অপরাজিত। প্রথমবারেই চ্যাম্পিয়ন। আই লিগ ২ চ্যাম্পিয়ন। অপরাজিত থেকে আই লিগ টু চ্যাম্পিয়ন দল ডায়মন্ড হারবার। ডায়মন্ড হারবারের ঐতিহাসিক জয়ের পর এক্স হ্যান্ডলে বার্তা দেন চিফ পেট্রন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কখনই বিশ্বাস হারিও না’, বার্তা চিফ পেট্রন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জন লেননের গান উদ্ধৃত করে অভিষেক লেখেন, ‘যখন আবেগের সঙ্গে অক্লান্ত পরিশ্রম মেশে, তখন কেউ আটকাতে পারে না। আজকের জয়ে ডায়মন্ড হারবার আই লিগ ২-এ চ্যাম্পিয়ন হল। এই সফরকে ঐতিহাসিক বললেও কম বলা হয়। আমাদের প্লেয়ার, কোচ কিবু ভিকুনা, সাপোর্ট দলের সদস্যকে কুর্নিশ। দলের যারা হৃদয় দিয়ে, পরিশ্রম করে এই সাফল্য এনে দিয়েছেন, তাদের সকলকে কুর্নিশ।’ কলকাতা লিগ থেকে আই লিগ ৩ জেতার সঙ্গে এবার আই লিগ ২ জয়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘কখনই বিশ্বাস হারিও না’। শনিবার চানমারি এফসিকে ১-০ গোলে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই খেতাব কিবু ভিকুনার দলের। চ্যাম্পিয়ন হয়ে আই লিগে খেলার ছাড়পত্র সংগ্রহ করল ডায়মন্ড হারবার। নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় ডিভিশন আই লিগ থেকে দুটো দল প্রোমোটেড। রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে মিজোরামের ক্লাবের মুখোমুখি হওয়ার আগে ডায়মন্ড হারবারের এক পয়েন্ট প্রয়োজন ছিল। জিতেই চ্যাম্পিয়ন হল অভিষেক ব্যানার্জির দল। ম্যাচের ৮৫ মিনিটে জয়সূচক গোল করেন রবি মাণ্ডি।

আই লিগ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। খাতায়-কলমে চ্যাম্পিয়ন হয়নি ডায়মন্ড হারবার এফসি। আই লিগ ২ চ্যাম্পিয়নও কিবু ভিকুনার দল। চানমারি এফসি’কে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা ছিনিয়ে নিল ডায়মন্ড হারবার। আই লিগ ২র অপরাজিত দল। ১১ এপ্রিল স্পোর্টস অ্যাকাডেমি তিরুরকে ২-১ গোলে হারায় ডায়মন্ড হারবার এফসি। গোল করেন পিন্টু মাহাতো ও সুপ্রদীপ হাজরা। আগের ম্যাচে নেরোকার কাছে স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়ার হার। লিগ টেবলে প্রথম দুইয়ে শেষ করার বিষয় নিশ্চিত হয় কলকাতার ক্লাবের। নিয়মানুযায়ী দ্বিতীয় ডিভিশন আই লিগ থেকে দুটো ক্লাব প্রমোশনে নিশ্চিত হয়ে আই লিগের প্রথম ডিভিশনে যোগ্যতা অর্জন করছে ডায়মন্ড হারবার এফসি। অ্যাডভান্টেজই ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের।
১৫ ম্যাচে কিবু ভিকুনার দলের সংগ্রহ ৩৭। ১১টি ম্যাচে জয়। ড্র চারটিতে। চানমারির পয়েন্ট ১৫ ম্যাচে ৩০। ডায়মন্ড হারবারের শেষ ম্যাচ আগামী ২৬ এপ্রিল, নৈহাটি স্টেডিয়ামে। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ বেঙ্গালুরু ইউনাইটেড। ম্যাচের পর কিবু ভিকুনা বলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় অবশ্যই খুব খুশি। আমরা গত সপ্তাহে আই লিগ খেলার ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়া। একমাত্র দল হিসেবে আমরা আই লিগ থ্রি এবং টু জিতলাম। ম্যাচটা সহজ ছিল না। প্রথমার্ধে ওরাও সুযোগ পায়। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ভাল খেলেছি। ম্যাচের কন্ট্রোল আমাদের হাতে ছিল। তবে কোনও দলই খুব বেশি সুযোগ পায়নি। জিতে ভাল লাগছে। ছেলেদের জন্য খুশি। এই সাফল্য সবার। এবার সেলিব্রেট করার সময়।’ ২৬ এপ্রিল নৈহাটি স্টেডিয়ামে বেঙ্গালুরু ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ম্যাচের পরেই ডায়মন্ড হারবারের হাতে ট্রফি তুলে দেবে এআইএফএফ। ওই দিনই মাঠে জয়ের সেলিব্রেশন সারবেন নরহরি শ্রেষ্ঠা, জবি জাস্টিনরা।

ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে নয়া অধ্যায় তৈরি হল। ইতিহাস গড়ার কারিগর ডায়মন্ড হারবার এফসির কোচ কিবু। একই মরশুমে আই লিগ থ্রি ও আই লিগ টুতে এর আগে ভারতের কোনও ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হয়নি। বাংলার এই ক্লাবের সামনে সামনে এ বার আই লিগ সেরা হওয়ার স্বপ্ন। স্প্যানিশ কোচ কিবু ভিকুনা গড়লেন ইতিহাস। এর আগে ভারতীয় ফুটবলে কোনও কোচ একসঙ্গে আই লিগের তিনটে ধাপেই চ্যাম্পিয়ন হননি কোনও কোচ। কিবু ২০১৯–২০ মরশুমে মোহনবাগানকে আই লিগে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। তারপরে ২০২৪–২৫ মরশুমে ডায়মন্ড হারবারকে এনে দিলেন জোড়া সাফল্য। ডায়মন্ড হারবারের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত ক্লাবের সচিব প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য। তিন বছর আগে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বাংলার নতুন এই পেশাদার ক্লাব যখন গড়ে উঠেছিল, সেদিন থেকেই ক্লাবের সচিব পদে বহাল মানস। বহু যুদ্ধের নায়ক মানস বলেন, ‘ভারতীয় ফুটবলে এটা দুর্লভ কীর্তি। আমি পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে ভারতীয় ফুটবলের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত। নিয়মিত খবরাখবরও রাখি ধারাভাষ্য দেওয়ার জন্য। আমার তো জানা নেই, তৃতীয় ও দ্বিতীয় ডিভিশন আই লিগে অপরাজেয়ভাবে এর আগে কেউ একই মরশুমে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কিনা। আমাদের সাংসদ অভিষেক ক্লাব গড়ার সময় যে লক্ষ্য ঠিক করে দিয়েছিলেন, আমরা সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছি। ২০২৬–২৭ মরশুমে আইএসএলে খেলাই আমাদের স্বপ্ন।’