এই তো সেদিন ঘুরে এলেন গায়িকা কেটি পেরি! মহাকাশ ঘুরে চলে এলেন। ছোট্ট ট্যুরে মহাকাশে যেতে পারেন যে কেউ। তবে একটু খরচ সাপেক্ষ বিষয়। যদি ছাড়পত্র মেলে তাহলেই স্বপ্ন সফল। বেজোসের সংস্থা বলছে কেনও কারণে যাত্রা বাতিল হলে পুরো অর্থই ফেরত। মহাকাশ অভিযানে নতুন ইতিহাসের সূচনা। বিশ্বখ্যাত গায়িকা কেটি পেরি-সহ ৬ নারী। দু:সাহসিক পাড়ি মহাকাশের বুকে। মার্কিন শিল্পপতি জেফ বেজোসের সংস্থা ‘ব্লু অরিজিন’-এর মহাকাশযানে চড়ে মহাশূন্যে ঘুরু ঘুরু হয়ে গেল। মহাকাশযাত্রায় নারীদের স্থান অনেকটা সামনের দিকে এগিয়ে দিল। ভ্রমণের জন্য মহাকাশে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করার কাজটা সহজ হয়ে গেল। নতুন পথ প্রদর্শক ব্লু অরিজিন। অভিযান খরচ সাপেক্ষ। পকেটে টাকা থাকলেই মহাকাশ ভ্রমণের সুযোগ হাতের কাছেই।

বিশ্ববিখ্যাত পপ তারকা ক্যাটি পেরি সহ ছয়জন নারী জেফ বেজোস-এর ব্লু অরিজিন রকেটে চড়ে পৃথিবীর ১০০ কিলোমিটার ওপরে আন্তর্জাতিকভাবে মহাকাশের সীমানায় পৌঁছন। মহাকাশ ভ্রমণকারী জেফ বেজোসের বাগদত্তা লরেন সানচেজ, সিবিএস সঞ্চালক গেইল কিং, নাসার রকেট বিজ্ঞানী আইশা বোয়ে, বিজ্ঞানী অ্যামান্ডা গুয়েন, ফিল্ম প্রযোজক কেরিয়ান ফ্লিন। বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম। ৬০ বছরেরও বেশি সময় পরে একটি মহিলা অভিযানে ইতিহাস রচনা। ৫ সহযাত্রীর সঙ্গে মহাশূন্যে ঘুরে এলেন কেটি পেরি। ব্লু অরিজিনের নিউ শেপার্ড মহাকাশযানটি টেক্সাস থেকে উড়ে গিয়ে মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে মহাকাশে পৌঁছায়। মহাকাশে যাত্রীরা কিছু সময় অভিকর্ষহীন অবস্থা অনুভব করেন এবং তারপর ফিরে আসেন পৃথিবীতে। পুরো যাত্রাটি ছিল মহাকাশে যাওয়ার এক নিঃসঙ্গ কিন্তু অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। যাত্রী গায়িকা স্বয়ং কেটি পেরি-সহ ৬ জন মাধ্যাকর্ষণের বাধা কাটিয়ে ওজনহীন অবস্থায় ১১ মিনিট ভ্রমণ করেন মহাশূন্যে। নিরাপদে ফিরেও এসেছেন পৃথিবীর বুকে। অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার কথা সকলের সঙ্গে শেয়ার করে সোশাল মিডিয়ায় কেটি পেরি লেখেন, ‘বাড়ির মতো আরামদায়ক আর কিছু নেই…’
বেসরকারি উদ্যোগে মহাকাশ অভিযান। ব্যতিক্রমী কোনও ঘটনা নয়। মার্কিন ধনকুবের মাস্ক ও বেজোসের স্পেস ট্যুরিজম বেশ জনপ্রিয়। মাস্কের ‘স্পেস এক্স’-এর মতো বেজোসের সংস্থা ‘ব্লু অরিজিন’। দুই সমান তালে জনপ্রিয়তা বজায় রেখেছে। মহাকাশ গবেষণার সঙ্গে ব্যবসায়িক স্বার্থের মেলবন্ধন। মাস্ক কিংবা বেজোসের মূল লক্ষ্য, ভ্রমণকে প্রত্যেকের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তোলা। বিভিন্ন ক্ষেত্রের সফল, সাহসী নারীদের নিয়ে এবার মহাকাশ ভ্রমণ করা ব্লু অরিজিনের তৈরি যানে। ব্লু অরিজিনের মহাকাশযানে চড়ে সংক্ষিপ্ত স্পেস ট্যুর। খরচ বেশ বড়সড় অঙ্কের অর্থ। কেটি পেরির মতো যে কারুর পক্ষেই ঘুরে আসা বেশ সহজ। মহাশূন্যে ঘুরতে যাওয়ার সহজ ব্যবস্থা। সংস্থা সূত্রে খবর, ১৮ বছর বয়স হলেই স্পেস ট্যুরে যাওয়ার যোগ্য। মহাকাশে ঘুরতে যাওয়ার আগে থেকে টিকিট বুক করতে হবে। একটি দীর্ঘ ফর্ম ফিলআপ। খরচ বাবদ পুরো অর্থ ফর্ম ফিলাপের সময়ই জমা দিতে হবে। কোনও কারণে যাত্রা বাতিল হলে পুরোটা অর্থই ফেরত। খরচের অঙ্কটা বিশাল। ব্লু অরিজিন-এর মহাকাশযানে সওয়ার হওয়া বেশ ব্যয়বহুল। এই সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রথমে একটি রিজার্ভেশন পেজে কিছু মৌলিক তথ্যে নাম, জন্মতারিখ এবং কেন মহাকাশে যেতে চান সে সম্পর্কে ৫০০ শব্দের মধ্যে একটি ছোট বিবরণ। আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হওয়া জরুরী বলে জানানো হয় সংস্থার তরফে।
বেজোসের সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, খরচের অঙ্ক ২ লক্ষ ডলার থেকে সাড়ে ৪ লক্ষ ডলার। যদিও ব্লু অরিজিন সঠিক মূল্য প্রকাশ করে না, তবে তাদের রিজার্ভেশন পেজে জানানো হয়েছে যে, প্রাথমিক ডিপোজিট হিসেবে ১৫০০০০ ডলার প্রদান করতে হবে। এর আগে, ২০২১ সালে তাদের প্রথম ক্রিউড ফ্লাইটে একটি আসন ২৮ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছিল। বিশেষ ব্যক্তি বিনামূল্যে মহাকাশে যেতে পারেন। অভিনেতা উইলিয়াম শ্যাটনার এবং সঞ্চালক মাইকেল স্ট্রাহান অতিথি হিসেবে মহাকাশে গিয়েছিলেন। এপ্রিল ১৪ তারিখের ফ্লাইটেও কিছু যাত্রী বিনামূল্যে গেছেন বলে জানা গেছে, ব্লু অরিজিন তাদের নাম প্রকাশ করেনি। নভোচরদের মতো শূন্যে ভেসে থাকা, তারাদের আরও কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে গেলে এই খরচটুকু করতেই হবে। কারণ এটাই মহাকাশ ভ্রমণকারীর জীবনের বিরল মুহূর্ত। অভাবনীয় জীবন আস্বাদন। গায়িকা এবং তাঁর ক্রুদের পৃথিবীরপৃষ্ঠ থেকে ৬০ মাইল অর্থাৎ ১০০ কিলোমিটার বেশি উপরে তোলা হয়েছিল। ব্লু অরিজিনের সরাসরি সম্প্রচার অনুসারে, রকেটটি পশ্চিম টেক্সাস থেকে সকাল ৯:৩১ মিনিটে যাত্রা শুরু করে। এই অভিযান যেমন মহাকাশযাত্রায় নারীদের আরও একধাপ এগিয়ে দিল, তেমনই ভ্রমণের ক্ষেত্রে এখন থেকে মহাকাশকেও অনেকের পছন্দের তালিকায় যোগ করল।

এদিকে চলছে ডোনাল্ড ট্রাম্প রাজত্ব। নাসার এক ভারতীয় বংশদ্ভূত শীর্ষকর্তা নীলা রাজেন্দ্রকে সরিয়ে দিলেন পদ থেকে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে মার্কিন প্রশাসনকে ইচ্ছেমতো রদবদল করে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতীয় বংশদ্ভূত শীর্ষকর্তা নীলা রাজেন্দ্র মার্কিন মহাকাশ সংস্থার ‘বৈচিত্র্য, সাম্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক’ ডিআই বিভাগের প্রধান (Diversity, Equity and Inclusion Chief)। পদটিকেই মুছে ফেলে মার্কিন প্রশাসন। নীলাকে চাকরিতে বহাল রাখতে সব রকম চেষ্টা করে নাসা। সেই চেষ্টাও ব্যর্থ। ছাঁটাই করা হয়েছে নীলাকে। ট্রাম্প প্রশাসনের সরকারি আগ্রাসনের শিকার ভারতীয় বংশদ্ভূত তরুণী। সংস্থার প্রধান পরিচালক লরি লেশিন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “নীলা রাজেন্দ্র আর জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরিতে কাজ করছেন না। আমাদের প্রতিষ্ঠান তাঁর অবদানের জন্য বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ। আমরা তাঁর মঙ্গল কামনা করছি।” ক্ষমতায় এসে বিভিন্ন পদে নিজের লোকেদেরই স্থান দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেনা থেকে পুলিশ এমনকি মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ। জন ব়্যাটক্লিফকে বসানো হয়েছে সিআইএ-র মাথায়। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিজের পছন্দ মতো শীর্ষকর্তা নিয়োগ করেছেন সব মহল্লায়।