Friday, May 30, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের যুযুধান ‘নির্বাচনী যুদ্ধ‌’ শুরু! ৫ সংকটে বাংলা ‘‌বাংলায় হচ্ছে চিৎকার, আর চাই না নির্মম সরকার’‌:‌ মোদি‘‌, বড়া বড়া বাত করতে হ্যায়, বড়া বড়া বুলি আওড়াতে হ্যায়…’‌তোপ মমতার

বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের নয়া সুর বেঁধে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আলিপুরদুয়ারের প্যারেড গ্রাউন্ডের জনসভার মঞ্চ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতার সুর তুঙ্গে তুলে মোদীর অভিযোগ, এখন যা পরিস্থিতি হয়েছে, তাতে আদালত ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে আর কোনও গতি নেই। প্রতিটি বিষয়ে আদালতকে হস্তক্ষেপকে করতে হচ্ছে। এভাবে কোনও সরকার চলতে পারে না। তৃণমূলকে উৎখাত করার ডাক দিয়ে মোদী স্লোগান, ‘পুরো বাংলা বলছে, বাংলায় হচ্ছে চিৎকার, আর চাই না নির্মম সরকার।’তৃণমূল সরকার কতটা ‘নির্মম’, সেটা বোঝাতে একাধিক উদাহরণও দেন মোদী। পাঁচটি সংকটের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ। মোদী বলেন, ‘প্রথম সংকট, সমাজে ছড়ানো হিংসা এবং অরাজকতা। দ্বিতীয় সংকট, মা ও বোনেদের সুরক্ষাহীনতা এবং তাঁদের উপরে ঘটে যাওয়া জঘন্য অপরাধ। তৃতীয় সংকট, যুবক যুবতীদের মধ্যে চেপে বসা হতাশা এবং বেকারত্ব। চতুর্থ সংকট, দুর্নীতির দাপট এবং সরকারের উপর থেকে উঠে যাওয়া বিশ্বাস। পঞ্চম সংকট, গরিবের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া শাসক দলের স্বার্থান্বেষী রাজনীতি।’

তৃণমূলকে সরিয়ে বিজেপিকে বাংলার মসনদে বসানোর আহ্বান জানিয়ে মোদী কোমর বেঁধে বিজেপি নেতাদের ভোটের ময়দানে নেমে লড়াই করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘সততার সঙ্গে সবকা সাথ, সবকা বিকাশ মন্ত্র মেনে বাংলার উন্নয়নের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বিজেপি সরকার। এটা পশ্চিমবঙ্গের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। যুবপ্রজন্ম এবং আপনাদের সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আপনাদের সবাইকে একত্রিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে। অপারেশন সিঁদুর-র সঙ্গে বাঙালির সিঁদুর খেলার আবেগকে জুড়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী। আলিপুরদুয়ারের জনসভা থেকে ইসলামাবাদ হুংকার দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বললেন যে তিনবার ঘরে ঢুকে মারা হয়েছে পাকিস্তানকে। আগামিদিনে ভারতে যদি ফের জঙ্গি হামলা চালানো হয়, তাহলে একইভাবে মারা হবে। কারণ ভারতের মানুষ শক্তির আরাধনা করেন। তাঁরা পুজো করেন মহিষাসুরমর্দিনীর। তাই জঙ্গি বা জঙ্গিদের মদত দেওয়া দেশকে কোনওভাবে রেয়াত করা হবে না বলে হুংকার দেন প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অপারেন সিঁদুর এখনও শেষ হয়নি।সিঁদুর খেলার এই মাটিতে (পশ্চিমবঙ্গ) এসেছি, তো সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের নয়া সংকল্প নিয়ে যে আলোচনা হবে, সেটাই স্বাভাবিক। ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিরা যে বর্বরতার পরিচয় দিয়েছিল, সেটার পরে পশ্চিমবঙ্গেও প্রবল রাগ এবং ক্রোধ ছিল। আপনাদের মধ্যে যে আক্রোশ এবং ক্ষোভ ছিল, সেটা আমি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছিলাম।’জঙ্গিরা আমাদের বোনেদের সিঁদুর মুছে দেওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছিল। আমাদের সেনা ওদের সিঁদুরের শক্তি বুঝিয়ে দিয়েছে। আমরা জঙ্গিদের সেইসব আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছিল, যা কল্পনাও করতে পারেনি পাকিস্তান। যখন সরাসরি যুদ্ধ হয়, তখন ওদের (পাকিস্তান) হার নিশ্চিত থাকে। ওদের পরাজয় নিশ্চিত থাকে। এই কারণেই পাকিস্তান জঙ্গিদের মদত দেয়। কিন্তু পহেলগাঁও হামলার পরে ভারত দুনিয়াকে এই বার্তা দিয়েছে যে এবার জঙ্গি হামলা হলে শত্রুদের বড় মূল্য চোকাতে হবে। পাকিস্তান বুঝে নিক, তিনবার ঘরে ঢুকে তোমাদের মেরেছি। আমরা শক্তির আরাধনা করা লোক। মহিষাসুরমর্দিনীর আরাধানা করি। বাংলার এই বাঘের মাটি থেকে ১৪০ কোটি মানুষ হুংকার দিচ্ছেন, অপারেন সিঁদুর এখনও শেষ হয়নি।’

মোদিকে পাল্টা মমতার ৩৯ মিনিটের সাংবাদিক বৈঠকের প্রথম দু’মিনিট ছিল দুর্যোগ মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের প্রস্তুতির বর্ণনা। এবার অপারেশন পশ্চিমবঙ্গের কথা উল্লেখ করছেন বাংলার বিজেপি নেতারা। আর তারপরই খোলা চ্যালেঞ্জ বাংলার নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি সংকটের তালিকার পালটা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের তরফে বলা হয়, ‘‌আইন-শৃঙ্খলা? দু’বছর ধরে জ্বলছে মণিপুর। আগে নিজের বিশৃঙ্খলা ঠিক করুন। মহিলাদের সুরক্ষা? উন্নাও থেকে হাথরাস? বিজেপির ট্র্যাক রেকর্ড নিঃস্তব্ধতা এবং লজ্জায় ডুবে আছে। তারুণ্যের নিরাশা? প্রশ্নপত্র ফাঁস, নিট দুর্নীতি এবং ৪৫ শতাংশ বেকারত্ব পড়ুয়াদের দেওয়া বিজেপির জাতীয় উপহার। দুর্নীতি? আপনার মন্ত্রিসভার অর্ধেক সদস্যই জামিনে বাইরে আছেন। স্বার্থপর সরকার? আপনার সরকারের প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির কারণে বাংলাকে মনরেগা এবং আবাস যোজনার তহবিল থেকে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে।’‌ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, প্রত্যেক মহিলা স্বামীর কাছ থেকে সিঁদুর নেন।মোদী কেন নিজের স্ত্রীকে সিঁদুর পরাচ্ছেন না এমনভাবে বলছেন, আপনি সবার স্বামী নন। আমি এসব ব্যাপারে বলতে চাই না। আপনি এসব কথা বলতে বাধ্য় করলেন। অপারেশন সিঁদুরের সঙ্গে বেঙ্গল অপারেশনের তুলনা করছেন। আপনি বাধ্য করছেন মুখ খুলতে। অপারেশন সিঁদুর নাম দিয়েছে কেন্দ্র। রাজনৈতিকভাবে আকর্ষণীয় করে তুলতে এই ধরনের নামকরণ। বিরোধীরা বিদেশে গিয়ে দেশের হয়ে গলা ফাটাচ্ছে। আর সেই সময় আপনি এখানে এসে রাজনীতির হোলি খেলতে এসেছেন একজন প্রধানমন্ত্রী। এটা শোভা পায় না। মোদীজি যা বলেছেন তাতে আমরা শুধু বিষ্মিত নই, সময়ের কথাটাও ভাবতে হবে। বিরোধীরা যখন দেশের হয়ে বিদেশে গিয়ে সরব হয়েছেন আর তখন এটা কি প্রধানমন্ত্রীর ওসব বলার সময়। মিনিস্টার বলছেন অপারেশন সিঁদুরের মতো এবার অপারেশন অফ বেঙ্গল। আমি চ্যালেঞ্জ করছি। যদি ক্ষমতা থাকে এখনই ভোটে আসুন। আমরা রেডি। বাংলা আপনার চ্যালেঞ্জ গ্রহণে রেডি। কিন্তু মনে রাখবেন সময় একটা ফ্যাক্টর। আমাদের প্রতিনিধি অভিষেকও রয়েছেন ওই টিমে। তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বার বার সরব হচ্ছেন। আর আপনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে সমালোচনা করছেন সেই সরকারকে যারা আপনাদের পুরো সাপোর্ট দিয়েছে। আপনি এই সরকারকে অভিযুক্ত করছেন। বলেন মমতা। আপনি রাজনীতি করণ করছেন বিজেপি নেতার মতো, বিজেপি জুমলা পার্টি। গারবেজ অফ লাইস। আগে বলতেন অপারেশন সিঁদুর। এখন বলছেন অপারেশন বাংলা করবেন। বাংলার মাটির সঙ্গে জঙ্গিদের তুলনা করছেন। মুর্শিদাবাদ, মালদহে যা হয়েছে তার পিছনে রয়েছে বিজেপি। ওরা অশান্তি করার মাস্টার। সব প্রমাণ আছে। দরকারে সংবাদমাধ্যমকে দেখিয়ে দেব। দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাতেই মা-বোনেরা সুরক্ষিত। ২৬ হাজারের চাকরি গিয়েছে কোর্টের নির্দেশে। আমাদের জন্য নয়। আর কোর্টে গিয়েছিল সিপিএম-বিজেপি। আমাদের রাজ্যে আমরা ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমিয়েছি। আর তোমাদের ডবল ইঞ্জিন ৪০ শতাংশ বেকারত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের এমপি বিদেশে গিয়ে ভারতের হয়ে সরব হচ্ছেন। আর এখানে এসে বাংলাকে অপমান করছেন মোদী। কালকেই ভোটের জন্য তৈরি আমরা। সমস্ত এজেন্সি তো আপনাদের হাতে রয়েছে। দেশের হয়ে বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা যখন বিদেশে গিয়ে গলা ফাটাচ্ছেন, তখন আপনি এখানে রাজনীতি করতে এসেছেন? এটা রাজনীতি করার সময়? আপনার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছি। পারলে কালকেই ভোট করুন। দেখিয়ে দেব। বাংলায় ভোট আসছে। কিন্তু তার এখনও দেরি আছে। তত দিন আপনি ক্ষমতায় থাকবেন কি থাকবেন না, সেটা আগে খেয়াল রাখুন। জেনে রাখুন, বাংলা কোনও দিন বিজেপির হাতে যাবে না! ২৬ হাজারের চাকরি গিয়েছে কোর্টের নির্দেশে। আমাদের জন্য নয়। আর কোর্টে গিয়েছিল সিপিএম-বিজেপি। এত স্কিম (প্রকল্প) কোথাও নেই। এত মানুষ কোথাও সুবিধা পান না। বাংলা আপনার (কেন্দ্রীয় সরকারের) কাছে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা পায়। আগে সেই টাকা দিন। তার পরে কথা বলুন! ‌আগে বলতেন চা বেচতেন। পরে বলতেন পাহারাদার। আর এখন সিঁদুর বেচছেন। সিঁদুরটা বেচা যায় না। এটা মা বোনেদের ইজ্জত। সব নাম কেন্দ্রীয় সরকার ঠিক করে। অপারেশন সিঁদুর নামটা দেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিক ভাবে ‘ক্যাচ’ করার জন্য। আমি এত দিন কিছু বলিনি। কিন্তু আজ বলতে বাধ্য হলাম। অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। প্রত্যেক মহিলার সিঁদুরের প্রতি সম্মান রয়েছে। তাঁরা স্বামীদের থেকে সিঁদুর নেন। কিন্তু আপনি তো সকলের স্বামী নন! আপনি কেন আগে আপনার স্ত্রীকে সিঁদুর দেন না? আমি দুঃখিত। এটা আমার বলার কথা ছিল না। কিন্তু আপনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাকে বাধ্য করেছেন মুখ খুলতে! এত বড় নেতা আপনি, আমেরিকা বললেই তো চুপ হয়ে যান! য়েছে তো একটা ছোট্ট ঘটনা। কোনও যুদ্ধ তো হয়নি। আমরা যুদ্ধ চাই না। যদি কারও কৃতিত্ব থাকে, তা হল ভারতীয় সেনার। অন্য কারও নয়। কর্নেল কুরেশি বলেছেন, এই দেশটা সেকুলার (ধর্মনিরপেক্ষ)। আমরা সকলে মিলে মাতৃভূমির জন্য লড়ছি। আর আপনি (মোদী) বাংলায় বিভাজনের কথা বললেন! বড়া বড়া বাত করতে হ্যায়, বড়া বড়া বুলি আওড়াতে হ্যায়…মোদীকে নিশানা করে তোপ মমতার। বেশি মুখ খোলানোর চেষ্টা করবেন না, মুখ খুলে দেব,’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles