Saturday, May 24, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে ম্যানগ্রোভ! হাওড়ায় এক টুকরো ‘‌সুন্দরবন’‌ অরণ্য রুখতে পারে গঙ্গার ভাঙন

উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা বেশ সন্দিহান। ম্যানগ্রোভ অরণ্যের জন্য সুন্দরবন পৃথিবী বিখ্যাত| সাম্প্রতিকালে ঝড়কে কার্যত একার হাতে রক্ষা করে ম্যানগ্রোভ অরণ্য| ম্যানগ্রোভ অরণ্যই হাওড়ার শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে| এশিয়ার সর্ববৃহৎ বোটানিকাল গার্ডেনে গঙ্গার পাড় বরাবর উঁকি দিচ্ছে হারগোজা, বাইন, ওঁরাও, কৃপাণ জাতীয় ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের শ্বাসমূল। বোটানিকাল গার্ডেন থেকে শুরু করে বেলুড় পর্যন্ত গঙ্গার পাড় বরাবর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে প্রাকৃতিক ভাবেই বেড়ে উঠছে এমন গাছ| তাজ্জব উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা। নোনাজলের ম্যানগ্রোভকে গঙ্গার মিষ্টি জলে জন্মাতে দেখে কার্যত ঘুম ছুটেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এমন ঘটনা| বোটানিক্যাল গার্ডেনের উদ্ভিদ বিজ্ঞানীর কথায়, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে। নোনা জল ক্রমশ ঢুকে পড়ছে সমুদ্র থেকে একশো কুড়ি কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে থাকা কলকাতা ও হাওড়া শহর সংলগ্ন গঙ্গায়। এভাবেই গঙ্গার জলে তৈরি হচ্ছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য জন্মানোর অনুকূল পরিবেশ। তবে একদিকে ভালোই হচ্ছে। হাওড়ায় গঙ্গার ভাঙন ও দূষণ রুখতে বেশ কার্যকর এই ম্যানগ্রোভ। এতদিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল বি গার্ডেন। এবার অনেকাংশে রক্ষা পাবে।

পরিবেশ দূষণে রাজ্যের মধ্যে প্রথম সারিতে থাকা হাওড়া শহরের জন্য সুখবর। হাওড়া শহরে পরিবেশ দূষণ ও ক্রমবর্ধমান গঙ্গার ভাঙন রুখতে এবার তৎপর শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন। বি গার্ডেনে গঙ্গার ধারে প্রায় ৫০০ মিটার এলাকাজুড়ে ম্যানগ্রোভ গাছের চারার উপস্থাপন। নদীর ধারেই বেড়ে উঠছে গাছগুলি। গঙ্গার জলে ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে চলা দূষণ রোধ করা যাবে। ঝড়বৃষ্টির মতো বড়সড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও গঙ্গার ভাঙন আটকাতেও এই ম্যানগ্রোভ কার্যকরী ভূমিকা নেবে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। সম্প্রতি গঙ্গার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল বি গার্ডেন। বি গার্ডেনের জমি গঙ্গার তলায় চলে গিয়ে বাগানের প্রচুর গাছের ক্ষতি হচ্ছিল। গঙ্গায় তলিয়ে যাচ্ছিল বহু দুর্লভ গাছ। ধ্বংসলীলা রুখতে সম্প্রতি বি গার্ডেন কর্তৃপক্ষ গঙ্গার ধারে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল তৈরি করার সিদ্ধান্ত। বি গার্ডেন কর্তৃপক্ষের কথায়, গঙ্গার ধারে ৭ প্রজাতির লবণাম্বু গাছের চারা বসানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হাড়গোঁজা, পাইন, ওঁরাওঁয়ের মতো প্রজাতির ম‌্যানগ্রোভের চারা। কম লবণাক্ত জলে জন্মাতে পারে এমন সাতটি প্রজাতির প্রচুর ম্যানগ্রোভের উৎপত্তি। হাওড়ার জলে লবণাম্বু উদ্ভিদ?

হুগলি নদীর পশ্চিম পাড়ে ভাঙন সমস্যা দীর্ঘদিনের। শুধু বোটানিক্যাল গার্ডেন নয়, হাওড়ার বাউড়িয়া, শ্যামপুর গাদিয়াড়াতেও গঙ্গার ভাঙন ক্রমেই বাড়ছে। শাল-বল্লা, আবার কখনও মাটির বস্তা কিংবা জিও শিট দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে সেচ দপ্তর। ভাঙন রোধে হুগলি নদীর পাড়ে ম্যানগ্রোভের উৎপাদন বাড়াতে বন দপ্তরও সক্রিয় ভূমিকা নেবে বলে মনে করছে বি গার্ডেন কর্তৃপক্ষ। নিত্যদিন হাওড়া শহরের প্রচুর দূষিত বর্জ্য গঙ্গায় ফেলা হয়। আশপাশের কারখানার বর্জ্যও মেশে গঙ্গায়। বি গার্ডেনে গঙ্গার ধারে তৈরি হওয়া ম্যানগ্রোভ প্রাকৃতিক ফিল্টারের কাজ করবে। গঙ্গার ধার ছাড়াও অন‌্য এলাকাতেও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে লবণাম্বু উদ্ভিদের উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগী বি গার্ডেন কর্তৃপক্ষ।‌‌ মাসকয়েক আগে পরীক্ষামূলকভাবে ম্যানগ্রোভের উৎপাদন শুরু বি গার্ডেনের বিজ্ঞানীদের। আর তাতেই মিলেছে সাফল্য। গঙ্গার মাটিতে শ্বাসমূলের জাল বিছিয়ে ক্রমেই বড় হয়ে উঠছে ম্যানগ্রোভ। গড়ে উঠছে ম্যানগ্রোভের আদর্শ বাস্তুতন্ত্র। বিশাল এলাকাজুড়ে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল হবে বলে আশাবাদী বি গার্ডেন কর্তৃপক্ষ। বোটানিক্যাল গার্ডেনের জয়েন্ট ডিরেক্টর দেবেন্দ্র সিং বলেন, ‘‘গঙ্গার ভাঙন ও দূষণ রোধে বড় ভূমিকা নেবে ম্যানগ্রোভ। নদীর পাড়ে প্রাকৃতিকভাবেই গাছগুলো বেড়ে উঠছে। আরও এক কিলোমিটার অংশে ম্যানগ্রোভের চারা লাগানো হবে।’’

গঙ্গার পাড় বরাবর হারগোজা, বাইন, ওঁরাও, কৃপাণের মত ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের শ্বাসমূলের প্রাধান্য। বোটানিকাল গার্ডেন থেকে বেলুড় পর্যন্ত গঙ্গার পাড় বরাবর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে উঠছে এই গাছ। নোনা জলের ম্যানগ্রোভকে গঙ্গার মিষ্টি জলে জন্মাচ্ছে। উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে জানতে পারেন, পুরোটাই বিশ্ব উষ্ণায়নের ফল। নোনা জল ক্রমশ ঢুকে পড়ছে সমুদ্র থেকে একশো কুড়ি কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে থাকা কলকাতা ও হাওড়া শহর সংলগ্ন গঙ্গায়। গঙ্গার জলে তৈরি ম্যানগ্রোভ জন্মানোর অনুকূল পরিস্থিতি। বোটানিকাল গার্ডেন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত, গঙ্গার পাড় বরাবর তৈরি করা হবে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। বিশ্ব অরণ্য সপ্তাহের কয়েক মাস আগে থেকেই কাজ শুরু। প্রাকৃতিক ভাবে ৬ প্রজাতির ম্যানগ্রোভ বেড়ে উঠেছিল। পরে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে লাগানো হয় আরও ৬ প্রজাতির ম্যানগ্রোভ। মোট ১২ প্রজাতির প্রায় ৫০০০ ম্যানগ্রোভ এখন রয়েছে বোটানিকাল গার্ডেনে। বিগত ১০ বছর ধরে বোটানিকাল গার্ডেন ছাড়াও বালি-বেলুড় পর্যন্ত মিলেছে ম্যানগ্রোভের খোঁজ। তবে বিশ্ব উষ্ণায়নের পাশাপাশি ইন ওয়ার্ড মাইগ্রেশন অন্তবর্তী অভিযোজন এর জন্য দায়ী৷

কলকাতা এবং হাওড়ার মতো দুটি বড় শহরের অধিকাংশ মানুষই পানীয় জল হিসেবে গঙ্গার জল ব্যবহার করেন। সেই জলেই বাড়ছে নুনের পরিমাণ৷ বিষয়টা বেশ আশঙ্কার৷ লবণাক্ত জলের উদ্ভিদ ম্যানগ্রোভের এখন নতুন ঠিকানা তিলোত্তমা সংলগ্ন গঙ্গার পাড়। এশিয়ার সবথেকে বড় বোটানিক্যাল গার্ডেন অর্থাৎ শিবপুরের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বোটানিক্যাল গার্ডেন গঙ্গার পাড় বরাবর হারগোজা, বাইন, ওরাও, কৃপাণ ইত্যাদি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের শ্বাসমূল। বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে শুরু করে বেলুড় পর্যন্ত গঙ্গার পাড় বরাবর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে প্রাকৃতিক ভাবেই বেড়ে উঠছে এ ধরনের গাছ। নোনা জলের ম্যানগ্রোভ গঙ্গার মিষ্টি জলের জন্মাচ্ছে। পুরোটাই বিশ্ব উষ্ণায়নের ফল। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর ফলে সমুদ্রের জলস্তর ক্রমশ বেড়ে নোনা জল ক্রমশ ঢুকে পড়ছে সমুদ্র থেকে একশো কুড়ি কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে অবস্থিত কলকাতা ও হাওড়া শহর সংলগ্ন গঙ্গায়। গঙ্গার ফ্রেশ ওয়াটারে তৈরি হচ্ছে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ জন্মানোর অনুকূল পরিস্থিতি। কলকাতা পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের করা এক সমীক্ষাতেও তা সামনে এসেছে। তাঁদের সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৯ সালে হুগলি নদীতে লবণের ঘনত্ব যেখানে ছিল ৯ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন), ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩.১৭তে। নদীর জলে লবণের সাধারণ মাত্রা ৬ থেকে ৯ পিপিএম। ইনওয়ার্ড মাইগ্রেশন হচ্ছে অর্থাৎ ভিতরের দিকে এই সব গাছের বীজ ভেসে এসে অনুকূল পরিবেশে গাছ জন্মাচ্ছে। ইনওয়ার্ড মাইগ্রেশন দুটি বিষয়ের উপর বেশি নির্ভর করে। প্রথমত সংশ্লিষ্ট উদ্ভিদের বীজের প্রকৃতি, এবং এই ভেসে বেড়ানোর ক্ষেত্রে কোনও বাধা রয়েছে কি না। এ ক্ষেত্রেও এমন উদ্ভিদদেরই মাইগ্রেশন হয়েছে যেগুলোর ক্ষেত্রে দুটি পরিস্থিতিই ছিল অনুকূল। এটা খুবই চিন্তার বিষয়। কারণ, গঙ্গার পাড়ে এই গাছ হলেও তা বিস্তারের তেমন জায়গা নেই। ফলে এ সমস্ত গাছ খুব দ্রুত বিলুপ্ত হতে পারে। ভেসে আসা ম্যানগ্রোভ বাঁচাতে উদ্যোগী বোটানিক্যাল গার্ডেন কর্তৃপক্ষ। প্ৰকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে ওঠা কিছু প্রজাতির গাছ হারগোজা, বাইন, ওঁরা, কৃপাল, সমুদ্র, পানলতা, কাঁকড়া, সুন্দরী, গেঁওয়া, গোলপাতা, ফিনিক্স-এর মতো বিভিন্ন প্রজাতির। বাঘের দেখা না মিললেও এক টুকরো সুন্দরবন পর্যটকদের মুগ্ধ করবে। পাশাপাশি, গবেষণার কাজেও সুবিধা হবে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের সুন্দরবন এ গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন হবে না। বোটানিক্যাল গার্ডেনে এসেই কাজ সারতে পারবেন। পর্যটকদের জন্য কিছু বছর পরে খুলে দেয়া হবে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। বাঘের দেখা হয়তো মিলবে না। কিন্তু গঙ্গার স্রোতে নৌকা ভাসালেই দেখা মিলবে বোটানিক্যাল গার্ডেনে একটুকরো সুন্দরবন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles