে পারছি না। তবে আমার থাকার ইচ্ছা ছিল।’’ বাড়ি ফিরে মা এবং তাঁর নতুন সঙ্গীর জন্য উপহার আনবেন বলেছিলেন সৃঞ্জয়। তবে উপহারে কী, তা খোলসা কর জানান নি রিঙ্কুর পুত্র। মতাদর্শগত ভাবে মিল রয়েছে, এমন মানুষের সঙ্গে মা ‘সেটল ডাউন’ করছেন বলে খুশি ছেলে সৃঞ্জয় বলেছিলেন, ‘‘আমি গুড ফ্রাইডের ছুটিতে এখন শহরের বাইরে। আমার থাকার খুব ইচ্ছে ছিল (বিয়েতে)। একশো বার আমার মত আছে। মায়ের জন্য আমি খুব খুশি। আমি আনন্দিত যে, মা অবশেষে একজনের সঙ্গে ‘সেটল ডাউন’ করছেন এবং ওঁরা একই আদর্শে বিশ্বাসী।’’
বেশ কয়েক বছর আগে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে ৫১ বছরের রিঙ্কুর। ছেলে সৃঞ্জয় বলেন, ‘‘১৩ বছর ধরে সামাজিক এবং পারিবারিক দায়িত্ব পালন করেছেন মা। এ বার নিজের জীবন শুরু করছেন। আমি মন থেকে খুশি। একটা ‘ইমোশনাল ভ্যাকুয়াম’ তো থেকেই যায় মানুষের মধ্যে। একটি নির্দিষ্ট বয়সে এসে বাবাকে পাচ্ছি, সেটার জন্যও আমি খুশি।’’ দিলীপের সঙ্গে তাঁর একাধিক বার দেখা হয়েছে এবং কথাবার্তা হয়েছে। বাবা হিসাবে দিলীপকে তিনি মন থেকে মেনে নেন জানিয়েই সৃঞ্জয় বলেছিলেন, ‘‘কলকাতায় ফিরে মা এবং মায়ের সঙ্গীর জন্য উপহার নিয়ে দেখা করতে যাবেন সৃঞ্জয়। উপহার হিসাবে কী দেবো, সেটা ‘সারপ্রাইজ়’। দু’জনের পছন্দ হয় এমন জিনিসই দেবো। দু’জনকে অনেক শুভেচ্ছা। ভাল থাকুন দু’জনে। আমাদের বাংলার জন্য কাজ করুন এবং আমাদের গর্বিত করুন।’’
১৮ এপ্রিল দিলীপ ও রিঙ্কু বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আর বিয়ের ১ মাস কাটার আগেই ঘটে গেল বড় অঘটন। মঙ্গলবার ১৩ মে, নিউটাউনে শাপুরজি আবাসন থেকে উদ্ধার হল রিঙ্কুর তরুণ পুত্র প্রীতম দাশগুপ্ত ওরফে সৃঞ্জয়ের অচৈতন্য দেহ। দিলীপ ঘোষের স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারের একমাত্র পুত্র সৃঞ্জয় দাশগুপ্তের রহস্যমৃত্যুর কারণ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু বলতে চাননি তদন্তকারীরা। বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। আপাতত দেহ ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, আত্মহত্যা করেছেন প্রীতম। গলায় ফাঁস লাগানোর দাগও দেখা গিয়েছে বলে খবর। আরজি কর মেডিক্যাল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত। পেশায় আইটি কর্মী সৃঞ্জয় ওরফে প্রীতম সল্টলেকের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করতেন। গত ১৮ এপ্রিল বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর মা রিঙ্কুর বিয়ের দিন শহরে ছিলেন না ২৫ বছরের যুবক। বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলেন। দিলীপ ও রিঙ্কুর বিয়েতে গরহাজির ছিলেন ছেলে। রিঙ্কু দাবি করেছিলেন, কয়েকদিনের টানা ছুটি পেয়ে সৃঞ্জয় ওরফে প্রীতম নাকি ঘুরতে চলে গিয়েছেন। এমনটাও দাবি করেছিলেন যে, ইচ্ছাকৃতভাবেই নাকি সে মায়ের দ্বিতীয় বিয়েতে থাকতে চায়নি। যদিও দিলীপের সঙ্গে গাঁটছড়ায় তাঁর ছিল না কোনো আপত্তি। প্রাথমিক তদন্তে সৃঞ্জয় আত্মঘাতী হয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। এদিন বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালের বাইরে রিঙ্কু থাকলেও, তিনি গাড়ি থেকে নামেননি। অবসাদগ্রস্ত ছিলেন কি না, তা নিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু হয়েছে। পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের কাজও শুরু। ফোনটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে, জানার চেষ্টা হচ্ছে তিনি শেষ কার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। মায়ের বিয়ের ২৫ দিনের মাথায় সেই যুবকের মৃত্যু ঘিরে রহস্য!
সূত্রের খবর, হই হুল্লোড় করতে ভালোবাসা সৃঞ্জয় বেশ কিছুদিন ধরেই স্নায়ু রোগের ওষুধ খাচ্ছিলেন। সোমবার রাতে বন্ধুদের নিয়ে বাড়িতে পার্টি করেন। সঙ্গে ছিলেন অফিসের দুই সহকর্মী। একজন রাত সাড়ে দশটা-এগারোটা নাগাদ এসেছিলেন। অন্যজন আসেন রাত তিনটে নাগাদ। রাতে পার্টির পর এক যুবক সৃঞ্জয়ের সঙ্গে থেকে যান। এই যুবক দুই বন্ধুর মধ্যে কেউ কি না, তা জানা যায়নি। সকালে সৃঞ্জয়ের বান্ধবী বাড়িতে এসে দেখেন অচেতন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। তিনি রিঙ্কুকে ফোন করে বলেন, “আপনি তাড়াতাড়ি আসুন, ওর বডি (শরীর) নীল হয়ে গিয়েছে।” এরপরই তড়িঘড়ি ছুটে যান রিঙ্কু। তাঁর কথায়, “ফোন পেয়ে ছুটে যাই। দেখি কয়েকজন ওর হাত-পা মালিশ করছে। অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য অপেক্ষা না করে গাড়িতেই হাসপাতালে নিয়ে যাই।” রিঙ্কু জানিয়েছেন, দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হওয়ার পর একা থাকছিলেন ছেলে। কোথাও তাঁকে একাকীত্ব গ্রাস করছিল। এমনকী রান্নার লোকও মাঝে মধ্যেই বাড়ি থেকে ফিরে যেতেন। ছেলে না খেয়েই অফিস যাচ্ছেন সেই খবরও পেয়েছিলেন তিনি। তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে এসে রাখার জন্য দিলীপের সঙ্গে তিনি কথাও বলেছিলেন বলে জানিয়েছেন রিঙ্কু। এদিকে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, সোমবার গভীর রাতে মায়ের সঙ্গে কথা হয় প্রীতমের। সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার সকালে তিনি মামা বাড়ি যাবেন। সকাল ৯টা পর্যন্ত নিঃশ্বাসের শব্দ পাওয়া যাওয়ার পর হঠাৎ কী হল যে মৃত্যুর মুখে ঢোলে পড়লেন সৃঞ্জয়। তাঁর সঙ্গে থাকা ছেলেটি বুঝতে পারলেন না? পারলে কেন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন না। রাতভর তিনবন্ধু পার্টি করেন সাপুরজি আবাসনে। মঙ্গলবার সকালেই যাওয়ার কথা ছিল মামার বাড়ি। সকাল ৯ টা পর্যন্ত নিঃশ্বাসের শব্দ পেয়েছেন পাশে শুয়ে থাকা ছেলেটি! তারপরই অবচেতন দেহ উদ্ধার হয় দিলীপ ঘোষের স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারের প্রথম পক্ষের পুত্র সৃঞ্জয় দাশগুপ্তের। সৃঞ্জয় দাশগুপ্তের মৃত্যুর খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে যান বাবা। প্রথমবার প্রকাশ্যে দিলীপজায়া রিঙ্কু মজুমদারের প্রথম স্বামী। রিঙ্কুদেবীর প্রথম স্বামী অর্থাৎ সৃঞ্জয়ের বাবার নাম রাজা দাশগুপ্ত। উত্তরপাড়া নবনগরের বাসিন্দা তিনি। একপর্যায়ে দাম্পত্যকলহ চরমে পৌঁছেছিল। তখনই ছেলেকে নিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন রিঙ্কু। একাই বড় করেছেন ছেলেকে। মঙ্গল সকালে ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ামাত্রই হাসপাতালে ছুটে আসেন রাজা। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। দিলীপ ঘোষের স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারের ছেলে সৃঞ্জয় দাশগুপ্তের মৃত্যুতে খুনের তত্ত্ব খারিজ ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে। আরজি কর মেডিক্যালে তাঁর দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, অগ্নাশয় ও যকৃত বিকল হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। এই ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা শুরু করেছে টেকনো সিটি থানার পুলিশ। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ, অ্যাকিউট হ্যামারেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু সৃঞ্জয়ের। তাঁর হৃদযন্ত্র, লিভার ও কিডনি স্বাভাবিকের থেকে বড়। দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে অস্বাভাবিক মৃত্যু বা খুনের সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। সৃঞ্জয়ের মা রিঙ্কুদেবী জানিয়েছেন, ছেলে কয়েক বছর আগে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল। তার পর থেকে নার্ভের ওষুধ খেত। রবিবার মাদার্স ডে উজ্জাপন করতে মায়ের কাছে যান তিনি। সঙ্গে নিয়ে যান কেক ও উপহার। তখনও সৃঞ্জয়ের মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখতে পাননি। সৃঞ্জয় যে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছিলেন না সেটা জানতে পেরেছিলেন রিঙ্কুদেবী। স্ত্রী রিঙ্কুর প্রথমপক্ষের ছেলে সৃঞ্জয় দাশগুপ্তের রহস্যমৃত্যুতে বেদনার্ত দিলীপ ঘোষ। মঙ্গল বিকেলে শ্মশানে যান। আক্ষেপের সুরে বিজেপি নেতা বললেন, “আমার দুর্ভাগ্য, পুত্রসুখ হয়নি, পুত্রশোক হল। কী থেকে কী ঘটে গেল কিছুই বুঝতে পারছি না।”