Saturday, April 19, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

তারকাদের বাংলা বছরের প্রথম দিন! পয়লা বৈশাখের আগে দরুন খবর ‘‌দাদা’‌র জন্য?

পয়লা বৈশাখ। বাঙালির বাঙালিত্বের উদ্‌যাপন। সাদা-লাল শাড়ি। সাদা লাল পাঞ্জাবি। ফ্যাশন। বাঙালি খাওয়া-দাওয়া। হালখাতা। জাগ্রত বাঙালির স্মৃতিমেদুরতা। বাংলার নববর্ষ। ১৪৩২ অনেক নতুন কিছু। নববর্ষকে স্বাগত বাঙালির। বাঙালির পয়লা বৈশাখ। মানেই নস্ট্যালজিয়া। পোশাক থেকে খাবার। আড্ডা থেকে হালখাতা। সবেতেই বাঙালিয়ানার ছাপ। অতীতের স্মৃতিচারণা। নববর্ষের পরিকল্পনা।

বাংলা ক্যালেন্ডারে নতুন দিনের শুরুটা ভালোই ‘‌দাদা’‌র জন্য

আইসিসি’র গুরুত্বপূর্ণ পদে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন সৌরভ গাঙ্গুলির। আইসিসি’র বড় পদে ফিরলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। আইসিসি’র তরফ থেকে জানানো হয়েছে, পুরুষদের ক্রিকেট কমিটির প্রধান প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। কমিটি বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটের গুণমান দেখভাল করা ও ভবিষ্যতের রূপরেখা নির্মাণের কাজ করবে। বাঙালি স্মৃতিমেদুরতায় আক্রান্ত। এরই মধ্যে এক বাঙালি তারকার খুশির দিন। মহারাজ সৌরভ এর আগেও এই পদে ছিলেন। ২০২১ সালে প্রথমবার পুরুষদের ক্রিকেট কমিটির প্রধান হয়েছিলেন। তার আগে এই পদে থাকা অনিল কুম্বলে ৩ বছরের মেয়াদসীমা পার করার পর দায়িত্ব ছাড়েন। এবার কমিটিতে সৌরভ ছাড়াও আছেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। ছয় সদস্যের এই কমিটিতে সৌরভ ও লক্ষ্মণ ছাড়াও আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন ব্যাটার ডেসমন্ড হেইনস, প্রাক্তন ইংরেজ তারকা জোনাথন ট্রট, আফগানিস্তানের প্রাক্তন বোলার হামিদ হাসান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা। আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহের পরামর্শেই এই কমিটি নির্বাচিত। এই কমিটির কাজ। বিভিন্ন নিয়মের বদল বা কোন পরিস্থিতিতে খেললে মান আরও বাড়তে পারে, সেই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া। ক্রিকেটের দীর্ঘমেয়াদি উন্নতির জন্য সাহায্য করবে। নিত্যনতুন প্রযুক্তির ব্যবহার। ডিআরএস ব্যবস্থার উন্নতি। অবৈধ বোলিং সমস্যা মেটানোর মতো বিষয়গুলি দেখভাল করার দায়িত্ব এই কমিটির। বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটের বিস্তার ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির দায়িত্ব থাকবে এদের। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো অভিজ্ঞ ব্যক্তি ও বহুল পরিচিত মুখ এই দায়িত্বে। ফলে এই কমিটির সাফল্য অবশ্যম্ভাবী।

সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বিন্দাস মেজাজে নববর্ষের দিনে

নববর্ষ মানে নস্ট্যালজিয়া। স্মৃতি মেদুরতা। আমার কাছে কিন্তু নববর্ষ একই রকম। সেই ছোটবেলায় যেরকম ছিল। আজও বদল হয়নি। উৎসবের আনন্দ-আবেগ একইরকম। পারিবারিক সংস্কার ও রেওয়াজ আজও আমাদের বাড়িতে একই রকম। নববর্ষের দিন সকালে আমাদের বাড়িতে মা চণ্ডীর পুজো। এবারও পয়লা বৈশাখের সকালটা সেভাবেই কাটবে। বাড়িতে প্রত্যেক দিন পুরোহিত আসেন, পুজো হয়। এবারও নিয়মমাফিক তা হবে। নববর্ষের দুপুরে একটু ভালোমন্দ খাবারের আয়োজন। থাকে চিংড়ি মাছ। এবার পয়লা বৈশাখ পড়েছে মঙ্গলবার। খাওয়াদাওয়াটা হবে পরদিন, বুধবার। প্রত্যেকেই নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত থাকে।নববর্ষ মানেই আমার কাছে পাঞ্জাবি মাস্ট। ছোটবেলায় পয়লা বৈশাখে নতুন জামাকাপড়। পাঞ্জাবি থাকতেই হবে। পাঁচজন বাঙালির মতো পয়লা বৈশাখের দিন পাঞ্জাবি পরতেই হবে। বাড়িতে মা চণ্ডীর পুজো আর পাঞ্জাবি ছাড়া নববর্ষ অসম্পূর্ণ।

নববর্ষে প্রাক্তন জাতীয় উইকেটরক্ষক দীপ দাশগুপ্ত

পয়লা বৈশাখ এলেই স্মৃতিমেদুরতা। আমার ছোটবেলা কেটেছে দিল্লিতে। বেড়ে ওঠাও সেখানে। দিল্লিতে বেড়ে উঠলেও ঐতিহ্য ভুলিনি। ভুলিনি বাঙালিয়ানাও। নববর্ষের দিনটা খুবই বিশেষ একটা দিন। দুর্গাপুজোর মতোই নতুন জামা। পয়লা বৈশাখেও তার ব্যতিক্রম না। প্রত্যেক বাঙালিরই এই দিনটাকে ঘিরে নানান সুখস্মৃতি।আমাদের সময় পরীক্ষা শেষ হত মার্চের শেষ বা এপ্রিলের শুরুতে। লম্বা ছুটির মধ্যেই পয়লা বৈশাখ। দিল্লির গোটা বাঙালি সমাজ এদিন অন্যরকম মেজাজে থাকত। নতুন জামা পরে আনন্দ করতাম সকলে। খাওয়াদাওয়া, আড্ডা, হইহুল্লোড় কোনও কিছুই বাদ যেত না। সাবেকি বাঙালিয়ানার ছাপ থাকত সর্বত্র। এখন মোবাইলে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়ে দিই। সেই সময় দাদু-ঠাকুমাদের চিঠি লিখেই নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতাম। দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কে বিরাট সংখ্যক বাঙালি থাকেন। ওখানকার একটা মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি আসত। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হত। আমি এখন ইংল্যান্ডে। তবে যেখানেই থাকি না কেন, বাঙালির মতোই পয়লা বৈশাখ পালন করি। ১লা বৈশাখের পরের দিনই আমার স্ত্রীর জন্মদিন। তাই এই দু’টো দিন অন্য দিনের চেয়ে আলাদা কাটে আমাদের। শেষ ২৫ বছর ধরে একই ধারায় চলতে থাকে।

পয়লা বৈশাখের বিশেষ এই দিনটিতে টলিপাড়ার তারকারা

আধুনিকতাকে সাদরে বরণ। উৎসব, পার্বণ বা বছরের বিশেষ দিনের রীতি পালন। ফুড ডেলিভারি অ্যাপে অভ্যস্ত নাগরিক সমাজ নববর্ষে বাঙালির খাবারে ডুব। বছরের বাঙালি খাবারে ‘বাঙালিয়ানা’।অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুর বাঙালি খাবারের প্রাধান্য বেশি। বিশ্বনাথের চাইনিজ আর পাঞ্জাবি খাবার ভাল লাগে। খুব বেশি যে কনটিনেন্টাল খাবার, তেমনও নয়। তবে সব থেকে প্রিয় বাঙালি খাবার। বিশ্বনাথ ব্যস্ত অভিনেতা। নববর্ষের দিন পরিবারের সকলকে নিয়ে মধ্যাহ্ণভোজন ‘মাস্ট’। বছরের আর পাঁচটা দিন বাঙালি পদ নিয়ে আলাদা করে মাথা না ঘামালেও, নববর্ষের দিন পাতে বিশেষ কিছু পদ বিশ্বনাথের চাই-ই চাই। নববর্ষের দিনটা পরিবারের সঙ্গে ছুটির মেজাজে কাটে অভিনেতার। বাড়িতে কোনও রান্নার পর্ব রাখা হয় না। সকলকে নিয়ে কোনও বাঙালি রেস্তরাঁতেই খেতে যেতে পছন্দ করেন বিশ্বনাথ। পাতে চিংড়ি আমডাল ভীষণ প্রিয়। ছোটবেলা কেটেছে বসিরহাটের দেশের বাড়িতে। দেশের বাড়িতে নববর্ষে ভগবতী পুজোর স্মৃতি আজও টাটকা। পুজোর পর সকালের জলখাবারে থাকত লুচি আর আলুর তরকারি। দুপুরে পাতে থাকত ভাত, আমডাল, এঁচোড়ের তরকারি এবং মাছের ঝোল। কেনা মাছ নয়। বাড়ির পুকুর থেকে ধরা মাছের ঝোল। গরম ভাতে তার স্বাদ আজও মুখে লেগে রয়েছে।

মনামী ঘোষের পয়লা বৈশাখের উপলব্ধি। তন্বী এবং ফিটনেস ফ্রিক হিসাবে ইন্ডাস্ট্রিতে সুখ্যাতি রয়েছে। পয়লা বৈশাখে মূলত বাঙালি খাবারই পছন্দ। মনামীর কথায়, ‘‘দেশের পাশাপাশি বিদেশের বহু জায়গায় ঘুরেছি। নানা ধরনের খাবার চেখে দেখেছি। কিন্তু বাঙালি খাবারের মজা অন্য কোথাও পাইনি।’’ পয়লা বৈশাখে দুপুরে তাঁর পাতে থাকবে গোবিন্দভোগ চালের ভাত, পাতলা মুসুর ডাল এবং ঘি। মনামী বললেন, ‘‘সারা বছর এই তিনটে পদ আমার চাই-ই চাই। তার পর মাছ বা মটন, আমের চাটনি— কী থাকল তা নিয়ে আমি বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাই না। যেটাই দেওয়া হবে, তৃপ্তি করে খেয়ে নেব।’’

অভিনেতা অম্বরীশ ভট্টাচার্যের নববর্ষের দিনটায় কর্মসূচিতে কোনও পরবর্তন ঘটে না। নববর্ষে বাঙালি খাবার অনেকের কাছে ‘দেখনদারি’ তকমা পেয়েছে বলে মনে করেন অম্বরীশ। বাঙালি হয়ে বছরের বিশেষ কয়েকটা দিনে এই বিশেষ দেখনদারিরও প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। প্রত্যেক বছর এখনও নববর্ষে পাড়ার প্রভাতফেরিতে অংশ নিয়ে তাঁর দিন শুরু হয়। বাড়ি ফিরেই তাঁর পাতে থাকে লুচি, সাদা আলুর তরকারি, বেগুনভাজা এবং বাড়িতে বানানো মিষ্টি। শহরে মিষ্টির দোকানের সংখ্যা বাড়লেও পরিবারের রীতি আজও অমলিন। ছানার কোনও সন্দেশ তৈরি করা হয়। খুব অসাধারণ খেতে। নববর্ষে দুপুরে অম্বরীশের বাড়িতে ‘মেনু’তে বাসন্তী পোলাও এবং পাঁঠার মাংস। মাছের কোনও পদ। থাকলে তার সঙ্গে একটু সাদা ভাত। ভাতের সঙ্গেই থাকে তরকারি দেওয়া ডাল, বেগুনি। শেষ পাতে অভিনেতার পছন্দ লাল মিষ্টি দই। বিকেলে চা এবং মুড়ির সঙ্গে লক্ষ্মী নারায়ণ সাউয়ের নেতাজির চপের দোকান দোকানের চপ।

পয়লা বৈশাখ সন্দীপ্তা সেনের কাছে ‘চিট ডে’। ব্যস্ত অভিনেত্রী। বছরের অন্য সময়ে ডায়েট। নববর্ষে বাঙালি বাদে অন্য কোনও ‘কুইজিন’ সন্দীপ্তার বাড়িতে প্রবেশ নিষেধ। স্বামী সৌম্য মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে পয়লা বৈশাখে মা-বাবার বাড়িতে একসঙ্গে দুপুরে খাওয়াদাওয়া। একসঙ্গে সময় কাটাবেন বলে, বাড়িতে রান্নার কোনও ঝক্কি পোহাতে নারাজ সন্দীপ্তা। কোনও ভাল বাঙালি রেস্তরাঁ থেকে খাবার আনানো হয়। সাদা ভাতের সঙ্গে চিংড়ি মালাইকারি, ভেটকি মাছের পাতুরি এবং অবশ্যই কষা মাংস। অভিনেত্রী জানালেন, বাকি পদ রেস্তরাঁ থেকে এলেও এ বার পাঁঠার মাংসটা বাড়িতেই রান্না করা হবে।

সঙ্গীত শিল্পী অনুপম রায়-প্রস্মিতা পালের সংসারে পয়লা বৈশাখ

দোতলায় লিফ্‌ট থামলে বেল বাজানোর আগে চোখ টানে নামের ফলকে শেক্সপিয়রীয় ছোঁয়া। গুরুগম্ভীর কাঠের দরজা খোলে গিয়ে ছিমছাম তবে শৈল্পিক বসার ঘরে। অনুপম বলেন, ‘‘বাইরের কারও সাহায্য নিইনি, নিজেরাই বাড়ি সাজাই, যখন যেমন ইচ্ছা হয়।আমার! তবে ওটা নকল। শিল্প-সংস্কৃতির সব ক্ষেত্র সম্পর্কেই যে সচেতন সঙ্গীতকার-গায়ক। বিয়ের পর দ্বিতীয় পয়লা বৈশাখ। বাঙালির নিজস্ব দিন বলে কথা। তাই গানের অনুষ্ঠান এবং অফিসের কাজের মাঝেও নিজেদের জন্য কিছুটা সময় আলাদা করে বার করে নিয়েছিলেন দম্পতি। অরগ্যানজা ও পোচামপল্লি সিকো ইক্কতের যুগলবন্দি বৈশাখের প্রথম দিনে। গরমে ফুল-পাতা আঁকা ঘিয়েরঙা হালকা শাড়িতে সেজেছেন প্রস্মিতা। সঙ্গে হলুদ ব্লাউজ়ে রংমিলান্তি। কানে উঠেছে হাতে বোনা দুল। হাতে গোলাপি এক গোছা চুড়ি। সবুজের ছোঁয়া এল অনুপমের পাঞ্জাবিতে। নীলের উপর সাদা কাজের কুর্তা-শার্টেই অনুপম। শিল্পী-যুগলের বাড়ি। প্রমাণ রয়েছে ঘর, জানলা, আসবাবে। বাড়িভর্তি বই, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর নির্বাচিত গল্প, দীনেশ্চন্দ্র সেনের ‘বৃহৎ বঙ্গ’, আন্তন চেকভের ছোটগল্প, স্টিফেন হকিন্সের ‘আ ব্রিফ হিস্টরি অফ টাইম’ থেকে শুরু করে মুরাকামি, সুকুমার-শরৎ চাটুজ্জের সাহিত্য সমগ্রও।
খাবারেও মিল আছে দু’জনের। পরিপাটি বাঙালি রান্না পছন্দ অনুপমের। প্রস্মিতা শুধু খেতে নয়, রান্না করতেও ভালবাসেন।

অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিকের পয়লা বৈশাখ মানেই নস্ট্যালজিয়া। কালীঘাট নিবাসী। পয়লা বৈশাখ বলতেই মনে পড়ে, মা কালী বাড়ি চত্বরে উপচে পড়া ভিড়। ভোলা হালদারের দোকান। হালখাতায় শালু কাপড় মোড়ানো খাতার মধ্যে তিনটে কাঁচা পয়সার সিঁদুরে ছাপ। একটা স্বস্তিক চিহ্ন আঁকা। দোয়াতের কালিতে লেখা হত- ওম গণেশায় নমঃ। হাতের লেখা ভালোর উপর দায়িত্ব পড়ত এটা লেখার। এক টাকা কিংবা দু’ টাকা করে পেতাম এই তিনটে ছাপ, একটা করে স্বস্তিক চিহ্ন আর ওই মন্ত্রটা লেখার জন্য। সেটা করতাম নববর্ষের আগের রাতে। বছরের পয়লা দিন উপলক্ষে মা কালী বাড়িতেও প্রচণ্ড ভিড় হত। পুজো দেওয়া থেকে শুরু করে দোকান থেকে এত পুজো যেত, কালীঘাট চত্বরে পয়লা বৈশাখের উন্মাদনা বরাবরই আলাদা। আজও সেটা বহাল রয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য সব বন্ধুদের দোকানে মিষ্টির ডালা তৈরি করতাম আগের রাত থেকেই। ‘হারান মাঝি’ বলে যে দোকানটা রয়েছে, ওখানকার গরম তোতাপুরি খেয়েই শুরু হত আমাদের নববর্ষ উদযাপন। মা যতদিন বেঁচে ছিলেন, প্রতিবার নববর্ষে একটা নতুন রুমাল কিংবা গেঞ্জি হলেও উপহার দিতেন। সেটা মিস করি। যদিও সেই দায়িত্বটা এখন অবশ্য আমার বউ শ্রীময়ী চট্টরাজ মল্লিক পালন করে। একটা লুঙ্গি হোক বা জামা, নতুন পোশাক কিনে আনে। এবারও তাই করেছে। শ্রীময়ী যা কেনে সেটাই পরে ফেলি চোখ বন্ধ করে। তাছাড়া এখন কাজের চাপে আমাদের আলাদা করে আগের মতো পয়লা বৈশাখ উদযাপনের উন্মাদনাও থাকে না। খাদ্যরসিক বিশেষ করে ‘মাটন-রসিক’। পয়লা বৈশাখ হোক বা অন্য কোনও উৎসব-অনুষ্ঠান, পাঁঠার মাংস ছাড়া আমার আবার জমে না। শ্রীময়ী দারুণ মাটন রান্না করে। আগে মা ছাড়া অন্য কারও হাতে রান্না মুখে রুচত না, এখন ওঁর হাতের পাঁঠার ঝোল ছাড়া ভালো লাগে না।

ইমন চক্রবর্তী পয়লা বৈশাখে বাবা আর বরের সঙ্গে ঝগড়া করেন না। পয়লা বৈশাখের স্মৃতি সততই আমার কাছে সুখের এবং সুন্দর। প্রতিটা বাঙালি বাড়িতে নববর্ষ উদযাপন যেমন স্পেশাল, আমার বাড়িও এক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম নয়। একান্নবর্তী পরিবারে বেড়ে ওঠা, তাই ছোট থেকেই একটা রেওয়াজ লক্ষ্য করেছি, বছরের পয়লা দিনে স্নান সেরে নতুন জামাকাপড় পরে প্রথমেই বাড়ির বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করত ছোটরা। আর পয়লা বৈশাখে ভুরিভোজের মেনুতে হলুদ পোলাও, পাঠার মাংস ছিল আমাদের বাড়িতে মাস্ট। বাবার সঙ্গে হাত ধরে সব ভাইবোনেরা একসঙ্গে হালখাতা করতে যেতাম। এক্ষেত্রে এক মজার স্মৃতি রয়েছে। দোকান থেকে ঠান্ডা পানীয় হিসেবে যে ‘স্কোয়াস’ দেওয়া হত। সেসব খেয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে কমলা রঙে জিভ রাঙিয়ে ফিরতাম আমরা। আর কে, কতগুলো মিষ্টি আর ক্যালেন্ডার পেয়েছে, সেই নিয়ে রীতিমতো আমাদের প্রতিযোগিতা চলত। পয়লা বৈশাখ থেকে ‘একলা বৈশাখ’ বলার প্রবণতাটা। কিংবা বিকৃত বাংলা বলার অভ্যেসটা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলিতে যান কিংবা আমাদের দেশেরই বিভিন্ন প্রদেশে যদি দেখি, এই যেমন আমি এখন ইন্দোরে শো করতে এসেছি, এখানেও সমস্ত হোর্ডিংয়ে আগে নিজেদের ভাষা জ্বলজ্বল করছে, তারপর সেটা ইংরেজি হরফে লেখা। তাই আমার মনে হয়, বাংলা ভাষার তাৎপর্য শেখানোর বিষয়টা পরিবারের তরফেই শুরু হওয়া উচিত।

যশ দাশগুপ্ত এবং নুসরত জাহানের এবারের বাংলা বছরটা ‘আড়ি’ রিলিজের ভাবনাচিন্তা নিয়ে কেটে যাচ্ছে। আমরা নিত্যদিন বিভিন্ন জায়গায় দু’জনে মিলে ছবির প্রচারে যাচ্ছি। আশা করব, নতুন বছরে আনন্দ করার পাশাপাশি সবাই নতুন বাংলা ছবিও হইহই করে দেখতে যাবে। তার পাশাপাশি গরমের সঙ্গে ‘ফাইট’ করছি, তবে এটাও বলব, পয়লা বৈশাখের উষ্ণতার সঙ্গে কোনও কিছুর তুলনা চলে না! নববর্ষের স্মৃতিতে ডুব দিলেই আমার কাছে খাওয়াদাওয়া এবং নতুন জামাকাপড় ছাড়া সেরকম কিছু মনে পড়ে না। বছরের পয়লা দিন মানেই ছুটি। সকাল থেকে সকলকে শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে খাওয়া-দাওয়া করতাম। ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে গয়নার দোকানে যেতাম হালখাতা করতে। সেখানেই মিষ্টি, ঠান্ডা পানীয় দেদার খেতাম। শৈশবের থেকে পয়লা বৈশাখের আমেজ এখন অনেকটাই আলাদা। নববর্ষ মানেই তো নতুন জামাকাপড় পরা। ক’টা জামা হল সেটার হিসেব খুব রাখতাম। আগে তো যে কোনও উৎসব-অনুষ্ঠান উপলক্ষেই জামা কেনা হত। এখন অবশ্য পয়লা বৈশাখের শপিং বলে সেরকম আলাদা করে কিছু হয় না। তবে পুরনো দিনের কথা মনে পড়লে এখনও মন কেমন করে। এক ধাক্কায় অতীতে ফিরে যাই।

প্রশ্মিতা পালের পয়লা বৈশাখ। ছোটবেলার স্মৃতি ভেসে ওঠা। বাড়িতে পোলাও আর মাংস হত। মা রান্না করতেন। নতুন জামাও কেনা হত। এখন যেমন কাজের সূত্রে সারা বছরই কেনাকাটা চলতে থাকে। আর মায়ের হাতের রান্না তো বাড়িতে গেলেই খাই। এবারের পয়লা বৈশাখ আমার কাজের মধ্যে দিয়েই কাটবে। কারণ বছরভরই আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকে। বছরের পয়লা দিনও তার ব্যতিক্রম নয়। আমাদের উৎসব-অনুষ্ঠানগুলো আসলে এভাবেই কেটে যায়। এবারও তাই। গানে গানে নববর্ষ যাপন করব আমরা। ছোটবেলাতেও আমাদের পাড়ায় রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন হত খুব বড় করে। আর সেই অনুষ্ঠানের রিহার্সাল শুরু হয়ে যেত পয়লা বৈশাখ থেকেই। সেসময়ে আমাদের কাছে দুয়ারে নববর্ষ কড়া নাড়া মানেই, পঁচিশে বৈশাখের অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতির তোড়জোর শুরু। ব্যাপারটা খানিক এরকমই ছিল। কোনটা গান গাইব, কোন নাটক হবে… এসব আলোচনা চলত।

রুক্মিণী মৈত্র স্মৃতিতে ডুব দিলে, নববর্ষ মানেই আমার কাছে নতুন জামাকাপড় আর হালখাতার রকমারি মিষ্টি। ছোটবেলায় পয়লা বৈশাখের শপিং নিয়ে বেশ এক্সাইটমেন্ট কাজ করত। বাকি বাচ্চাদের থেকে মনে হয় আমার মধ্যে সেটা একটু বেশিরকমই ছিল। সে একেবারে দুর্গাপুজোর মতো হইহই কাণ্ড। যেন বছর ঘুরতেই আরেকটা দুর্গাপুজো। পিসি, মাসিরা সকলে আমার জন্য নতুন জামা পাঠাতেন। সেই রীতি অবশ্য এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। তবে তখন সেই জামাগুলো পয়লা বৈশাখে সকাল-বিকেল পরতাম। এবার পয়লা বৈশাখের জন্য কেনাকাটা কিছুই আমি নিজে করিনি। তবে মা আমার জন্য একটা শাড়ি কিনেছেন। রবিবার সেটা আমার হাতে দিয়ে বললেন- তোমার তো আর কেনাকাটি করার বা এসব মাথায় রাখার সময় নেই। অন্তত পয়লা বৈশাখে এটা পরো। প্রতিবার নববর্ষে যে নতুন জামা পরি, সেটা আসলে মায়েরই দেওয়া। নববর্ষের আরেকটা রীতি নিয়ে আমার ভীষণ ইন্টারেস্ট ছিল। সেটা হল, হালখাতাপ্রাপ্ত নতুন বছরের নতুন ক্যালেন্ডার। মনে পড়ে, বাড়িতে পাড়ার সব দোকান থেকে হালখাতার প্রচুর মিষ্টি আর ক্যালেন্ডার আসত। সেটা একটা প্রথার মতোই ছিল। সব প্যাকেট খুলে দেখতাম। এখন তো এই পাড়া-সংস্ক্তিটা অনেক কমে গিয়েছে। অনেক জায়গায় আবার লুপ্তপ্রায়। তখন অবশ্য নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়ের বিষয়টাই অন্যরকম ছিল। কার বাড়িতে ক’জন রয়েছেন কিংবা কে, কোন খাবার বা মিষ্টি খেতে ভালোবাসে, সেগুলো পাড়া-প্রতিবেশী, স্বজনরা খোঁজ রাখতেন। আমি যেহেতু মিষ্টি খেতে খুব পছন্দ করতাম, এখনও অবশ্য করি। তাই যাঁরা জানতেন, তাঁরা আমার পছন্দের মিষ্টিগুলি পাঠিয়ে দিতেন। এটা আমার কাছে তখন খুব আনন্দের বিষয় ছিল। বড় পাওনাও বলতে পারি।

মিমি চক্রবর্তীর মা ছোটবেলায় বলতেন, নতুন বছরে তুমি যা করবে, সারাবছর সেরকমই চলবে। তাই কাজ দিয়ে শুরু করাটাই আমার মনে হয়, সবথেকে ভালো। আর কাজ মানেই আমার কাছে ‘হ্যাপি প্লেস’। এবারের পয়লা বৈশাখে আমার ‘রক্তবীজ ২’-এর শুটিং রয়েছে। সেটেও খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। নববর্ষে খাওয়াদাওয়া আমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। শুধু পয়লা বৈশাখ বলে নয়, আমি বরাবরের খাদ্যরসিক। কিন্তু যেদিন থেকে নিরামিশাষী হয়ে গিয়েছি, সেদিন থেকে অবশ্য আমার খুব একটা খাওয়া হয় না। অগত্যা মিষ্টিটাই এখন আমার কাছে সবথেকে প্রিয়। নতুন বছরের শুরুয়াত হোক মিষ্টি দিয়েই। বছরভর মিষ্টি কাটুক, এই কামনা রাখি। আমি যেহেতু পোলাও খেতে খুব ভালোবাসি। তাই পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বাড়িতে পোলাও রান্না হবে। প্রতিবছর পয়লা বৈশাখে আমাদের বাড়িতে পুজো হয়। ছোটবেলা থেকেই সেই রীতি দেখে আসছি। এদিন আমাদের বাড়ির সব ঠাকুররাও নতুন জামাকাপড় পরেন। শুধু নিজেরাই নতুন পোশাক পরলেই হবে? এছাড়াও মরশুমের প্রথম ফল ওনাকেই উৎসর্গ করা হয়। সারাবছর কাজের সূত্রে তো সকলের তেমন একসঙ্গে হওয়া হয় না। তাই পয়লা বৈশাখে সবাই একজোট হওয়ার চেষ্টা করি। আমার অবশ্য এবছর সারারাত শুটিং রয়েছে। আর এদিন তো নতুন জামাকাপড় পরা মাস্ট!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles