গাছ ভেঙে পড়তে পারে। জমতে পারে জল। আশঙ্কা ভূমিধসের। প্রবল দুর্যোগ ছারখার হবে উত্তর থেকে দক্ষিণ। শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপ। পৌঁছে গিয়েছে উপকূলে। ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে উত্তরবঙ্গে ঢুকছে বর্ষা। জোড়া ফলায় বাংলার আকাশে দুর্যোগের মেঘ! মেঘলা আকাশ। জেলায়-জেলায় বৃষ্টি। জলোচ্ছ্বাস। সপ্তাহান্তে দুর্যোগের আশঙ্কা। উপকূলের বাসিন্দারা তঠস্থ। মঙ্গল দুপুরেই বঙ্গোপসাগরে জন্ম নিয়েছে নিম্নচাপ। বৃহস্পতিবার শক্তি বাড়িয়ে তা পরিণত হয়েছে গভীর নিম্নচাপে। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, সাগরদ্বীপ থেকে ৬০ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান গভীর নিম্নচাপের। দিঘা থেকে ১১০ কিমি পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে। বাংলাদেশের মঙ্গলা থেকে ১৮০ কিমি, খেপুপাড়া থেকে ১৮০ কিমি দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম দিকে রয়েছে। নিম্নচাপের কারণে আগামী কয়েকদিনে উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের জেলায় জেলায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। সতর্কতা জারি রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমানে ভারী বৃষ্টির হলুদ সর্তকতা জারি রয়েছে। শুক্রবার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে ভারী বৃষ্টির হলুদ সর্তকতা রয়েছে। দু’দিনেই দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি ঘণ্টায় ৫০ কিমি বেগে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। তারপর আরও কিছুদিন দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। পাশাপাশি ৩১ মে পর্যন্ত ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সতর্কতা উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে। জুন মাসের প্রথম দিনেও উত্তরবঙ্গের জেলায় জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সতর্কতা। নিম্নচাপ, প্রবল ঝড় বৃষ্টির কারণে সম্ভাব্য ক্ষতির বিষয়েও আবহাওয়া দপ্তর বলছে, উপকূলীয় জেলাগুলিতে গাছের ডাল ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা। পেঁপে, কলার মতো হালকা গাছগুলি উপড়ে পড়তে পারে ঝড়ে। ক্ষতি হতে পারে মাঠে থাকা ফসল, শাক-সবজির। জল জমার সম্ভাবনা নিচু এলাকায়। একই সঙ্গে অপোক্ত ঘরের, কাঁচা বাড়ির দেওয়াল ধসে পড়তে পারে ঝড়-জলে। প্রবল বর্ষণে জল জমতে পারে শহরেও, ব্যাহত হতে পারে যান চলাচল। প্রবল যানজটের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে দৃশ্যমানতা হ্রাস পেতে পারে উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চলে। দার্জিলিং, কালিম্পং জেলার পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সম্ভাবনা। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর বলছে, বঙ্গোপসাগরের শক্তিশালী নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার প্রবল বৃষ্টি হতে পারে। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলাতে অতি ভারী বর্ষণের সর্তকতা জারি করা হয়েছে। যার জেরে উত্তরবঙ্গের পার্বত্য এলাকায় ধস নামতে পারে। নদীর জলস্তর অনেকটাই বাড়তে পারে। শহর এলাকায় জমবে জল। নিচু এলাকায় প্লাবনের আশঙ্কা সপ্তাহান্তে। নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্রও উত্তল থাকবে। ৩০ শে মে শুক্রবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

কলকাতায় অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা। প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস ৯ জেলাতে-কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে। বাকি সব জেলাতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টির সঙ্গে ৩০-৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝড় বাতাস বইবে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ জেলাতে ৬০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝড় বাতাস বইবে। শুক্রবার ভারী বৃষ্টির সতর্কতা দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতে। কলকাতা-সহ বাকি জেলাতে ৭০ থেকে ১১০ মিলিমিটার অর্থাৎ ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া, মুর্শিদাবাদে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বাতাস বইবে। শনিবারেও ভারী বৃষ্টি হতে পারে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ জেলাতে। মুর্শিদাবাদ জেলাতে দু এক জায়গায় অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি। উত্তরবঙ্গেও বৃহস্পতিবার থেকেই ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সর্তকতা জারি করা হয়েছে। প্রবল বৃষ্টি হতে পারে আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর ও কোচবিহারের দু এক জায়গায়। বিক্ষিপ্তভাবে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা। দার্জিলিং থেকে মালদহ সব জেলাতেই ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। শুক্রবার প্রবল বৃষ্টির আশঙ্কা উত্তরবঙ্গের উপরের দিকের জেলাতে। অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর জেলাতে। বিক্ষিপ্তভাবে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা। এরমধ্যে দার্জিলিং জলপাইগুড়ি আলিপুরদুয়ার জেলায় ২০০ মিলিমিটার এর বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। মালদা ও দক্ষিণ দিনাজপুরে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবার প্রবল বৃষ্টির আশঙ্কা উত্তরবঙ্গের উপরের পাঁচ জেলাতে। মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। রবিবারেও ভারী বৃষ্টির সতর্কতা উত্তরবঙ্গে। অনুকূল পরিস্থিতি পেয়ে এগোচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। আরও কিছুটা এগিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যে ঢুকে পড়েছে বর্ষা। অসম এবং মেঘালয়ের কিছু অংশ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আওতায়। আগামী এক দু দিনের মধ্যে সিকিম এবং উত্তরবঙ্গের কিছু অংশে ঢুকবে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু। কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির কমলা সতর্কতা জারি রয়েছে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ায়। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির হলুদ সর্তকতা রয়েছে। কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। জারি করা হয়েছে হলুদ সর্তকতা। আগামী সাতদিন দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। ৩১ মে, শনিবার পর্যন্ত উত্তাল থাকবে সমুদ্র। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি।
বঙ্গে দুর্যোগের মেঘ। শক্তি বাড়িয়ে ক্রমশ এগিয়ে আসছে নিম্নচাপ। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস আবহাওয়া দপ্তরের। জেলা ও কলকাতাতেও টানা বৃষ্টি। আসন্ন দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি বৈঠক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যসচিব, বিপর্যয় মোকাবিলা দল, প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিকদের। বৈঠকে দুর্যোগ সামলাতে একাধিক পদক্ষেপের আলোচনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী নিজে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করেন। আতঙ্কের কারণ নেই। বিপর্যয় মোকাবিলায় সবরকমভাবে প্রস্তুত প্রশাসন। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস, বঙ্গোপসাগরের শক্তিশালী নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার প্রবল বৃষ্টিতে ভিজবে গোটা দক্ষিণবঙ্গ। বেশ কিছু জেলায় অতি ভারী বর্ষণের সর্তকতা জারি। নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্রও উত্তাল থাকবে। মৎস্যজীবীদের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি। মুখ্যমন্ত্রীও জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টা দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে। তা মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আগাম সতর্কতা উপকূলীয় এলাকায়। ভারী বৃষ্টিতে ও সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার গোবর্ধনপুরের পশ্চিমে ৬০০ মিটার মাটির তৈরি বাঁধ ভেঙে ৬০ থেকে ৬৫টি বাড়ি জলমগ্ন। জলের নিচে চাষের জমি। পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর কুমার জানা জানিয়েছেন, রিং বাঁধ তৈরির জন্য সেই বাঁধের আগে পূর্বদিকে ৩০০ মিটার এবং পশ্চিমদিকে ৬০০ মিটার মাটির নদীবাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জলমগ্ন ও বিপদগ্রস্ত মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীও তেমনটাই জানালেন। বৃহস্পতি দুপুরে নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ”আবহাওয়া নিয়ে একটা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টি হবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। ইতিমধ্যে উপকূলে বৃষ্টি হচ্ছে। নিচু এলাকা থেকে লোকজনকে সরানোর কাজ চলছে। উপকূলে বাড়তি সতর্কতাও নেওয়া হয়েছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে বারণ করা হয়েছে। যাঁরা সমুদ্রে স্নান করতে যাবেন, দুর্যোগের পরিবেশ থাকায় তাঁদের উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, বিভিন্ন বিভাগের আধিকারিকদের সতর্ক করা হয়েছে। যাতে কোনও বিপর্যয় এলে সঙ্গে সঙ্গে দুর্গতদের ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। জেলায় জেলায় আমাদের ত্রাণ প্রস্তুত রয়েছে। কারও কোনও অসুবিধা হবে না।”