Saturday, May 31, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

দুর্ঘটনাই ঘটেনি?‌ তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু‌ হয়নি, দাবি পরিবারের!‌ “১৯৬৭ সালে নেতাজি সন্ন্যাসীর বেশে চন্দননগরে কাটিয়েছেন অন্তত ১৫ দিন, চিকিৎসার জন্য”

তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় যে নেতাজির মৃত্যু হয়নি, যে দুর্ঘটনা ঘটেইনি, যে দুর্ঘটনার খবর রটানো হয়েছিল বলে প্রমাণও মিলেছিল, সেই ভুয়া দুর্ঘটনায় প্রয়াত তথাকথিত ‘চিতাভস্ম’ নেতাজির হয় কীভাবে– প্রশ্ন তুলে সরব নেতাজির প্রিয় মেজো দাদা শরৎচন্দ্র বসুর বড় ছেলের পরিবার। শরৎ বসুর বড় ছেলে অশোকনাথ বসুর দুই মেয়ে জয়ন্তী রক্ষিত, তপতী ঘোষ ও এক ছেলে আর্য বসু প্রত্যেকেই বিশ্বাস করেন একথা। অশোকনাথ বসু ছিলেন নেতাজির মহানিষ্ক্রমণের সময়ের অন‌্যতম সহযোদ্ধা। কেন্দ্রের সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রেনকোজি মন্দির থেকে নেতাজির তথাকথিত চিতাভস্ম দেশে আনার পরিকল্পনা অন্য কোনও মহল থেকে বলে দাবি। তারই প্রতিবাদে সাংবাদিক বৈঠকে পরিবারের এই অংশের দাবি, তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর দাবিতে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের সীলমোহর যদি তাঁর অন্তর্ধান রহস‌্য ধামাচাপা দেওয়ার প্রথম ষড়যন্ত্র হয়, তাহলে এবার ‘ভুয়া’ চিতাভস্ম আনার উদ্যোগ সেই পর্বের দ্বিতীয় ষড়যন্ত্র। বসু পরিবারের একাংশের দিকেই আঙুল তুলে শরৎচন্দ্র বসুর এই তিন নাতি-নাতনির জোরালো দাবি, নেতাজির মৃত্যু তাইহোকুর কোনও বিমান দুর্ঘটনায় হয়নি। তার একমাত্র এবং সব থেকে বড় প্রমাণ তাইওয়ান রিপোর্ট, যা ১৯৫৬ সালেই জানিয়ে দেয় তাইহোকুতে ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট কোনও বিমান দুর্ঘটনাই হয়নি।

নেতাজির মৃত্যুর সাক্ষী হিসাবে সে সময় ভারত সরকার যাদের নাম জানিয়েছিল, তাঁরা নেতাজির মৃত্যু এমনকী, বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে কোনও প্রমাণই শেষ পর্যন্ত দিতে পারেনি। পরিবারের সমর্থন নিয়ে সকলের সামনে সেই তাইওয়ান রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন দুই গবেষক সৌম‌্যব্রত দাশগুপ্ত ও সৈকত নিয়োগী। এই দুজনই যৌথ উদ্যোগে সামনে এনেছেন তাইওয়ান রিপোর্ট। সঙ্গে ছিলেন বিশিষ্ট লেখক বিপ্লব রায়। শরৎ বসুর তিন নাতি-নাতনি যেসব তথ‌্য জানিয়েছেন তার বেশিরভাগই ছোটবেলায় শোনা পারিবারিক আলোচনা, ব‌্যক্তিগত কিছু বই-লেখাপত্র, নেতাজির কিছু চিঠি এবং তাঁর কিছু সহযোদ্ধাদের এমন দাবির উপর দাঁড়িয়ে যারা বারবার নানা সময় প্রমাণ দিয়েছে যে, মিত্রশক্তির জয়ের পর নেতাজি বর্মা থেকে কখনও ভিয়েতনাম, কখনও চিন আবার আরও পরে রাশিয়ায় যাওয়ার কথা বারবার নানা গবেষণায় সীলমোহরও পেয়েছে। স্বীকৃতি দেয়নি শুধু কংগ্রেস সরকার। ৮৮-র জয়ন্তী রক্ষিত দিলেন আরও একটি তথ‌্য, “আমার ঠাকুরদা মানে শরৎচন্দ্র বসু নেশন পত্রিকার বার করতেন। আমার তখন ১০-১১ বছর বয়স। একটা কাগজ নিয়ে একদিন বাড়িতে হইচই। তাতে দেখলাম লেখা, ‘নেতাজি ইন রেড চায়না’। সেটা ১৯৪৯ সাল। পরে জেনেছিলাম উনি রাশিয়াতেও গিয়েছিলেন। সেই সূত্রে স্টালিনের কথা বাড়িতে খুব আলোচনা হত।” তাঁদের কথাতেই উঠে আসে মথুরালিঙ্গম থেভর নামে এক রাজনীতিবিদের কথা, তখন ১৯৫৫-৫৬ সাল। জয়ন্তীদেবী জানান, “এই থেভরের সঙ্গে নেতাজির যোগাযোগ ছিল জানতে পেরেই তৎকালীন সরকার আচমকা ঘোষণা করল শাহনাওয়াজ কমিটির।”

স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অন্তর্ধান রহস্য আজও অপ্রকাশিত। তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু নিয়ে বির্তক চলছেই। পরিবারের একটা অংশ স্বীকার করে নিলেও অনেকেই তা মানতে নারাজ। এবার সেই বিতর্কিত অধ্যায়কে প্রমাণ করে দিতে প্রকাশ করা হল ১৯৫৬ সালের তাইওয়ান সরকারের রিপোর্ট! লন্ডন থেকে সংগ্রহ করা দুই গবেষকের সেই রিপোর্ট প্রকাশ করলেন নেতাজির মেজদাদা শরৎচন্দ্র বসুর বড় ছেলে অশোকনাথ বসুর উত্তরসূরিরা। বৃহস্পতিবার সেই রিপোর্ট প্রকাশ করে জানানো হয়, বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি! গবেষক ও লেখক সৈকত নিয়োগী ও সৌমব্রত দাশগুপ্তের উদ্যোগে তাইওয়ান সরকারের রিপোর্ট কলকাতায় আনা হয়েছে। কলকাতা প্রেস ক্লাবে নেতাজির দুই নাতনি তথা অশোকনাথবাবুর মেয়ে জয়ন্তী রক্ষিত, তপতী ঘোষ এবং নেতাজির নাতি তথা অশোকনাথবাবুর ছেলে আর্য বসুর ওই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। রিপোর্টের কপি বিলিও করা হয় এদিন। সেখানে দুই তরুণ গবেষক ছাড়াও বিচারক বিপ্লব রায় উপস্থিত ছিলেন। গবেষক সৌম্যব্রত দাশগুপ্ত বলেন, ‘বর্তমান পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রখ্যাত সাংবাদিক বরুণ সেনগুপ্তের লেখা পড়েই তাইওয়ান রিপোর্টের কথা প্রথম জেনেছিলাম। কিন্তু, রিপোর্টটি তখন আমরা হাতে পাইনি। পরে ওই রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা দেখলাম, বরুণবাবুসহ যাঁরা বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুকে মানতেন না, তাঁরাই সঠিক।’ গবেষক সৈকত নিয়োগী বলেন, ‘নিয়ম মেনে লন্ডনের ন্যাশনাল আর্কাইভে গিয়ে আমি তাইওয়ান সরকারের রিপোর্টটি সংগ্রহ করি। ১৯৫৬ সালের রিপোর্ট। অথচ, সেই সময় ভারত সরকার, সেই রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। এতে পরিষ্কার বলা আছে, যে হাসপাতালে নেতাজির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল, তাইওয়ান সরকার নিজেরা দাবি করছে, মৃত্যুর সঠিক তথ্যই তাতে নেই! এছাড়াও বহু প্রামাণ্য বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে তাতে। তা থেকে আমরা একেবারে নিশ্চিত যে, বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি। অর্থাৎ, যাঁর মৃত্যুই হল না, তাঁর চিতাভস্ম কী করে রাখা আছে!’ গবেষক সৌমব্রত দাশগুপ্ত বলেন, ‘তাইওয়ান সরকারের এমন রিপোর্ট ভারত সরকার ষাটের দশকে পাওয়ার পরেও তা ধামাচাপা দিয়ে দিল। যা প্রমাণ করে, নেতাজির চিতাভস্ম ও বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে কত বড় চক্রান্ত তৈরি করা হয়েছিল।’ পাশাপাশি, বৈঠক থেকে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার ধন্যবাদ জানায় দুই গবেষক। তাদের কথায়, ‘রাজ্য সরকারের হাত ধরেই নেতাজির ৪৬টি গোপন তথ্য ডিক্লাসিফাই করা হয়েছিল। কেন্দ্র সম্প্রতি ৩০০টি রিপোর্ট ডিক্লাসিফাই করেছে।’

নেতাজির নাতনি জয়ন্তী রক্ষিত বলেন, ‘বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর খবর, আমরা কোনওদিনই বিশ্বাস করিনি। তাইওয়ানের এই রিপোর্ট সেই বিশ্বাসেই সিলমোহর দিল। তাই চিতাভস্মও যে তাঁর নয়, এটা পরিষ্কার। বিচারক বিপ্লব রায় বলেন, ‘বিমান দুর্ঘটনার খবরটি যে সঠিক ছিল না, তাইওয়ান সরকারের এই রিপোর্টই তার প্রমাণ।’ শরৎ বসুর নাতি আর্য বসু জানান, “বিশিষ্ট বিচারপতি ডা. রাধাবিনোদ পালও সে সময় এই থেভরের কথা প্রসঙ্গে তোড়জোর শুরু করেছিলেন সিটিজেনস কমিশন বসানোর। সরকারিভাবে বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে শাহনাওয়াজ কমিটি তৈরি করে নেতাজির মৃত্যু তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনায় হয়েছিল বলে প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লাগে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার।” সব তথ‌্য নিয়ে বিশ্লেষণে বসলে হলফ করে বলা যায় নেতাজির অন্তর্ধান রহস‌্য আরও ঘনীভূত হল। কারণ লেখক বিপ্লব রায় দাবি করছেন, “১৯৬৭ সালে নেতাজি সন্ন‌্যাসীর বেশে চন্দননগরে কাটিয়েছেন অন্তত ১৫ দিন। চিকিৎসার জন‌্য।” নেতাজিকে নিয়ে চলা কমিশনগুলিকেও ভুল পথে চালনা করা হয়েছে। বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুই হয়নি, তাহলে কেন কেন্দ্রের কাছে রেনকোজির মন্দিরে থাকা তাঁর তথাকথিত চিতাভস্ম ফেরানোর দাবি তোলা হচ্ছে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles