ইলেকশন, ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল। সিএবি’র নির্বাচন সেপ্টেম্বরেই। প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়াবেন স্বয়ং সৌরভ গাঙ্গুলি। মহারাজ নিজে মুখে বলেই দিয়েছেন সেকথা। তবে তিনি দাঁড়ালে ডেপুটি কে হবেন? সিএবিতে নতুন কমিটি তৈরি হবে সেপ্টেম্বরে। এক মিলন উৎসবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও অভিষেক ডালমিয়ার যুগলবন্দি উপস্থিতি দেখে খুশির হাওয়া বঙ্গ ক্রিকেট মহলে। বাংলা ক্রিকেটের যাঁরা সত্যিই ভালো চান, প্রত্যেকেই সিএবি’র প্রাক্তন দুই প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি ও সৌজন্য দেখে খুশিই হয়েছেন। প্রাক্তন ক্রিকেটার মহল থেকে শুরু করে প্রশাসনের অনেকেই মনে করছেন বাংলার ক্রিকেট আবার নতুন কিছু দেখতে চলেছে। শুভ কাজে ব্যাগড়া দেওয়া কিছু কর্তা চাইছেন না সৌরভ-অভিষেক যুগলবন্দি। সিএবির প্রাক্তন এক সচিব যু্গ্ম সচিব দাবি করলেন, সৌরভ-অভিষেক জুটির উপস্থিতিতে বঙ্গ ক্রিকেটের আরও বেশ কয়ক ধাপ সামনের দিকে অগ্রসরের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে। সিএবি’র বর্তমান সভাপতি স্নেহাশিষ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেশ দক্ষতা ও দৃঢ়তার সঙ্গেই প্রশাসনিক কাজকর্ম চালিয়ে নিয়ে এসেছেন এতোদিন। বাংলা ক্রিকেটে অনেক কিছুই নবতম সংযোজন হয়েছে। স্নেহাশিষের রাজত্বে অন্যতম সফল বেঙ্গল প্রো টি টোয়েন্টি লিগ। পাশাপাশি মহিলা ক্রিকেটের দিগন্তেও নতুনত্বের স্পর্শ।

বাংলার মহারজই কি আবার সিএবির মসনদে বসবেন? নাকি, অন্য কাউকে সিএবি প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড় করিয়ে নিজে থাকবেন আড়ালে? অল্পবিস্তর সূত্র থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী প্রশ্নটা দাঁড়াচ্ছে, লোধা আইনে হাতে থাকা মাত্র দু’বছরের মেয়াদ এ ভাবে শেষ করে ফেলতে চাইবেন সৌরভ? হরেক রকম জল্পনার উত্তর দিয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন সফলতম অধিনায়কই। সিএবি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন স্বয়ং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নিজেই। কোনও ডামি প্রার্থী, কোনও সময়সীমার বেড়াজাল নয়, আসন্ন সিএবি নির্বাচনে সৌরভই প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করতে নামছেন। মহারাজের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়াবেন? বিসিসিআই এর আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য অভিষেক ডালমিয়ার সঙ্গে আইসিসি’র পদাধিকারী সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সমঝোতার প্রশ্নও মাথাচাড়া দিচ্ছে? আদৌ নির্বাচন হবে? সৌরভ সিএবি সভাপতি হলে তাঁর ‘ডেপুটি’ কে? ভবিষ্যতের অনেক অনেক প্রশ্ন।

ময়দানের নিদৃষ্ট সংখ্যক সৌরভ-অভিষেক যুগলবন্দিতে ব্যাগড়া দিতে চাইছেন বলেও শোনা যাচ্ছে কানাঘুঁষো। সৌরভের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সঞ্জয় দাস এখন থেকেই পাখির চোখ করে রেখেছেন সচিবের চেয়ারে। ‘দাদা’র পাশাপাশি থেকে তিনিও ছুটে চলেছেন জেলার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। নিজের জীবনের সিংহভাগ সময় সিএবির জন্য অতিবাহিতের মাধ্যমে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। সঞ্জয় দাসের ‘বিজিনেস’ নজর কাড়ছে সিএবি কর্তাদের। সিএবি’র কয়েকজন কর্তার মুখে যুগ্ম সম্পাদকের নাম হিসাবে উঠে আসছে অনেকের ‘অপছন্দের’ এক ব্যাক্তির নাম। কয়েকজন কর্তাব্যক্তি বলেই বসলেন মাঝেমধ্যেই ‘অসম’ আচরণ করেন জনৈক কর্তা। বিতর্কিত চরিত্র দেবু দাসের জায়গায়, তিনি ‘বাবু’ও বেশ অনাকাঙ্খিত আশায় বুক পেতে রয়েছেন সিএবির যুগ্ম সম্পাদকের চেয়ারের জন্য।

সৌরভ আবারও ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের সভাপতি পদের নির্বাচনে লড়াই করবেন। এখন অব্দি সবকিছু ঠিকই রয়েছে। কিন্তু, প্রশ্নটা হল যে সৌরভ যদি সভাপতি হন, তাহলে বর্তমান সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়ার ভবিষ্যত কী হতে চলেছে? সিএবিতে নতুন কমিটি তৈরি হবে সেপ্টেম্বরে। বর্তমান সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়াদ ২০২৬ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত। ইচ্ছে করলে তিনিও প্রেসিডেন্ট পদে থেকে যেতে পারেন। সিএবির অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, স্নেহাশিস গাঙ্গুলি আর প্রেসিডেন্ট পদে মেয়াদ সম্পূর্ণ করতে চাইছেন না। তবে মহারাজের প্রেসিডেন্ট চেয়ারে বসার ব্যাপারে রাজের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

প্রাক্তন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট নিজেও পুরোদমে ময়দানে নেমে পড়েছেন। সিএবি অনুমোদিত সব জেলায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো মানুষ ট্রেনে চড়ে পৌঁছে গেছেন মালদা। চন্দননগর, সোদপুর, হুগলি, হাওড়া থেকে বহরমপুর। প্রত্যেক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অতিথি হিসেবে নিজের শরীরের ধকল সামলে হাজির থাকছেন। মে মাসের শুরুর দিকে বোলপুর সফর। সবকটি জেলারই সিএবির ভোট রয়েছে। বাংলা বছরের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখে সৌরভ যে ভাবে সকাল থেকে ময়দানে একাধিক ক্লাবের তাঁবুতে ঘুরেছেন, সেখানেও ভোটের অঙ্কই দেখতে চেষ্টা করছেন অনেকে। সিএবিতেও যাচ্ছেন প্রায় নিয়মিতই। নানা ঘরে আলাদা করে মিটিং করছেন। সবার সঙ্গে জনসংযোগ বৃদ্ধি। এখন সরকারি ভাবে সিএবির কোনও পদে না থাকলেও সৌরভ যে ভাবে বেঙ্গল প্রো লিগের ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তাদের সঙ্গে মিটিং করছেন, তাতে সিংহভাগ কর্তা মনে করছেন, এখন থেকেই সিএবি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সেরে রাখছেন সৌরভ। এমনকী, অতীতের লড়াই ভুলে প্রাক্তন সিএবি সচিব বিশ্বরূপ দের সখ্যতা বাড়িয়ে ফেলেছেন সৌরভ। জেলাস্তরে এখনও বিশ্বরূপের যোগাযোগ মন্দ নয়।

২০১৫ থেকে ২০১৯। চার বছর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের সভাপতি পদে অধিষ্ঠানের পর সৌরভ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের মসনদে পা রেখেছিলেন। সৌরভ চলে যাওয়ার পর গত তিন বছর ধরে সিএবি-র সভাপতির পদটা আগলে রেখেছিলেন অভিষেক ডালমিয়া। অভিষেকই এখনও পর্যন্ত সর্বকনিষ্ঠ সিএবি সভাপতি। অভিষেকের মেয়াদ শেষে সৌরভ আরও একবার নিজের সেই পুরনো গদিতেই ফিরতে চান বলে জানিয়েছিলেন। প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের আচমকা ইউ টার্ন সব হিসেব পালটে দেওয়ার ফলে সৌরভের দাদা স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় প্রেসিডেন্ট পদে রাজ করেন। ঘুরেফিরে আবারও একই প্রশ্ন আপাতত ঘুরপাক খাচ্ছে। টিম ইন্ডিয়ার অন্যতম সফলতম অধিনায়ক সৌরভ যদি আবারও বাংলার ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন করেন, তাহলে অভিষেক বঙ্গ ক্রিকেট প্রশাসনে কোন পদে? সূত্র বলছে, অভিষেকের ইচ্ছা সৌরভের সঙ্গে সমঝোতায় ‘মিলিজুলি সরকার’!

বড় প্রশ্ন, সিএবিতে কি সত্যিই নির্বাচন হবে? সিএবির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়াও প্রেসিডেন্ট পদে আবার ফিরতে চাইছেন। তিনিও নিজের মতো করে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন। সেটা হলে একদা ‘বন্ধু’ সৌরভ বনাম অভিষেকের লড়াইয়ে অনেক দিন পরে উত্তাল হতে পারে সিএবি? সৌরভ শিবির অবশ্য আশাবাদী, প্রাক্তন অধিনায়ক নিজে প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়ালে তাঁর বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়াবেন না। তখন অন্যান্য পদে ভোট হলেও হতে পারে। শেষ পর্যন্ত উপর মহলের নির্দেশে ‘মিলিজুলি সরকার’ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। আবার একই সঙ্গে এটাও বলা হচ্ছে, আর কারও কথায় নয়। সরাসরি ভোটে জিতেই এ বার সিএবির মসনদে ফিরতে চান সৌরভ। যেন কোনওভাবে কেউ আর কোনও আঙুল তুলতে না পারে। ময়দানের ক্রিকেট ও বঙ্গ ক্রিকেটের শুভাকাঙ্খী মহল সিএবি মসনদের লড়াইয়ের পক্ষপাতী নয়! প্রাক্তন দুই প্রেসিডেন্টের ক্রিকেটের প্রতি অবদান রয়েছে? বাংলার ক্রিকেটের স্বচ্ছতা ও উন্নতির স্বার্থে সৌরভ গাঙ্গুলি ও অভিষেক ডালমিয়ার যুগলবন্দি দেখতে চায় বঙ্গ ক্রিকেট!