ইন্ডিয়ান আইডল-এ উঠছে ‘চিটিং’য়ের অভিযোগ! জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো-র সিজন ১৫ সদ্য সমাপ্ত। সিজনের প্রথম এবং দ্বিতীয় দুজনই বাংলার সঙ্গীত শিল্পী। টপ সিক্স অর্থাৎ প্রথম ৬ জনের লড়াই থেকে থেকে প্রথমেই দুজন ছিটকে যান। দুজন হলেন অনিরুদ্ধ এবং প্রিয়াংশু দত্ত। ছিটকে যাওয়া অনিরুদ্ধর বিস্ফোরণ দাবি ইন্ডিয়ান আইডল শোয়ের বিরুদ্ধে। ইন্ডিয়ান আইডল সিজন ১৫-র গ্র্যান্ড ফিনালের পর্ব সম্প্রচারিত। সম্প্রচারনের পরই বিস্ফোরক অনিরুদ্ধ। সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে পোস্ট করে বিস্ফোরক অভিযোগ জানান। সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘আমার গতকালের পারফরমেন্সের অডিও মিক্স করা হয়নি বাকিদের মতো। তবে আমি খুব খুশি কারণ দর্শকরা আমার আসল কণ্ঠ শুনতে পেয়েছেন। আপনারা বুঝতে পেরেছেন মিক্স না করেও আমার গান কেমন শুনতে লাগে।’ এর পর সোনি টিভি, ইন্ডিয়ান আইডলকে ধন্যবাদও জানিয়ে দেন তাঁকে ইন্ডিয়ান আইডলে এই সুযোগ দেওয়ার জন্য।

অনিরুদ্ধর অভিযোগের পরই গত বছরের আরেক প্রতিযোগী আদ্য মিশ্র বিস্ফোরক অভিযোগ। ইন্ডিয়ান আইডলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেন আরও এক প্রতিযোগী। আদ্য মিশ্র শো নির্মাতাদের থাপ্পড় কষানোর কথা জানিয়ে লেখেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ! ওঁরা আমার পারফরমেন্স কেটে দিয়েছিল। আমি স্ট্যান্ডিং ওভেশন, গোল্ডেন বাজার পেয়েছিলাম। ওরা গোটা বিষয়টা কেটে দিয়েছিল। শো থামিয়ে বলেছিল, ভুল করে হয়ে গেছে। পরে সেটা বৈভবকে পাইয়ে দিয়েছিল প্রোডাকশনের অনুরোধে। ভাবো আমার এবং আমার পরিবারের কেমন লেগেছিল। কর্ম কাউকে ছাড়ে না। আমি চাই, শোয়ের নির্মাতারা একটা সজোরে থাপ্পড় খাক।’

আবারও অনিরুদ্ধ আরও একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন জানান, ‘অফ ক্যামেরা আমি বিশাল যন্ত্রণা এবং কষ্টের মধ্যে দিয়ে কাটাতে বাধ্য হয়েছি। ব্যাপারটা এতটাই পার্সোনাল যে আমি বাধ্য হলাম আমার কষ্ট এভাবে জানাতে। আমি তাও এই ভিডিয়োতে সবটা জানাতে পারিনি যে, আমি কী কী ফেস করেছি। প্রচুর মানসিক চাপ সহ্য করেছি। তাই যাঁরা এই ধরনের শোতে অংশ নিতে চান সেই চাপ নেওয়ার মানসিকতা নিয়ে আসবেন।’ একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সর্বসমক্ষে জানান অফ ক্যামেরা অনেককে ফেভার করা হয়েছে, বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে দারুণ যন্ত্রণা, নিজের যন্ত্রনার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন অনিরুদ্ধ।
অধিকাংশই বিভিন্ন ভাবে ইন্ডিয়ান আইডলের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিন। এই বিষয়ে জানিয়ে রাখা ভালো, সূত্রের খবর, যতই এবারের অধিকাংশ দর্শকরা ভোটিং বা বিজয়ী নিয়ে খুশি হন না কেন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করেছেন স্নেহা বেশি যোগ্য ছিলেন। কারও মতে এবারের সিজন বেঙ্গল আইডল ছিল। প্রসঙ্গত এবারের বিজয়ী হয়েছেন কলকাতার মানসী ঘোষ। এবং দ্বিতীয় শুভজিৎ চক্রবর্তী। এই দুই বিষয় নিয়েও অনেক অনেক অভিযোগের পাহাড়।
ভারতের সংগীতবিষয়ক জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ইন্ডিয়ান আইডলের ১৫তম আসরে সেরা পশ্চিমবঙ্গের মানসী ঘোষ। বাঙালির হাতে ইন্ডিয়ান আইডলের শিরোপা। প্রথম রানার আপ পশ্চিমবঙ্গের আরেক প্রতিযোগী শুভজিৎ চক্রবর্তী এবং তৃতীয় স্নেহা শঙ্কর। রবি রাতে প্রচারিত ইন্ডিয়ান আইডলের এবারের সিজনের গ্র্যান্ড ফিনালে। বিজয়ী মানসী ঘোষ ট্রফির পাশাপাশি পেয়ে যান ২৫ লাখ টাকা এবং একটি ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি। এ ছাড়া বেশ কিছু প্লেব্যাকের অফারও মানসীর ঝুলিতে। সিজনের অন্যতম বিচারক বাদশা ফাইনালের দিনই ঘোষনা করেন মাননীর সঙ্গে গান গাইবেন। ইন্ডিয়ান আইডল চলাকালীন ইতিমধ্যে শানের সঙ্গে একটি গান রেকর্ড করে ফেলেছেন কলকাতার মেয়ে মানসী। বিজয়ী হওয়ার পর মানসীর প্রতিক্রিয়া, ‘আমার পরিবারের সবাই ফাইনালের জন্য এসেছিল। সবাই কাঁদছিল, আনন্দ করছিল। কিন্তু জয়ের পরে আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া কী হওয়া উচিত, সেটা বুঝতে পারছিলাম না। আমরা সবাই খুব খুশি। জীবন একেবারে বদলে গিয়েছে।’
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার নিমতা পাইকপাড়ার বাসিন্দা মানসী ঘোষ। মাত্র চার বছর বয়সে মা-বাবার ইচ্ছায় গান শেখা শুরু। ১৩ বছর বয়সে প্রথম স্টেজ শো করেন মানসী। স্টেজ শো করে রোজগার শুরু হয় ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে মানসী প্রচুর স্টেজ শো করেছেন, সমানতালে পড়াশোনাও চালিয়েছেন। ইন্ডিয়ান আইডলের আগে ২০২১ সালে সংগীতবিষয়ক রিয়েলিটি শো সুপার সিঙ্গারে অংশগ্রহণ কর মানসী সেই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হন। মানসী সেখানেই থেমে যায়নি, নিজেকে আরও তৈরি করে গত বছর ইন্ডিয়ান আইডলের জন্য অডিশন দেন। প্রতিযোগিতার প্রথম পর্বেই বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষন মানসী, নিয়মিত ভালো পারফরম্যান্স উপহার দেন। টানা সাত-আট মাস দর্শক ও বিচারকদের মন জয় করে গতকাল কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে গেলেন মানসী।

ইন্ডিয়ান আইডল ১৩-র বিজয়ী হয়েছিলেন অযোধ্যার ভূমিপুত্র ঋষি সিং। দ্বিতীয়স্থানে ছিলেন কলকাতার মেয়ে দেবস্মিতা। সেই সময় ফের বাঙালি বিদ্বেষী, ইন্ডিয়ান আইডল নিয়ে গট আপের অভিযোগ সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে প্রভাব ফেলেছিল। ইনস্টায় ঋষিকে ফলো করেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ইন্ডিয়ান আইডলের সেরা তিনে ঋষি-দেবস্মিতা ছাড়া ছিলেন নিয়েল চিরাগ কোতওয়াল। এই শো এর গায়ে লেগেছিল বাঙালি বিদ্বেষের রঙ। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে প্রশ্ন উঠেছে বাঙালি বলেই কি জিততে পারলেন না দেবস্মিতা-বিদিপ্তারা? বার বার উঠছে প্রশ্ন। আসলে ইন্ডিয়ান আইডল সিজন ১২তেও তাই হয়েছিল। বনগাঁর মেয়ে অরুণিতা হয়েছিলেন দ্বিতীয়। ট্রফি জিতে নিয়েছিলেন পবনদীপ রাজন।
সেই সময়ও বাংলার মানুষ এভাবেই প্রতিবাদ করেছিলো। দর্শকদের অভিযোগ ছিল, প্রথম থেকেই পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে ঋষিকে নিয়ে। এমন করে গোটা প্রতিযোগিতায় তাঁকে দর্শকের সামনে প্রেজেন্ট করা হয়েছে যে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুধু আলোচনা হয় অযোধ্যার ছেলে ঋষিকে নিয়েই। এমনকী, শো-তে অতিথি হিসেবে আগত তারকাদের মুখেও ছিল ঋষিরই প্রশংসা, বলে অভিযোগ। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই লিখেছেন, ‘ইন্ডিয়ান আইডল রিয়েলিটি শো মানেই গট আপ। আগেও হত। এখন যে স্ক্রিপ্টেড সেটা বোঝা যায়’। সি বছর ইন্ডিয়ান আইডলের বিচারকের আসনে ছিলেন হিমেশ রেশমিয়া, বিশাল দাদলানি এবং নেহা কক্কর, শো সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন আদিত্য নারায়ণ।