সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের শিক্ষকরা চাকরি হারা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বিচারব্যবস্থায় আস্থা আছে। তবু রায় তিনি মেনে নিতে পারেননি। সরকার রয়েছে যোগ্য চাকরিহারাদের পাশে। বৃহস্পতিতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আবেদনে সাড়া সুপ্রিম কোর্টের। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অযোগ্য চিহ্নিত হননি এমন শিক্ষকরা কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘আপাতত স্বস্তি। শিক্ষকরা স্কুলে যাবেন। এটা বড় স্বস্তির খবর। একটা স্বস্তি হলে তার উপর ভবিষ্যতের স্বস্তি নির্ভর করে। তাঁদের বেতনের বিষয়ে আমরা চিন্তা করছিলাম, কীভাবে দেওয়া যায়। কারণ আগেরবার বলা হয়েছিল বেতন দেওয়া যাবে না। আমরা বিকল্প পথের সন্ধান করছিলাম। কথা দিয়েছিলাম, যাতে ওদের কোনও অসুবিধে না হয়। ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা সময় পেয়েছি।আমি খুশি, আপাতত একটা সময় আমরা পেয়েছি। শিক্ষকরা বেতন পাবেন যথাসময়ে। অনেকে বলছেন ২০২৬-এ যাবে। প্রশ্নই নেই। এই বছরের মধ্যে সব সমাধান হয়ে যাবে, আশা করি।‘ সঙ্গেই মমতা বুঝিয়ে দেন, মানুষের কাজের জন্য তাঁর ভুল হবে না।’
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আবেদনে সাড়া দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ৩১ ডিসেম্বরের অযোগ্য চিহ্নিত হননি এমন শিক্ষকরা কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। অশিক্ষক কর্মীরা অর্থাৎ গ্রুপ সি এবং ডি কর্মীদের ক্ষেত্রে এই নির্দেশ কার্যকর হবে না। তাঁরা স্কুলে যেতে পারবেন না। শীর্ষ আদালত আরও জানিয়েছে, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। পড়ুয়াদের শিক্ষা নিয়ে আমরা চিন্তিত। এই নির্দেশের ফলে কেউ কোনও বাড়তি সুবিধা পাবেন না। অশিক্ষক কর্মীদের জন্য এই নির্দেশ নয়। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের নির্দেশ, আগামী ৩১ মের মধ্যে রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, চলতি বছরেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করবে।
সুপ্রিম কোর্টে নতুন করে আবেদন অর্থাৎ রিভিউ পিটিশন রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের। আর্জি ছিল, দাগি বা টেন্টেড বা ‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত’ নন, এমন চাকরিহারাদের চাকরি বহাল থাক। সেই আর্জিতে পর্ষদের পক্ষে রায় সুপ্রিম কোর্টের। সাময়িক স্বস্তি। বড় স্বস্তি বলে উল্লেখ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
পর্যদের আর্জি প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ‘দাগি’ অর্থাৎ টেন্টেড নন, এমন শিক্ষকেরা স্কুলে যেতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চের নির্দেশ, ৩১ মে-র মধ্যে রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, চলতি বর্ষশেষের মধ্যেই নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করা হবে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে শেষ করতে হবে নিয়োগপ্রক্রিয়া। ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল। নিঃসন্দেহে রাজ্য সরকারের কাছে একটা উদ্বেগের বিষয়। ৩১ মে’র মধ্যে নয়া নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে হবে। জানাতে হবে বিস্তারিত তথ্য। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টে শুনানি। স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ স্বস্তি। নেহাতই সাময়িক। মত আইনজীবী মহলের। আইনজীবীর কথায়, সুপ্রিম কোর্ট যে অনুমতি দিয়েছে, এটা যদি কেউ ভেবে নেন যে চাকরি থেকে গেল, সেটা ভুল ভাবা হবে। নির্দেশ যা ছিল, তাই বহাল থাকল। শুধুমাত্র পড়ুয়াদের কথা ভেবে দাগি বা ‘টেন্টেড’ হিসেবে চিহ্নিত না হওয়া শিক্ষকদের আপাতত স্কুলে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। পড়ুয়াদের জন্যই সাময়িক স্বস্তি শিক্ষকদের! শুধুমাত্র শিক্ষকদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ জানিয়েছে, পড়ুয়াদের নিয়ে চিন্তিত শীর্ষ আদালত। পড়ুয়েদের পড়াশোনা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য নবম, দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির সহকারী শিক্ষক, চিহ্নিত দাগী বা অযোগ্যদের আপাতত স্কুলে যাওয়ার অনুমতি। শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে দাগি প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। শিক্ষাকর্মীদের সুযোগ দেওয়া হল না। স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্টের। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, গ্রুপ ‘সি’ এবং গ্রুপ ‘ডি’ কর্মীদেরও স্কুলে যেতে দেওয়ার জন্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে আর্জি গৃহীত হচ্ছে না। কারণ, শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে দাগি বা ‘টেন্টেড’ হিসেবে চিহ্নিত প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি।
দাগি হিসেবে চিহ্নিত নন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চলতি বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিল সুপ্রিম কোর্ট। শর্তসাপেক্ষে নরম শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি জানান, পড়ুয়াদের কথা ভেবে নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি। ১ মে থেকে কাজে যোগ দিতে পারবেন। ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ফেরালেও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের জন্য পুরনো নির্দেশই বহাল। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে বিশাল দুর্নীতি। তাদের কাজে ফেরালে ভুল বার্তা যাবে, মত প্রধান বিচারপতির। দাগি নয় এমন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পরীক্ষা দিয়ে নতুন করে যোগ্যতা প্রমাণ করে নিযুক্ত হতে হবে। রাজ্যের অন্তত ১৭টি স্কুলের বেহাল দশার উদাহরণ রাজ্যে। সুপ্রিম নির্দেশে কোনও স্কুলের ৮ জন শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ায় বর্তমানে শিক্ষকের সংখ্যা ১। আবার কোনও স্কুলে ২৭ জনের মধ্যে চাকরি হারা ২৫ জন। কোনও স্কুলে ঘণ্টা বাজানোর কর্মী না থাকায় সেই কাজ করছেন শিক্ষকরাই। শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীর অভাবে সংকটে ভুগছে বিভিন্ন স্কুল। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের খাতা দেখা, নতুন শিক্ষাবর্ষের পঠন পাঠনে প্রচুর সমস্যা।
এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্ত। সিবিআই ওএমআর শিট উদ্ধার করে। কমিশনের কাছে থাকা ওএমআর শিট আদালত প্রকাশ্যে আনার কথা বলে। শিক্ষা দফতরের সচিব, স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান এবং কমিশনার অফ স্কুলের বিরুদ্ধে আমরা আদালত অবমাননার মামলা। প্রমাণিত দাগিদের বেতন ফেরতের নির্দেশ হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের। সুপ্রিম কোর্ট সেই নির্দেশ বহাল। এথচ এখনও কেউ টাকা ফেরত দেননি। টাকা ফেরত নেওয়ার চেষ্টাও রাজ্য সরকারের কেউ করেনি। ২২ লক্ষ ওএমআর শিট এখনও প্রকাশ করা হয়নি। বেতনের পোর্টালে থাকা নামের মধ্যে প্রমাণিত ‘দাগি’রাও রয়েছেন। পোর্টাল থেকে নাম বাদ দিতে হবে। প্রকৃত ‘দাগি’দের তালিকা প্রকাশ করতে হবে, যাতে কোনও অযোগ্য নতুন করে পরীক্ষায় বসতে না-পারেন। এই মর্মে আদালত অবমাননার মামলা। ৩১ মে-র মধ্যে রাজ্য সরকারকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার মর্মে হলফনামা দিতে হবে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্নের নির্দেশ আদালতের। হাই কোর্টে করা নতুন মামলায় আবার অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার।