করোনার চোখরাঙানি। দেশে আবার বেড়েছে করোনা। সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ছাড়িয়েছে। কেরল, মহারাষ্ট্র এবং দিল্লি। তিন রাজ্যেই বাড়ছে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই মুহূর্তে দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ২,৭১০। ২৬ মে সংখ্যাটা ছিল ১,০১০ জন। পাঁচ দিনে প্রায় ১৭০০ মানুষ নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত। সরকারি হিসাবে বলছে, কেরলে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১,১১৪ জন। মহারাষ্ট্রে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৪২৪। দিল্লিতে সক্রিয় করোনা রোগী ২৯৪ এবং গুজরাটে ২২৩ জন। কেন্দ্রের হিসাব বলছে,বাংলায় সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ১১৬ জন।
বিশেষজ্ঞদের একটা অংশের ধারণা, করোনা নতুন করে ছড়ালেও আগের মতো মারণ ক্ষমতা হারিয়েছে এই ভাইরাস। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, নতুন এই স্ট্রেনেও রোগীমৃত্যুর সংখ্যা বেশ উদ্বেগজনক। গত একমাসে ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছে এই ৭ জনের মধ্যে ছ’জনেরই গুরুতর কো মর্বিডিটি ছিল। বিশেষ উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। দেশে নতুন করে করোনা বাড়ছে। চিকিৎসা মহলের একাংশের আশঙ্কা, পুরনো কোভিড বিধি ফিরতে পারে! জনবহুল এলাকায় মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি বয়স্ক ও ক্রনিক রোগীদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। প্রশাসনের তরফে বারবার জানানো হয়েছে, নতুন করে করোনার ঢেউ এলে তা মোকাবিলায় সবরকমভাবে প্রস্তুত সরকার। অযথা আতঙ্কিত না হয়ে সাবধানে থাকার পরামর্শ। বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এই মুহূর্তে দেশে অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ২৭১০। কেরলের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। তারপরেই মহারাষ্ট্র ও দিল্লি।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে গত চার দিনে অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। গত ২৬ মে সংখ্যাটা যেখানে ছিল ১০১০। সেখানে ৩০ মে সংখ্যাটা এসে ঠেকেছে ২৭১০ এ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, কেরলে আক্রান্তের সংখ্যা ১১৪৭। মহারাষ্ট্রে ৪২৪। দিল্লিতে ২৯৪ আর গুজরাটে ২২৩। তামিলনাড়ুতে সংখ্যাটা ১৪৮। কর্নাটকে সংখ্যাটা ১৪৮। পশ্চিমবঙ্গেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সেখানে আক্রান্ত ১১৬। রাজস্থানে আক্রান্ত ৫১। উত্তরপ্রদেশে ৪২। পুদুচেরিতে ২৫। হরিয়ানায় ২০। অন্ধ্রপ্রদেশে ১৬। মধ্যপ্রদেশে ১০। গোয়ায় ৭। এছাড়া ওড়িশা, পাঞ্জাব ও জম্মু–কাশ্মীরে চার জন করে করোনায় আক্রান্ত। তিন জন করে আক্রান্ত অরুণাচলপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও চণ্ডীগড়ে। মিজোরাম ও অসমে আক্রান্ত দু’জন করে। আন্দামান নিকোবর, সিকিম ও হিমাচলপ্রদেশ থেকে এখনও আক্রান্তের খোঁজ মেলেনি। পরিসংখ্যানে আরও বলা হয়েছে মে মাসে করোনায় মৃত্যু হয়েছে সাত জনের। তার মধ্যে মহারাষ্ট্রে ২ ও দিল্লিতে ১) মৃতদের মধ্যে করোনা ছাড়াও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা ছিল। মৃতদের মধ্যে ৬ জনই বয়স্ক। পাঞ্জাবে এক জন শিশু মারা গেছে কোভিডে।
নিজেকে এবং পরিবারকে কোভিডের বিপদ থেকে দূরে রাখতে। গ্রীষ্মের ছুটিতে, মানুষ ট্রেন, বাস এবং বিমানে ভ্রমণ। নিজেকে এবং আপনার পরিবারকে কোভিডের বিপদ থেকে দূরে রাখতে আপনার প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। দেশের রাজধানী দিল্লি, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, হায়দ্রাবাদ এবং অন্ধ্র প্রদেশের মতো প্রধান রাজ্যগুলিতে কোভিড-১৯-এর আক্রান্তের হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক আবারও মানুষকে আতঙ্কিত করতে শুরু করেছে। গ্রীষ্মের ছুটিতে কয়েক মাস আগে থেকে ভ্রমণের পরিকল্পনা করা মানুষরা স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত হতে বাধ্য। পরিবারের সাথে কোথাও ভ্রমণ করতে নিজেকে এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে ভ্রমণ সম্পর্কিত এই নিরাপত্তা নিয়মগুলির বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
ভ্রমণের সময় কোভিড এড়াতে এই গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতাগুলি অবলম্বন। মাস্ক ব্যবহার। ভ্রমণের সময় সর্বদা একটি ভালো মানের মাস্ক পরতে হবে। বিশেষ করে বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাস বা জনাকীর্ণ স্থানে। নাক এবং মুখ সঠিকভাবে ঢেকে মাস্ক ব্যবহার। বারবার মাস্ক স্পর্শ করা এড়িয়ে চলা। কোভিডের ঝুঁকি এড়াতে, কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও জল দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে হবে। যদি সাবান না পাওয়া যায়, কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার। ভ্রমণের সময় লাগেজ, রেলিং বা অন্য কোনও পৃষ্ঠ স্পর্শ করলে হাত পরিষ্কার করা প্রয়োজন। সামাজিক দূরত্ব বজায়। জনাকীর্ণ স্থানে কমপক্ষে ৬ ফুট দূরত্ব বজায়। চেক-ইন কাউন্টার, নিরাপত্তা চেক এবং বোর্ডিং এরিয়ায় লাইনে দূরত্ব বজায়। বাইরে খাওয়া এড়িয়ে চলা। প্যাকেটজাত খাবার বা স্ন্যাকস সাথে রাখা। সাথে একটি বোতল রাখা। বোতলটি সিল করা আছে কিনা তা নিশ্চিত করা। খাওয়ার আগে এবং পরে অবশ্যই হাত স্যানিটাইজ। যে দেশ বা অঞ্চলে ভ্রমণ তার জন্য কোভিড নির্দেশিকা অনুসরণ। কিছু কিছু স্থানে নেগেটিভ আরটিপিসিআর পরীক্ষা বা কোয়ারেন্টাইনের প্রয়োজন হতে পারে। হোটেল ঘরের বাইরের জিনিস স্পর্শ না। ঘর থেকে বের হওয়ার পর অথবা হোটেলের যেকোনো অংশ স্পর্শ করার পর হাত পরিষ্কার করা প্রয়োজন। লিফট বোতাম, দরজার হাতল ইত্যাদি স্পর্শ করার পর হাত মুখ, চোখ, কানের কাছে আনবেন না; বরং অবিলম্বে আপনার হাত পরিষ্কার প্রয়োজন। হোটেলের কর্মীরা ঘরটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে থাকেন, ঘরে প্রবেশের পর নিজেকে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ঘরের সমস্ত জিনিসপত্র যা মানুষের সংস্পর্শে আসে যেমন দরজার হাতল, সুইচ, আলমারির হাতল ইত্যাদি পরিষ্কার করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট শক্তিশালী নয়।