৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আহমেদাবাদের তাপমাত্রা। অনুভূত ৪৩-৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মেজাজ হারালেন দুই ক্রিকেটার। আঙুল উঁচিয়ে তেড়ে গেলেন গুজরাতের ইশান্ত শর্মা। ছেড়ে কথা বলার পাত্রও নন দিল্লির আশুতোষ শর্মা। গুজরাত টাইটান্স বনাম দিল্লি ক্যাপিটালস ম্যাচে মাঠেই ঝামেলা। ম্যাচের ১৯তম ওভারের বোলার ইশান্ত। দিল্লির ইনিংসের ১৯তম ওভারের শেষ বলে। ইশান্তের বাউন্সার সামলাতে পারেননি আশুতোষ। গুজরাট আবেদন করলে আম্পায়ার জানান, বল আশুতোষের কাঁধে লেগেছে। দিল্লির ব্যাটারও নিজের কাঁধ দেখিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন। ওভার শেষ হওয়ার পর ইশান্তকে কিছু একটা বলেন আশুতোষ। অগ্নিশর্মা ইশান্ত ডান হাতের তর্জনী উঁচিয়ে তেড়ে যান। আশুতোষের পাল্টা নিজের জার্সির হাতা গুটিয়ে পেশির প্রদর্শন। দুই শর্মার বাগবিতণ্ডা। প্রবল গরমে ফিল্ডিং করতে গিয়ে রীতিমতো কাহিল গুজরাটের প্লেয়াররা। বিধ্বস্ত অবস্থায় মাঠের বাইরে গিয়ে বসেন ইশান্ত শর্মা। ক্রাম্প হয় দিল্লি অধিনায়ক অক্ষর প্যাটেলেরও। এর মধ্যেই আচমকাই ইশান্ত শর্মা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন দিল্লির আশুতোষ শর্মার সঙ্গে। শুভমানও আম্পায়ারের সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তর্ক করেন। আউট দেননি আম্পায়ার। পরের ওভারেই আশুতোষ ১৯ বলে ৩৭ রানে আউট হন। ইশান্ত ৩ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টসে জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন গুজরাট অধিনায়ক। ম্যাচে ছিলেন না জ্যাক ফ্রেসার ম্যাকগার্ক। দিল্লির ইনিংসের শুরুতে অভিষেক পোড়েল ও করুণ নায়ার আশা জাগিয়েছিলেন। বাংলার অভিষেক থমকে গেলেন। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণর আগুনে বোলিংএ দিল্লির টপ অর্ডারে ভাঙন। করুণ নায়ার আউট হলেন ৩১ রানে। কেএল রাহুল ও অক্ষর প্যাটেলকে ফেরালেন প্রসিদ্ধা। ভিপরাজ নিগমের উইকেট। আশুতোষ শর্মা ঝড় তুললেও ২০৩ রানে থেমে যায় দিল্লির ইনিংস। রান তাড়া করতে নেমে গুজরাট দ্রুত শুভমান গিলের উইকেট হারায়। ব্যাট হাতে আগুন জস বাটলারের। সাই সুদর্শন ৩৬ রানে আউট। দিল্লির বোলাররা ব্যর্থ। মুকেশ কুমাররা অসহায়। মিচেল স্টার্ক ৩.২ ওভারে দিলেন ৪৯ রান। রাদারফোর্ডকে আউট হয়ে গেলেও বাকি কাজ সারেন রাহুল তেওয়াটিয়া। অল্পের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া বাটলারের। অপরাজিত ৫৪ বলে ৯৭ রানে ১১টি চার ও ৪টি ছক্কা। ৭ উইকেটে জয়। লিগ টেবিলের শীর্ষে গুজরাট। আইপিএলে পঞ্চম জয় তুলে নিল শুভমনের গুজরাত। ১০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবলের শীর্ষে। পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে অক্ষরের দিল্লি। গুজরাতের জয়ের নায়ক জস বাটলার এবং প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। প্রথমে বল হাতে ৪১ রানে ৪ উইকেট নেন প্রসিদ্ধ। পরে ব্যাট হাতে ৫৪ বলে অপরাজিত ৯৭ রান বাটলারের। গুজরাত টাইটান্সের পক্ষ থেকে দর্শকদের জন্য নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে ব্যবস্থা করা হয়েছিল পাখা এবং সানস্ত্রিনের। বিনামূল্যে পানীয় জল, ওআরএস, ওষুধের ব্যবস্থাও ছিল। ক্রিকেটারদের জন্য ছিল ছাতার ব্যবস্থা। বিরতির সময়ে অন্তত চড়া রোদের আড়ালে থাকার ব্যবস্থা। পর্যাপ্ত শক্তিবর্ধক পানীয়, ওআরএসের ব্যবস্থাও ছিল। তা সত্ত্বেও অসুস্থতা খেকে রেহাই মিলল না।

ছোট্ট বৈভবের বিরল নজির! আইপিএলেও অনেক তরুণ ক্রিকেটার নজর কাড়ছেন। দিগ্বেশ রাঠী, অনিকেত বর্মাদের তালিকায় জায়গা করে নিল বৈভব। প্রথম ম্যাচেই। ২৭ কোটির পন্থেরা যে মঞ্চে ব্যর্থ হচ্ছেন, সেই মঞ্চেই আবির্ভাব হচ্ছে বৈভবদের। যশস্বীর দারুন ইনিংস। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ। রাজস্থান রয়্যালসকে ২ রানে হারাল লখনউ সুপার জায়ান্ট। আইপিএল-র ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে লখনউ সুপার জায়ান্টের বিরুদ্ধে অভিষেক। রাজস্থান রয়্যালসের ক্রিকেটার বৈভব সূর্যবংশীর। নিয়মিত ওপেনার সঞ্জু স্যামসন চোট। খেলতে পারেননি। ১৪ বছর বয়সী বৈভবকে সুযোগ রাজস্থান টিম ম্যানেজমেন্টের। প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমেই আইপিএলের কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার বিরল নজির। বাঁহাতি বৈভব সূর্যবংশী। ভারতীয় দলের হয়ে ২০২৪ এমার্জিং এশিয়া কাপেও খেলেছিলেন। আইপিএলে সুযোগ অভিষেকের পারফরমেন্স অসাধারন। আইপিএল কেরিয়ারের প্রথম বলেই ছক্কা বৈভবের। শার্দুল ঠাকুরের বল পাঠেয়ে দেন মাঠের বাইরে। দ্বিতীয় ওভারেও আবেশ খানের বিরুদ্ধে একটি চার এবং একটি ছয়। ১৪ বছর ২৩ দিন বয়স। ১.১০ কোটি টাকার রাজস্থানের ক্রিকেটারের রান ২০ বলে ৩৪, স্ট্রাইক রেট ১৭০। লখনউ সুপার জায়ান্টের টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত। আবারও ব্যর্থ ঋষভ পন্ত। ওপেনার আইডেন মার্করাম ৪৫ বলে ৬৬ রান ও আয়ুশ বাদোনির হাফ সেঞ্চুরি, ৩৪ বলে ৫০ রান। আবদুল সামাদ ১০ বলে ৩০ রান করেন। এলএসজির স্কোর নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৮০ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে যশস্বী জসওয়াল এবং বৈভব সূর্যবংশী, রাজস্থানের দুই ওপেনার পার্টনারশিপে তোলেন ৮৫ রান। ৮.৪ ওভারের মাথায় বৈভব আউট হন। আইডেন মার্করামের বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে স্টাম্প আউটে পন্তের ভুমিকা প্রশংসনীয়। নীতীশ রানাকে সাজঘরে ফেরান শার্দুল ঠাকুর, মাত্র ৮ রানে। যশস্বী জসওয়াল ৫২ বলে ৭৪ রান বোল্ড হন আবেশ খানের বলে এবং অধিনায়ক রিয়ান পরাগ একই ওভারে সাজঘরে ফেরেন ২৬ বলে ৩৯ রানে। ২ রান দূরেই থেমে যায় রাজস্থানের ইনিংস। ৪ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন আবেশ খান। ম্যাচ হারলেও বৈভব নামের এক নতুন তারকার জন্ম দিল রাজস্থান। আইপিএল মহা নিলামে ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকায় বৈভবকে কিনেছিল রাজস্থান রয়্যালস। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৩। বাঁহাতি এই ব্যাটারের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এই বছরেই অভিষেক হয় বিহারের জার্সিতে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ টেস্ট সিরিজে খেলে। সেখানে প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করে বৈভব। ১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে রনজিতে অভিষেক। বয়সের নিরিখে তখনই শচীনকে ছাপিয়ে যায় বৈভব। কিশোর প্রতিভার অভিষেক। বড়দের মঞ্চে ক্ষণিকের ভুলে আউট ১৪ বছরের কিশোর। এডেন মার্করামের বলে স্টাম্প আউট হয়ে বৈভব সূর্যবংশী ডাগআউটে ফেরার সময় চোখে জল। হেলমেট খুলে ডান হাতের বুডো আঙুল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ফেরা দেখল গ্যালারি।