কাশ্মীরে পহেলগাঁওতে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত লস্কর জঙ্গি আসিফ শেখের বাড়ি ধ্বংস করা হল। আসিফ শেখের বাড়ি বিস্ফোরকের সাহায্যে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মোগামায় জঙ্গি আসিফ শেখের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময় একটি সন্দেহজনক বাক্স পাওয়া গিয়েছিল। সেই বাক্স থেকে বেশ অনেকটা তার বেরিয়ে এসেছিল। সেটা ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের অংশ ছিল। ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ইঞ্জিনিয়ারিং টিম নিশ্চিত করেন সেটি একটি বোমা। বাক্সটি ঘটনাস্থলেই ধ্বংস করা হলে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে। কেউ হতাহত হয়নি। অবশ্য জঙ্গি আসিফের বাড়ির একাংশ এই বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী আশঙ্কা করছে যে ঘটনাস্থলে আরও বিস্ফোরক পদার্থ থাকতে পারে। পুরো এলাকাটি সিল করে দেওয়া হয়েছে এবং তল্লাশি অভিযান জোরদার। আসিফ শেখকে পহেলগাঁও হামলার মূল ষড়যন্ত্রীদের মধ্যে অন্যতম নেতা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। ২৬ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছিল সেই জঙ্গি হামলায়। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন টিআরএফ সেই হামলার দায় স্বীকার করে। পহেলগাঁও হামলায় জড়িত স্থানীয় জঙ্গি আদিল ঠোকরের বাড়িও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন। তার বাড়ি ত্রালে অবস্থিত। পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১৮ সালে পাকিস্তানে গিয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছিল আদিল। গত বছর জম্মু-কাশ্মীরে ফিরে এসেছিল সে। আদিল ও আসিফের সঙ্গে দুই পাক জঙ্গিও ছিল এই হামলায়। এখনও দুই জঙ্গি পহেলগাঁওয়ের জঙ্গলেই লুকিয়ে। ঘিরে ফেলা হয়েছে জঙ্গল। দোষীদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্যে ২০ লাখ টাকা করে পুরষ্কারের ঘোষণা করা হয়েছে পুলিশের তরফ থেকে।
কাশ্মীরর বান্দিপোয়ার নিয়ন্ত্রণরেখা এলওডি’র অদূরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু পাক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী লশকর-এ-ত্যায়বার শীর্ষস্থানীয় কমান্ডার আলতাফ লাল্লির। সেনা-সূত্র উদ্ধৃত করে দাবি। ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ লশকর কমান্ডার আলতাফ পহেলগামে হামলাকারী ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ আরটিএফ-এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন বলে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের সূত্রের খবর। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই এই অভিযান চালানো হয়েছিল। বৃহস্পতি রাত থেকে নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষবিরতি ভেঙে পাক সেনা গুলিবর্ষণ শুরু। নতুন করে হামলায় লশকর বাহিনী সক্রিয় হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। জঙ্গিদের গুলিতে নিহত নদিয়ার সেনা কমান্ডো ঝন্টু আলি শেখ, পহেলগাঁও কাণ্ডের পরে লড়াই উধমপুরে বান্দিপোরার কুলনার বাজ়িপোরা এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছিল সেনা। লুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা হঠাৎই নিরাপত্তাবাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। পাল্টা আক্রমণ করে সেনাও। সে সময়ই মৃত্যু হয় আলতাফের। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের এক আধিকারিক বলেছেন, ‘‘এটি বাহিনীর বড় সাফল্য। দীর্ঘ দিন ধরেই আলতাফের খোঁজ চালানো হচ্ছিল।’’ পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে ভারত বিরোধী পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরে এলওসিতে নতুন করে উত্তেজনা। লশকর এবং তার ছায়া সংগঠন আরটিএফের বিরুদ্ধেও সক্রিয় নিরাপত্তা বাহিনী।
এক মহিলা পর্যটকের দাবি, পহেলগাঁওয়ে ঘোড়ার এক সহিস তাঁদের ধর্ম জিজ্ঞেস করেন। সহিসকে আটক করেছে গান্দেরবাল পুলিশ জেরা করছে। ধৃত সহিসের নাম আইয়াজ আহমেদ জুঙ্গাল। বাবার নাম নবি জুঙ্গাল। গান্দেরবালের গোহিপোড়া রাইজানের বাসিন্দা। সোনমার্গের থাজওয়াস হিমবাহে পর্যটকদের খচ্চরের সওয়ারি করান। পুলিশ সূত্রে খবর, এই আইয়াজ়ের সঙ্গে পহেলগাঁও হামলার কোনও যোগ রয়েছে কি না, মহিলা যে সহিসের কথা বলেছেন, ধৃত তিনিই কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে জড়িত তিন জনের স্কেচ প্রকাশ করেছে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। স্কেচ দেখার পরে একতা তিওয়ারি নামে এক মহিলা পর্যটকের দাবি, ওই তিন জনের মধ্যে এক জনের সঙ্গে গত ২০ এপ্রিল দেখা হয়েছিল পহেলগাঁওয়ে। একতা উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর থেকে কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন ২০ জনের একটি দলের সঙ্গে। নিজের মোবাইলে মেরুন জ্যাকেট, পাজামা পরা এক ব্যক্তির ছবিও দেখান। একতার দাবি, ওই ব্যক্তিই পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে জড়িত। ওই ব্যক্তি তাঁকে ধর্ম নিয়েও জিজ্ঞেস করে বলে দাবি একতার। বৈসরন উপত্যকাতেই ওই ব্যক্তির ছবি তুলেছেন। একতা দাবি, বন্ধুরাও ওই ব্যক্তিকে চিনতে পেরেছেন। ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। একতা জানান, ওই সহিস তাঁকে তাঁর নাম এবং ধর্ম জিজ্ঞেস করে। একতা কখনও অজমের শরিফ বা অমরনাথ গিয়েছেন কি না। কত জন হিন্দু বা মুসলিম বন্ধু রয়েছেন। অমরনাথ যেতে চান কি না, তা-ও জিজ্ঞেস করে ওই সহিস। অমরনাথ যাত্রার ব্যবস্থা করে দিতে পারে বলেও দাবি করে সহিস। একতা কোরান পড়েছেন কি না, প্রশ্নও করেন। একতার দাবি, জবাবে বলেন, উর্দু পড়তে পারেন না। তাই কোরান পড়া হয়নি। তখন সহিস জানায়, হিন্দিতে লেখা কোরানও পাওয়া যায়। এ সব প্রশ্নের পরে ভীত হয়ে পড়েন একতা।
এর পরেই সহিসের কাছে একটি ফোন এসেছিল বলে জানিয়েছিলেন একতা। সেই ফোনে তাঁকে বলতে শুনেছিলেন, ‘‘প্ল্যান এ ব্রেক ফেল। প্ল্যান বি ৩৫ বন্দুক পাঠানো হয়েছে। উপত্যকার ঘাসে রয়েছে।’’ যখন সহিস বুঝতে পারে একতা কথা শুনছে, তখন অন্য ভাষায় কথা বলতে শুরু করে, এমনটাই জানিয়েছেন একতা। মহিলার আরও দাবি, কথা শুনে ওই সহিসকে পাকিস্তানি বলে মনে হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে, এ সব শোনার পরেও পুলিশকে জানাননি কেন? একতার দাবি, পর্যটকদের বুথে কোনও লোক ছিল না। পহেলগাঁওয়ের ৭-৮ কিলোমিটার আগে একটি চেকপোস্ট ছিল। যখন ফিরছিলেন, তখন সেই চেকপোস্টেও কেউ ছিলেন না। একতা বার বার দাবি করেছেন, পুলিশ যে তিন জনের স্কেচ প্রকাশ করেছেন, তাদের মধ্যে এক জনের সঙ্গেই তাঁর দেখা হয়েছিল পহেলগাঁওয়ে। একতার দাবি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। জেরা করছে ধৃতকে।