ভারত পাকিস্তান ঘাত-প্রত্যাঘাতের পর্ব শেষ। যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত। বিশ্বকে বার্তা জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সোশ্যাল মিডিয়ায়লেখেন, দুই দেশ পূর্ণ সংঘর্ষবিরতিতে রাজি। কয়েকঘণ্টা পরেই ভারতের বিদেশ সচিব সাফ জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে ট্রাম্প লেখেন, তিনি, ভারত-পাক দু’ দেশকে যুদ্ধ নয়, বাণিজ্যে আহ্বান করেছেন। দু’ দেশের সঙ্গেই কাজ করতে চান। দেখতে চান, কয়েক দশক ধরে চলা কাশ্মীর ইস্যুর যদি কোনও সমাধানের পথ বের করা যায়, হাজার বছর পরেও। ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারত-পাক নেতৃত্বকে কুর্নিশ জানিয়ে লিখেছেন, দুই দেশের নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছিল, সময় এসেছে উভয় আগ্রাসন বন্ধের, যা আরও বেশি মৃত্যু, ধ্বংসের কারণ হতে পারত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দু’ দেশকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করেছে, সে প্রসঙ্গও মনে করিয়ে দিয়েছেন। এরপরেই ট্রাম্প লেখেন, যদিও আলোচনা হয়নি, তবে আমি এই দুই দেশের সঙ্গেই উল্লেখযোগ্যভাবে বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে চলেছি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, দু’ দেশের সঙ্গে কাজ করে যাবেন দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা ‘কাশ্মীর’ সমস্যার কোনও সমাধান উঠে আসার আশায়। দু’ দেশের সংঘর্ষবিরতি প্রসঙ্গে মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিয়ো শনিবার যুদ্ধবিরতি কথা জানিয়ে এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘‘ভান্স (মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট) এবং আমি গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং শাহবাজ শরিফ, ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির এবং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং আসিম মালিক (আইএসআই প্রধান)-সহ ঊর্ধ্বতন ভারতীয় ও পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’’
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং উত্তরপ্রদেশ প্রতিরক্ষা শিল্প করিডরে ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন ইউনিট ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন। পাকিস্তানের সঙ্গে বাড়তে থাকা সামরিক উত্তেজনার মাঝে এটি ভারতকে নতুন শক্তি দেবে। বছরে ৮০ থেকে ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা হবে। ৩০০ কোটি টাকায় নির্মিত এই উৎপাদন ইউনিটটি ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন করবে। এর পরিসর ২৯০ থেকে ৪০০ কিমি এবং সর্বাধিক গতিবেগ ২.৮। ভারত এবং রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগ ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রটি স্থল, সমুদ্র বা আকাশ থেকে উৎক্ষেপণ করা যেতে পারে। লখনউয়ের নতুন চালু হওয়া এই ইউনিট থেকে প্রতি বছর ৮০ থেকে ১০০ ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন করা হবে। এছাড়াও, প্রতিবছর ১০০ থেকে ১৫০ নতুন প্রজন্মের ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রও নির্মিত হবে। পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র এক বছরের মধ্যে প্রস্তুত করা হবে। সুখোইয়ের মতো যুদ্ধবিমানে শুধুমাত্র একটি ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র পরিবহন করতে পারে। তবে, এখন তিনটি পরবর্তী প্রজন্মের ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে সক্ষম হবে। পরবর্তী প্রজন্মের ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের আক্রমণ পরিসর ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি হবে এবং ওজন ১,২৯০ কিলোগ্রাম হবে। বর্তমান ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় যার ওজন ২,৯০০ কিলোগ্রাম। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৮ সালের গ্লোবাল ইনভেস্টরস সামিটে এটি শুরু করেছিলেন। ২০২১ সালে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের DRDO এবং রাশিয়ার NPO মাশিনোসটোইরেনিয়া দ্বারা যৌথভাবে উন্নত হয়েছে এবং এটি ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি মূল উপাদান হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। উৎপাদন ইউনিটের সঙ্গে ব্রাহ্মোস অ্যারোস্পেস ইন্টিগ্রেশন এবং টেস্টিং সুবিধা ও উদ্বোধন করা হবে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর অসেম্বলি এবং পরীক্ষা পরিচালনা করবে।
ভারতীয় ব্রাহ্মস উৎপাদন ইউনি উত্তরপ্রদেশ সরকার প্রদত্ত ৮০ হেক্টর জমির উপর নির্মিত।
অস্ত্রবিরতির শপথ নেওয়ার পরে তা লঙ্ঘন করে ভারতের ভিতরে গোলগুলি বর্ষণ করে পাকিস্তান। প্রতিবেশী দেশের এই দ্বিচারিতা দেখে তীব্র ক্ষুব্ধ ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার শিখর ধাওয়ান সোশ্যাল মিডিয়ায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রবল ভাবে সোচ্চার হয়ে লেখেন, ”নোংরা দেশ আবার তার নোংরামি সারা দুনিয়াকে দেখাল।” বীরেন্দ্র শেহবাগ, যুজবেন্দ্র চাহাল, রাহুল তেওয়াটিয়ার মতো ক্রিকেটার পাকিস্তানের চরিত্র দেখার পরে আর স্থির থাকতে পারেননি। শেহবাগ তো প্রতিবেশী দেশকে সারমেয়র সঙ্গে তুলনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, কুকুরের লেজ চিরকাল বাঁকাই থেকে যায়। ভারত-পাক সংঘর্ষের আঁচ এসে পড়ে ক্রিকেটমাঠে। আইপিএল সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঠিক যখন মনে হচ্ছে বৃহস্পতিবার বা শুক্রবারের মধ্যে ফের শুরু হবে আইপিএল, ঠিক তখনই পাকিস্তান সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করে ড্রোন ছোড়ে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরেও হামলা চালাল পাকিস্তান। জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগর, পুঞ্চ সহ একাধিক জায়গায় পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করায়, ব্ল্যাকআউট করা হয় একাধিক শহরে। ব্ল্যাকআউটের মধ্যেই গুলি চলল জম্মুর নাগরোটা সেনা শিবিরে। ঘটনায় একজন সেনা জওয়ান আহত। হোয়াইট নাইট কর্পস সমাজমাধ্যমে বিবৃতি, নাগরোটা সেনা শিবির চত্বরে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছে। শিবিরেরই এক সেনা জওয়ান সন্দেহভাজনকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। দু’পক্ষের মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য গোলাগুলি চলে। এ ঘটনায় ওই সেনা জওয়ান আহত। সন্দেহভাজন ব্যক্তির খোঁজে ইতিমধ্যেই তল্লাশি অভিযান শুরু। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরেও পাকিস্তান ফের ড্রোন হামলা চালালে, ডাল লেক, শ্রীনগর সহ জম্মুতেও ব্ল্যাক আউট জারি। পাঞ্জাব, রাজস্থানের অধিকাংশ শহরে এবং গুজরাটের কচ্ছেও ব্ল্যাক আউট করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী ন’টি শহরে পাকিস্তান হামলা করে। উদ্বেগ প্রকাশ করেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্ত্রিও জানান, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান তা লঙ্ঘন করেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এর যথোপযুক্ত জবাব দিচ্ছে। আক্রমণ রুখতে সেনাবাহিনীকে পড়া পদক্ষেপের নির্দেশ।
ভারতীয় বায়ুসেনা জানিয়ে দিল অপারেশন সিঁদুর এখনও শেষ হয়নি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই জারি। সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যেই রাজধানীতে সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির পরেও তিন ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সীমান্তে ফের নির্লজ্জের মতো গুলিবর্ষণ শুরু করে পাক সেনা। জম্মু ও কাশ্মীরের একাধিক জায়গায় ড্রোন হামলাও। যোগ্য জবাব দেয় ভারতও। হামলার কথা অস্বীকার করে নির্লজ্জ পাকিস্তানের দাবি, ভারতীয় সেনাই সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করেছে। ফের প্রত্যাঘাতের দাবি উঠছে দেশজুড়ে। বায়ুসেনার তরফে জানান হল, অপারেশন সিঁদুর এখনও শেষ হয়নি। বায়ুসেনার তরফে বিবৃতি, “অপারেশন সিঁদুরে বায়ুসেনাকে যে যে কাজ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো আমরা সফলভাবে করেছি। একেবারে নির্দিষ্টভাবে এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে আমরা কর্তব্যপালন করেছি। জাতীয় স্বার্থে ওই অপারেশন চালানো হয়েছে। তবে এখনও অপারেশন চলছে। তাই ভারতীয় বায়ুসেনার অনুরোধ, কোনওরকম ভুয়ো খবর বা গুজবে কান দেবেন না। যাচাই না করে যে কোনও তথ্য বিশ্বাস করবেন না।” রবি সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তিন সেনার প্রধান, সেনা সর্বাধিনায়ক অনিল চৌহান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং অন্যান্য শীর্ষ আধিকারিকরা।