কলকাতা ফুটবল লিগের প্রিমিয়ার ডিভিশন ফুটবলের আনুষ্ঠানিক ‘গ্রুপ বিন্যাস’। কলকাতা লিগের ইতিহাসে প্রথম। ক্যালকাটা রোয়িং ক্লাবে আইএফএ আয়োজিত গ্রুপ বিন্যাস অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রাক্তন ফুটবলাররাও। কলকাতা লিগের শুরুতেই ডার্বি। গ্রুপ পর্বেই মুখোমুখি হবে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল। গত বছর কলকাতা লিগে সুপার সিক্সে মুখোমুখি হয়েছিল দুই প্রধান। এই বছর গ্রুপ পর্বেই ইস্ট-মোহনের লড়াই। বুধে দক্ষিণ কলকাতার একটি অভিজাত ক্যালকাটা রোয়িং ক্লাবে কলকাতা লিগের গ্রুপ বিন্যাস অনুষ্ঠানে মোট ২৬টি দলকে দুটো গ্রুপে ভাগ করা হয়। প্রত্যেক গ্রুপে ১৩টি দল। ২৫ জুন শুরু হবে প্রিমিয়ার ডিভিশন। শুরুতেই ডার্বি নয়। লিগের সপ্তম রাউন্ডে মুখোমুখি দুই প্রধান। অর্থাৎ ডুরান্ড কাপের ডার্বি দিয়েই মরশুমের প্রথম বড় ম্যাচে সূচনা হওয়ার সম্ভাবনা। গ্রুপ এ-তে কলকাতার দুই প্রধান মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল। গ্রুপ বিতে ডায়মন্ড হারবার এবং আরও এক প্রধান মহমেডান স্পোর্টিং। একই গ্রুপে রয়েছে ইউনাইটেড কলকাতা স্পোর্টস ক্লাব। অভিষেক বছরই দ্বিতীয় ডিভিশন জিতে প্রিমিয়ার ডিভিশন এ-তে খেলার ছাড়পত্র সংগ্রহ করে ইউকেএসসি। গ্রুপ পর্বে তাঁদের ডায়মন্ড হারবার, মহমেডান, ভবানীপুরের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে খেলতে হবে।

গ্রুপ এ-তে রয়েছে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মেসারার্স ক্লাব, কালীঘাট স্পোর্টস লাভার্স অ্যাসোসিয়েশন, সুরুচি সংঘ, রেলওয়ে এফসি, বিএসএস স্পোর্টিং ক্লাব, জর্জ টেলিগ্রাফ ক্লাব, ক্যালকাটা কাস্টমস, কালীঘাট এমএস, মামনি গ্রুপ পাঠচক্র, আর্মি রেড এবং পুলিশ এসি। গ্রুপ বিতে আছে ডায়মন্ড হারবার, মহমেডান স্পোর্টিং, শ্রীভূমি এফসি, কলকাতা পুলিশ ক্লাব, ওয়ারী অ্যাথলেটিক ক্লাব, ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাব, ভবানীপুর ক্লাব, আসস রেনবো, এরিয়ান ক্লাব, খিদিরপুর এফসি, ইউনাইটেড কলকাতা স্পোর্টস ক্লাব সাদার্ন সমিতি এবং পিয়ারলেস এসি। কলকাতা লিগে প্রথম ম্যাচে বাই পেয়েছে মোহনবাগান। সুতরাং কার্যত তাঁদের প্রথম খেলা পুলিশ এসির বিরুদ্ধে। ইস্টবেঙ্গল খেলবে মেসারার্স ক্লাবের বিরুদ্ধে। মহমেডানের প্রতিপক্ষ পিয়ারলেস। প্রথম রাউন্ডে ডায়মন্ড হারবার এফসির ম্যাচ নেই।

ক্যালকাটা রোয়িং ক্লাবের ব্যাঙ্কোয়েট ভবনে গ্রুপ বিন্যাসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন একঝাঁক প্রাক্তন তারকা ফুটবলার। প্রাক্তনদের তালিকায় ছিলেন ভাস্কর গাঙ্গুলি, অতনু ভট্টাচার্য, অমিত ভদ্র, অলোক মুখার্জি, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, জামশেদ নাসিরি, শিশির ঘোষ, প্রশান্ত ব্যানার্জি, মানস ভট্টাচার্য, সঞ্জয় সেন, দীপেন্দু বিশ্বাস, অ্যালভিটো ডি কুনহা, রহিম নবি এবং মেহতাব হোসেন। ভারতীয় ফুটবল দলের ডিরেক্টর হওয়ার জন্য সংবর্ধনা দেওয়া হয় সুব্রত পালকে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সন্তোষ ট্রফিজয়ী বাংলা দলের কোচ সঞ্জয় সেন। ২০২৭ এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারে হংকংয়ের মুখোমুখি হবে ভারতীয় দল। সুনীল ছেত্রীদের জন্য মরণ-বাঁচন ম্যাচ। জয়ের বিষয়ে আশাবাদী সুব্রত জানান, ‘জেতা ছাড়া কোনও উপায় নেই। দলে অভিজ্ঞ ফুটবলার রয়েছে। তাঁরা পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝবে।’ হংকং ম্যাচের আগে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলতে থাইল্যান্ড উড়ে যাবে ভারতীয় দল। প্রিমিয়ার ডিভিশনের প্রতিযোগী দলগুলোর প্রতিনিধি ও প্রিমিয়ার এবং ফার্স্ট ডিভিশন লিগ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শ্রাচি স্পোর্টসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাহুল টোডি, চেয়ারম্যান তমাল ঘোষাল, আইএফএ সভাপতি অজিত বন্দোপাধ্যায়, চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত, সচিব অনির্বাণ দত্ত, সহ সচিব রাকেশ ঝাঁ, মহম্মদ জামাল, সুদেষ্ণা মুখার্জী, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি সুফল রঞ্জন গিরি।

আই লিগে অবনমনের উপর স্থগিতাদেশ। এ বছর থেকে আই লিগে অবনমন তুলে দেওয়া হতে পারে। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের আপিল কমিটির পক্ষ থেকে এমনই সিদ্ধান্ত। এআইএফএফের এই স্থগিতাদেশের ফলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে দিল্লি এফসি এবং স্পোর্টিং ক্লাব বেঙ্গালুরু। জানা গিয়েছে, চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত কোনও দলকেই অবনমনে পাঠানো যাবে না। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন এআইএফএফ আপিল কমিটি অবনমনের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে। ফলে আপাতত স্বস্তিতে দিল্লি এফসি এবং এসসি বেঙ্গালুরু। চূড়ান্ত রায় না দেওয়া পর্যন্ত কোনও দলকে নীচের ডিভিশনে নামিয়ে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে আপিল কমিটি।

স্পোর্টিং ক্লাব বেঙ্গালুরু এবং দিল্লি এফসি অবনমন নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছিল। আই-লিগের পয়েন্ট টেবিলের দিকে তাকালে দেখা যাবে বেঙ্গালুরুর পয়েন্ট ২২ ম্যাচে ২১। সম সংখ্যক ম্যাচে দিল্লির পয়েন্ট মাত্র ১৪। নিয়ম অনুযায়ী, আগামী মরসুমে তারা আই-লিগ খেলতে পারবে না। এআইএফএফ-র একটি নীতিগত সিদ্ধান্তকে হাতিয়ার করে অবনমন আটকাতে আবেদন করে দুই ক্লাব। পয়েন্ট তালিকায় শেষ দুটি স্থানে ছিল দিল্লি এফসি এবং এসসি বেঙ্গালুরু। এআইএফএফ-র ‘ভিশন ২০৪৮’ প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৬ দল নিয়ে আই-লিগ করার কথা বলা আছে। আইএসএলে অবনমন না থাকায় আই-লিগে অবনমন যুক্তিহীন। দুই ক্লাবের কর্তৃপক্ষ প্রথমে ফেডারেশনের ডিসিপ্লিনারি কমিটির দ্বারস্থ হয়েছিলেন। ডিসিপ্লিনারি কমিটি তাঁদের আবেদন আপিল কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেয়।

বেঙ্গালুরুর অভিযোগ, নামধারী এফসি তাদের বিরুদ্ধে ম্যাচে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) থাকা এক ফুটবলারকে খেলিয়েছিল। প্রতিযোগিতার নিয়মের অস্বচ্ছতার সুযোগ নিয়ে ওই ফুটবলারকে খেলানো হয়েছিল। তাই নিয়ম অনুযায়ী, সেই ম্যাচের তিন পয়েন্ট তাদেরই পাওয়া উচিত। বেঙ্গালুরুর এই আবেদন মেনে নেওয়া হলে অবনমনের আওতায় চলে আসতে পারে অন্য একটি ক্লাব। আপিল কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রাজেশ ট্যান্ডন। কমিটি অন্তর্বর্তী নির্দেশে বলেছে, ‘‘পরিস্থিতি বিবেচনা করে, অবনমন সংক্রান্ত যে কোনও নির্দেশ স্থগিত রাখা উচিত এবং চূড়ান্ত শুনানি না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর করা উচিত নয়।’’ পর্যবেক্ষণে কমিটি জানিয়েছে, অতীতে কয়েক বার আই-লিগে অবনমন রাখেনি এআইএফএফ। তাই বিষয়টি বাধ্যতামূলকও নয়। আপিল কমিটির পরবর্তী শুনানি ৩০ মে।

দিল্লি-সহ চারটি ক্লাব ইন্টার কাশীর বিরুদ্ধে ‘অনুপযুক্ত’ খেলোয়াড় খেলানোর অভিযোগে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করেছে। আদালত এখনও রায় দেয়নি। এর আগে ইন্টার কাশী এবং চার্চিল ব্রাদার্সের মধ্যেও চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। আপিল কমিটি চার্চিলকে আই-লিগ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করায় কোর্ট অফ আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টসে চ্যালেঞ্জ করেছেন কাশী কর্তৃপক্ষ।নীতিগত প্রশ্ন তুলে তাদের অবনমন আটকানোর ব্যাপারে এআইএফএফের কাছে আবেদন করে দুই ক্লাব। দুই ক্লাব এআইএফএফের ডিসিপ্লিনারি কমিটির দ্বারস্থ হয়েছিল। এরপরেই আপিল কমিটির কাছে ক্লাবগুলির আবেদন ডিসিপ্লিনারি কমিটি পাঠিয়ে দেয়। ক্লাবগুলি যুক্তি দেখায়, আইএসএলে অবনমন নেই। এই পরিস্থিতিতে আই-লিগেও বা কেন অবনমন থাকবে? এরপরেই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রাজেশ ট্যান্ডনের বেঞ্চে আই লিগে অবনমনের ব্যাপারে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।

আপিল কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “এআইএফএফের পক্ষ থেকে মামলার পরিস্থিতি বিবেচনা করে দু’দিন সময় চাওয়া হয়েছে। এই সময় পর্যন্ত অবনমনের যে কোনও আদেশ স্থগিত থাকবে। বর্তমান আপিলের চূড়ান্ত শুনানি না হওয়া পর্যন্ত তা কার্যকর করা হবে না।” ৩০ মে আপিল কমিটির পরবর্তী শুনানি। এই রায় লিগ স্ট্যান্ডিংয়ের তলানিতে থাকা দুই দলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত কোনও দলকেই অবনমনে পাঠানো যাবে না।