পাঞ্জাব কিংস: ১০১/১০ (স্টয়নিস ২৬, হ্যাজেলউড ২১/৩, সুয়াশ শর্মা ১৭/৩)
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু: ১০৬/২ (সল্ট অপরাজিত ৫৬, মায়াঙ্ক ১৯ )
আরসিবি ৮ উইকেটে জয়ী।
আঠেরোর বিরাট। আইপিএল ফাইনালে বিরাটরা। চতুর্থবার আইপিএলের ফাইনালে বিরাট কোহলিরা। আরসিবি আর ট্রফির মধ্যে আর মাত্র এক ম্যাচ দূরত্ব। ৯ বছর আগে অধিনায়ক কোহলি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে আইপিএলের ফাইনালে তুলেছিলেন। ট্রফি জিততে পারেননি। আইপিএল ২০২৫-এর ফাইনালে জায়গা করে নিল আরসিবি। দীর্ঘ ৯ বছর পরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়র লিগের খেতাবি লড়াইয়ের যোগ্যতা অর্জন করে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। এই নিয়ে মোট চারবার আইপিএলের ফাইনালে উঠল আরসিবি। আগের তিনবার রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বিরাট কোহলিদের। এ বারে আবার সেই সুযোগ। অধিনায়ক নন, ব্যাটার কোহলির সামনে ট্রফি জয়ের সুযোগ। আধিপত্য রেখে জিতে ফাইনালে কেহলির দল। বলে হ্যাজেলউডদের অসামান্য পারফরম্যান্সের পর সল্টের ঝোড়ো ব্যাটিং পাঞ্জাব মেল বেলাইন। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ঝটকা খায় প্রীতি জিন্টার দল। যশ দয়ালের বলে মাত্র ৭ রানে ফেরেন প্রিয়াংশ আর্য। এরপর একে একে ফেরেন প্রভসিমরন সিং ১৮ এবং শ্রেয়স আইয়ার ২ রানে ফেরান ভুবনেশ্বর কুমার এবং জশ হ্যাজেলউড। আরসিবি দলে হ্যাজেলউড ফেরায় তাদের বোলিং বিভাগকে বাড়তি আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে। প্রথম দু-ওভারেই তিনি উইকেট পান। উইকেটকিপার জশ ইংলিশও তাঁর বলে ফেরেন। বেঙ্গালুরুর গতি তারকাদের দাপটে পাঞ্জাব মাত্র ৫০ রানে ৫ উইকেট খুইয়ে ফেলে। ঘুরে দাঁড়িয়ে লড়াই করা মার্কাস স্টয়নিস ১৭ বলে ২৬ রানে সুয়াশ শর্মার গুগলিতে ঠকে যেতে হয়। আজমতুল্লাহ ওমরজাই অপরাজিত ১৮ পাঞ্জাবের রান ১০০ পার করে। বেঙ্গালুরুর হ্যাজেলউড এবং সুয়াশের শিকার ৩ উইকেট। মাত্র ১০১ রানের টার্গেট বিরাটদের সামনে ‘গ্লোরিয়াস গেম অফ আনসার্টেনটি’ র প্রশ্নই আসে না। বিরাট কোহলি প্রথম বলটা ব্যাটে খেলে বাউন্ডারিতে। কিং চিরাচরিত ‘অফস্টাম্পের অনিশ্চিত করিডরে’ ধরা দেওয়ার অসুখ অব্যাহত রেখে ফিরলেন ১২ রানে। ডাগআউটে মাথা গরম করতেও দেখা গেল। অকারণে মায়াঙ্ক দলের ৩০ রানের মাথায় আউট হয়েছিলেন আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে। রিভিউ নেওয়ার পর বেঁচে যান। সল্ট ফর্মে ব্যাট করলেন। বিরাটের ব্যর্থতার দিনে সমস্ত দায়িত্ব যেন একাই নিয়ে নিলেন ফিল সল্ট। ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে একাই পাঞ্জাবের বোলিংকে নিয়ে ছেলেখেলা শুরু করলেন। মায়াঙ্ক যখন ফিরলেন তখন জয় আর ১৮ রান দূরে। সল্ট অপরাজিত ২৭ বলে ৫৬ রানে। মারলেন ৬টা চার, ৩টি ছক্কা। ট্রফি থেকে এক ম্যাচ দূরে বিরাট কোহলি। ৯ বছর আগে অধিনায়ক কোহলি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে আইপিএলের ফাইনালে তুলেছিলেন। একটি ম্যাচ জিতলেই আঠারো নম্বর আইপিএল ট্রফিটি আঠারো নম্বর জার্সিধারি কোহলির ঘরে ঢুকবে। পাঞ্জাবের ইনিংস শেষ হয়েছিল ১৪.১ রানে। বেঙ্গালুরু ম্যাচ জিতে নেয় ১০ ওভারে।

পাঞ্জাব ১১ বছর পর আইপিএলের প্লে-অফে। এর আগে তারা ২০১৪ সালে ফাইনাল খেলেছিল। সে বার কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে হেরেছিল পঞ্জাব। কেকেআর-কে গত বার চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন অধিনায়ক শ্রেয়স। এ বার পাঞ্জাবের অধিনায়ক প্রথম কোয়ালিফায়ারে হারলেও সুযোগ পাবেন। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে জিতে ফাইনালে উঠে বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে বদলা নেওয়ার সুযোগ। এ বারের আইপিএল শুরুর আগে কোহলিকে নিয়ে একটি বিজ্ঞাপন দিচ্ছিল সম্প্রচারকারী সংস্থা। সেখানে দেখানো হচ্ছিল এ বারের ১৮তম আইপিএল জুড়ে রয়েছে কোহলির ১৮ নম্বর। শ্রেয়স আইয়ার একমাত্র অধিনায়ক হিসাবে দুইটি আলাদা দলকে আইপিএল ফাইনালে নিয়ে গেছেন। এবার তৃতীয় দলকে ফাইনালে নিয়ে যেতে পারবেন? শক্তিশালী দল ও নেতৃত্বের কারণে, সামান্য হলেও পাঞ্জাব কিংসকেই এগিয়ে রাখা যেতে পারে ফাইনালে যাওয়ার দৌড়ে। শ্রেয়স আইয়ার ইতিমধ্যেই দুইটি ভিন্ন দলকে আইপিএল ফাইনালে নিয়ে গেছেন এবং গত বছর কেকেআর-কে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। আরসিবি এর আগে ২০০৯, ২০১১ ও ২০১৬ সালে আইপিএলের ফাইনালে ওঠে। আরসিবির কাছে হারলেও পাঞ্জাব কিংস ছিটকে যাচ্ছে না টুর্নামেন্ট থেকে। এলিমিনেটরের বিজয়ী দলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মাঠে নামার সুযোগ পাবে। প্রথম কোয়ালিফায়ারের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জয়ী সুয়াশ শর্মা। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকে আইপিএলের প্রথম কোয়ালিফায়ার খেলতে নেমে পাঞ্জাব কিংস ১০১ রানে অল আউট রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে। লজ্জার রেকর্ড গড়লেন শ্রেয়স আয়ারেরা। দুটো লজ্জার নজিরও গড়ল পাঞ্জাব। বেঙ্গালুরুর বোলারদের ২০ ওভার খেলতে না পেরে পাঞ্জাব ১৪.১ ওভারে অল আউট হয়ে যায়। ১২০ বলের মধ্যে ৩৫ বল খেলতেই পারেনি। আইপিএলের প্লে-অফের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও দল এত কম ওভারে অল আউট। এর আগে ২০০৮ সালের প্লে-অফে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ১৬.১ ওভারে অল আউট হয়ে গিয়েছিল দিল্লি ক্যাপিটালস। সে বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রাজস্থান আইপিএলের প্রথম মরসুমে। এত দিন পরে সেই লজ্জার রেকর্ড ভাঙল। এই ম্যাচে আরও দুটো লজ্জার নজির পাঞ্জাবের। চতুর্থ সর্বনিম্ন স্কোর। ২০১৭ সালে ৭৩ রানে অল আউট হয়েছিল পাঞ্জাব। ২০১৫ ও ২০১৮ সালে ৮৮ রানে অল আউট হয়েছিল দল। এ বার ১০১ রানে শেষ হয়ে গেল ইনিংস। আইপিএলের প্লে-অফেও এটা চতুর্থ সর্বনিম্ন স্কোর। ২০১০ সালে বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ৮২ রানে অল আউট হয়েছিল ডেকান চার্জার্স। ২০০৮ সালে রাজস্থানের বিরুদ্ধে ৮৭ রানে অল আউট হয়েছিল দিল্লি। ২০২৩ সালে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ১০১ রানে শেষ হয়েছিল লখনউয়ের ইনিংসের পরেই রয়েছে শ্রেয়সদের এই ইনিংস।

আইপিএলের প্রথম কোয়ালিফায়ারে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর কাছে দাঁড়াতে পারেনি পাঞ্জাব কিংস। আট উইকেটে হার। ১০ ওভার বাকি থাকতে ম্যাচ জিতেছে বেঙ্গালুরু। লজ্জার এই হার ভুলতে চান না পাঞ্জাবের অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ার। এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই পরের ম্যাচে জয়ে ফিরতে চান। কোহলিদের বিরুদ্ধে ১০১ রানে অল আউট আইপিএলে লজ্জার রেকর্ড শ্রেয়সের পাঞ্জাবের। এখনও ফাইনালে ওঠার সুযোগ রয়েছে পঞ্জাবের। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার জিততেই হবে। হারের পরেও আত্মবিশ্বাসী শ্রেয়স। একটা ম্যাচ হারলেও ফেরার সুযোগ রয়েছে। আসল লক্ষ্য ফাইনাল জেতা। সেটা মাথায় রেখেই ফিরতে চান। ”পাঞ্জাব অধিনায়ক বলেন, “এই দিনটা ভুলব না। সত্যি বলতে, যে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা নিয়ে আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই। মাঠের বাইরে আমরা যা পরিকল্পনা করেছিলাম তা একদম ঠিক ছিল। কিন্তু মাঠে তা কাজে লাগাতে পারিনি। তাই হেরেছি। আমরা শুরুতেই পর পর উইকেট হারিয়েছি। সেখান থেকে আর ফিরতে পারিনি। তাই বোলারদের কোনও দোষ দিতে চাই না। এই ধরনের উইকেটে আমাদের ব্যাটিং আরও ভাল করতে হবে। আমরা পেশাদার। তাই কোনও অজুহাত দিতে চাই না। এই ম্যাচের ভুল শুধরে পরের ম্যাচে নামব। আজকের লড়াইটা হেরেছি। যুদ্ধ এখনও বাকি।”
গত বার কেকেআরের হয়ে সল্ট ১২ ম্যাচে চারটি অর্ধশতরানে ৪৩৫ রান করেন। এ বারের আইপিএলেও ছন্দে থাকা ইংরেজ ওপেনার বেঙ্গালুরুর হয়ে ১২ ম্যাচে চারটি অর্ধশতরানে ৩৮৭ রান করেন। আইপিএল ফাইনালে বিরাট কোহলির সঙ্গে ঝড় তোলার অপেক্ষায়। সুযশ শর্মা ২০২৩ সালের আইপিএলে ১১ ম্যাচে কেকেআরের হয়ে নিয়েছিলেন ১০ উইকেট। পরের আইপিএলে মাত্র দু’টি ম্যাচে খেলিয়েছিল কলকাতা। এ বারের আইপিএলে ১৩ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়েছেন। গোটা আইপিএলে তেমন নজর কাড়তে না পারলেও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তিন উইকেট তুলে লণ্ডভণ্ড করে দেন শ্রেয়স আয়ারদের মিডল অর্ডার। ম্যাচের সেরা সুযশ বলেন, “কোচ আমাকে একটাই কাজ দিয়েছিল। বলেছিল, লেগব্রেক, গুগলি, ফ্লিপার যাই করি বল স্টাম্পে রাখতে হবে। উইকেট থেকে কিছুটা সাহায্য পেয়েছি। আর একটা ম্যাচ বাকি, তার পর একসঙ্গে উৎসব করব। আজ রাতে উৎসব করব না। তবে ৩ জুন আইপিএলের ফাইনাল জিতে প্রচণ্ড উৎসবে মাততে চাই।”