অভিযুক্তই তদন্তকারী! শিক্ষককে লাথি মারা পুলিশের হাতেই তদন্তভার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই পুলিশ আধিকারিককে লাথি মারতে পাঠিয়েছিলেন? প্রশ্ন করলেন শতরূপ ঘোষ। সরকার মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সে বলতে চাইছে, আমি যা খুশি তাই করব, দেখি তোমরা কী করতে পারো। বললেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। অভিযুক্তই তদন্তকারী আধিকারিক, সুবিচার পাওয়া সম্ভব কিভাবে। পুলিশের পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রশ্ন।

প্রথমে কসবায় চাকরিহারা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দায়ের মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় ওই শিক্ষকদের লাথি মারায় অভিযুক্ত সাব ইন্সপেক্টর রিটন দাসকেই। ঘটনায় চাকরিহারাদের বিরুদ্ধে মোট ৮টি ধারায় মামলা রুজু । তার মধ্যে ৩টি ধারা জামিন অযোগ্য। পুলিশকর্তাদের সিদ্ধান্তের সমালোচনায় মুখর আক্রান্ত শিক্ষক থেকে রাজনৈতিক দলের নেতারা। কসবা ডিআই অফিসে চাকরিহারাদের আন্দোলনে লাঠি চালায় পুলিশ। রিটন দাস নামে কসবা থানার এক এসআইকে এক চাকরিহারাকে লাথি মারতে দেখা যায়। ঘটনায় নিন্দার ঝড় ওঠে সমাজে। মামলার তদন্তভার বর্তায় লাথি মারায় অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিক রিটন দাসের ওপরই। বিপুল সমালোচনার জেরে কসবায় চাকরিহারা প্রার্থীকে লাথি মারার ঘটনায় অভিযুক্ত এসআই-কে তদন্তের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব পেয়েছেন অন্য এক এসআই। লালবাজার সূত্রে খবর, কসবার ঘটনার তদন্ত করবেন সঞ্জয় সিংহ। কসবা থানায় এসআই পদে আছেন সঞ্জয়। চাকরিহারাদের বিক্ষোভের ভাইরাল ভিডিয়োয় এক আন্দোলনকারীর পেটে লাথি মারতে দেখা গিয়েছিল রিটন দাসকে। পরে ওই দিনের ঘটনার তদন্তকারী অফিসার আইও হিসাবে নিযুক্ত হন রিটনই। বিতর্কের তুমুল সূত্রপাত। প্রথমে রিটনকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও পরে কসবাকাণ্ডের তদন্তকারী অফিসার বদলে দিতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ।

লালবাজার সূত্রে দাবি, কসবার ডিআই অফিসের সামনে চাকরিহারাদের বিক্ষোভ চলাকালীন দায়িত্বে ছিলেন এসআই রিটন। কর্তব্যরত অবস্থায় থাকায় এই সংক্রান্ত তদন্তের আইও হিসাবে নিয়োগ করার পরেও বিপুল সমালোচনার জেরে ‘শিক্ষককে লাথি মারার’ দায়ে অভিযুক্তকে বদলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এসআই সঞ্জয়কে। সব ক্ষেত্রে কর্তব্যরত অফিসারকেই আইও হিসাবে নিয়োগ করে না লালবাজার। ধর্ষণের ঘটনা বা পকসোর মতো স্পর্শকাতর মামলার ক্ষেত্রে উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা আইও হিসাবে উপযুক্ত অফিসারকে সুপারিশ করে থাকেন। কসবার ঘটনায় তা করা হয়নি। পুলিশের ভূমিকা নানা মহলে সমালোচনার ঝড়। এসআই-কে আন্দোলনকারীর পেটে লাথি মারতে দেখা গিয়েছেয। রিটনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন সকল স্তরের মানুষ। চাকরির দাবিতে আন্দোলনকারীদের উপর কেন এই ধরনের পুলিশি প্রতিরোধ, প্রশ্ন ওঠে। কসবার ডিআই অফিসের সামনে বিক্ষোভরতদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। অভিযোগ, তালা ভেঙে তাঁরা ডিআই অফিসে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। চাকরিহারাদের অভিযোগ, তাঁদের বেধড়ক মারধর করেছে পুলিশ। এক জনকে লাথিও মারা হয়েছে। কসবার ঘটনার পর ডিআই নিজে একটি অভিযোগ দায়ের করারর ভিত্তিতে এফআইআর হওয়ায় তদন্তের দায়িত্বে প্রথমে রাখা হয়েছিল রিটনকে। খবর প্রকাশ্যে আসার পর সমালোচনার ঝড়। প্রথমে রিটন দায়িত্ব পেলেও পরে তাঁকে সরানো হয়।

একটা লাথি! খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন কসবা থানার সাব ইন্সপেক্টর এসআই রিটন দাস। শিক্ষকের পেটে লাথি মারা এস আই রিটন দাসের মাথাটা নাকি একটু বেশিই গরম! আরও অনেক কীর্তি রয়েছে বলে ডানা যাচ্ছে। পুলিশ মহল সূত্র বলছে, মধ্য চল্লিশের রিটন দাস আদতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার বাসিন্দা। আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজের প্রাক্তনী। স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। একটু বেশি মাথা গরমএর জন্যই এর আগেও একাধিকবার নানা ঝামেলায় জড়াতে হয়েছে। ৯ এপ্রিল, ২০২৫ বুধবার কসবার ডিআই অফিসে বিক্ষোভরত এক শিক্ষকের পেটে লাথি কষিয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে সমালোচিত। এমন আচরণের জন্য পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসনও চরম অস্বস্তিতে।

কে এই রিটন দাস? পুলিশ মহল থেকে আসা তথ্য অনুসারে রিটনের সহকর্মীরাই বলছেন, মাথা নাকি একটু বেশিই গরম! চাকরিহারা আন্দোলনরত শিক্ষকের পেটে লাথি মারবেন? একজন উর্দিধারীর আচরণ? পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মার মন্তব্য, ‘অন রেকর্ড বলছি। এটা ঠিক হয়নি। বিষয়টা তদন্ত করে দেখা হবে।’ মনোজ ভার্মা এই ঘটনায় আলাদা করে তদন্তের নির্দেশ দেন। এসআই রিটন দাসের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত শোনা যায়নি। একবার তদন্তের কাজে শিলিগুড়ির একটি ব্যাঙ্কে গিয়ে কাজ শুরু করার আগে কিছুক্ষণ বসে থাকতে হয়েছিল। অভিযোগ, অপেক্ষা একটু দীর্ঘ হতেই নাকি চটে লাল হয়ে যান রিটন। ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সঙ্গে রীতিমতো গন্ডগোল। রিটনের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্কের কর্মীদের ভয় দেখানো ও গ্রেফতারির হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। রিটনের এমন আচরণের জন্যই তাঁকে দীর্ঘদিন থানায় ডিউটি অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছিল না বলে জানা গিয়েছে। বদলে তাঁকে নাকাচেকিং-সহ রাস্তার বিভিন্ন ডিউটি দেওয়া হত। সেখানেও গাড়ির চালকদের সঙ্গে ঝামেলা নাকি লেগেই থাকত। সম্প্রতি ফের থানার ডিউটিতে ফেরানো হয়।

চাকরিহারা শিক্ষকদের উপর ‘লাথি ও পুলিশের লাঠি’। প্রতিবাদে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। কালো ব্যাজ পরে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন। দাবি, একে তো চাকরি গিয়েছে শিক্ষকদের। প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে তাঁদের উপর লাঠিপেটা করল পুলিশ। লাথি মারল পুলিশ। তীব্র প্রতিবাদে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অধ্যাপিকারা। দাবি, সরকারি ব্যবস্থায় এই ধরনের ভয়াবহ দুর্নীতি হলে তার ফলাফল গোটা সমাজের উপর পড়ছে। বহু পরিবার সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে বহু পরিবার। তারপরেও ঘুম ভাঙছে না সরকারের। শিক্ষকদের একটাই কথা পাপ করলে তুমি আর সাজা পেলাম আমি। এটা কীভাবে হতে পারে।
