ক্রীড়াক্ষেত্রে রাজনীতি। এমনটাই গন্ধ পাচ্ছেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী। সর্ব ভারতীয় প্রতিযোগিতায় বাংলার ছেলেমেয়েদের দল একে একে শিরোপা জিতছেন। অথচ আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রীকে। বেশ উষ্মা প্রকাশ করলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। ভারতসেরা ইস্টবেঙ্গলের মেয়েরা। লাল হলুদের মেয়েরা ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগ চ্যাম্পিয়ন। শুক্র দুপুরে ঘরের মাঠে লিগের শেষ ম্যাচে গোকুলাম কেরলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে খেতাব জিতল কলকাতার অন্যতম প্রধান দল ইস্টবেঙ্গল। খেলার পর রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের সঙ্গে আই লিগ ট্রফি গ্রহণ করেন। জোড়া গোল করেন এলসাদাই আচিমপং। অন্য গোলটি সৌম্যা গুগুলথের। ১৪ ম্যাচে ৩৭ পয়েন্ট লাল হলুদের মেয়েদের। ১২টি জয়, একটি ড্র এবং একটি হার নিয়ে টুর্ণামেন্টে খেতাব জিতে এএফসি উইমেন্স চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রাথমিক পর্বে খেলার ছাড়পত্র সংগ্রহ করল ইস্টবেঙ্গল। এশিয়ায় মেয়েদের ফুটবলে সর্বোচ্চ পর্যায়ের টুর্নামেন্ট।

বিরতির আগেই তিন গোলে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। কোচ অ্যানহনি অ্যান্দ্রুজ়কে ইস্টবেঙ্গলের মহিলা ফুটবলারেরা কথা দিয়েছিলেন, জয় দিয়েই আই লিগ শেষ করবেন। কথা রেখেছেন আশালতা, সৌম্যা, পান্থইরা। শেষ ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল প্রাধান্য রেখে গোকুলাম এফসি-কে ৩-০ গোলে হারিয়েছে। প্রথমার্ধেই ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় লাল-হলুদের প্রমীলা ব্রিগেড। ঘানার এলসাদ্দাই ২টি ও সৌম্যা গুগুলথ ১টি গোল করেন। খেলা শেষ হওয়া পর ফুটবলারদের সঙ্গে ক্রীড়ামন্ত্রীও আই লিগ ট্রফি গ্রহণ করেন। আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত, সভাপতি অজিত বন্দোপাধ্যায়। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষে ছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত পাল। ম্যাচের ২৭ এবং ৩৭ মিনিটে গোল করেন এলসাদাই। ৪২ মিনিটে তৃতীয় গোল সৌম্যার।

অধিনায়ক সুইটি এবং কোচ অ্যান্টনি অ্যান্ড্রুজের পাশাপাশি পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের হাতে। ছিলেন সুব্রত পাল, আইএফএর সভাপতি অজিত ব্যানার্জি এবং সচিব অনির্বাণ দত্ত। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা আগেই জানিয়েছিলেন, তাঁরা চান ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস মাঠে উপস্থিত থেকে বাংলার হয়ে ট্রফি গ্রহণ করুন। এদিন তাই হল। লিগে ইস্টবেঙ্গলের সর্বোচ্চ গোলদাতা ঘানার স্ট্রাইকার এলসাদাই ১০ গোল করেন। প্রথম মহিলা ফুটবলার হিসেবে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে হ্যাটট্রিক করেন। ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা সৌম্যা গুগুলথের গোল সংখ্যা ৯। লিগের একমাত্র দল হিসেবে ৩০ পয়েন্ট অতিক্রম করে ইস্টবেঙ্গল। লিগের ১০ লক্ষ পুরস্কার মূল্যের পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন দলকে আরও ১২ লক্ষ আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হয় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের পক্ষ থেকে।

ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগ জয়ের পর সমর্থকদের সঙ্গে উচ্ছ্বাসে মাতেন লাল হলুদের মহিলা ফুটবল দল। মাঠ পরিদর্শন। দীর্ঘদিন পর ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে জ্বলল মশাল। আইএসএলে ছেলেদের সাফল্য নেই। চরম ব্যর্থতা। সুপার কাপের আগে বিতর্কের রেশ। বিদায়ঘণ্টা ক্লেইটন সিলভারের। মেয়েদের খেলা দেখতে হাজির হয় বহু সমর্থক। সঙ্গে ছিল টিফো। লাল হলুদের মহিলা দলকে সম্মান জানিয়ে ক্লাবের মাঠে টিফো নামায় ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। মেয়েদের ফুটবলের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে। মহিলা দলের শেষ ম্যাচ দেখতে শুক্রবার প্রায় ভরে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল মাঠের গ্যালারি। দর্শকদের মধ্যে ছিল স্কুলের প্রচুর ছাত্রছাত্রীও। ঠাকুরপুকুরের সেভ দ্য চিলড্রেন্স হোমের মেয়েদের হাতে ফুটবল তুলে দেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ। ছিল ঢাকের আয়োজনও। খেলা দেখতে মাঠে হাজির ছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজো। সুপার কাপ খেলতে শনিবার দল নিয়ে ভুবনেশ্বর পাড়ি দেবেন স্প্যানিশ কোচ।

ক্লাবের আবদার পূরণ করে হাজির হন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। মন্ত্রী মশাইয়ের হাতে ট্রফি তুলে দেন লাল-হলুদের মহিলা দলের কোচ অ্যান্থনি অ্যান্ড্রুজ। আই লিগ চ্যাম্পিয়ন মহিলা দলকে সংবর্ধিত করল ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। ইস্টবেঙ্গল মহিলা দলকে অতিরিক্ত ১২ লক্ষ টাকা আর্থিক পুরস্কারের পরও আই লিগ জেতার জন্য তারা পেয়েছিল ১০ লক্ষ টাকা। বিজয়ী দলের ফুটবলারদের হাতে ১২ লাখ টাকার চেক এবং প্রত্যেকের হাতে হাতঘড়ি তুলে দেন ক্লাবের সভাপতি মুরারি লাল লোহিয়া। উপস্থিত প্রাক্তন সভাপতি ডাঃ প্রণব দাসগুপ্ত, সহ সভাপতি কল্যাণ মজুমদার, সাধারণ সচিব রূপক সাহা, দেবব্রত সরকার, রজত গুহ। মহিলা দলের জন্য নতুন বাসের ব্যবস্থা করা হবে বলে ঘোষণা করেন ক্লাব সভাপতি। উচ্ছ্বসিত ইস্টবেঙ্গল প্রমিলাবাহিনী। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ফুটবলে বাংলা যে ভারত সেরা, তা আবার প্রমাণিত। বাংলা এ বার সন্তোষ ট্রফি জিতেছে। মোহনবাগান আইএসএল লিগ শিল্ড এবং কাপ জিতেছে। ডায়মন্ড হারবার এফসি আই লিগ টু চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের মহিলা দলও আই লিগ জিতল। দুর্ভাগ্যের হলেও ফুটবলের কোনও কোনও ক্ষেত্রে গৈরিকীকরণ দেখা যাচ্ছে। আইএলএস কাপের ফাইনালে রাজ্যে ক্রীড়ামন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আজও সরকারি ভাবে ফেডারেশন আমাকে আমন্ত্রণ জানায়নি। খেলার মাঠে রাজনীতি ঠিক নয়।’’

ইস্টবেঙ্গলের জুনিয়র দলের প্রাক্তন ফুটবলার শুভঙ্কর দাস ওরফে শুভ দাসের পাশে দাঁড়ালেন সৌরভ গাঙ্গুলি। পাশে দাড়াল ইস্টবেঙ্গলও। ফুটবলার শুভ দাসের জন্য চেক তুলে দিল ইস্টবেঙ্গল। সৌরভ গাঙ্গুলির বাসভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রাক্তন ফুটবলারের হাতে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হল। শুভ দাসের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তাঁর মা এবং ভাই। ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি, সস্ত্রীক আদিত্য গ্রুপের চেয়ারম্যান অনির্বাণ আদিত্য এবং রোশনী আদিত্য। ছিলেন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান অঙ্কিত আদিত্যও। চিকিৎসার জন্য শুভর হাতে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা তুলে দেওয়ার পাশাপশি লড়াকু ফুটবলারের অদম্য ইচ্ছে এবং সহ্যশক্তির প্রশংসা করেন সৌরভ। সৌরভ বলেন, ‘শুভর সাহস এবং লড়াই করার ক্ষমতা আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়। এদিনটা শুধুই ওর। কোনও চ্যালেঞ্জ যে বাধা হতে পারে না, প্রমাণ করেছে শুভ।’

৩৪ বছরেই সেলিব্রাল অ্যাটাক শুভঙ্কর দাসের। ময়দানের শুভ দাস ২০১১-১২ সালে মহমেডানে খেলেন। কোচ ছিলেন নঈমউদ্দিন। এরপর আলোক মুখার্জির কোচিংয়েও খেলেন। ইস্টবেঙ্গলের জুনিয়র দল দিয়ে শুরু। এরপর মহমেডান স্পোর্টিং, কালীঘাট এমএস, ইস্টার্ন রেল এবং টালিগঞ্জ অগ্রগামীর হয়ে কলকাতা লিগে খেলেন শুভ। মূলত বাঁ পায়ের এই ফুটবলার অভাবের মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছেন। স্বপ্ন ছিল বড় ফুটবলার হওয়ার। অধরাই থেকে যায়। ২০২১ সালে লকডাউনের মধ্যে বাড়ির ছাদে ব্যায়াম করার সময় হঠাৎ অন্ধকার নেমে আসে জীবনে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শুভ। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে জানানো হয়, সেরিব্রাল হয়েছে। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়াই। শরীরের বাঁ দিক অসাড় হয়ে যায়। শুশ্রূষায় বিপুল অর্থ খরচ। একটা সময় প্রায় শয্যাশায়ী ছিলেন। সংক্রমণে ডান হাত বাদ যায়। শুভর চিকিৎসার জন্য বিপুল অর্থ প্রয়োজন। অসুস্থ ফুটবলারের পাশে দাঁড়ালেন সৌরভ গাঙ্গুলি ও ইস্টবেঙ্গল ক্লাব।

শুভর জন্য চেক তুলে দিলেন ইস্টবেঙ্গল সচিব রূপক সাহা। পক্ষাঘাতে আক্রান্ত শুভ। সংক্রমণে বাদ গিয়েছে একটি হাতও। তাঁকে সুস্থ করে তোলার মহান উদ্যোগে সামিল ইস্টবেঙ্গল ক্লাবও।

২১ এপ্রিলে চাকরিহারাদের নবান্ন অভিযানে যাওয়ার প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে হাতজোড় করে স্পষ্ট উত্তরে সৌরভ বলেন বলেন, “আমায় রাজনীতিতে জড়াবেন না।” সামাজিক বিভিন্ন কাজে সৌরভ সক্রিয় হলেও, রাজনীতি থেকে সাধারণত দূরত্বই বজায় রাখতেই পছন্দ করেন মহারাজ। নববর্ষের সন্ধ্যায় ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ককে আমন্ত্রণ জানাতে তাঁর বেহালার বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী, চাকরিজীবী ও চাকরিহারা ঐক্য মঞ্চের তিন প্রতিনিধি। চাকরিহারাদের বক্তব্য ছিল, সৌরভ মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। তাই চাকরিহারারা চেয়েছিলেন যাতে তিনি মধ্যস্থতা করে বৈঠকে ব্যবস্থা করতে পারেন। ২১ এপ্রিল নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে বঞ্চিত চাকরিহারা ও চাকরিপ্রার্থী ঐক্য মঞ্চ।

সুপার কাপ থেকে আগেই নাম তুলে নিয়েছিল চার্চিল ব্রাদার্স। সুপার কাপে চার্চিলের প্রতিপক্ষ মোহনবাগান সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবে। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের তরফে জানানো হয়, ২০ এপ্রিল রাতে মোহনবাগান এবং চার্চিল ব্রাদার্সের ম্যাচ ছিল। চার্চিল নাম প্রত্যাখ্যান তুলে নেওয়ায় বাই দেওয়া হচ্ছে প্রতিপক্ষকে। আইএসএল শিল্ড এবং আইএসএল কাপ জয়ী মোহনবাগান দল সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবে কেরালা ব্লাস্টার্স এবং ইস্টবেঙ্গল এফসির ম্যাচের জয়ীর বিরুদ্ধে। মোহনবাগানের গ্রুপ লিগের ম্যাচ বাতিল হওয়ায় ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ দুপুর থেকে সরিয়ে রাতে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানিয়েছে এআইএফএফ। ২০ এপ্রিল রাত ৮টায় ইস্টবেঙ্গল এবং কেরালার ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, আইএসএল লিগ শিল্ড জেতায় এএফসিতে খেলার ছাড়পত্র ইতিমধ্যেই অর্জন করে ফেলেছে হোসে মোলিনার দল। সুপার কাপ বাগানের কাছে গুরুত্বহীন। সিনিয়র এবং জুনিয়রদের মিশ্রণে ভুবনেশ্বরে দল পাঠানো হবে বলে জানিয়েছিলেন মোহন সচিব দেবাশীষ দত্ত। কোচ হিসেবে থাকছেন না মোলিনা। তিনি দেশে ফিরে গিয়েছেন। সুপার কাপে যুগ্মভাবে মোহনবাগানের কোচের দায়িত্ব সামলাবেন বাস্তব রায় এবং ডেগি কার্ডোজো। ডার্বি হলে, সেই ম্যাচেও দায়িত্ব থাকবে এই দু’জনের কাঁধে। সুপার কাপে একমাত্র বিদেশি নুনো রেইস। মোহনবাগানের প্রথম সারির দলের ফুটবলারদের মধ্যে আছিন আশিক কুরুনিয়ন, সাহাল আব্দুল সামাদ, দীপক টাংরি, দীপেন্দু বিশ্বাস, অভিষেক সূর্যবংশী, সুহেল ভাট। বাকিরা ডেভেলপমেন্ট লিগের ফুটবলার।