১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার। সুখ-দুঃখ, শুভ-অশুভ প্রভৃতি নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে ১৪৩১ পরিসমাপ্তি। ১৪৩২ শুরু। পয়লা বৈশাখ। বাঙালি হিন্দুদের কাছে একটি বিশেষ দিন। এই দিন থেকে শুরু হয় বাংলা নববর্ষ, ২০২৫ সালে পয়লা বৈশাখ? বাঙালির নতুন বছর শুরু। পয়লা বৈশাখ থেকেই। দিনটি শুভ কাজের জন্য খুবই বিশেষ। পশ্চিমবঙ্গ সহ বিশ্বের নানান প্রান্তের বাঙালিরা নববর্ষ উদযাপনে চিরাচরিত নানান রীতি পালন করেন। উৎসবটি অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে উদযাপন করে। মানুষ একে অপরকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের খাবার তৈরি করে। এই বছর পয়লা বৈশাখ অর্থাৎ বাংলা নববর্ষ ২০২৫. ১৫ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে। সাধারনত পয়লা বৈশাখ ১৪ বা ১৫ই এপ্রিল পালিত হয়। শুভ নববর্ষ বলে নববর্ষের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন। ১৪৩২ সালের এই দিনে বাংলা ক্যালেন্ডার শুরু। এই দিনে বিহু উৎসবও পালিত হয় অসমে।
পয়লা বৈশাখের ঘরবাড়ি ভালোভাবে পরিষ্কার রাখা। স্নানের পর নতুন পোশাক পরিধান। দেবী লক্ষ্মী এবং ভগবান গণেশের পুজো। দোকানদার থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের নতুন হিসাবের খাতা শুরু। পয়লা বৈশাখের দিনে বাংলার অনেক জায়গায় গো পুজোও পালিত হয়। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে, মানুষ গরুকে স্নান করায়, তিলক দেয়, খাবার প্রদান করে, অনেক জায়গায় ঐতিহ্যবাহী মেলার আয়োজন করা হয়। পয়লা বৈশাখের পরের দিন মানুষ ভালো বৃষ্টির জন্য মেঘের পুজো করে। বিশ্বাস ভালো ফসল হয়। পয়লা বৈশাখের ইতিহাস নিয়ে অনেক বিশ্বাস রয়েছে। কথিত আছে যে, মুঘল শাসনামলে ইসলামী হিজরি ক্যালেন্ডার অনুসারে কর আদায় করা হত। চন্দ্র ক্যালেন্ডার হিজরি ক্যালেন্ডারের সঙ্গে না মিল হওয়ায় বাঙালিরা এই উৎসব শুরু করে এবং বাংলা পঞ্জিকা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত। হিন্দু ধর্মে কিছু দিন শুভ কাজের জন্য শুভ। বাঙালিরা পয়লা বৈশাখের দিনে গৃহপ্রবেশ, মুণ্ডন, বিবাহ ইত্যাদি শুভ কাজ করাকে শুভ বলে মনে করে। নতুন কাজ শুরু করার বা নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্যও বিশেষ দিন হিসাবে বিবেচিত।
দিনটির আধ্যাত্মিক গুরুত্ব তেমন না থাকলেও, শুরুর দিন হিসাবে নতুন বছরের প্রথম দিনের গুরুত্ব আছে। শুভ কাজ শুরুর আগে দেবতা এবং গুরুজনদের আশীর্বাদে সমৃদ্ধ হওয়া রীতি বা সংস্কার। পয়লা বৈশাখে পুরনো বছরের সমস্ত খারাপকে পিছনে ফেলে রেখে নতুন বছরকে ভাল করে তোলার যাত্রা শুরু। নতুন বছরের পথ শুভ হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় দেবতা এবং গুরুজনদের আশীর্বাদে সমৃদ্ধ হতে আমরা বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা-আরাধনা এবং গুরুজনদের আশীর্বাদ কামনা করি। শাস্ত্রমতে যে কোনও কাজ শুরুর আগে গণেশ আরাধনা করলে কর্মে সিদ্ধি লাভ বা সফলতা প্রাপ্তি হয়। সঙ্গে মা লক্ষ্মীর আরাধনায় হয় লক্ষ্মীলাভ।
পয়লা বৈশাখ ব্যবসায়ীদের পুরনো বছরের বাণিজ্যিক লেনদেন সেরে নতুন করে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরুর দিন। সারা বছর ব্যবসায় সমৃদ্ধি, শ্রীবৃদ্ধি এবং লক্ষ্মী লাভের উদ্দেশ্যে বছরের প্রথম দিন সিদ্ধিদাতা গণেশ এবং মা লক্ষ্মীর পূজা করা হয় এবং নতুন খাতায় স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে নতুন করে ব্যবসা শুরু করা হয়। নতুন বছর শুভ হোক, জীবনে আসুক সুখ, সমৃদ্ধি এবং সফলতা। এই শুভ কামনা। পয়লা বৈশাখে আরাধ্য দেব-দেবীর এবং লক্ষ্মী-গণেশের পূজা এবং গুরুজনদের কাছে আশীর্বাদ নেওয়ার শুভ সময়। বিনিয়োগের ব্যাপারে কিছু বলতে গেলে বেশ কিছু বিষয় সম্বন্ধে না বললেই নয়। বিনিয়োগের ক্ষেত্র বৃহৎ এবং ব্যক্তিবিশেষে বিনিয়োগের ক্ষেত্রও আলাদা হয়। যেমন, কারও ক্ষেত্রে স্বর্ণে বিনিয়োগ শুভ, আবার কারও ক্ষেত্রে জমি। কারও শুভ ক্ষেত্র হল শেয়ার বাজার, কাউকে আবার ব্যাঙ্কে বিনিয়োগ করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। জন্মছকে গ্রহের অবস্থান অনুযায়ী বিনিয়োগের শুভ ক্ষেত্র নির্বাচন করা উচিত। পরিচিত কোনও ব্যক্তি শেয়ার বাজারে বা অন্য কোথাও বিনিয়োগ করে অল্প সময়ে অনেক লাভ করেছেন দেখে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে দিলেই ভুল। জন্মছকে লাভ না জেনেই বিনিয়োগ করে ফেললে কিন্তু লাভের বদলে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আশা সফল হবে না। কষ্টে অর্জিত টাকা এবং ভবিষ্যতের সুরক্ষা, উভয়ই নষ্ট হবে। বিনিয়োগের আগে কোথায় বিনিয়োগ করা আপনার জন্য শুভ তা জানা দরকার। সামগ্রিক ভাবে নির্দিষ্ট ব্যক্তির ছকে চন্দ্র, বুধ এবং রাহু এই তিন গ্রহ এবং পঞ্চম স্থান বিচার করে নেওয়া জরুরি। এই তিন গ্রহ এবং পঞ্চম স্থান কতটা বলবান তার উপর নির্ভর করছে কোন খাতে বিনিয়োগ করে আপনি লাভবান হবেন, কোথায় বিনিয়োগ করলে লাভের বদলে ক্ষতি হবে। নতুন বছরের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় ভাগ বিনিয়োগের জন্য শুভ। ২৩ জুন থেকে আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যেতে পারে। পুনরায়, অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যেতে পারে। জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় ভাগ এবং ফেব্রুয়ারি মাস বিনিয়োগের জন্য শুভ। এটি একটি সাধারণ সময়ের উল্লেখ করা হল। এ ক্ষেত্রেও ব্যক্তিগত জন্মছকের উপর আপনার লাভের পরিমাণ অনেকটা নির্ভর করে। জন্মছকের নির্দিষ্ট স্থান, নির্দিষ্ট স্থানের অধিপতি এবং নির্দিষ্ট গ্রহের শুভ-অশুভ অবস্থানের উপর নির্ভর করে বিনিয়োগের শুভ সময় নির্ধারণ করা উচিত।
পয়লা বৈশাখ ১৫ এপ্রিল, মঙ্গলবার। দ্বিতীয়া তিথি বেলা ১০টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত, তার পর শুরু হবে তৃতীয়া তিথি। অমৃতযোগ সকাল ৭টা ৫০ মিনিট থেকে ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত, পুনরায় ১২টা ৫৩ মিনিট থেকে বেলা ২টো ৩২ মিনিট, পুনরায় ৩টে ২৪ মিনিট থেকে ৫টা ৪ মিনিট পর্যন্ত। বারবেলা সকাল ৬টা ৫৫ মিনিট থেকে ৮টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত, পুনরায় ১টা ১২ মিনিট থেকে ২টো ৪৫ মিনিট পর্যন্ত।
বাঙালির প্রাণের পার্বণ দুয়ারে কড়া নাড়ছে। নববর্ষ ঘিরে বাঙালিদের মধ্যে আলাদা উন্মাদনা। বর্ষবরণ মানেই কবজি ডুবিয়ে ভূরিভোজ। দেদার আড্ডা আর নাচগানের আসর। শহরে শিল্পীদের অনুষ্ঠান? সেদিকে নজর সংস্কৃতিপ্রেমী বাঙালিদের। দমদম প্রত্যয় ওয়েলফেয়ার সোসাইটির প্রয়াসে আয়োজিত ‘দমদম মার্গ সঙ্গীত উৎসব’। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হবে বাংলা নববর্ষকে। শিক্ষামন্ত্রী তথা নাট্যকার ব্রাত্য বসুর উদ্যোগে দমদমের রবীন্দ্র ভবন, সুরের মাঠে ১২ এপ্রিল এবং ১৩ এপ্রিল হতে চলেছে এই অনুষ্ঠান। বিকেল ৪টে থেকে অনুষ্ঠিত হবে কলকাতার অন্যতম পরিচিত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অনুষ্ঠান ‘দমদম মার্গ সঙ্গীত উৎসব’-এর পঞ্চম সংস্করণ। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এই উদযাপনে এর আগে এই মঞ্চ অলঙ্কৃত করেছেন দিকপাল শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পীরা। এই বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না। প্রথম দিন সঙ্গীত পরিবেশন করবেন উল্লাস কসলকর, পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের সেতার, রাকেশ চৌরাসিয়ার বাঁশি, রূপ কুমার রাঠোর, সোনালী রাঠোর এর গান। ১৩ এপ্রিল, দ্বিতীয় দিনে পারফর্ম করবেন সুজাতা মহাপাত্রের ওড়িশি নৃত্য, সংযুক্তা দাসের কন্ঠ সঙ্গীত, বিদুষী মিতা নাগের সেতার, পন্ডিত দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য চতুরঙ্গী, পন্ডিত তন্ময় বোসের তবলা, বিদুষী অশ্বিনী ভিডে দেশপান্ডের কন্ঠ সঙ্গীত, শিবমণির ড্রামস- একক।